12/10/2024
রিকশার চালক জানান, পুলিশ প্রথমে চেষ্টা করছিল তাকে টুকরিতে করে ম্যানহোলে ফেলে দিতে, কিন্তু কোথাও আশপাশে ম্যানহোলের ঢাকনা খুঁজে দেখতে পায় নাই। পরে বলতেছে, তাকে পুইড়া ফেল। তখন রিকশা ড্রাইভার পাশেই দাঁড়ানো। রিকশার যখন তুলছিল তখন মানবজমিনের যে সাংবাদিক ছবি তুলছিল তাকেও গালাগালি করে বলতে থাকে, ক্যামরা বন্ধ কর। তোর ক্যামরা ম্যামেরাসহ তোরে পুড়া দিয়ে লামু।
শহীদ নাফিসের লাশ বহনকারী রিকশাচালক ছিলেন মো. নূর মোহাম্মদ। উনিই নাফিসকে পুলিশের কাছ থেকে উদ্ধার করে বাঁচাতে হাসপাতালে নিয়ে যান। শহীদ নাফিস সবেমাত্র বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাশ করেছে। বয়স মাত্র ১৭।
সেদিন রিকশা চালক নূর মোহাম্মদ ধানমন্ডি ২৭-এ যাত্রী নামিয়ে দিয়ে সংসদের সামনের দিয়ে ফার্মগেটের দিকে যাচ্ছিলেন৷ বিজয় সরণীর দিকের রোডে সংসদের কোণায় দেখেন সংঘর্ষ। তিনি তখন রং সাইড দিয়ে পাশ কাটিয়ে ফার্মগেট চলে যান। বিজ্ঞান কলেজের সামনে পুলিশ গতিরোধ করে তার, বলে সাথে যেতে। উনি তখন বলেন, ঐদিকে গোলাগুলি হইতেছে যামু ক্যান। পুলিশ ধমক দিয়ে বলে, তোরে আইতে কইছি আয়। এই বলে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। তিনি তখন, দোয়াদরুদ পড়তে থাকেন। কপালে তার কী আছে আল্লাহ জানে।
সামনে নেওয়ার পর বলে, এইডা তোল রিকশায়। মো. নুর মোহাম্মদ (রিকশাচালক) বলেন, কী তোলমু?
তখন পাশে প্লাস্টিকের কিছু একটা আর একটা টুকরি দেখতে পান, বলেন এগুলো তোলমু?
তখন খেয়াল করেন নাই পাশে একটা গুলিবিদ্ধ দেহ কুণ্ডলি পাকিয়ে পরে আছে।
পুলিশ তাকে ধমক দিয়ে বলে, আরে বেটা লাশ পালাই রাখছি দেখছ না! এই যে, এইডা তোল। গালাগালি শুরু করে পুলিশ।
নূর মোহাম্মদ তখন নাফিসের পেছনের সাইড ধরে আলগি দেয়। পুলিশ তার দুই পা ধরে ফিক্কা মেরে রিকশার পাদানিতে ফেলে।
রিক্সায় ফেলার পরে এক পুলিশ বলে, আরও দুইটা গুলি কইরা দে। নাইলে বাইচ্চ্যা যাইতে পারে। রিকশার ড্রাইভারকে দেখিয়ে গালাগালি করে বলে, ওই শালার পায়েও গুলি মার। রিকশা টান দিতে গেছে দেখেন নাফিস পড়ে যাচ্ছে। তখন পাশের আরেকজন পুলিশ এসে বলে তাকে শুইয়ে দেয়। (রিকশাচালকের ভাষায় এই পুলিশ কিছুটা মানবিক ছিল)
রিকশা চালক নূর মোহাম্মদ দেখেন নাফিসের হাতটা চেইনে আটকে যাচ্ছে, তাই হাতটা টেনে রডের সাথে ঝুলিয়ে রাখেন। তিনি নাফিসকে নিকটস্থ আল রাজি হাসপাতালে নিতে চেষ্টা করেন। তখনও নাফিসকে বাঁচানো যেত হয়ত। কিন্তু পুলিশ গালাগালি করে বলে, বেটা এইডা সোহরাওয়ার্দী বা ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে ফালা।
পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করেও আল রাজির দিকে টানেন রিকশা চালক। তখন কেউ ধরতে আসে নাই। ছাত্রলীগ-যুবলীগের বাঁধার মুখে সেখান থেকে ফিরে আবার চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে সেনাবাহিনী দেখে এগিয়ে আসে। বলে তাকে ইমার্জেন্সিতে নিতে হবে। দুই তিনজন তাকে ধরাধরি করে একটা অটোতে তুলে৷ তাকে সোহরাওয়ার্দী নিয়ে যাওয়া হয়। ততক্ষণে আমাদের নাফিসে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে নেয়। শহীদের তালিকায় তার নামও যোগ হয়ে যায়।
-সাংবাদিক ফরিদ উদ্দিন রনি