14/01/2025
স্বাস্হ্য ক্ষাতে বিদেশমুখিতা
পর্ব ১ঃ হাসপাতাল
এটা আমাদের জাতীয় চরিত্র। বিনোদন বলেন আর স্বাস্হ্য সংক্রান্ত বলেন। সব বিষয় আমাদের কাছে বিদেশ ভাল। এই ভাল লাগার মূল্য স্বরূপ আমাদের বাৎসরিক ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি মুদ্রা দেশ থেকে চলে যাচ্ছে স্বাস্হ্য ক্ষাতে। কারন টা কি?
আমার একান্ত নিজস্ব পর্যবেক্ষণ থেকে বলছি কিছু
কথা। রোগীদের বড় অনাস্হা। কিসের উপর অনাস্থা?
১। হাসপাতাল
২। পরীক্ষার রিপোর্ট
৩। ডাক্তার
৪। নার্স
১। হাসপাতালঃ
বিদেশমুখিতার জন্য যে ৫০ হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে এর সাথে সরকারী হাসপাতালের সম্পর্ক খুবই কম। কেন কম তা আগে বলি। আমাদের স্বাস্হ্য সেবা যে দেওয়া হচ্ছে তার প্রায় ৭০% দেওয়া হয় বেসরকারী ক্ষাতে। ২০১৯ এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২৫৫ টি সরকারী হাসপাতাল, ৫০৫৪ টি বেসরকারী হাসপাতাল। আর বেসরকারী ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৯৫২৯। হাসপাতাল বেডের সংখ্যা দিক থেকে সরকারী ৫৪,৬৬০ আর বেসরকারী ৯১,৫৩৭। ( সূত্রঃ Bangladesh Investment Developer Authority)
মানুষের অনাস্হা সরকারী ও বেসরকারি হাসপাতালের উপর। কিন্তু যারা সরাকারী হাসপাতালে যায় তাদের কোন উপায় নেই অতি সামান্য কয়জন বাদে বেসরকারি হাসাপাতালে যাওয়ার। যারা বেসরকারি হাসপাতালে যায় তারা নগদ অর্থ ব্যায় করে চিকিৎসার জন্য। তারা সার্ভিস চায় সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এইখানে বাস্তবতা হলো বাংলাদেশ কোন হাসপাতাল স্হাপনার আইন নাই যেই আইনে বলা থাকবে একটা সঠিক সার্ভিস দেওয়ার জন্য হাসপাতাল কিভাবে বানাতে হবে। আর সেজন্য ভোক্তাদের দূর্ভোগ। ঢাকা সহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরে কোন হাসপাতাল নাই যারা একটা মানদন্ডের মাঝে পড়ে। এরকম হাসপাতালে আপনি যত ভাল ডাক্তার বা নার্স রাখেন রোগী কখনই সঠিক সার্ভিস পাবে না। স্বাস্হ্য সেবার মূল ভিত্তি হলো সবরকম সুযোগ সুবিধা সম্মিলিত একটা হাসপাতাল। কিন্তু সেটা আমাদের দেশে নাই। আমার জানা মতে বাংলাদেশে শুধু মাত্র একটা হাসপাতাল জেসিআই(JCI) স্বীকৃত। সেখানে ইন্ডিয়ায় ২৯টি, থাইল্যান্ড ৬২টি, সিংগাপুর ১৩টি, মালায়শিয়া ১৬টি। ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি চলে যাচ্ছে এই সব দেশে। সব যাচ্ছে বিদেশে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে। কিন্তু আমাদের সরকার এ ব্যাপারে বড়ই উদাসীন। আমরা বিদেশমুখিতায় বিশ্বের শীর্ষ দশ নাম্বারের মাঝে আছি যদিও অর্থনৈতিক সূচকে আমরা ১০০ এর উপরে। দেশের অর্থনীতিতে এর ব্যাপক ক্ষতির প্রভাব রয়েছে।
সমাধান
খুবই সহজ। এক মাসের মাঝে সম্ভব একটা কাঠামোগত আইন করা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার। কারন বাংলাদেশে কোন বিদ্যমান আইন নাই যা নিশ্চিত করে রোগীর চিকিৎসা সঠিক ভাবে হবে। হাসপাতাল অনুমতি তখনই পাবে যখন ঐ নিয়মের মাঝে তা তৈরী হবে। প্রথম ধাপে বিভাগীয় শহরকে তার পর অন্যান্য হাসপাতাল গুলোকে এই আইনগত কাঠামোর অধীনে আনা যাবে। স্বাস্হ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিবেন। এক্ষেত্রে বেসরকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কে বিনিয়োগ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই যে সব হাসপাতাল আইন মেনে হবে তাদের সুদ মুক্ত যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং ১০ বছর মেয়াদী ২% হারে লোন অনুমোদন দিবে। এটা করা কোন ব্যাপার না যেখানে ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার রোধ করা আমাদের লক্ষ্য। অবকাঠামো ঠিক ভাবে গড়ে উঠলে অবশ্যই রোগীর স্বাস্হ্য সেবা নিশ্চিত করা যাবে। বেসরকারি হাসপাতাল কে অবশ্যই নজর দিতে হবে।
চলবে…….
বিদেশমুখিতা
পর্ব ২: পরীক্ষার রিপোর্ট
এটা আমাদের জাতীয় চরিত্র। বিনোদন বলেন আর স্বাস্হ্য সংক্রান্ত বলেন। সব বিষয় আমাদের কাছে বিদেশ ভাল। এই ভাল লাগার মূল্য স্বরূপ আমাদের বাৎসরিক ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি মুদ্রা দেশ থেকে চলে যাচ্ছে স্বাস্হ্য ক্ষাতে। কারন টা কি?
আমার একান্ত নিজস্ব পর্যবেক্ষণ থেকে বলছি কিছু
কথা। রোগীদের বড় অনাস্হা। কিসের উপরঃ
১। হাসপাতাল
২। পরীক্ষার রিপোর্ট
৩। ডাক্তার
৪। নার্স
আজকে দ্বিতীয় পর্বে পরীক্ষা রিপোর্ট তথা প্যাথলজিকাল, রেডিওলোজিকাল ও অন্যান্য পরীক্ষার গুনগত মান ও রিপোর্ট এর সঠিকতা নিয়ে আমাদের অনাস্হা অনেক। বাস্তবতাও তাই বলে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রথম ও প্রধান কারন রোগীদের বিদেশমুখিতার কারন হলো সাধারণ চেক আপ ও চিকিৎসা পরবর্তী চেক আপ। এদেশের পরীক্ষায় আমাদের আস্হা নেই।
বাংলাদেশে জেসিআই (JCI) স্বীকৃত বড়জোর ৬টি ল্যাব আছে। ইন্ডিয়াতে ৪৫টি, থাইল্যান্ড এ ৫০টি, সিংগাপুর ১৩টি ও মালয়শিয়াতে ১৬টি। মানসম্মত ডায়াগনস্টিক সেন্টার না থাকলে কোন মতেই রোগ নির্নয় সুনিশ্চিত হওয়া যায় না। হৃদরোগ, স্নায়ুরোগ, ক্যানসার ও অন্যান্য ক্ষেত্রে খুবই জরুরী। সরকারি সংস্হার দুর্নীতির কারনে আমাদের মালিক পক্ষ সে সুযোগে অতি মুনাফা করছে। রিএজেন্ট যা পরীক্ষা করার জন্য অতি জরুরি তা অতি নিম্ন মানের হওয়াতে রিপোর্ট ঠিক মতো হচ্ছে না।
মেডিকেল টেকনিশিয়ান তৈরী করার ক্ষেত্রে কোন প্রকার মানদন্ড অনুসরন করা হচ্ছে না। যদিও আমাদের দেশের জনসংখ্যা অনেক হওয়াতে আমাদের জন্য তা আশির্বাদ। আমরা দক্ষ ল্যাব টেকনিশিয়ান তৈরী করে আভ্যন্তরীন চাহিদা মিটিয়ে দক্ষ জনশক্তি রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। এ ব্যাপারে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় অনেক সুযোগ রয়েছে কিন্তু স্বাস্হ্য মন্ত্রণালয়ের কোন স্বদিচ্ছা নাই এ ব্যাপারে।
কমিশন বানিজ্য— এটা বাস্তবতা। এ ব্যাপারে কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টার ব্যতিত সব সেন্টার জড়িত। সিংহভাগ ডাক্তার, নার্স, সেকমো, পল্লীচিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী, বিশেষ দালাল গোষ্ঠি যাদের মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ বলে তারা জড়িত । শুধু ডাক্তারদের ব্যাপারে আলোচনা হয় কিন্তু ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিয়ে কোন কথা হয় না। দেশের শীর্ষ এক ডায়াগনস্টিক সেন্টার এই প্রথা ৮০র দশকে চালু করে তা আজ ফ্যাসিজমে রূপ নিয়েছে। এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ অতি জরুরি। এবার বলি যারা বিদেশে যান সেসব দেশের ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল এই কমিশন বানিজ্য করে। তারা রীতিমতো বাংলাদেশে অফিস খুলে এই ব্যাবসা করছে।
সমাধান
আইনের সঠিক প্রয়োগ। কে করবে? সবাই ঘুষ নিচ্ছে বিশেষ করে স্বাস্হ্য অধিদপ্তর তো পোয়াবাড়। বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৯৫২৯। হাতেগোনা ১০টা বাদে সবাই ঘুষ ও কমিশন বানিজ্য করছে। পরিবর্তন হতেই হবে।
মানদন্ড মেনে ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলার জন্য সহজ করতে হবে বিনিয়োগ। ১০ বছর মেয়াদি ২% ঋণে লোন ও আমদানি শুল্কহার শূন্য মেশিন কেনার জন্য।
সব ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে মনিটর করা কমিশন বানিজ্য বন্ধ করার জন্য। বিভাগীয় শহরকে আগে ঠিক করে পর্যায়ক্রমে অন্যদের। সবার জানা কারা করে তাদেরকে আগে ধরতে হবে।
জনগনের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। যারা বিদেশে রোগ নির্নয় জন্য পরীক্ষা করেন তাদের কেও স্বল্প মূল্যে করেন না। যেই টাকা বিদেশে দেন সেটা এখানে দেওয়ার মানসিকতা আনতে হবে। সে জন্য অবশ্যই মান সম্মত করতে হবে সব সার্ভিস।
চলবে…
"বিদেশমুখিতা
পর্ব ৩ঃ ডাক্তার
এটা আমাদের জাতীয় চরিত্র। বিনোদন বলেন আর স্বাস্হ্য সংক্রান্ত বলেন। সব বিষয় আমাদের কাছে বিদেশ ভাল। এই ভাল লাগার মূল্য স্বরূপ আমাদের বাৎসরিক ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি মুদ্রা দেশ থেকে চলে যাচ্ছে স্বাস্হ্য ক্ষাতে। কারন টা কি?
আমার একান্ত নিজস্ব পর্যবেক্ষণ থেকে বলছি কিছু
কথা। রোগীদের বড় অনাস্হা। কিসের উপরঃ
১। হাসপাতাল
২। পরীক্ষার রিপোর্ট
৩। ডাক্তার
৪। নার্স
আজকের আলোচনায় সবার প্রিয় বিষয়। যে বিষয় সবাই কথা বলেন। এ বিষয় একটু বিশদভাবেই বলবো। দয়া করে ধৈর্য ধরে পড়ুন।
ডাক্তার হওয়ার প্রক্রিয়াটা আগে বলি।
প্রথম ধাপঃ আমাদের হাতে রিসার্চ ডাটা নেই তারপরেও নির্দিষ্ট করে বলা চলে বাংলাদেশে এই পেশায় একটা ছেলে বা মেয়ে আসে তার পরিবারের স্বপ্ন পূরনের জন্য। নিজস্ব লক্ষ্য নিয়ে আসে খুবই কম। তাদের এ বিষয় পড়শোনার এবং ভবিষৎ নিয়ে কোন রকম ধারনা নেই। তবে পরিবারের ধারনা ডাক্তারদের টাকা রাখার জায়গা নেই!!
বর্তমানে মেডিকেল পড়ার সিট আছে ১১,৬৭৫। প্রতিবছর গড়ে ১২০,০০০ জন প্রতিযোগিতা করে এখানে ভর্তি হওয়ার জন্য। মেডিকেল কলেজ আছে ১১৩টি। সরকারী ৩৯টি যেখানে ৫৩৮০ জন ভর্তি হতে পারে। বেসরকারী ৬৮টি যেখানে ৬০৪০ জন ভর্তি হতে পারে। বাংলাদেশ আর্মির ৬টি কলেজ যেখানে ৩৭৫ জন ভর্তি হতে পারে। সরকারী সংস্হা আছে যার নাম স্বাস্হ্য অধিদপ্তর যা এগুলো নিয়ন্ত্রন করে। আপনারা খেয়াল করেন মেডিকেল শিক্ষার ৫০% এর উপর বেসরকারী ক্ষাত। তার মানে ছাত্র- শিক্ষক ৫০% এর উপর বেসরকারী। কিন্তু সরকার আছে উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে শুধু সরকারী অংশ নিয়ে। তারা যারা অধিদপ্তরে আছেন তারা মনে করেন এবং প্রকাশও করেন যে বেসরকারী ক্ষাত হলো অচ্ছুত। এদের নিয়ে আবার কি চিন্তা ভাবনা। সরকারী হাসপাতাল আর কলেজের শিক্ষকদের নিয়ে মহাযজ্ঞ চালাচ্ছেন। এই হলো বাস্তবতা। কিন্তু বাস্তবতা হলো সরকারী পুরাতন ১৩টা বাদে বাকি গুলো বেসরকারী কলেজ থেকে অপ্রতুল পড়ার পরিবেশ নিয়ে চলছে। বেসরকারী কলেজ গুলো দেখার কেও নেই তবে বছর শেষে খাম নেওয়ার লোকের অভাব নেই। শুধু আশার আলো জুলাই-আগস্ট। পরিবর্তন হবে এই আশা করাটাও কেমন যেন অনিশ্চিত।
পড়া যেনতেন শেষ করে বর্তমান মোট ডাক্তারের সংখ্যা ১৩৪,৫৬৮ জন। কমপক্ষে ৮০০০ জন নতুন ডাক্তার প্রতিবছর যোগ হয়। পাশ করার পর তাদের স্বপ্ন দুইটা। এক উচ্চতর পড়াশোনা ও বিসিএস চাকুরি। এই দুইটা কয়জন পায় তার পরিসংখ্যান পাই নি। বেসরকারী হাসপাতালে চাকুরি করেন সবাই সেটা বলা যায় শুরুতে। গড়পড়তায় বেতন পায় ২৬,০০০ হাজার টাকা।যা ইন্ডিয়াতে ৬৫,০০০ হাজার টাকা , নেপাল ৫৫,০০০ হাজার টাকা, ভূটান ২২,০০০ হাজার টাকা, শ্রীলঙ্কা ২৫,০০০ হাজার টাকা, মালদ্বীপ ১,৫৪,০০০ টাকা, থাইল্যান্ড ২ লক্ষ টাকা, মালয়শিয়া ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা, সিঙ্গাপুর ৫ লক্ষ টাকা। বাংলাদেশি যারা এ দেশের ডাক্তারের ব্যাবহার জ্ঞান নিয়ে এতো শংকিত হয়ে যারা যে সব দেশে যান তারা একটু ভাবুন সে সব দেশের একজন মেডিকেল অফিসার আপনার কাছে আসে তার বেতন কতো। যেই নবীন ডাক্তার পরিবারের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্য ডাক্তার হয়েছেন কিন্তু তার বেতন কতো ২৬ হাজার টাকা মাত্র। তাকে আবার পড়তে হবে আরো জ্ঞান অর্জন করতে হবে। পোস্ট গ্রাজুয়েশন করতে বাংলাদেশে গড়ে দশ বছর লাগে। এমবিবিএস করে গড়ে ২৫ বছর। তারমানে ৩৫ বছরে এ বিশেষজ্ঞ হবেন। সরকারীতে আবার বিশেষজ্ঞ হয়ে কাজ করতে হয় মেডিকেল অফিসার পোস্টে। কিছু গবেষনায় দেখা গেছে ৪০% মেডিকেল স্টুডেন্ট মানসিক অবসাদে ভুগছেন। পোস্ট গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট ৩৫% ডিপ্রেশনে আছেন বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে। এই আমাদের অবস্হা। যারা কর্তাব্যক্তি এ ব্যাপারে তাদের এ ব্যাপারে কোন মাথা ব্যথা নাই। লিখতে থাকলে শেষ হবে না। শেষ কথা হলো মেডিকেল এডুকেশন চলছে হীরক রাজার অধীনে এর মূল উৎপাটন না করে সংস্কার হবে না।
দ্বিতীয় ধাপঃ ডাক্তার যখন হয়ে চাকুরি বা প্র্যাকটিসে আসা হলো। সমাজে চলতে পারে না। চারপাশে সবার প্রত্যাশা অনেক। তার উপর জাত বাংগালী যার কোন নৈতিকতার মূল্য নাই। সব কিছু মিলে চাইলেও সিংহভাগ পারে না নৈতিকতা টা বজায় রাখতে। হাসপাতালের ও চেম্বারের রোগীর দালাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ও ঔষুধ কোম্পানীর দৌরাত্বে ডাক্তারের যতই জ্ঞান ও দক্ষতা থাকুক সব কিছুই ম্লান হয়ে যায়। রোগীরা আবার আরেক বিস্ময়। তারা দালাল কে যে মূল্য দেয় ডাক্তারকে দেয় না। সবসমিলে নৈতিকতা আর থাকে না। এর মাঝে অবশ্যই একটা অংশ যুদ্ধ করে যাচ্ছে কিন্তু সমাজ সরকার সবাই তাদের অসহযোগিতা করছে। কে করবে এর সংস্কার??
তৃতীয় ধাপঃ যখনই সিনিয়র হয়ে যাই আমরা মনে করে আমি যেমন কষ্ট করেছি জুনিয়রদেরও তাই করতে হবে। আমার হাতে যখন সুযোগ আসলো পরিবর্তন করার তখন আমি তা করলাম না। সেই অবৈধ বানিজ্য করার যে সিন্ডিকেট দূর আর হয় না।
রাজনীতি। ডাক্তার বলেন আর যেই প্রফেশনাল বলেন কর্মক্ষেত্রে রাজনীতি নিষিদ্ধ করতেই হবে। রাজনীতি করতে চাইলে করেন তবে তা কর্মক্ষেত্রে নয় বরং জাতীয় রাজনীতিতে যান কোন আপত্তি নেই।
ডাক্তারের কাজটা কি? অনেকে অনেক রকম উত্তর দেন। আধুনিক মেডিসিনের একজন প্রবক্তা তা গত শতাব্দীতে বলে গেছেন। “One of the first duty of physician is to educate the masses not to take medicine”—William Osler 1849-1919. রুগীর রোগটা কি হয়েছে সেটা নির্নয় করা হচ্ছে মূলত একজন ডাক্তারে কাজ। রোগ ধরা পড়লে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দিবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো বাংলাদেশে প্রচলিত নিয়ম হলো ডাক্তার কাছে গেলাম কিন্তু ঔষধ লিখলো না এটা রোগীরা মানেন না। এটার সুযোগ নিয়েছে ঔষধ কোম্পানী গুলো। সাথে নৈতিকতা বিসর্জন দিয়েছে অধিকাংশ ডাক্তার বৃন্দ। এই বৃত্ত থেকে বের না হলে সঠিক রোগ নির্নয় সম্ভব না।
সবকিছুই প্রভাবিত করছে মানুষকে বিদেশমুখি করাতে। ডাক্তারদের দৈন্য দশায় রেখে সেবা আশা করা যায় না। অনাস্হা
সমাধানঃ
১। পাশ করা ডাক্তারদের শুরুর বেতন বাংলাদেশের বাজার অনুযায়ী ৭০ হাজার টাকা হওয়া জরুরী। মনে রাখতে হবে এমবিবিএস মানে ৫ বছর পড়া প্লাস ১ বছর ইন্টার্নশীপ মানে ৬ বছর।
২। ঔষুধ কোম্পানির একটা পোস্ট আছে যাকে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিটিভ (এমআর) বলে তা নিষিদ্ধ করতে হবে। ঔষধ কোম্পানি অবশ্যই মার্কেটিং করবে। আর তা উন্নত বিশ্বে চালু আছে। সে ভাবেই করবেন উনারা।
৩। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনৈতিক মার্কেটিং বন্ধ করতেই হবে।
৪। মেডিকেল এডমিশন এর প্রক্রিয়ায় বিশাল পরিবর্তন আনতেই হবে। কারন এ বিষয় পড়াশোনার জন্য অনেক বেশি মানসিক, শারিরীক ফিটনেস লাগে। কেন ডাক্তার হবে একজন তা না জেনে বুঝে আসলে তো হবে না। ৬ বছর শেষ করে আরো ১০ বছর পড়া লাগতে পারে এবং এই পড়া চলবে মৃত্যু পর্যন্ত।
৫। প্রাতিষ্ঠানিক প্র্যকাটিস চালু করতে হবে। সরকারীতে অবশ্যই লাগবে। বিএসএমএমইউ এর মতো প্রতিষ্ঠান কোন ভাবেই প্রাতিষ্ঠানিক প্র্যকাটিস ছাড়া চলতে পারে না।
চলব…"
বিদেশমুখিতা
পর্ব ৪ঃ নার্স
এটা আমাদের জাতীয় চরিত্র। বিনোদন বলেন আর স্বাস্হ্য সংক্রান্ত বলেন। সব বিষয় আমাদের কাছে বিদেশ ভাল। এই ভাল লাগার মূল্য স্বরূপ আমাদের বাৎসরিক ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি মুদ্রা দেশ থেকে চলে যাচ্ছে স্বাস্হ্য ক্ষাতে। কারন টা কি?
আমার একান্ত নিজস্ব পর্যবেক্ষণ থেকে বলছি কিছু
কথা। রোগীদের বড় অনাস্হা। কিসের উপরঃ
১। হাসপাতাল
২। পরীক্ষার রিপোর্ট
৩। ডাক্তার
৪। নার্স
আজকের লেখার বিষয় নার্স ও আনুসাংগিক বিষয়ে। এই ক্ষেত্রের অবস্হা খুবই শোচনীয়। স্বাস্হ্য পরিষেবায় নার্সের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে বেশি অধপতন হয়েছে এ খাতে। পড়াশোনা ও কর্মদক্ষতার দিকে এক্ষেত্রে কোন উন্নত হয় নি। তদুপরি অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো এতো বেশি রাজনৈতিক করণ হয়েছে যে তা বলার বাইরে। হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসায় সবচেয়ে কাছে থাকে নার্স। তাদের অবদান অনেক বেশি। তাদের কর্মদক্ষতার কোন কমতি থাকার অবকাশ নেই।
একটু আলোকপাত করি বর্তমানে আমাদের দেশে নার্সদের সংখ্যা কতো তার উপর। ২০২৩ এর হিসাব মতে নার্সের সংখ্যা ৮৫,০০০ হাজার মাত্র। ডাক্তার নার্স অনুপাত হলো ১ঃ০.৭৫। মানদন্ড অনুযায়ী হওয়ার কথা ১ঃ৩। অসম্ভব ঘাটতির মাঝে চলছে আমাদের স্বাস্হ্য ক্ষাত। এক পরিসংখ্যনা অনুযায়ী ৪৬% সরকারি হাসপাতাল এ কাজ করেন। বেসরকারি হাসপাতালে সেই তুলনায় নার্স খুবই অপ্রতুল। বাংলাদেশে নার্স হতে গেলে দুইটি ধারা আর তা হলো বিএসসি নার্সিং ও ডিপ্লোমা নার্সিং এবং মিডওয়াইফারি। সরকারি ক্ষাতে ডিপ্লোমা নার্সিং কলেজ ৪৩ টি, বিএসসি ৭টি। বেসরকারি ডিপ্লোমা সেন্টার ৫৬ ও বিএসসি কলেজ ১৯টি।
বেতন খুবই অপ্রতুল। মাসিক ১৫-২৫ হাজারের মতো বেসরকারি ক্ষাতে। থাইল্যান্ড এ ১০০,০০০টাকা, সিঙ্গাপুর এ ২৫০,০০০টাকা, মালয়শিয়া ৮০,০০০টাকা, ইন্ডিয়া ২৮,০০০টাকা। শিক্ষায় আমাদের কোন নজর নাই স্বাস্হ্য অধিদপ্তরের। শুধু কয়েকটা সরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়ে তারা ব্যাস্ত কিন্তু বাস্তবে সেটার কোন ফলাফল নাই।
আর বিশেষ কিছু লিখবো না এই জন্য যে নির্ধ্বিধেয় বলা যায় যে আমাদের নার্সিং পেশায় অব্যবস্হপনার সীমা নাই। এটা নিয়ে জরুরী কিছু না করলে দেশের স্বাস্হ্য ক্ষাত আরো খারাপ হবে। এই নার্সিং শিক্ষাকে উন্নয়ন করলে যে শুধু দেশের স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন হবে না বরং অনেক দেশে আমরা দক্ষ জনশক্তি রফতানির মাধ্যমে প্রচুর রেমিটেন্স পাওয়া যাবে।
নার্সিং একটা মহৎ পেশা সেটাই আমরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি নাই এ পর্যন্ত।
এখানে আরেকটা জরুরী বিষয় হলো মেডিকেল টেকনিশিয়ান ও টেকনোলজিস্ট। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুবই পিছনে আছে। সমন্নিত কোন পরিকল্পনা নাই। কিন্তু সারাবিশ্বে এর চাহেদা ব্যাপক। এই দিকেও নজর দিতে হবে।
সমাধানঃ
সবাইকে নিয়ে বসে খুব দ্রুত ৫ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানদন্ড করে নার্সিং, টেকনোলজিস্ট ও টেকনিশিয়ান তৈরী করতে হবে। স্বল্প মেয়াদি কোর্সের দিকে নজর দিতে হবে। আমূল পরিবর্তন দরকার এই ক্ষাতে।
“I never gave or took any excuse” …Florence Nightingale
এই দীক্ষার আলোকে নার্স তৈরী করতে হবে।
চারপর্ব শেষ তবে শুরু দরকার পরিবর্তনের। কে করবে সেটাই চিন্তার বিষয়।
Call now to connect with business.