19/07/2019
Intermittent Fasting: ওজন কমানোর সহজ একটা উপায়
ওজন কমানোর বিভিন্ন উপায় আছে। গত কয়েক বছরে intermittent fasting নামক একটা উপায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে দাড়িয়েছে।
এটাতে আপনাকে নির্দিষ্ট একটা সময় না খেয়ে থাকতে হবে। নির্দিষ্ট একটা সময় অনাহারে থাকলে মানুষ কম ক্যালরি খাবে এবং ওজন কমানোর সাথে সংযুক্ত কিছু হরমোনের পরিবর্তন হবে। এতে ওজন কমবে।
Intermittent fasting করার বিভিন্ন উপায় আছে। সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায়গুলো হচ্ছেঃ
১৬/৮ মেথডঃ প্রতিদিন ১৬ ঘন্টা অনাহারে থাকুন
এটাতে আপনাকে প্রতিদিন ১৪-১৬ ঘন্টা না খেয়ে থাকতে হবে। বাকী ৮-১০ ঘন্টায় ২-৩ বা তার চেয়ে বেশি বার খেতে পারবেন। এটা করা যত জটিল মনে হচ্ছে তত জটিল না। রাত্রে খাওয়ার পরে আর কিছু খেয়েন না। সকাল বেলা নাস্তা না খেয়ে একেবারে দুপুর বেলা খান।
যেমন আপনি যদি রাত ৮ টায় রাতের খাবার খান এবং পরের দিন দুপুর ১২টার সময় দুপুরের খাবার খান, তাহলে আপনার ১৬ ঘন্টা অনাহারে থাকা হচ্ছে।
আপনার যদি সকালবেলা ক্ষুধা লেগে যায়, তাহলে নাস্তা না খাওয়া কষ্টকর হবে। তবে যেহেতু এই ১৬ ঘন্টাতে আপনি পানি, কফি বা অন্যান্য ক্যালরিমুক্ত পানীয় পান করতে পারবেন, সেহেতু ক্ষুধাটা দমিয়ে রাখা সহজ হবে।
৫ঃ২ ডায়েটঃ সপ্তাহে ২ দিন অনাহারে থাকুন
এটাতে আপনি সপ্তাহে পাঁচ দিন স্বাভাবিক ভাবে খেতে পারবেন। তবে বাকী দুই দিন ৫০০-৬০০ ক্যালরির বেশী খাওয়া যাবে না।
যেমন, আপনি শনি আর রবিবার বাদে প্রতিদিন স্বাভাবিক খাবার খেতে পারেন। আর এই দুই দিনে প্রতিদিন দুইবার ৩০০+৩০০=৬০০ ক্যালরির খাবার খেতে পারেন। একেবারে কম ক্যালরি থাকে এমন খাদ্য যদি খান, তাহলে ৬০০ ক্যালরির মধ্যে পেট ভরাতে খুব কষ্ট হবে না।
খান-থামুন-খানঃ সপ্তাহে ১/২ বার ২৪ ঘন্টা অনাহারে থাকুন
এটাতে সপ্তাহে এক বা দুইবার এক রাত থেকে আরেক রাত পর্যন্ত খাওয়া যাবে না। যেমন, আপনি যদি শনিবার রাত ৭টায় রাতের খাবার খান, তাহলে পরের দিন রাত ৭টা পর্যন্ত ক্যালরিমুক্ত পানীয় বাদে অন্য কোন কিছু খেয়েন না।
আপনি যদি ওজন কমানোর জন্য এটা করেন, তাহলে সপ্তাহের বাকী সময়গুলোতে স্বাভাবিক ভাবে খেতে থাকুন।
এই পদ্ধতির একটা সমস্যা হচ্ছে ২৪ ঘন্টা না খেয়ে থাকা অত্যন্ত কষ্টকর। তবে আপনি যদি এটা চেষ্টা করতে চান, তাহলে প্রথমে ১৫-১৬ ঘন্টা না খেয়ে থাকার চেষ্টা করুন। তারপর আস্তে আস্তে না খেয়ে থাকার সময় বাড়ান।
এক দিন পরপর কম খান
এটাতে এক দিন স্বাভাবিক ভাবে খেতে হবে। তার পরের দিন ৫০০ ক্যালরির বেশী খাওয়া যাবে না। এই পদ্ধতিতে সপ্তাহের অর্ধেক সময় আপনার প্রচন্ড ক্ষুধা লেগে থাকবে। তাই এটা করা খুব আনন্দনীয় না এবং দীর্ঘসময় ধরে করা প্রায় অসম্ভব।
শুধু রাত্রে বেলা খান
এটাতে দিনের বেলা অল্প পরিমাণে সবজি এবং ফল খেতে পারবেন। আর রাত্রে বেলা ৩-৪ ঘন্টা যত খুশি খেতে পারবেন।
Fasting এর কারনে কম ক্যালরি খাওয়া হয় এবং ওজন কমে
Intermittent fasting এর কারণে ওজন কমার কারণ হচ্ছে, এটার কারণে আপনার কম ক্যালরি খাওয়া হয়।
Fasting এর প্রত্যেকটা উপায়ে আপনাকে কিছু সময় অনাহারে থাকতে হবে। বাকী সময়গুলোতে যদি আপনি খুব বেশি না খান, তাহলে আপনি মোট কম ক্যালরি খাবেন।
২০১৪ সালে বেশ কয়েকটি গবেষণা পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে, Intermittent fasting এর কারণে বেশ পরিমাণে ওজন কমে। এটা শুরু করার ৩-২৪ সপ্তাহের মধ্যে মানুষের ওজন ৩-৮% কমেছে বলে দেখা গিয়েছে।
ওজন কমার হার পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, প্রতি সপ্তাহে মানুষ ০.২৫ কেজি ওজন হারিয়েছে। আর এক দিন পর পর কম খাওয়ার উপায় অনুসরণ করে প্রতি সপ্তাহে ০.৭৫ কেজি ওজন হাড়িয়েছে।
তাদের কোমর ৪-৭% ছোট হয়েছে। তার মানে তাদের পেটের মেদ কমেছে।
ওজন কমার পাশাপাশি fasting এর অন্যান্য উপকারিতাও রয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এটার কারণে মেটাবোলিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় এবং দীর্ঘকাল স্থায়ী থাকে এমন কিছু রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
Intermittent fasting এর সময় ক্যালরি মাপার কোন প্রয়োজন নেয়। Fasting করলে কম খাওয়া হয়। Fasting না করে আপনি যদি কম খেতে পারেন, তাহলে fasting করে বিশেষ কোন ফল পাবেন না।
Fasting এর কারণে পেশি কমা থামতে পারে
ডায়েটিং করলে শরীর ফ্যাটের সাথে সাথে পেশিও পুড়ায়। তবে, কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, fasting করলে শরীর পেশি ধরে রাখতে এবং ফ্যাট পুড়াতে পারে।
একটা গবেষণায় দেখা গিয়েছে – ক্যালরি মেপে মেপে কম খেলে যতটুকু ওজন কমে, তার ২৫% হচ্ছে পেশি। কিন্তু fasting করে যতটুকু ওজন কমে, তার মাত্র ১০% হচ্ছে পেশি।
অন্য আরেকটা গবেষণাতে – অংশগ্রহণ করা মানুষদেরকে আগে তারা প্রতিদিন যতটুকু ক্যালরি খেতো, ততটুকুই খেতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদেরকে এটা বিকালে একবারে খেতে বলা হয়েছে। গবেষণার শেষের দেখা গিয়েছে, অংশগ্রহণকারী ব্যাক্তিদের ওজন কমেছে এবং পেশি বেড়েছে। এছাড়া তাদের শরীরের অন্যান্য কিছু উন্নতিও হয়েছে।
তবে fasting করলে যে পেশি কমা থামবে, সেটা জোর দিয়ে বলতে চেলে আরো কিছু গবেষণা করা লাগবে।
Fasting করা সহজ হতে পারে
প্রতি বেলা মেপে মেপে খাওয়া বেশ কষ্টকর। তাই অনেকের কাছে fasting করা সহজ মনে হতে পারে। ১৬/৮ মেথড অনুসরণ করলে প্রতিদিন তিন বেলার বদলে দুই বেলা খেতে হবে। এতে ঝামেলা আরেকটু কম হবে।
ডায়েট যদি জটিল হয় তাহলে কয়েকদিন পরে ধৈর্য্য শেষ হয়ে যেতে পারে। Fasting এ এটা হওয়ার সম্ভাবনা অনেকের জন্য কম হতে পারে। তাই এতে ফল পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
সবচেয়ে ভালো ডায়েট হচ্ছে যেটা আপনি দীর্ঘ সময় ধরে অনুসরণ করতে পারবেন। যদি আপনার মনে হয় fasting এর জন্য কম খাওয়া সহজ হবে, তাহলে এটা ট্রাই করতে পারেন।
Intermittent Fasting অনুসরণ
Fasting এর সাহায্যে ওজন কমানোর চেষ্টা করার সময় আপনাকে কয়েকটা জিনিস মাথায় রাখতে হবেঃ
খাদ্যের মানঃ আপনি কি খাচ্ছেন fasting করলে তা গুরুত্ব হারায় না। তাই অস্বাস্থ্যকর খাদ্য না খাওয়ার চেষ্টা করুন।
ক্যালরিঃ আপনাকে ক্যালরি গুনতে হবে না। তার মানে এই না যে ক্যালরির কোন মুল্য নেয়। খাওয়ার সময়ে “স্বাভাবিকভাবে” খান। খুব অতিরিক্ত খেয়েন না।
কনসিসটেন্সিঃ ফল পেতে চেলে ওজন কমানোর অন্যান্য নিয়মের মতো এটাও আপনাকে বেশ কিছু সময় অনুসরণ করতে হবে।
ধৈর্য্য ধরুনঃ নতুন সিস্টেমে অভ্যস্থ হতে আপনার শরীরের কিছু সময় লাগতে পারে। প্রতিদিন একই সময়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে শরীরের অভ্যস্থ হতে সহজ হবে।
Fasting এর সাথে সাথে সপ্তাহে তিন দিন ব্যায়াম করুন। এতে পেশি ধরে রাখা সহজ হবে।
অনেক মানুষ এঅ পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রচুর ওজন কমাচ্ছে। তবে আপনি যদি ওজন কমাতে চান, তাহলে যে এটা করতেই হবে তা না। এটা ওজন কমানোর শুধুমাত্র একটা উপায়। সবার জন্য এটা সঠিক হবে না। ওজন কমানোর আরো বিভিন্ন রকমের উপায় রয়েছে। যদি fasting আপনার পছন্দ না হয়, তাহলে সেগুলোর একটা অনুসরণ করুন।
ডঃ তারেক আনোয়ার