11/12/2024
আমরা শরীর বন্ধ করা বলতে বুঝি, জ্বীন-শয়তান, যাদু-টোনা ও অন্যান্য কষ্টদায়ক বিষয় থেকে নিরাপত্তা লাভের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ ক্ষেত্রে অনেকের ধারনা, শরীর বন্ধ করতে হলে বুঝি তাবিজ, তাগা, (কবিরাজের দেওয়া) আংটি ইত্যাদি কোনো জিনিষ ব্যবহার করতে হয়। অথচ শরীর বন্ধ বা নিজের নিরাপত্তালাভের জন্য এসব তাবিজ-কবচের ব্যবহার সুন্নাহসম্মত কোনো পদ্ধতি না। এমন কি ফকির-কবিরাজদের দেওয়া অধিকাংশ তাবিজই সরাসরি শিরকের অন্তর্ভুক্ত থাকে। আর হাদিসে এসেছে—
উকবা বিন আমের রা. বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “যে তামিমাহ (তাবিজ-কবজ) ঝুলালো,আল্লাহ তাকে পূর্ণতা দেবেন না, আর যে শঙ্খ ঝুলালো আল্লাহ তাকে নিরাপত্তা দিবেন না।" (আহমদ:১৬৯৫১, হাকেম:৪/২১২)
সুতরাং শরীর বন্ধের জন্য তাবিজ-কবচের ব্যবহার সুন্নাহসম্মত কোনো রীতি নয়। এ জন্য প্রতিটি মুসলিমের উচিত নিজের নিরাপত্তালাভের জন্য কুরআন-হাদিসে বর্ণিত পদ্ধতি অবলম্বন করা। নিম্নে কিছু আমল দেওয়া হলো। শরীর বন্ধের নিয়তে এগুলোর ওপর আমল করতে পারি:
সকাল-সন্ধ্যার বিশেষ কিছু মাসনুন আমল :
➡️ ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর নিম্নে বর্ণিত আমলগুলো করবেন:
১. সকাল-সন্ধ্যায় ৩ বার পড়বেন:
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
উচ্চারণ: আউজু বিকালিমা তিল্লা–হিত তাম্মা–তি মিং শাররি মা খলাক।
অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে তাঁর পরিপূর্ণ বাক্যের উসিলায় তাঁর সমস্ত সৃষ্টির অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি [মুসলিম ও তিরমিজি]
২. সকাল-সন্ধায় ৩ বার পড়বেন:
بِسْمِ اللّهِ الَّذِيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِه شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيمُ
উচ্চারণ: বিসমিল্লা–হিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিসসামা–ই ওয়াহু ওয়াস সামিউল আলীম।
অর্থ: সেই আল্লাহর নামে, যার নামের বরকতে আসমান ও জমীনের কোন কিছুই কোন ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।
[তিরমিজি,৩৩২৪ : হাসান ও সহিহ, আবু দাউদ, নাসায়ি ও ইবনে মাজাহ]
৩. সকাল-সন্ধায় ৭ বার পড়বেন:
حَسْبِيَ اَللّهُ لَآ اِلهَ أِلأَّ هُؤَ عَلَيْهِ تَؤَكَّلْتُ ؤَهُؤَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
উচ্চারণ : হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়া, আলাইহি তাওয়াক্কালতু, ওয়াহুয়া রব্বুল আরশিল আজীম।
অর্থ : আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নাই, আমি তার উপরই নির্ভর করছি আর তিনি মহান আরশের অধিপতি [মুসনাদে আহমাদ]
৪. সকাল-সন্ধ্যায় একবার করে আয়াতুল কুরসি পড়বেন। এরপর তিন কুল (সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়বেন।
⏩ বি: দ্র: এই আমলগুলো ছাড়াও আরও দোয়া রয়েছে। তবে নিজের নিরাপত্তার জন্য সকাল-সন্ধ্যার এই আমলগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
➡️ রাতে ঘুমের আগে বিছানায় এই আমলগুলো করবেন:
১. অজু করে ঘুমাবেন, তাহলে ফেরেশতারা আপনার নিরাপত্তার জন্য দোয়া করতে থাকবে।
২. ডান কাত হয়ে ঘুমাবেন।
৩. শোয়ার পূর্বে কোন কাপড় বা ঝাড়ু দিয়ে বিছানা ঝেড়ে নিবেন। [সহিহ মুসলিম]
৪. এক বার আয়াতুল কুরসি ও সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়ে নিবেন। (বুখারি)
৫. সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়ে হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নিবেন। (বুখারি)
৬. নিম্নে বর্ণিত দুটি দোয়া ৩ বার করে পড়বেন—
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
উচ্চারণ: আউজু বিকালিমা–তিল্লা–হিত তাম্মা–তি মিং শাররি মা খলাক
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ، مِنْ غَضَبِهٖ وَعِقَابِهِ، وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ، وَأَنْ يَّحْضُرُوْنِ
উচ্চারণ : আউজু বিকালিমা–তিল্লা–হিত তাম্মা–তি মিন গদাবিহি ওয়া ঈকা বিহী,ওয়া শাররি ঈবাদিহী, ওয়া মিন হামাজা তিশ শায়াতীনি ওয়া আই ইয়াহদ্বুরূন।
➡️ টয়লেটে ঢুকার পূর্বে নিম্নে বর্ণিত দোয়াটি পড়ে নিবেন—اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা, মিনাল খুবসি ওয়াল খবা-ইছ।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি খারাপ জিন ও খারাপ পরী থেকে। [সহিহ মুসলিম, ৩৭৫]
❌বিঃদ্রঃ আরবি শব্দের উচ্চারণ কখনই বাংলায় পরিপূর্ণভাবে আদায় করা যায় না। তাই বাংলায় এই দোয়াগুলোর উচ্চারণ না পড়ে আরবি শুদ্ধ উচ্চারণ শিখে নিবেন।