27/08/2025
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা পিসিওএস একটি হরমোনজনিত অসুখ।
বর্তমান বিশ্বের নারীরা যে সমস্যাগুলোতে সবচেয়ে বেশি ভুগে থাকেন, তার অন্যতম হচ্ছে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস)। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রতি ১০ জন নারীর ভেতর অন্তত ১ জন এ রোগে আক্রান্ত। নারীর প্রজনন হরমোনের তারতম্যের কারণে এই রোগ দেখা দেয়।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম কেন হয়?
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের সঠিক কারণ জানা যায় না। কিন্তু চিকিৎসকরা ধারণা করেন, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং বংশগত কারণ এ ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যে নারীদের মা ও বোনের পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম আছে তাদের এই সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেশি।নারীদের শরীরে এন্ড্রোজেন হরমোন বেশি মাত্রায় থাকলেও পিসিওএস হতে পারে। বাড়তি এন্ড্রোজেন ডিম্বাশয় থেকে ডিম বের হওয়া এবং এর বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত ইনসুলিন উৎপাদনের কারণেও শরীরে এন্ড্রোজেন হরমোন বেড়ে যেতে পারে।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের উপসর্গঃ
পিসিওএসের উপসর্গ শুরু হয় সাধারণত নারীদের মাসিক শুরু হওয়ার পর থেকেই। তবে উপসর্গের ধরন এবং তীব্রতা একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। সাধারণ যে উপসর্গ সবার মধ্যে দেখা যায় তা হলো অনিয়মিত মাসিক। অন্যান্য লক্ষণগুলো হলো -
● মুখে, বুকে, পেটে, পেছনে বা পায়ের আঙুলে চুল গজানো
● ব্রন, তৈলাক্ত ত্বক বা খুশকি
● অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া বা পুরুষদের মতো টেকো ভাব বা চুল পাতলা হয়ে যাওয়া
● ঘাড়, হাত, স্তন বা উরুতে চামড়ায় গাঢ় বাদামি বা কালো দাগ। এটা বগলে বা পায়ের ভাঁজেও হতে পারে।
● স্তনের আকার ছোট হয়ে যাওয়া
● মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা বেড়ে যাওয়া
● বন্ধ্যাত্ব
● কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া
● ডায়াবেটিস
তবে এসব উপসর্গের অনেকগুলোই অনেকের নাও থাকতে পারে।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায়ঃ
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সমস্যাটি তখনই শনাক্ত হয় যখন তিনি সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করে অসফল হন। সারা বিশ্বে বন্ধ্যাত্বের জন্য এটাকে সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয়। তবে কারও পিসিওএস থাকা মানে এই নয় যে তিনি কখনোই মা হতে পারবেন না। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার মাধ্যমে তারাও মা হতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসা গ্রহণ ও জীবনযাপনে পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে।
যদি কারও কেবল মাসিকের সমস্যা থাকে তবে তাদের জন্য প্রথম চিকিৎসা হলো ওজন কমিয়ে ফেলা। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোমে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হয়ে যায়। এর জন্য হাইপার এন্ড্রোজেনিজম হয়। এন্ড্রোজেন হচ্ছে, পুরুষ হরমোন। মেয়েদের শরীরের যদি পুরুষ হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়, তখনই দেখা যায় ওজন বাড়তে থাকে, লোম গজাতে থাকে, মাসিক অনিয়মিত হতে থাকে। তখন তাদেরকে ব্যায়ামের পাশাপাশি মেটফরমিন নামের একটি ওষুধ দেওয়া যায়। যেটা তার এন্ড্রোজেনের মাত্রাকে কমিয়ে দেয়। যখনই এন্ড্রোজেনের মাত্রা কমে যায় তখনই এই উপসর্গগুলো ঠিক হয়ে যায়। যদি ঠিক সময়ে নেওয়া হয় তাহলে ডিম্বাণুর পরিপক্বতা ঠিক থাকে, মাসিক নিয়মিত হয়ে যায়।
আর যদি কারও বন্ধ্যাত্বের সমস্যা থাকে তবে তাদের ক্ষেত্রে ল্যাপরোস্কপি করানো হয়। ল্যাপরোস্কপিতে ছোটো ছোটো অনেক সিস্টকে পাংচার (টুকরো) করে দেওয়া যায়। এতে করে ভেতরে যে বাড়তি এন্ড্রোজেন থাকে, সেটি বের হয়ে যায়। এর ফলে হরমোনের ভারাসাম্যহীনতা ঠিক হয়ে গিয়ে মাসিক ঠিক হয়ে যায়। দেখা যায় ল্যাপরোস্কপি করার পর খুব দ্রুতই সন্তান ধারণ সম্ভব হয়।