15/06/2020
অক্সিজেন থেরাপি এবং প্রোন পজিশন
কোভিডে আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন থেরাপি এবং প্রোন পজিশনিং এখন পর্যন্ত সর্বমহল স্বীকৃতি চিকিৎসা পদ্ধতি।এ দুটো ছাড়া বাকী সকল বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে।এবং অনেকগুলো নামকরা চিকিৎসা পদ্ধতি, যা এই মুহুর্তে বড় বড় সেন্টার গুলোতে চলছে , সেগুলো ও কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো কঠোর ভাবে নিরুৎসাহিত করা হবে এবং বলা হবে ডেংগুতে যেমন ফ্লুইড, কোভিডে তেমন অক্সিজেন আর উপুর হয়ে শুয়ে থাকাই নিশ্চিত চিকিৎসা। বাকি সব সাপোর্টিভ।
অক্সিজেন লাগবে কখন? যদি স্যাচুরেশান ৯৪% এর নীচে নেমে যায়, তাহলে অক্সিজেন দিতে হবে। টার্গেট স্যাচুরেশান ৯৪-৯৫% ।এর বেশি তোলার দরকার নেই,অক্সিজেনের অপচয় হবে।
যদি বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকে, তাহলে প্রথমে ন্যাজাল ক্যানুলা দিয়ে ১-২ লি/ মিনিট পরিমাণে শুরু করুন। স্যাচুরেশান যদি, ৯৪% এ উঠে যায়, ওভাবেই চালান।মাঝে মধ্যে বন্ধ করে দেখেন, যদি দেখেন অক্সিজেন ছাড়াই ৯৪% বা বেশি থাকছে, বন্ধ রাখুন।
যদি ৯৪% না উঠে, তাহলে অক্সিজেন ৩-৪ লি/মিনিট করুন, ন্যাজাল ক্যানুলা দিয়েই।এর বেশি পরিমাণে দিতে চাইলে, ন্যাজাল ক্যানুলা দিয়ে দেয়া যাবেনা।
যদি ন্যাজাল ক্যানুলা দিয়ে ৩-৪ লিটার ফ্লো তে স্যাচুরেশান ৯৪% না উঠে, এবার ফেইস মাস্ক লাগবে।ফেইস মাস্কে ৫-১০ লিটার পর্যন্ত দিতে পারবেন।
যদি ফেইস মাস্কেও অক্সিজেন ৯৪% না উঠাতে পারেন, তাহলে ফেইস মাস্ক ওইথ রিজার্ভার ব্যাগ ( নন-রিব্রেদিং)।ওটা দিয়ে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ লিটার দেয়া যায়।খেয়াল রাখতে হবে, মাস্কের সাথে লাগানো রিজার্ভার ব্যাগ টা যেন বেলুনের মত ফুলে থাকে এবং চাপ পড়ে বা মুচড়ে বাঁকা হয়ে না থাকে ।যারা খুবি ক্রিটিকাল অবস্থায় আছেন, তারা ফেইস মাস্ক ওইথ রিজার্ভার ব্যাগ দিয়ে ১৫ লিটার অক্সিজেন পেয়ে থাকেন।এতে অবশ্য আপনার বাসার সিলিন্ডারটি এক ঘন্টায় খালি হয়ে যাবে।তাই সেক্ষেত্রে সেন্ট্রাল পাইপ লাইন অক্সিজেন যেখানে আছে, ওখানে যেতে হবে।কোথায় সেন্ট্রাল পাইপলাইন অক্সিজেন আছে? মেডিকেল কলেজ আর বড় ক্লিনিক গুলাতে।
যদি এতেও ৯৪% না উঠে,তখন হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা (HFNC), দাম ৫-৭ লাখ টাকা।HFNC দিয়ে ১৫ থেকে ৬০ লি/মিনিট পরিমাণে অক্সিজেন দেয়া যায়।এতে হিউমিডিফাইড অক্সিজেন যায়, যা রোগীর জন্য আরামদায়ক এবং রেস্পিরেটরি এপিথেলিয়াম এর জন্য ফ্রেন্ডলি।এইটা কিছুটা পজিটিভ প্রেশার জেনারেট করে, ফলে এলভিউলাই (বায়ুথলি) গুলা কিছুটা খোলা অবস্থায় থাকে, ফলে অক্সিজিনেশান বাড়ায়।কিন্তু, এর জন্যে অক্সিজেন প্লান্ট বা শক্তিশালী অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা থাকতে হয়, যা এই দেশে খুবি অপ্রতুল ।দেশে বেশ কয়েকটা হস্পিটালে দেয়া হচ্ছে।চিটাগাং শহরে বি এম এ - এর মাধ্যমে এস আলম গ্রুপ কয়েকটা ডোনেইট করেছে।আরো যারা সামর্থ্যবান আছেন, তারা ডোনেইট করতে পারেন।শুনেছি ধনী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির তালিকায় নাকি এদেশ এক নাম্বার।
আমাদের দেশে কোন নির্ভরযোগ্য বিপনন এবং সরবরাহ ব্যবস্থা না থাকাতে ,বারবার অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল করা অনেকের জন্য ই কষ্টসাধ্য।অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর ১-৫ লি/মি ফ্লো তে অক্সিজেন দিতে পারে,সিলিন্ডার রিফিল এর ঝামেলা নাই ।সোজা ভাষায় বললে, এটা এটমোস্ফিয়ার থেকে বাতাস টেনে এর নাইট্রোজেন কম্পোনেন্ট টা জিওলাইট নামক একটা কেমিক্যালের মাধ্যমে শুষে নিয়ে মোটামুটি ৯০% পিউর অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে।দিনে সাধারণত এক ঘন্টা বিশ্রাম দিতে হয়।তবে এতে হাই ফ্লো অক্সিজেন ডেলিভারি সম্ভব নয়।
ওয়েইক প্রোন পজিশনিং (জেগে থাকা অবস্থায় উপুর হয়ে শোয়া)ঃ-
সকল জাতীয়, আন্তর্জাতিক গাইডলাইন দেখে এবং ইন্টেন্সিভ কেয়ারে আমার ফার্স্ট হ্যান্ড অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, "উপুর হয়ে শোয়া" অব্যর্থ ভাবে অক্সিজেন স্যাচুরেশান বাড়ায়, রোগীর জেনারেল ওয়েল বিয়িং ইম্প্রুভ করে এবং এর জন্যে কোন টেকনোলজিকাল সাপোর্ট লাগেনা।খুব দৃঢ়ভাবে প্রোন পজিশন এর পক্ষে তদবির করছি।কোভিডে আক্রান্ত যাদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে বা স্যাচুরেশান কমে যাচ্ছে, অক্সিজেনের পাশাপাশি দিনে ১২-১৪ ঘন্টা উপুর হয়ে শুয়ে থাকুন, এতেই দারুন উপকৃত হবেন, ইনশাআল্লাহ।
সবাই ভাল থাকুন
সুস্থ থাকুন
নিরাপদে থাকুন।
Special thanks to Prof.Md Al-Amin Mridha sir for his excellent suggestions.
Collected