04/08/2024
সংকটকালীন মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নঃ যারা বাসায় আছেন কিংবা যাদের বাসায় বাবা-মা, সন্তান কিংবা অন্যান্য নিরীহ মানুষ আছেন তাদের জন্য।
চারিদিকে থমথমে অবস্থা। ভয়াবহ সংঘাতের এড়ানোর কোন উপায় দেখছি না! এমনকি এই সংঘাতময় পরিস্থিতি কতদিন থাকবে সেটাও এই মুহুর্তে বলতে পারছি কেউ। অন্তত এই সপ্তাহটা আমাদের কাটবে উৎকণ্ঠায় সেই সাথে যেকোন সময় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, মোবাইল নেটওয়ার্ক ডাউন হয়ে যেতে পারে যা আমাদেরকে ফেলে দিবে আরো বেশি অনিশ্চিয়তায়। আর সংঘাত মানেই আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি।
আমরা যে সমাজে বা রাষ্ট্রে বসবাস করি সেখানে কোন প্রকার ক্রাইসিস দেখা গেলে সেটা সরাসরি হোক কিংবা পরোক্ষভাবে হোক, আমাদের মনের অবস্থা ও সার্বিক জীবনযাত্রার উপর প্রভাব ফেলে। করোনা ভাইরাস ও লকডাউনের অভিজ্ঞতা আমাদের খুব বেশি দিন আগের নয়।
তবে এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন, সংকটের স্থায়ীত্ব অনুযায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতায় মানুষের আচার আচরণ থেকে শুরু করে ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য পর্যন্ত পরিবর্তিত হতে পারে। পলিটিকাল ও সোশ্যাল সাইকোলজির পারস্পেক্টিভ থেকে এই আলাপ অন্যকোন সময় করবো। যেহেতু এখন একটি ক্রাইসিস সময়ে আছি আমরা তাই এখন কি করবেন সেটা নিয়ে আলোচনা করছি।
*** সাধারণত এই ধরনের পরিস্থিতি আমাদের মাঝে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, প্যানিক, অস্থিরতা তৈরী করে।
*** চলমান ঘটনাপ্রবাহ আমাদের মাঝে ট্রমা বা মানসিক আঘাত দিতে পারে। সেই সাথে পুরাতন কোন ট্রমা জাগিয়ে তুলতে বা ট্রিগার করতে পারে যাকে পিটিএসডি বলি।
*** যারা আন্দোলনে কোন পক্ষের সাথেই সরাসরি যুক্ত না তাঁরা মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়তে পারেন, প্রচন্ড হতাশা ও খারাপ লাগা কাজ করতে পারে।
*** এমনকি যারা সরাসরি যুক্ত তাদের কাছের মানুষ ও প্রিয়জনেরা মানসিক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় থাকেন যা তাদের মাঝে বিষণ্ণতা, প্যানিক, এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরী করতে পারে।
পলিটিকাল সাইকোলজি অনুযায়ী জাতীয় এই সংকটের মাঝে নিজেকে স্থির রাখা যে কারো জন্য বেশ কঠিন। কারণ এইখানে আপনি কোন পক্ষকেই শান্ত হওয়ার আহবান করতে পারবেন না আবার কাউকেই আপনি উস্কেও দিতে পারবেন না। যারা আন্দোলনের পক্ষে বিপক্ষে আছেন তাঁরা সেটা ব্যক্তিগত ভাবে প্রকাশ করতে পারেন, কিন্তু যখন আপনি কাউকে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দিবেন তখন প্রফেশনাল হিসেবে আমাদের এমন একটি অবস্থান থাকবে যেখানে মানুষকে সাহায্য করাটা হলো মূখ্য।
তাহলে কিভাবে এই সাহায্য করতে পারি? রাজনৈতিক ও জাতীয় এই সংকটের সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার প্রচলিত কিছু চর্চা আসলে সবার জন্যেই প্রযোজ্য। সেগুলো চর্চা করতে পারেন, সাময়িক সময়ের জন্য নিজেকে স্থির রাখতে এই চর্চা আপনাকে হেল্প করবে। তবে প্রফেশনাল হেল্পের বিকল্প নেই।
১. আপনি যদি সরাসরি যুক্ত না হোন তবে ক্রাইসিস সংক্রান্ত সকল আপডেট পাওয়া হতে নিজেকে বিরত রাখুন। পরিবারের যেসকল সদস্য অল্পতেই ভেঙ্গে পড়েন বা প্যানিক করেন তাদেরকে ভয়াবহ আপডেটগুলো দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হোন। যেমন বাবা মা, বয়স্ক মানুষ বা সাধারণ ও বিশেষ শিশু।
২। নিজেকে স্থির রাখার জন্য গ্রাউন্ডিং টেকনিক (মন্তব্যের ঘরে দিয়ে রাখছি) চর্চা করুন। মাইন্ডফুলনেস প্র্যাকটিস করলেও আপনি নিজেকে স্থির রাখতে পারবেন। সহজ স্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করার মাধ্যমেও নিজেকে রিলাক্স করতে পারি আমরা।
৩। যাদের মাঝে এংজাইটি আছে বা প্যানিক আছে তাঁরা প্রগ্রেসিভ মাসল রিলাক্সেশন টেকনিক প্র্যাকটিস করুন। আমি একটি স্ক্রিপ্ট বা নির্দেশনা কমেন্টে দিয়ে রাখবো। যদি ইন্টারনেট কানেকশন থাকে তবে বডি বেজড রিলাক্সেশন এক্সারসাইজ করতে পারেন, আমি কিছু লিংক শেয়ার করে রাখবো যদি ইন্টারনেট থাকে।
৪। বাসায় থাকলে সহজ শরীর চর্চার টেকনিক ফলো করে অন্তত ১০-১৫ মিনিট এক্সারসাইজ করুন। হতে পারে ঘরের কোন কাজ বা সিড়ি দিয়ে উঠানামা করা, কিংবা ইন্টারনেটে কিছু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ মুভ শিখে নিয়ে করতে পারেন। শরীর চর্চা আপনাকে ভালো ফিল করাবে।
৫। ডিজিটাল বা একচুয়াল ডায়রি মেইন্টেইন করেন। প্রতিদিন আপনার চিন্তা, আচরণ এবং অনুভূতিগুলো রিফ্লেক্ট করবে আপনার ডায়রিতে। থেরাপিউটিক জার্নালিং আমাদেরকে হেল্প করে আমাদের চিন্তাগুলো গুছিয়ে আনতে, অনুভূতিগুলো প্রসেস করতে এবং আচরণে পরিবর্তন আনতে। লিখুন প্রতিদিন।
//***বাসায় শিশু-কিশোর থাকলে ওদের সাথে বেশি সময় কাটান, ওদের সাথে গল্প করুন। ওদেরকে বেশি সময় ডিভাইস দিয়ে রাখবেন না, বরং খেলাধুলা করুন এবং ওদেরকে গল্প শোনান বেশি বেশি করে। এতে ওরা যেমন ভালো থাকবে তেমনি আপনিও বাচ্চাদের সঙ্গ পেয়ে ভালো বোধ করবেন।**//
৬। নিজের শখের কোন কাজ করা বা শেখার চেষ্টা করুন, পরিস্থিতির সাথে মানান সই এমন কোন একটিভিটি তে নিজেকে যুক্ত করতে পারেন, হোক সেটা বই পড়া, রান্না করা, ছবি আঁকা, গাছ বা পোষা প্রাণী থাকলে তাদের যত্ন নেওয়াসহ বিভিন্ন কাজ।
৭। খুব কাছের ও প্রিয় কিছু মানুষসহ কিছু জরুরী নাম্বার মোবাইলে সেভ করে রাখুন, যাতে প্রয়োজনে তাদের সাথে কথা বলতে পারেন। শেয়ার করতে পারেন আপনার মনের উৎকণ্ঠা ও খারাপ লাগা। কারণ শেয়ার করলে আপনার মনের অবস্থা কিছুটাও ভালো হবে। (মোবাইলে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স রাখুন, কখন ইন্টারনেট বন্ধ থাকবে বা খোলা থাকবে আমরা নিশ্চিত নই।)
৮। কিছু মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা পাবার নাম্বার বা ইমেইল আইডি নিজের কাছে সেভ করে রাখুন। কল কিংবা মেসেজের মাধ্যমে এপোয়েন্টমেন্ট নিন, তারপর কথা বলুন। কারণ জরুরী এই সময়ে কথা বলার এবং ইমোশনাল সাপোর্ট নেওয়া যে কারও জন্যেই হেল্পফুল হবে। এমনকি আমাদের মেন্টাল হেলথ প্রফেশনালদেরও সাপোর্ট দরকার হচ্ছে। তাই আপনিও আপনার নিজের জন্য বা কাছের কারো জন্য সাপোর্ট নিতে দ্বিধা করবেন না।
৯। আমি এইখানে আমার নিজের নাম্বার, অফিসের নাম্বার শেয়ার করে রাখছি যাতে আপনি হোয়াটসঅ্যাপ বা ডিরেক্ট মেসেজের মাধ্যমে নক করতে পারেন, যদি রেস্পন্স পেতে দেরি হয় তবে একটু ধৈর্য্য ধরবেন। (Faysal Rafi Office 01325167451, Personal 01515625217)
আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো আমি নিজে ও আমার টিম যেটুকু পারি হেল্প করার, এছাড়াও আমি আমার পরিচিত সাইকোলজিস্ট ও মেন্টাল হেলথ প্রফেশনালদের সাথে যুক্ত করে দিবো আপনাকে। এমনকি যারা যারা এখন সাপোর্ট দিচ্ছেন তারাও নিজেদের ডিটেইলসও যুক্ত করে দিতে পারেন কমেন্ট সেকশনে।
১০। নিজেকে সুস্থ রাখুন, নিজের ও প্রিয়জনের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। আশা করি এই ক্রাইসিস দ্রুত কাটিয়ে উঠবো আমরা এবং একটি সুন্দর ও নিরাপদ নতুন বাংলাদেশে আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবো।
ইন্টারনেট কানেকশন থাকা সাপেক্ষে আমি আরো কিছু টুলস এন্ড টেকনিক শেয়ার করবো, পাশাপাশি মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করতে পারবেন।
এছাড়াও এই ক্রাইসিসের সময় যার উপকারে লাগতে পারে তার সাথে শেয়ার করতে পারেন এই পোষ্ট।
ধন্যবাদ। যেখানে থাকেন, নিরাপদে থাকবেন।
আগস্ট ৪, ২০২৪