18/06/2025
আল্লাহ তাআলা দুভাবে সৎকর্মশীল বান্দাদেরকে রক্ষণাবেক্ষণ করেন।
👉 প্রথমতঃ তিনি মুমিনদেরকে জাগতিক বিপদ-আপদ থেকে হেফাযত করেন। যেমন: বিভিন্ন রোগ-শোক, দুর্ঘটনা, সম্পদের ক্ষতি ইত্যাদি থেকে রক্ষা করেন।
🟢 তেমনি আল্লাহ তায়ালা বান্দার সৎকর্মশীলতার কারণে তার সন্তান-সন্ততিকে হেফাযত করেন। যারা তাদের সন্তান-সন্ততির ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে থাকেন, আল্লাহ তাআলা তাদের সন্তানদেরকে মুত্তাকী ও সৎকর্মশীল হিসেবে গড়ে তোলেন। এজন্য মা-বাবার সৎকর্মশীলতা এবং আল্লাহ-ভীতি সুসন্তান লাভের অন্যতম কারণ। সূরা কাহফে দুজন এতিম বালকের সম্পদ সংরক্ষণের একটা ঘটনা আছে:
আর দেয়ালের ব্যাপার হল তা ছিল শহরের দুই এতিম বাচ্চার এবং এর নিচে তাদের জন্য সঞ্চিত গুপ্তধন রয়েছে, আর তাদের পিতা ছিলেন নেককার। তাই আপনার রব দয়াপরবশ হয়ে চাইলেন যে, তারা দুজনে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে তাদের গুপ্তধন বের করে নিক।... [সূরা আল কাহফ, ১৮ : ৮২]
🔴 এই আয়াতে দুজন এতিম বালকের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহর নবী খাদির (আ.) একটি দেয়ালকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন যা পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কারণ এর নিচে এই দুই এতিম বালকের সম্পদ লুকানো ছিল। তাদের বাবা সৎকর্মশীল ছিলেন, ফলে আল্লাহ তাআলা এভাবে তার দুই সন্তানের সম্পদকে রক্ষার ব্যবস্থা করেছেন।
📌 সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব বলেন: “আমি সালাত আদায় করি, তখন আমার সন্তানের কথা মনে হয়, ফলে আমি সালাতে বৃদ্ধি করে থাকি।”
⚠️ কিন্তু দুঃখের বিষয় হল বর্তমানে ঈমানের দুর্বলতার কারণে অনেক মা বাবাই সন্তানের ‘কল্যাণ’ এর জন্য এমন কাজ করছেন যা আল্লাহর নিকট অপছন্দনীয়, তাহলে কিভাবে তাদের জীবনে কল্যাণ আসবে!
📊 উদাহরণস্বরূপ অনেক মা বাবাই তার সন্তানকে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে পাঠান যেখানে ইসলামের অনুশাসন মেনে চলা হয় না। এমন প্রতিষ্ঠানে পাঠান যেখানে তাদের মনে ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তি তৈরি হয়, যেখানে ভ্রান্ত আকীদা শিক্ষা দেয়া হয়।
সেখানে তারা ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। বর্তমান সময়ে স্কুল জীবনেই অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা বিরল নয়। অহরহ এগুলো ঘটছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের অপরাধ, মাদকাসক্তি এবং অন্যান্য শরীয়ত বিরোধী ও সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা তো আছেই। আমাদের যে সমস্ত সন্তানেরা এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনার শিকার হচ্ছে, তাদের অনেকের মা বাবাই আল্লাহ এবং আখেরাতে বিশ্বাস করেন অথবা বিশ্বাস করার দাবী করে থাকেন।
❗️ অনেক সময় এই মা-বাবারা যতক্ষণ তাদের সন্তানদের রেজাল্ট ভালো থাকে এবং যতক্ষণ তারা জীবনে আপাতদৃষ্টিতে উন্নতি করতে থাকে ততক্ষণ সন্তুষ্ট থাকেন। অনেকেই উন্নত ক্যারিয়ারের আশায় সন্তানদেরকে অবিশ্বাসীদের দেশে পড়তে পাঠান। এভাবে সন্তানদেরকে তারা জাহান্নামে চিরস্থায়ী হওয়ার ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেন। কেননা বিদেশে পড়তে যাওয়ার ফলে আমাদের ছেলেমেয়েদের শুধুমাত্র চরিত্রই ধ্বংস হয় না, বরং তাদের সবচেয়ে মূল্যবান যে সম্পদ অর্থাৎ ঈমান – সেই ঈমান হারিয়ে তারা ফিরে আসে কিংবা কখনোই আর দেশে ফিরে আসে না। যে মা অথবা বাবা আখেরাতে বিশ্বাস করেন তার পক্ষে পৃথিবীর সবকিছুর বিনিময়েও কি সন্তানকে এভাবে জাহান্নামে চিরস্থায়ী হওয়ার জন্য ঠেলে ফেলে দেয়া সম্ভব হতে পারে?
❓জাহান্নামী এই সন্তান কেয়ামতের দিন তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করার দায়িত্বে অবহেলাকারী মা-বাবাকে তার সাথে টেনে জাহান্নামে নিয়ে যাবে – এটা কি বিচিত্র কিছু?
✅ এজন্য কোন মা-বাবা কমপক্ষে যেটা নিশ্চিত করবেন, তা হল যেন তাদের সন্তানরা দ্বীনের সঠিক শিক্ষা পায়। তারা যেন এমন প্রতিষ্ঠানে পড়ে যেখানে তারা আল্লাহ, রাসূল এবং শরীয়তকে জানবে। যে প্রতিষ্ঠান তাদের সন্তানদের চরিত্র রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী হবে। হাফেয হওয়া, আরবী ভাষা শেখা কিংবা অনেক কিছু জানা জরুরী নয়। ঐ হাফেয দিয়ে আমরা কী করব মাদ্রাসার সহপাঠী কিংবা ‘শিক্ষক’ এর হাতেই যার মোবাইল এবং এর যাবতীয় অশ্লীলতা ও ফিতনার হাতে খড়ি হয়?
🔥সন্তানকে ‘সেলেব্রিটি’ বানানোর লোভ একটা কঠিন রোগ – আজ মুসলিম মা-বাবার অন্তরের অনেক গভীর পর্যন্ত এই রোগ তার শিকড় বিস্তার করেছে। যারা খানিকটা দ্বীনের বুঝের কারণে ছেলেমেয়েকে নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িক, নৃত্যশিল্পী, মডেল, খেলোয়াড় জাতীয় নিষিদ্ধ পেশার সেলেব্রিটি বানানোর চেষ্টা থেকে নিরস্ত হয়েছেন, তারাই আবার অন্যদিকে সন্তানদেরকে বড় বিজ্ঞানী, ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হাফেয কিংবা ‘জাকের নায়েক’ বানাতে খুবই তৎপর! তারা ‘জাকের নায়েক’ এজন্য বানাতে চান না যে তাদের ধারণায় তিনি আল্লাহর সৎকর্মশীল একজন বান্দা – সেটা হলে সমস্যা ছিল না। কিন্তু আসলে তারা ‘জাকের নায়েক’ বানাতে চান কারণ জাকের নায়েক একজন সেলেব্রিটি যিনি কাফেরদের কাছে সমাদৃত ‘ইংরেজী’ ভাষায় অনর্গল বক্তৃতা ও ডিবেট করতে পারেন! ঘুরেফিরে তাদের লক্ষ্য দুনিয়ার খ্যাতি – আল্লাহর সন্তুষ্টি নয়।