28/01/2025
ব্রিলিয়ান্ট ছেলেরা ব্রিলিয়ান্ট কেরিয়ার তৈরী করে .......
তারা প্রথমে গাঁয়ে-মফস্বলে হরিপ্রসন্ন স্কুলে গেঁয়ো বন্ধুদের সাথে লেখাপড়া শেখে।
তারপর ------- ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট করে সকলকে চমকে দেয়।
তারপর তারা উচ্চতর শিক্ষার জন্য চলে যায় ......
ব্যাঙ্গালোর কিংবা দিল্লী, কিংবা পুণে .......
সেখানে গিয়ে তারা বড় বড় নম্বর পায়! পজিশন পায়!
তারপর সেই নম্বর প্লেট গলায় ঝুলিয়ে তারা মস্ত মস্ত কোম্পানীতে ভালো ভালো চাকরি পায়!
প্রচুর স্যালারি! দামি ফ্ল্যাট! ভালো গাড়ী .......!!
ব্রিলিয়ান্ট ছেলেরা ..... এরপর বিদেশের বিমানে গিয়ে বসে।
পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড, আমেরিকা, জার্মানি কিংবা আবুধাবী .... অথবা সিঙ্গাপুর কিংবা কানাডা!
ব্রিলিয়ান্ট ছেলেদের, ওই সব দেশ টপাটপ কিনে নেয় ।
ওই সব ব্রিলিয়ান্ট দেশ, আমাদের ব্রিলিয়ান্টদের জন্য বিলাসবহুল
বাড়ি - গাড়ি আর প্রচুর ডলারের ব্যবস্থা করে দেয় ....
সেখানে আমাদের ব্রিলিয়ান্টরা সুখে থাকে।
সুখে থাকতে থাকতে ব্রিলিয়ান্ট ছেলেরা ভুলে যায় তাদের দেশ গাঁয়ের কথা, হরিপ্রসন্ন স্কুলের কথা ....
গাঁয়ের বন্ধুদের কথা ক্রমে ভুলে যেতে থাকে!
মনে রাখতে পারে না ----- খুড়তুতো, জ্যাঠতুতো সব অসফল ভাই বোনেদের কথা।
ব্রিলিয়ান্টদের জগতে ইমোশন নেই!! প্রোমোশন আছে!!
ব্রিলিয়ান্টদের অতীত নেই! কেবল ভবিষ্যৎ, কেবল ফিউচার।
ছোট চেয়ার থেকে বড় চেয়ার ..... নন এসি থেকে এসি।
ব্রিলিয়ান্ট ছেলেরা বাবা - মা কে মাঝে মধ্যে টাকা পাঠায় .... সে অবশ্য
অ - নে - ক টাকা!!!
সেই টাকা হাতে পেয়ে ব্রিলিয়ান্টদের বাবা মায়ের মুখে ফুটে ওঠে হাসি।
(সব বাবা মায়ের না অবশ্য)
ব্রিলিয়ান্টরা এই ন্যাস্টি ইন্ডিয়াতে আর ফিরে আসতে চায় না।
এত ভিড়! এত ধুলোকাদা! এত কোরাপশন!
এসবের মধ্যে তাদের গা ঘিনঘিন করে
তবু যদি কখনও আসে ........
অনেক অনেক বিদেশী জিনিস নিয়ে আসে ।
মায়ের জন্য ইতালির চাদর, বাবার জন্য ফ্রান্সের সিগারেট ..... সঙ্গে জাপানি লাইটার,
আলো জ্বললেই যা থেকে টুং টাং করে বাজনা বেজে ওঠে।
ব্রিলিয়ান্টদের ব্যাপার স্যাপারই আলাদা ........
ব্রিলিয়ান্টদের ব্রিলিয়ান্ট বানিয়ে তুলতে কেরানী বাবাকে যে কতদিন কর্মক্লান্ত দুপুরে টিফিনে একটা চাপাকলা কিংবা
একটাকার শুকনো মুড়িতে পেট ভরিয়েছেন ......
কতকাল যে মা কোনো নতুন শাড়ী কেনাকে বিলাসিতা মনে করে ছেঁড়া শাড়ীতে দিন কাটিয়েছেন !!!
এসব তথ্য ব্রিলিয়ান্টদের ল্যাপটপে থাকেনা। ব্রিলিয়ান্টদের ল্যাপটপে নায়াগ্রার দূরন্ত জলোচ্ছ্বাস, কিংবা ভিসুভিয়াসের ছবি থাকে .......
এই শ্যামল বাংলার নদী গাছ, বর্ষার মেঘ -----
এসব হাবিজাবি সেখানে ইনসার্ট করা যায় না ।
ব্রিলিয়ান্টরা সদা ব্যস্ত! ভীষণ ব্যস্ত ......!!
তারা সঙ্গীত শোনেনা, তারা গল্প বা কবিতা পড়ে সময় নষ্ট করেনা।
তারা আকাশ দেখে না, বৃষ্টিতে তাদের মন খারাপ হয় না।
তারা কেবল কাজ করে, কেবল ব্যাস্ততায় ডুবে থাকে।
বৃষ্টি নেমেছে আকাশ ভেঙ্গে ....... শ্রাবণ মাস।
মা মৃত্যুশয্যায় .....বাড়ি ভর্তি লোকজন।
অসুস্থ বাবা বারান্দায় চেয়ারে বসে আছেন শূন্য চোখে ......
ডাক্তার জবাব দিয়ে গেছেন .... গোটা বাড়িতে অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতা!!!
কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে মা জিজ্ঞেস করছেন ..... খোকন এলো ?
খো - ক - ন .............!!!!
ব্রিলিয়ান্ট খোকন তখন ফ্লাইটে .....
সবাই মা কে বোঝাচ্ছে ওই তো ওই তো খোকন এলো বলে!
কিন্তু সে ফ্লাইট চলে যাচ্ছে কানাডায়।
কানাডায় কোম্পানীর নতুন শাখা উদ্বোধন।
খোকন যাচ্ছে আরও বড়ো দায়িত্ব নিয়ে, আরও বেশী ডলার ........
এখানে এই পোড়া দেশে ব্রিলিয়ান্ট খোকনের মা
ছেলের মুখ না দেখেই শেষ বারের মতো চোখ বুঁজলেন .....!!!
আমরা এখন ঘরে ঘরে সবাই ------ এমন ব্রিলিয়ান্ট ছেলে গড়ে তুলতেই ব্যস্ত .......!!!
সক্কলে ..............!!!!!!
আর আমরা চাইও আমাদের সকলের ছেলে ব্রিলিয়ান্টতম হয়ে উঠুক।
🎇কলমে ✍️ : শুভ দাশগুপ্ত