27/08/2025
চিকিৎসক এবং চিকিৎসা নিয়ে আলাপ, আলোচনা ও পর্যালোচনা
সুচিপএঃ
০১. চিকিৎসক সম্পর্কে পারম্ভিক আলোচনা ০২. চিকিৎসক বা ডাক্তারের ভুমিকা ০৩. চিকিৎসক বা ডাক্তার এর গুরুত্ব ০৪. চিকিৎসক বা ডাক্তার সম্পর্কে ১০ গুরুত্বপুর্ন বাক্য ০৫. চিকিৎসক কারা এবং চিকিৎসা কি ০৬. চিকিৎসা বিজ্ঞান কি ০৭. চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক কে ০৮. চিকিৎসক কাকে বলে ০৯. চিকিৎসা কাকে বলে ১০. চিকিৎসা কত প্রকার ১১. চিকিৎসকের প্রকারভেদ ১২. প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি ১৩. চিকিৎসক বা ডাক্তারের প্রধান কাজ ১৪. চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে সম্পর্ক ১৫. চিকিৎসক বা ডাক্তারের গুরুত্ব ১৬. উপসংহার
বিস্তারিত আলোচনাঃ
০১). চিকিৎসক বা ডাক্তার সম্পর্কে পারম্ভিক আলোচনাঃ
মৃত্যুকে মানুষ জয় করতে পারে নি, কিন্তু ব্যাধিকে জয় করার চেষ্টা করে এসেছে আদি কাল থেকেই। এই মহৎ প্রচেষ্টায় অনেকে যেমন সফল হয়েছেন, তেমনই আবার .অনেকেই বিফল হয়েছেন।
চিকিৎসক বা ডাক্তার একটি সম্মানজনক এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পেশা। চিকিৎসক বা ডাক্তাররা অসুস্থ ব্যক্তিদের বা রোগীদের রোগ নির্ণয় করেন, চিকিৎসা প্রদান করেন এবং প্রতিরোধে সহায়তা করেন। তারা রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে, মেডিসিন লিখে দেন, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দেন, অকুপেশনালথেরাপি চিকিৎসা দেন, স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি চিকিৎসা দেন, প্রয়োজনে অস্ত্রোপচার করেন এবং রোগের বিস্তার রোধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
চিকিৎসক বা ডাক্তারদের প্রধান কাজগুলো হলো:
রোগ নির্ণয়: অসুস্থতার কারণ খুঁজে বের করা এবং রোগ শনাক্ত করা।
চিকিৎসা প্রদান: রোগীকে সুস্থ করার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা প্রদান করা, যেমন ওষুধ দেওয়া বা থেরাপি দেওয়া।
অস্ত্রোপচার: প্রয়োজনে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রোগের চিকিৎসা করা।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা: রোগ যেন না হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যেমন টিকাদান বা স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য পরামর্শ দেওয়া।
চিকিৎসক বা ডাক্তাররা সাধারণত বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হন, যেমন:
সাধারণ চিকিৎসক (General Physician): সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির চিকিৎসা করেন।
শিশু বিশেষজ্ঞ (Pediatrician): শিশুদের স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলির চিকিৎসা করেন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ (Physician): অভ্যন্তরীণ রোগগুলির চিকিৎসা করেন।
সার্জন (Surgeon): অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা করেন।
বিভিন্ন রোগের বিশেষজ্ঞ (Specialist): যেমন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, চর্মরোগ, ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, ইত্যাদি।
ডাক্তার হওয়ার জন্য দীর্ঘ এবং কঠোর অধ্যবসায়ের প্রয়োজন। একটি মেডিকেল ডিগ্রি অর্জনের পর, ডাক্তারদের বা চিকিৎসকদের সাধারণত বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে হয় এবং লাইসেন্স অর্জন করতে হয়। এই পেশায় সফল হতে হলে, চিকিৎসক বা ডাক্তারদের অবশ্যই সহানুভূতিশীল, অধ্যবসায়ী এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হয়।
চিকিৎসক বা ডাক্তার হলেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি চিকিৎসা প্রদান এবং স্বাস্থ্যসেবার সাথে জড়িত। ডাক্তাররা রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা এবং রোগীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কাজ করেন। তাদের কাজ মানুষের জীবন রক্ষা এবং সুস্থ করে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
চিকিৎসক বা ডাক্তার হলেন তারা, যারা অসুস্থ মানুষের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করেন। তারা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করে মানুষের কষ্ট দূর করেন। ডাক্তাররা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং তাদের জ্ঞান ও সেবার মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। ডাক্তার" শব্দের অর্থ হল যিনি চিকিৎসা করেন বা যিনি ডাক্তারী পেশার সাথে যুক্ত। এটি ইংরেজি শব্দ "doctor" এর বাংলা প্রতিশব্দ। সাধারণত, ডাক্তার বলতে সেই ব্যক্তিকে বোঝায় যিনি অসুস্থ মানুষের চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন।
০২). চিকিৎসক বা ডাক্তারদের ভূমিকাঃ
রোগ নির্ণয়:
ডাক্তাররা রোগের লক্ষণ এবং পরীক্ষার মাধ্যমে রোগের সঠিক কারণ নির্ণয় করেন।
চিকিৎসা:
রোগ নির্ণয়ের পর ডাক্তাররা উপযুক্ত চিকিৎসা প্রদান করেন, যার মধ্যে ওষুধ, থেরাপি বা অস্ত্রোপচার অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা:
ডাক্তাররা রোগীদের স্বাস্থ্যবিধি, রোগ প্রতিরোধ এবং সুস্থ জীবনযাপন সম্পর্কে পরামর্শ দেন।
রোগ প্রতিরোধ:
ডাক্তাররা রোগের কারণ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করে এবং রোগের বিস্তার রোধ করার জন্য পদক্ষেপ নেন।
বিশেষজ্ঞতা:
কিছু ডাক্তার বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হন, যেমন হৃদরোগ, ক্যান্সার, চর্মরোগ, ফিজিওথেরাপি, মেডিসিন।
০৩). চিকিৎসক বা ডাক্তারদের গুরুত্ব:
ডাক্তাররা মানুষের জীবন বাঁচান এবং তাদের সুস্থ করে তোলেন।
তারা সমাজে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ডাক্তাররা রোগীদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করেন এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও সহায়তা করেন।
ডাক্তাররা গবেষণা এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন।
ডাক্তারদের কাজের মাধ্যমে সমাজের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরও উন্নত হয়।
০৪). চিকিৎসক বা ডাক্তার সম্পর্কে ১০টি বাক্য দেওয়া হলো:
১. চিকিৎসক বা ডাক্তাররা অসুস্থ মানুষের সেবাদানকারী, যারা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় পারদর্শী।
২. তারা রোগের কারণ অনুসন্ধান করে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা প্রদান করে।
৩. চিকিৎসক বা ডাক্তাররা তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচান।
৪. চিকিৎসকগন রোগীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে কাজ করেন।
৫. চিকিৎসক বা ডাক্তাররা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং তাদের সম্মান করা উচিত।
৬. চিকিৎসা পেশা একটি সেবামূলক পেশা, যেখানে ডাক্তাররা রোগীদের কষ্ট লাঘব করেন।
৭. একজন ভালো ডাক্তার শুধু রোগীকে সুস্থ করাই নয়, বরং তাদের মানসিক স্বস্তিও দেন।
৮. ডাক্তাররা সমাজের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেন।
৯. তাদের সেবার মাধ্যমে মানুষ রোগমুক্ত জীবন যাপন করতে পারে।
১০. চিকিৎসক বা ডাক্তারদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা থাকা উচিত।
০৫). চিকিৎসক কারা এবং চিকিৎসা কিঃ
"চিকিৎসক" (Chikitsôk) এবং "চিকিৎসা" (Chikitsa) দুটি বাংলা শব্দ যা যথাক্রমে চিকিৎসক এবং চিকিৎসা উভয়কেই বোঝায়। চিকিৎসক হলেন সেই ব্যক্তি যিনি রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা করেন, আর চিকিৎসা হলো রোগের প্রতিকার বা রোগের অবস্থার উন্নতির জন্য গৃহীত ব্যবস্থা।
চিকিৎসক (Chikitsôk):
সাধারণত ডাক্তার বা চিকিৎসক বলতে সেই ব্যক্তিকে বোঝায় যিনি রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
চিকিৎসা (Chikitsa):
চিকিৎসা বলতে বোঝায় রোগ বা আঘাতের কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলির সমাধান করার জন্য গ্রহণ করা পদ্ধতি বা ব্যবস্থা।
উদাহরণস্বরূপ, একজন "ডাক্তার" (চিকিৎসক) রোগের কারণ অনুসন্ধান করেন এবং "চিকিৎসা" (চিকিৎসা) পদ্ধতির মাধ্যমে সেই রোগ নিরাময়ের চেষ্টা করেন।
০৬). চিকিৎসা বিজ্ঞান কিঃ
চিকিৎসা বিজ্ঞান (Medical Science) হল স্বাস্থ্য বিজ্ঞান (Health Science) এর একটি শাখা, যা রোগ ও আঘাতের অধ্যয়ন, রোগ নির্ণয়, এবং চিকিৎসার মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্য বজায় রাখা বা পুনরুদ্ধার করার সাথে সম্পর্কিত। এটি রোগ এবং তাদের চিকিৎসার জ্ঞান এবং সেই জ্ঞান প্রয়োগের একটি শিল্প বা কৌশল।
০৭). চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক কেঃ
হিপোক্রেটিস কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি প্রাচীন গ্রীক চিকিৎসক ছিলেন, যিনি গ্রীসের শাস্ত্রীয় যুগে বসবাস করতেন এবং তাকে প্রায়শই "চিকিৎসার জনক" বলা হয়।
একজন চিকিৎসক , চিকিৎসক ( ব্রিটিশ ইংরেজি ), মেডিকেল ডাক্তার , বা সাধারণভাবে ডাক্তার হলেন একজন স্বাস্থ্য পেশাদার যিনি ওষুধের অনুশীলন করেন, যা অধ্যয়ন , রোগ নির্ণয় , পূর্বাভাস এবং রোগ , আঘাত এবং অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতার চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাস্থ্যের প্রচার, বজায় রাখা বা পুনরুদ্ধার করার সাথে সম্পর্কিত।
লাতিন ভাষায় মেডিকাস শব্দ থেকে "আরোগ্য লাভে সক্ষম," "যিনি যত্ন নেন, আরোগ্য" চিকিৎসক শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। পারিভাষিক শব্দ হিসেবে এটি ফরাসী ভাষায় আরবি طبيب (তাবিব) শব্দের মাধ্যমে অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
০৮).চিকিৎসক কাকে বলেঃ
চিকিৎসক বা ডাক্তার হলেন এমন একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার, যিনি চিকিৎসাশাস্ত্র অনুশীলন করেন। যাঁদের পেশা হল শারীরিক বা মানসিক রোগ, আঘাত বা বিকারের নিরীক্ষণ, নির্ণয় ও নিরাময়ের দ্বারা মানুষের স্বাস্থ্য বজায় রাখা বা পুনর্বহাল করা। তারা রোগ, আঘাত এবং অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা নির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রতিরোধে কাজ করেন। এছাড়াও, চিকিৎসকরা রোগের কারণ অনুসন্ধান করেন, রোগের পূর্বাভাস দেন এবং মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন।
এঁদের মধ্যে কেউ যদি কোন বিশেষ প্রকারের রোগ (যেমন স্নায়ুরোগাদি, মধুমেহ, হৃদরোগ ইত্যাদি) বা রোগী (যেমন শিশু, পোয়াতি, বৃদ্ধ ইত্যাদি) বা চিকিৎসা পদ্ধতির (যেমন স্নায়ুশল্যচিকিৎসা, ফিজিওথেরাপি ইত্যাদি) চর্চার প্রতি নিবিষ্ট হন তাদের সেই রোগ বা রোগী প্রকার বা পদ্ধতির বিশেষজ্ঞ বা স্পেশালিস্ট বলা হয়।
অন্যরা যাঁরা ব্যক্তিকেন্দ্রিক, পরিবারকেন্দ্রিক, জনগোষ্ঠীকেন্দ্রিক ইত্যাদি বিভিন্ন ভিত্তিতে, বয়স রোগ নির্বিশেষে, ক্রমান্বয়ে বা সর্বতোভাবে সাধারণ মানুষের নানারকম রোগবিকারাদির সাধারণ চিকিৎসা করে থাকেন তাদের জেনারাল প্র্যাক্টিশনার বলা হয়।
চিকিৎসার সঠিক ব্যবহার শুধু চিকিৎসাবিজ্ঞানের বুনিয়াদী পঠনভিত্তিক জ্ঞানের উপরেই নির্ভর করে না, বরং এর কার্যকারিতা ও প্রচলন প্রায় সম্পূর্ণরূপেই নির্ভর করে এই বিজ্ঞানকে পরিশীলিতভাবে প্রয়োগ করবার তথা ফলিত কলাবিদ্যায় পারদর্শীতার উপর। । চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য সেবার অন্যান্য পেশাদারী ব্যক্তিদের যথাঃ নার্স,পরীক্ষাগারের কর্মী, ঔষধশিল্পের সাথে জড়িত ফার্মাসিস্ট ও কেমিস্ট, মেডিক্যাল রিপ্রেসেন্টেটিভ ইত্যাদি সাথেও অত্যন্ত নিবিড়ভাবে জড়িত।
সংক্ষেপে, চিকিৎসক হলেন যিনি রোগ নিরাময় এবং মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য চিকিৎসা বিষয়ক জ্ঞান ও দক্ষতা ব্যবহার করেন।
০৯). চিকিৎসা কাকে বলেঃ
চিকিৎসা বলতে শারীরিক বা মানসিক রোগ, বিকার বা বৈকল্যে আক্রান্ত কিংবা শারীরিক আঘাতপ্রাপ্ত রোগীর স্বাস্থ্যের অবস্থা উন্নতি করা, রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, কিংবা ভবিষ্যৎ রোগ প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে প্রণালীবদ্ধ সেবা, শুশ্রূষা ও ব্যবস্থাপনাকে বোঝায়। ইংরেজিতে একে "মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট" (Medical treatment) বলা হয়।
নিবন্ধিত চিকিৎসক বা পেশাদার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দ্বারা শুধুমাত্র রোগ পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ প্রদানকে চিকিৎসা বলা হয় না। রোগ নির্ণয়কারী পরীক্ষা (যেমন রক্ত পরীক্ষা, রঞ্জন রশ্মিচিত্র গ্রহণ, কিংবা রোগ নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে কোনও ঔষধ প্রদান, ইত্যাদি) সম্পাদন করাকেও চিকিৎসার সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। প্রাথমিক চিকিৎসা-ও (ইংরেজিতে ফার্স্ট এইড) সংকীর্ণ অর্থে চিকিৎসার মধ্যে পড়ে না।
১০). চিকিৎসা কত প্রকারঃ
উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য অনুযায়ী চিকিৎসাকে মূলত তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। এগুলি হল আরোগ্যমূলক বা নিরাময়মূলক বা প্রতিকারমূলক বা সক্রিয় চিকিৎসা। (Curative বা Therapeutic), প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা (Prophylactic) এবং প্রশমনমূলক (উপশমমূলক) চিকিৎসা (Palliative)।
১১). চিকিৎসকের প্রকাভেদঃ
চিকিৎসকদের প্রধানত দুইটি দলে ভাগ করা যায়:
প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী চিকিৎসক
বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী চিকিৎসকঃ
একজন প্রাথমিক সেবাপ্রদানকারী চিকিৎসক গুরুতর নয় এমন স্বাস্থ্য সমস্যা বা রোগের চিকিৎসা করেন, স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত প্রশ্নাদির উত্তর প্রদান করেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা (চেক-আপ) করেন, নিয়মমাফিক চিকিৎসা ও পরীক্ষা (যেমন রক্তে গ্লুকোজ বা কোলেস্টেরলের মাত্রা) সম্পাদন করেন, প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রতি রোগীকে নির্দেশনা দান করেন এবং কোনও ব্যক্তির চিকিৎসা-সংক্রান্ত নথি-বিবরণী গুছিয়ে রাখতে সাহায্য করেন। ইংরেজিতে এদেরকে "প্রাইমারি কেয়ার ফিজিশিয়ান" (Primary care physician, সংক্ষেপে P*P) বলা হয়।
প্রাথমিক সেবাপ্রদানকারী চিকিৎসকদেরকে আবার কয়েকটি উপদলে ভাগ করা যায়, যথা - সাধারণ চিকিৎসক, পারিবারিক চিকিৎসক, অন্তররোগ বিশেষজ্ঞ, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং জরারোগ বিশেষজ্ঞ।
১২). প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিঃ
আয়ুর্বেদ ও ইউনানী চিকিৎসা এবং হোমিওপ্যাথির জনপ্রিয়তা বাংলাদেশ, ভারতে রয়েছে ও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা জাতীয় চিকিৎসা নীতির আওতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় উপমহাদেশেও বিখ্যাত হয়ে আছেন। বৈদ্য, কবিরাজ, হাকীম এবং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক এবং ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক নামেই স্ব-স্ব চিকিৎসা পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্টরা পরিচিতি পেয়ে থাকেন।
ব্যাচেলর অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন এন্ড সার্জারী (বিএইচএমএস) , ব্যাচেলর অব আয়ুর্বেদ মেডিসিন এন্ড সার্জারী (বিএএমএস) ও ব্যাচেলর অব ইউনানী মেডিসিন এন্ড সার্জারী (বিইউএমএস) তিনটি পৃথক ডিগ্রীর প্রচলিত আছে। এছাড়াও চার বছর মেয়াদে ডিপ্লোমা কোর্স করে বাংলাদেশ বোর্ড অফ ইউনানী এন্ড আয়ুর্বেদিক সিস্টেমস অফ মেডিসিন কর্তৃক সনদপ্রাপ্ত হয়ে তারা বৈধভাবে চিকিৎসা শাস্ত্র রোগীর উপর প্রয়োগ করেন ও নিজেদেরকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দেন।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা বিজ্ঞান খুবই গুরুত্বপূর্ণ শাখা। বিভিন্ন দেশে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার উপর ডিপ্লোমা, গ্রাজুয়েশন ও পোষ্ট গ্রাজুয়েশনসহ ডক্টরেট ডিগ্রী রয়েছে। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে শারীরিক অক্ষমতা ও ব্যথা জনিত সমস্যা থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। যারা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রদান করেন তারা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক, ওনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদ থেকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা বিষয়ে পাঁচ বছর ( তত্ত্বীয় চার বছর ও ইনটা্রন এক বছর) পড়াশোনা করেন। এ ছাড়া ও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের সহকারী হিসাবে সহায়তা করার জন্য ৩-৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স রয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান সহ দক্ষিণ এশিয়ার এর চিকিৎসা চালু রয়েছে।
চিকিৎসক বা ডাক্তারের প্রধান কাজ হল অসুস্থ বা আহত ব্যক্তিদের রোগ নির্ণয় করা, চিকিৎসা করা এবং তাদের সুস্থ করে তোলা। তারা রোগের কারণ অনুসন্ধান করে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা প্রদান করে, যা শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্যকে অন্তর্ভুক্ত করে।
১৩). চিকিৎসক বা ডাক্তারের প্রধান কাজগুলো হলঃ
রোগ নির্ণয়: রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ বিশ্লেষণ করে এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা।
চিকিৎসা প্রদান: রোগ নির্ণয়ের পর, ডাক্তাররা উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন ওষুধ সেবন, ফিজিওথেরাপি, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রোগীর চিকিৎসা করেন।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা: চিকিৎসক বা ডাক্তাররা রোগের বিস্তার রোধ করার জন্য স্বাস্থ্যবিধি, টিকাদান এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
রোগীর স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ: চিকিৎসক বা ডাক্তাররা রোগীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ দেন, যেমন সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম এবং রোগের ঝুঁকি কমানোর উপায়।
অস্ত্রোপচার: কিছু ডাক্তার, যেমন সার্জন, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রোগের চিকিৎসা করেন।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: অনেক সময় চিকিৎসক বা ডাক্তাররা বিশেষ রোগের জন্য রোগীদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে রেফার করেন।
রোগীর ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা: চিকিৎসক বা ডাক্তাররা রোগীর স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য, যেমন রোগের ইতিহাস, চিকিৎসার বিবরণ ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করেন। সংক্ষেপে, চিকিৎসক বা ডাক্তাররা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকেন, যা রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
১৪). ডাক্তার ও রোগীর মর্ধ্যকার সম্পর্কঃ
চিকিৎসক বা ডাক্তার এবং রোগীর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। এই সম্পর্ক বিশ্বাস, সম্মান এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। ডাক্তার রোগীর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং তাদের রোগের সঠিক চিকিৎসা প্রদানে সচেষ্ট হন। একই সাথে, রোগীকেও ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করতে এবং তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
১৫). চিকিৎসক বা ডাক্তারদের গুরুত্বঃ
রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা: ডাক্তাররা রোগের কারণ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা প্রদান করেন, যা রোগীকে সুস্থ করে তোলে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষার পরামর্শ: ডাক্তাররা স্বাস্থ্যবিধি এবং রোগ প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন: ডাক্তাররা শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যেরও যত্ন নেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন।
জীবন বাঁচানো: ডাক্তাররা গুরুতর অসুস্থ বা আহত ব্যক্তিদের জীবন বাঁচানোর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।
সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল: ডাক্তাররা সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কাজ করেন।
একজন ভালো ডাক্তার হতে হলে কিছু গুণাবলী থাকা প্রয়োজন, যেমন:
দক্ষতা: ডাক্তারদের রোগের লক্ষণ, কারণ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকতে হয়।
সহানুভূতি: রোগীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং তাদের কষ্ট অনুভব করা একজন ডাক্তারের জন্য জরুরি।
যোগাযোগ দক্ষতা: ডাক্তারদের রোগীদের সাথে স্পষ্টভাবে কথা বলতে এবং তাদের সমস্যা বুঝতে পারা প্রয়োজন।
ধৈর্য: রোগীদের সেবায় ডাক্তারদের যথেষ্ট ধৈর্যশীল হওয়া উচিত।
দায়িত্বশীলতা: ডাক্তারদের তাদের কাজের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।
১৬). উপসংহারঃ
ডাক্তাররা সমাজের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারা আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিবেদিতভাবে কাজ করেন। তাদের সেবা ছাড়া একটি সুস্থ সমাজ কল্পনা করা যায় না।
ডাক্তাররা সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং তাদের কাজ মানব জীবনের জন্য অপরিহার্য। তাদের নিষ্ঠা, জ্ঞান এবং সেবার মাধ্যমে সমাজ সুস্থ ও সুন্দর হয়ে ওঠে।
ডাক্তার হলেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত এবং মানুষের রোগ নিরাময়ে কাজ করেন। ডাক্তাররা অসুস্থ ব্যক্তিদের রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা রোগ প্রতিরোধ এবং সুস্থ জীবনযাপনের জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
লেখকঃ প্রফেসর ডাঃ মোঃ আবু সালেহ আলমগীর বি পি টি, এম ডি, এম পি এইচ, এম ডি এম আর, পি এইচ ডি কনসালটন্টে ও বিভাগীয় প্রধানঃ ফিজিওথেরাপি মেডিসিন এন্ড রি-হ্যাবিলিটেশন বিভাগ সাফা মারওয়া হাসপাতাল লিমিটেড, যাএাবাড়ী মোড়, যাএাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪ মোবাইলঃ ০১৬ ৪১৫৭৬৭৮৭, ০১৭ ৩৮৩৯৪৩০৯