21/06/2024
সাপ পৃথিবীর অন্যতম বিষাক্ত ও ভয়ংকর প্রাণী। সাপের কথা শুনলেই আমাদের সবারই গা শিরশির করে ওঠে। ভীতি নয়, আমাদের কে সতর্ক থাকতে হবে। সাপে কামড়ালে এর চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অতীব জরুরি।
এই কয়েকদিন আগের একটা ঘটনা বলি,ফেসবুকে আমার গ্রামের অনেকের পোস্ট দেখলাম ৭/৮ বছরের একটা বাচ্চা ছেলে সাপের দংশনে মারা গেছে। বাচ্চাটা হাসমুরগীর কোঠায় তাদের খাবার দিতে যেয়ে সাপে দংসায়। গ্রামের চিরায়ত নিয়ম অনুযায়ী সাপে দংশনে আনা হলো ওঝা।
ওঝা মশাই সারাদিনরাত ভর ঝাড়ফুক,কবিরাজি, তথা বাটপারি চালালো।বললো বিষ নেমে গেছে। একটা সময় যেয়ে ছেলেটার অবস্থা খারাপ দেখে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়।
আমাদের দেশের অনেক শিক্ষিত মানুষের ও বিশ্বাস আছে যে সাপে কামড়ালে ওঝার ঝাড়ফুকে বিষ নামে 😒
অনেকেই জানেন না যে বিষাক্ত সাপে কামড়ালে একমাত্র চিকিৎসা এন্টিভেনম। বাদবাকি ঝাড়ফুক সবই বাটপারি। সাপ বিষাক্ত না হলে ঝাড়ফুকে কাজ হবে 😊 আর বিষাক্ত হলে ফকিরের কেরামতি ওখানেই শেষ।
সম্প্রতি রাসেল ভাইপার (চন্দ্রবড়া) সাপ নিয়ে ফেসবুকব্যপি আলোচনা চলছে, মানুষের মধ্যে আতংক বিরাজমান।আতংকিত না হয়ে বিষাধর সাপ সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারনা ও চিকিৎসা পদ্ধতি সর্বসাধারনের সবার জানা প্রয়োজন।
আমাদের দেশ মাত্র চারটি সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যু হয়। গোখরা ( cobra ),কেউটে (Monocled cobra ), চন্দ্রবোড়া(Russell's viper), কালাচ (Common krait )
আমাদের দেশে বাকি আর কোনও সাপ থেকে মৃত্যুভয় নেই।
কামড় এড়াতে –
১.বাড়ির চারপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
২.রাতে অবশ্যই বিছানা ঝেড়ে মশারি টাঙ্গিয়ে নিবেন।
৩.অন্ধকারে হাঁটাচলা করবেন না।
৪.জুতো পরার আগে তা ঝেড়ে নিন।
তাবিজ কবজ মাদুলি আংটি কোনও কাজের নয় এই টা মনে প্রানে বিশ্বাস করতে শিখুন। একমাত্র সাবধানতাই আল্লাহর রহমতে সাপের কামড় থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে।
সাপে কামড়ালে,
রোগীকে আশ্বস্ত করুন। কারণ রোগী খুবই আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। আতঙ্কও মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। রোগীকে বোঝান, সাপের কামড়ে আক্রান্ত বহু মানুষ চিকিৎসায় বেঁচে উঠেছেন, আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।
রোগীকে যত কম নড়াচড়া করা হবে তত কম হারে বিষ সারা শরীরে ছড়াবে। স্কেল বা বাঁশের টুকরো সহ হাতে/ পায়ে (যে অংশে কামড়াবে) কাপড় দিয়ে হাল্কা করে বেঁধে দিন। হাত বা পা (কামড়ের নিকটতম স্থান) যাতে তিনি ভাঁজ করতে না পারেন তাই এই ব্যবস্থা । মনে রাখবেন অধিক শক্ত করে বাধলে রক্তনালি ব্লক হয়ে গ্যাংগ্রিন হয়ে যেতে পারে তাই হাল্কা করে বেধে (তাগা) দিবেন।যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে উপজেলা সরকারি হাসপাতালে পাঠান। রোগীকে সাহস দিন। বার বার বলুন সব সাপ বিষাক্ত নাহ।সাপের কামড়ের রোগীকে যত দ্রুত হাসপাতালে নিবেন তথা চিকিৎসা শুরু করবেন তত সুস্থ হওয়ার হার বেড়ে যাবে।
মনে রাখবেন,সাপে কামড়ানোর ১০০ মিনিটের মধ্যে Anti venom শরীরে প্রবেশ করলে রোগীর বেঁচে যাবার সম্ভাবনা ১০০%।।
এজন্য ওঝা,ঝাড় ফুক কে না বলুন, সঠিক চিকিতসা নিন, সচেতন হোন। যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিন।
বি: দ্র: এই এন্টিভেনোম সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
ডা: টি,এম, নাহিদ আজাদী
এমবিবিএস, ডি-অর্থো(কোর্স)
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল