20/08/2025
ঘুম: সুস্বাস্থ্যের অদৃশ্য ডাক্তার
ভাবুন তো, সারাদিন কাজ শেষে আপনি শুয়ে পড়লেন বিছানায়। ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ হলো, শরীরটা হালকা লাগছে… আর তখনই শুরু হলো শরীরের ভেতর এক অদ্ভুত ম্যাজিক—যা আমরা দেখি না, কিন্তু টের পাই প্রতিদিন। এটাই ঘুমের শক্তি।
দিনভর চিন্তা, দৌড়ঝাঁপ, কাজের চাপে আমাদের মস্তিষ্কে অজস্র বর্জ্য জমে যায়। কিন্তু গভীর ঘুমের সময় বিশেষ কিছু কোষ—গ্লিয়াল সেল—ময়লা পরিষ্কারের কাজে নেমে পড়ে। যেন রাতের অন্ধকারে শহরের ঝাড়ুদারের দল রাস্তাঘাট পরিষ্কার করছে। এটাই গ্লিম্ফাটিক সিস্টেম। এ ব্যবস্থা মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে, স্মৃতিভ্রংশ ও বার্ধক্যের হাত থেকে রক্ষা করে।
হৃদ্পিণ্ড সারাদিন কাজ করে, কখনো বিশ্রাম নেয় না। কিন্তু ঘুমের সময় এর গতি একটু ধীর হয়ে আসে, রক্তচাপ কমে যায়, শরীর শান্ত হয়। যেন দীর্ঘ যাত্রার মাঝে এক কাপ চা খেয়ে একটু শ্বাস নেওয়া। ঠিক এ কারণেই ভালো ঘুম হৃদ্পিণ্ডকে সুস্থ রাখে, আর অনিদ্রা ধীরে ধীরে আনে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস আর হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি।
খাবার ও ঘুমের মিষ্টি সম্পর্ক
আমরা যা খাই, তা ঘুমকেও প্রভাবিত করে
রাতে এক গ্লাস গরম দুধ, কলা বা বাদাম—এগুলো ঘুম ডাকতে সহায়তা করে।
অন্যদিকে রাতের বেলা কফি, চা বা ঝাল-তেলেভাজা খাবার ঘুমকে দূরে ঠেলে দেয়।
তাই আমাদের থালা-বাসনের আয়োজনও নির্ধারণ করে, রাতটা হবে শান্ত নাকি অশান্ত।
ঘুমের আগে ছোট্ট কিছু ব্যায়াম
ঘুমের আগে হালকা স্ট্রেচিং—যেমন কাঁধ ঘোরানো, পায়ের পেশি টান, কিংবা সহজ কিছু যোগাসন—শরীরকে হালকা করে, রক্ত চলাচল বাড়ায়। যেন ঘুমের দরজায় কড়া নাড়া: “এসো, এবার আমায় নিয়ে চলো।” এর ফলে ঘুম গভীর হয়, আর হৃদ্পিণ্ডও স্বস্তি পায়।
ভালো ঘুমের ছোট্ট টিপস
• প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো ও জাগা
• ঘুমের আগে মোবাইল-টিভি বন্ধ রাখা
• হালকা রাতের খাবার খাওয়া
• ঘরকে শান্ত, অন্ধকার আর ঠান্ডা রাখা
• বই পড়া বা মেডিটেশনের মতো অভ্যাস গড়ে তোলা
তাই, ঘুম কোনো সময় নষ্ট নয়, বরং জীবনের অমূল্য বিনিয়োগ। এটি শরীরকে শক্তি দেয়, মনকে পরিষ্কার করে, হৃদয়কে রক্ষা করে। এক কথায়—ঘুমই হলো আমাদের অদৃশ্য ডাক্তার। তাই আজ রাত থেকেই আমরা সবাই ঘুমকে গুরুত্ব দিই, কারণ ভালো ঘুম মানে হলো সুন্দর সকাল আর সুস্থ জীবন।
পুষ্টিবিদ এস, এম, মফিজুর রহমান
Bangladesh Nutrition and Wellness Academy