11/05/2025
আমরা যখন প্রতিদিন নানা রকম কাজ করি, নতুন কিছু শিখি, বা কোনো সমস্যার সমাধান করি, তখন আমাদের মাথার ভেতরে যে কত কী ঘটে যায়, তা ভাবলে অবাক হতে হয়! আচ্ছা, কখনো কি এমন হয়েছে যে, আমরা কোনো একটা নতুন ধরনের কাজ করতে গিয়ে হঠাৎ করেই বুঝে ফেললাম, "আরে, এটা তো অনেকটা অমুক কাজের মতোই!" কিংবা কোনো খেলা/Game প্রথমবার খেলতে গিয়েও তার নিয়মকানুনগুলো কেমন যেন চেনা চেনা লাগলো?
এই যে চট করে একটা নতুন জিনিসের মূল ব্যাপারটা ধরে ফেলার ক্ষমতা, এটা কিন্তু আমাদের Brain এর এক অসাধারণ কারসাজি।
Scientists রা সম্প্রতি ঠিক এই ব্যাপারটাই আরও গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করেছেন। তারা জানতে চেয়েছেন, আমাদের Brain কীভাবে শুধু নির্দিষ্ট কাজগুলোই মনে রাখে না, বরং কাজের ভেতরের মূল নকশা বা pattern টাও শিখে ফেলে? আর কীভাবে সেই শেখাটা ব্যবহার করে সে নতুন নতুন, অচেনা পরিস্থিতিতেও দারুণভাবে মানিয়ে নেয়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তারা ইঁদুরদের নিয়ে কিছু চমৎকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, আর সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে চমকপ্রদ সব তথ্য। গবেষণাটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে এটি বিশ্বসেরা Science Journal, Nature-এ গত বছর (“A cellular basis for mapping behavioural structure”, 06 November, 2024) প্রকাশিত হয়েছিল।...............................................
ইঁদুরদের বুদ্ধির পরীক্ষা: Learning এর এক নতুন Game!...............................................
ভাবুন তো, একটা গোলকধাঁধা, যেখানে ইঁদুরদের পর পর চারটা নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে হবে খাবার পাওয়ার জন্য। ধরা যাক, জায়গাগুলো হলো ক, খ, গ, ঘ। 'ঘ' তে পৌঁছানোর পর তাদের আবার 'ক' থেকে শুরু করতে হবে – অনেকটা একটা চক্রের মতো। কিন্তু মজাটা হলো, প্রতিবার খেলার সময় এই ক, খ, গ, ঘ জায়গাগুলোর অবস্থান পাল্টে যেত! তবে মূল নিয়মটা একই থাকত – চার ধাপে চক্রটা সম্পন্ন করতে হবে।
Scientist's রা দেখলেন, কয়েকবার খেলার পরেই ইঁদুরগুলো এই চার ধাপের task structure এর নিয়মটা ধরে ফেলতে পারছে! অর্থাৎ, তারা শুধু নির্দিষ্ট পথ চেনাচ্ছে না, বরং পুরো কাজের ভেতরের abstract ধারণাটা বুঝে নিচ্ছে। এর ফলে, যখন তাদের সামনে সম্পূর্ণ নতুন বিন্যাসের কাজ দেওয়া হতো, তারা প্রায় সময়ই প্রথম চেষ্টাতেই (first trial) অনেকটা বুঝে ফেলত যে কাজটা কীভাবে করতে হবে। এই যে কোনো রকম পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই নতুন একটা কাজ বুঝে ফেলার ক্ষমতা, Scientist-রা একে বলছেন zero-shot inference। এটা অনেকটা এরকম যে, আমরা যদি একবার বাইসাইকেল চালানো শিখে যাই, তাহলে নতুন মডেলের বা অন্য কোম্পানির সাইকেল চালাতেও আমাদের খুব একটা বেগ পেতে হয় না, কারণ মূল pattern টা আমাদের জানা।...............................................
Brain এর ভেতরে Goal-Progress Cells আর Structured Memory Buffers (SMBs) এর Magic!...............................................
এখন আসল প্রশ্ন হলো, Brain, এই অসাধারণ কাজটা করে কীভাবে? Scientist-রা ইঁদুরদের Brain এর সামনের দিকের একটা বিশেষ অংশ, যার নাম medial frontal cortex (mFC), সেখানকার cell-গুলোর কাজকর্ম পরীক্ষা করে দেখলেন। Brain এর এই mFC অংশটা আমাদের পরিকল্পনা করা, সিদ্ধান্ত নেওয়া, এবং জটিল আচরণ সামলানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করে থাকে।
তারা সেখানে কিছু বিশেষ ধরনের cell খুঁজে পেলেন, যাদের নাম দেওয়া হয়েছে goal-progress cells। এই cell-গুলো কিন্তু শুধু লক্ষ্য পূরণ হলেই সক্রিয় হয় এমন না। বরং, একটা কাজ শুরু করার পর থেকে সেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে আমরা কতটা এগোলাম, প্রতিটা মুহূর্তে সেটার একটা হিসাব রাখে। অনেকটা কোনো ভিডিও গেমের লেভেল শেষ করার সময় যেমন একটা progress bar দেখায়, ঠিক সেরকম! আরও মজার ব্যাপার হলো, এই goal-progress cells গুলো খুবই নমনীয়। যদি লক্ষ্যটা দূরে থাকে বা সেখানে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগে, cell-গুলো তাদের কাজের পরিধিকে প্রয়োজন অনুযায়ী stretching (প্রসারিত) বা compressing (সংকুচিত) করে নিতে পারত, কিন্তু ঠিকই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো অগ্রগতির নির্ভুল হিসাব রাখত।
এই goal-progress cells এর আবিষ্কারের ওপর ভিত্তি করে Scientist-রা আরও একটা দারুণ মডেল বা ধারণার প্রস্তাব করেছেন, যার নাম Structured Memory Buffers (SMBs)। সহজ ভাষায় যদি আমরা বুঝতে চাই, তাহলে ব্যাপারটা অনেকটা এরকম:
১. অ্যাঙ্কর (anchor) বা কাজের শুরু: আমাদের Brain এ কিছু cell যেন একটা কাজের নির্দিষ্ট ধাপের "নোঙর" বা anchor হিসেবে কাজ করে। এরা চিনে রাখে যে, আমরা এখন কোন পরিস্থিতিতে আছি (যেমন, কোন জায়গায়) এবং একটা লক্ষ্যের দিকে ঠিক কতটা এগিয়েছি।
২. ধাপগুলোর শৃঙ্খলা (task lag): অন্যান্য আরও অনেক cell এই anchor গুলোর সাথে একটা নির্দিষ্ট task lag বা কাজের ধাপ অনুযায়ী পর পর যুক্ত থাকে। এরা ঠিক করে দেয়, anchor cell-টা সক্রিয় হওয়ার কতক্ষণ পরে বা কাজের কোন ধাপে অন্য cell-গুলো সক্রিয় হবে।
৩. সক্রিয়তার ঢেউ (activity bump): যখন আমরা কোনো কাজ শুরু করি, তখন এই Structured Memory Buffers (SMBs) গুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। আর কাজের অগ্রগতির সাথে সাথে একটা "সক্রিয়তার ঢেউ" বা activity bump এই buffer গুলোর মধ্যে দিয়ে বয়ে চলে। এই ঢেউটাই মূলত আমাদের Brain এর পুরো কাজের একটা চলমান চিত্র তৈরি করে রাখে।
৪. ভবিষ্যতের পূর্বাভাস: যেহেতু পুরো কাজের ধারাবাহিকতা এই buffer গুলোতে সাজানো থাকে, তাই আমাদের mFC অংশটা আগে থেকেই পুরো কাজের ভবিষ্যৎ ধাপগুলো যেন "দেখতে" পায়! Scientists রা দেখেছেন, এই buffer গুলোর সক্রিয়তা দেখে বলে দেওয়া সম্ভব যে, ইঁদুর কয়েক সেকেন্ড পরে কোন দিকে যাবে বা কী করবে।
৫. নতুন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়া: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যখন একই রকম abstract structure বা মূল কাঠামোর কোনো নতুন কাজ আমাদের সামনে আসে, তখন Brain-কে আর গোড়া থেকে সব শিখতে হয় না। এটি শুধু আগের থেকে তৈরি এই Structured Memory Buffers (SMBs) বা স্মৃতি ভাণ্ডারগুলোকে নতুন কাজের মতো করে একটু এদিক-সেদিক করে (reconfigure) সাজিয়ে নেয়। এ কারণেই আমরা অনেক সময় খুব দ্রুত নতুন কাজ শিখে ফেলি বা নতুন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারি।...............................................
ঘুমের মধ্যেও চলে শেখার কাজ!...............................................
আরও একটা অবাক করা ব্যাপার হলো, আমাদের Brain কিন্তু ঘুমের মধ্যেও (যাকে Scientist-রা বলছেন offline sleep) এই কাজের structure বা নকশাগুলো ঝালিয়ে নেয়! Scientist-রা দেখেছেন, ইঁদুর যখন বিশ্রাম নিচ্ছিল বা ঘুমাচ্ছিল, তখনও তাদের brain, ওই আগের গেমটার সাথে মিলে যাওয়া pattern গুলো সক্রিয় ছিল। তার মানে, Brain, ঘুমের মধ্যেও এই important, task related information গুলো নিজের ভেতরে আরও ভালোভাবে গেঁথে নিচ্ছিল, যেন পরেরবার আরও দক্ষতার সাথে কাজটা করা যায়!...............................................
এই আবিষ্কার আমাদের জন্য কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?...............................................
এই গবেষণা আমাদের নিজেদের Brain-কে বোঝার ক্ষেত্রে একটা নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। আমরা এখন জানতে পারছি যে, আমাদের Brain শুধু তথ্য জমা রাখে না, বরং সেই তথ্যের ভেতরের মূল schema বা ছকটাকেও ধরতে পারে। এই ক্ষমতাটাই আমাদের মানুষ হিসেবে এত বুদ্ধিমান এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে সক্ষম করে তুলেছে।
এই যে আমরা নতুন ভাষা শিখি, নতুন কোনো যন্ত্র চালাতে শিখি, কিংবা জীবনের নানা রকম জটিল সমস্যার সমাধান করি – এর সবকিছুর পেছনেই Brain এর এই pattern চেনার এবং abstract structure বোঝার ক্ষমতা কাজ করে। এই গবেষণা শুধু যে আমাদের শেখার প্রক্রিয়া বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সম্পর্কে নতুন ধারণা দিচ্ছে তাই নয়, বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, সেদিকেও ইঙ্গিত দিচ্ছে। Scientist-রা যদি Brain এর এই algorithm গুলোকে অনুকরণ করে Artificial Intellegence (AI) Framworks, Policy etc তৈরি করতে পারেন, তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে আমরা এমন machines দেখতে পাব, যারা আমাদের মতোই Creative ভাবে চিন্তা করতে পারবে এবং নতুন কিছু শিখতে পারবে...
মোটকথা হলো, আমাদের মাথার ভেতরের এই ছোট্ট organ টা যে কতখানি powerful, এবং জটিল, তা আমরা এখনও প্রতিনিয়ত নতুন করে জানছি। আর এই জানার পেছনে কাজ করে যাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের অসংখ্য Scientists রা, যারা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছেন প্রকৃতির সবচেয়ে বড় রহস্যগুলোর সমাধান করতে...আলহামদুলিল্লাহ!
ইতি,
সাদমান
----
আমি ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করব, এরকম টপিকে আরও লিখার। আরও জানতে, Dr Sadman Sakib পেইজটি follow করে রাখতে পারেন...