14/07/2024
অনেক রোগী বিভিন্ন স্নায়বিক সমস্যা যেমন মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা, বিভ্রান্তি বা অস্থিরতা, স্মৃতিভ্রংশ এবং পেশির সমস্যা যেমন পেশি দুর্বলতা, পেশির মৃদু বা তীব্র কাঁপুনি অথবা পেশি সংকোচন ও খিঁচুনি ইত্যাদি উপসর্গ লক্ষন প্রকাশ কালীন সময়ে মনে করেন যে তাদের স্ট্রোক হয়েছে। কিন্তু ব্রেইনের সিটি স্ক্যানের তেমন কোন কিছু ধরা পরে না। পরবর্তীতে রক্তের পরীক্ষায় দেখা যায় যে ইলেক্ট্রোলাইট ইম্ব্যালেন্স যাকে সহজ সরল ভাষায় লবন - পানির তারতম্য বলা হয়।
এই লবন পানির তারতম্য এর প্রধান একটি কারন হলো সোডিয়াম এর মাত্রা বেড়ে যাওয়া অথবা কমে যাওয়া।
মানব দেহে সোডিয়াম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যা বিভিন্ন শারীরিক কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয়। সোডিয়ামের প্রধান ভূমিকা হল:
১) স্নায়ু কার্যক্রম: সোডিয়াম স্নায়ু সিগনালিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি স্নায়ু কোষের মধ্যে বৈদ্যুতিক সংকেত সৃষ্টিতে সাহায্য করে, যা স্নায়ুতন্ত্রকে কার্যকর রাখতে সাহায্য করে।
২) পেশি সংকোচন: পেশির সংকোচন এবং শিথিলীকরণের জন্য সোডিয়াম অপরিহার্য। এটি পটাসিয়ামের সাথে মিলিত হয়ে পেশির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।
৩) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: সোডিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে। এটি রক্তের পরিমাণ ও চাপ সঠিকভাবে বজায় রাখতে সাহায্য করে।
এইসব কারণে, আমাদের খাদ্যতালিকায় যথাযথ পরিমাণে সোডিয়াম থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সোডিয়াম কমার প্রভাব:
শরীরে সোডিয়াম কমে গেলে (হাইপোন্যাট্রেমিয়া) বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর প্রধান লক্ষণ এবং সমস্যাগুলো হল:
১) স্নায়বিক সমস্যা:
- মাথা ঘোরা
- মাথাব্যথা
- বিভ্রান্তি বা অস্থিরতা
- মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যাওয়া
- স্মৃতিভ্রংশ
২) পেশির সমস্যা:
- পেশি দুর্বলতা
- পেশির মৃদু বা তীব্র কাঁপুনি
- পেশি সংকোচন ও খিঁচুনি
৩) জলীয় ব্যালেন্স সমস্যা:
- অত্যধিক জলীয়তা (ওভারহাইড্রেশন)
- বমি বমি ভাব
- বমি
৪) হৃদরোগের সমস্যা:
- হৃদস্পন্দনের অনিয়মিত গতি
- রক্তচাপ কমে যাওয়া
৫) অন্যান্য সমস্যা:
- অবসাদগ্রস্ততা বা অস্বাভাবিক ক্লান্তি
- ক্ষুধামান্দ্য
- শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা
অত্যন্ত গুরুতর ক্ষেত্রে, হাইপোন্যাট্রেমিয়া জ্ঞান হারানো, কোমা, এবং মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। তাই শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা কমে গেলে তা দ্রুত চিকিৎসা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, ডায়েটারি পরিবর্তন, সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ, এবং প্রয়োজনে ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
সোডিয়াম এর মাত্রা বাড়ার প্রভাব:
শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। এই অবস্থাকে হাইপারন্যাট্রেমিয়া বলা হয়। এর কিছু প্রধান সমস্যা হলো:
১) ডিহাইড্রেশন: অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরের পানি শুষে নেয়, ফলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে।
২) রক্তচাপ বৃদ্ধি: সোডিয়ামের মাত্রা বেশি হলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
৩) কিডনি সমস্যা:অতিরিক্ত সোডিয়াম কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যা কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
৪) মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হ্রাস: সোডিয়ামের ভারসাম্যহীনতা মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে, ফলে মাথা ঘোরা, বিভ্রান্তি, অথবা খিঁচুনি হতে পারে।
৫) পেশির খিঁচুনি: সোডিয়াম ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট করে পেশির খিঁচুনি সৃষ্টি করতে পারে।
৬) হৃদযন্ত্রের সমস্যা: অতিরিক্ত সোডিয়াম হৃদযন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
সাধারণত, পরিমিত মাত্রায় সোডিয়াম গ্রহণ করা উচিত এবং যদি সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়, তবে দ্রুত নিকটতম চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত এবং হাসপাতালে যেতে হবে ।
জনসচেতনতা সৃষ্টিতে শেয়ার করতে পারেন।