
26/02/2025
দশটি ভয়ঙ্কর সত্যি ঘটনা- ওসুধ দেখে কিনুন, না হলে ভীষণ বিপদ।
১. রোগী প্রেগন্যান্ট। প্রি-একলাম্পশিয়া। ব্লাড প্রেশার অত্যধিক বেশি।তাকে উচ্চ রক্তচাপের জন্য একজন প্রসূতি রোগ চিকিৎসক দিয়েছেন Tab. Nidipine SR (20 mg)। দোকানদার দিয়েছে Tab. Nintoin SR (100 mg), যা একটি অ্যান্টিবায়োটিক। ছবিতে সংযুক্ত এই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ রোগীর ব্লাড প্রেশার কতোটুকু কমলো?
২. Tab. Metfo (500 mg) প্রেসক্রাইব করা হয়েছিল। দোকানদার Tab. Metro (500 mg) দিয়ে বলে ডাক্তার ভুল করে চলবে লিখেছে। ৫ দিনের বেশি খেয়েন না। আর একবেলা না, এটা তিনবেলা খেতে হয়। নতুন ডাক্তার তো বোঝেনি। প্রথমটি ডায়াবেটিসের ওষুধ। শেষেরটি এন্টিপ্রটোজোয়াল। বাংলাদেশে ডায়রিয়া/আমাশয় হলে সবাই এটির ওপর হামলে পড়ে (ফ্লাজিল)। ডায়াবেটিস কতোটুকু কমলো?
৩. হাইপারথাইরয়েডিজমের জন্য রোগীকে Tab. Metirox (5 mg) প্রেসক্রাইব করা হয়েছিল। ফার্মেসির বড়ো ডাক্তার সাহেব এর বদলে Tab. Metorax (10 mg) দিয়ে দিয়েছেন। এটি একটি ভীষণ ভয়ঙ্কর ওষুধ। ভয়ঙ্কর বললাম এই অর্থে, এটির মারাত্মক এডভার্স ইফেক্ট হতে পারে এদিক-সেদিক হলে। অবধারিতভাবে উক্ত রোগী মেথোট্রেক্স্যাট টক্সিসিটি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
৪. এক পেশেন্টকে দেওয়া হয়েছে Cap. Nintoin SR (100 mg)। তিনি ৭ দিন পর এসে বললেন, স্যার তলপেটে ব্যথা, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কিছুই তো কমে না। কী ওষুধ দিলেন। তাকে ওষুধের পাতা দেখাতে বলা হলো। ওষুধ চেক করে দেখা গেলো Tab. Nitrin SR (2.6 mg) খাচ্ছে ৭ দিন ধরে। প্রথমটি এন্টিবায়োটিক। দ্বিতীয়টি হার্টের রোগের গুরুত্বপূর্ণ একটি ওষুধ। তবে এস্টাবলিশড হার্ট ডিজিজের রোগীদের ক্ষেত্রেও এটি প্রেসক্রাইব করতে আমরা অনেক সতর্ক থাকি। অনেক 'যদি কিন্তু' মিলিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হয় এই রোগীকে আমরা নাইট্রেটস দেব কি দেব না। দিলে রোগীর উপকার হবার সম্ভাবনা বেশি না-কি ক্ষতির ঝুঁকি বেশি।
৫. পেশেন্টকে প্রেসক্রাইব করা হয়েছে Cap. Nintoin SR (100mg )। ফার্মেসির দারুণ বিজ্ঞ ব্যক্তি দিয়ে দিয়েছেন Nobesit XR (500mg)। প্রথমটি এন্টিবায়োটিক, দ্বিতীয়টি ডায়াবেটিসের ওষুধ।
৬. এক রোগীকে দেওয়া হয়েছে Desolon (Contraceptive pills)। রোগী খেয়েছে Deslor ( ঠান্ডা/চুলকানির ওষুধ)। ফলাফল বলার অপেক্ষা রাখে না!
৭. পেশেন্টকে প্রেসক্রাইব করা হয়েছে Tab. Bislol (5 mg)। এটি উচ্চ রক্তচাপ/হার্টের রোগের ওষুধ। দোকানওয়ালা দিয়েছে Tab. Biofol (5 mg), এটি ফলিনিক এসিড। পেশেন্ট শিক্ষিত। তার সন্দেহ হয়েছে। বিসলল আর বায়োফল তো এক না। তিনি দোকানদারের দিকে সন্দেহের তীর ছুঁড়ে দিলেন। দোকানদার জানালেন, দুটো ওষুধ একই। একটা খেলেই হবে। পেশেন্ট এসে আবার জিজ্ঞেস করেছে দুটো একই ওষুধ কি-না।
৮. পালমোনারি হাইপারটেনশনের জন্য একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে সিলডেনাফিল প্রেসক্রাইব করা হয়েছে। এটি অন্য একটি ইন্ডিকেশানে বহুল ব্যবহৃত। প্রেসক্রিপশন দেখে দোকানওয়ালা হায়হায় করে উঠলো। এমন বয়স্ক ব্যক্তিকে কেউ এসব ওষুধ দেয় না-কি? ডাক্তারের কোনো সামাজিক বিবেক-বিবেচনা নেই?
দোকানির উস্কানিতে চাচার ভাতিজারা এসে ডাক্তারকে পেটানোর ঘটনা ঘটেছে একবার।
৯. এক চিকিৎসক গ্রামের বাড়িতে গিয়ে রোগীকে লিখেছিলেন :
Tab. Cortan (20 mg)
সঙ্গে এন্টি আলসারেন্ট (গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ নামে প্রচলিত)। সেটিও ২০ মিলিগ্রাম।
তো তার এলাকার এক বড়ো ভাই নতুন 'দোকান' দিয়েছে। প্রেসক্রিপশন দেখে ভাবলো ২০ 'পাওয়ারের' আর কী ওষুধই হবে, 'গ্যাশের' ওষুধ ছাড়া!
তারপর থেকে রোগী একসঙ্গে খেলো
Tab. Pantonix (20 mg)
Cap. Sergel (20 mg)
বাহ কী ফুটফুটে সুন্দর না! দুই 'গ্যাশটিকের ওষুধ' একসঙ্গে আর ওদিকে আসল ওষুধের খবরই নেই!
১০. নারী রোগীকে দেওয়া হয়েছিল Normens (5 mg),
ফার্মেসির প্রফেসর দিয়েছে Norium (5 mg)। ফলাফল? তা আর বলতে!
লেখাটার ঢঙটা কেমন যেন হালকা চালের হলো। লেখাটা শেষ করে ভাবলাম, যে সহজ-সরল রোগীটি ভুলভাল ওষুধ পেয়ে বড়ো ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলো, রোগ দীর্ঘায়িত হলো, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগলো, জীবন ঝুঁকির সম্মুখীন হলো তাদের কতোটা কষ্ট হয়েছে। ওষুধের নাম নিয়ে যদি সন্দেহ থাকে তাহলে ফার্মেসির দোকানদার সে ওষুধটি না দিতে পারে, যদি সে ওষুধটি তার দোকানে না থাকে সেটি সরাসরি বলতে পারে--কিন্তু তা না তারা কিছু না কিছু ওষুধ দেবেনই। নইলে বিক্রি হবে না যে! আচ্ছা ওষুধ বিক্রি আর আলু-পটল বিক্রি কি এক? একটা ওষুধ মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। এটি জেনেও তারা দুচার টাকার লোভ ছাড়তে পারেন না। ফলে কোনো না কোনো একটা ওষুধ 'গছিয়ে' দেবার চেষ্টা করেন। ওষুধের দোকানদারদের কাছে বিনীত অনুরোধ, প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে কিছু টাকা লাভ করতে চাইলে, সহজ-সরল মানুষকে ঠকিয়ে ব্যবসা করতে চাইলে অন্য কোনো পেশা বেছে নিন। মানুষের জীবন-মৃত্যু নিয়ে এভাবে খেলবেন না। আপনাদের মূর্খতা, অসতর্কতা, দায়িত্বহীনতা, বর্বরতা ও দগদগে বিশ্রী লোভ নিয়ে একটি জাতির স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে এভাবে খেলবেন না।
সরকারি পর্যায় থেকে এ বিষয়ে কঠোর মনিটরিং প্রয়োজন। ইলেকট্রনিক প্রেসক্রিপশনের ব্যাপারে জোর দিতে হবে। যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়া কেউ যেন ফার্মেসি দিতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। অপচিকিৎসকদের চিকিৎসা দেওয়া বন্ধ করতে হবে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বেচাকেনা বন্ধ করতে হবে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক দিলে তাকে বারো ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করে জেলে পুরতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সে দেশটা শেষ হয়ে গেলো।
লিখেছেনঃ
Ma'ruf Raihan Khan
Cardiologist
39th BCS