11/02/2024
বাসরঘরে ঢুকতেই বউ আমাকে সালাম করে
জিজ্ঞেস করল, " কেমন আছেন ভাইয়া? 😡"
ভাইয়া শব্দটা শুনে অবাক না হয়ে পারলাম
না, ইচ্ছে করছিল দেয়ালে মাথা ঠুকে
সুইসাইড খাই।
বিয়েটা করেছি পারিবারিকভাবে।
বর্তমান যুগে বিয়ে করতে গেলে সবাই
অল্পবয়সী মেয়ে খুঁজে, আমার বেলায়ও
অন্যটা হয়নি। পারিবারিক মতামতে বিয়ে
করলাম ক্লাস নাইনে পড়ুয়া এক সুন্দরী
মেয়েকে। বাসর রাতে বউ আমাকে ভাই
বলাতে একদম থ হয়ে গেলাম৷ প্রশ্ন করলাম, "
আমাকে ভাই বলছো কেন? "
সে স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিল, " আপনার
আম্মু আমাকে বলেছে, আজ থেকে উনাকে
'মা' বলে ডাকতে। "
" হ্যাঁ, এটাই তো স্বাভাবিক। মা'ই তো
ডাকবে! "
বউ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, " তো আপনার
মা যদি আমারও মা হয়, তাহলে তো আমরা
ভাই-বোন তাইনা? "
বউয়ের যুক্তি দেখে দু-চোখ থেকে আবেগে
আধা ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল৷ অধিক শোকে
পাথর হয়ে খাটের এক কোণে বসে রইলাম।
" এই যে ভাইয়া, শোনেন! "
'ভাইয়া' ডাকটা শুনে দুঃখে আমার কলিজা
ফেটে কিডনিতে গিয়ে লাগল। জন্ম থেকে
এই পর্যন্ত যতটা মেয়ের প্রতি ক্রাশ
খেয়েছি, সবগুলো মেয়েই আমাকে 'ভাইয়'
ডেকে আমার প্রপোজ করাতে পানি ঢেলে
দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আমার বউও ভাইয়া
ডাকাটা বাদ দিলো না৷ এ জীবন রেখে কী
লাভ! ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েটাকে বিষ খাইয়ে
আমি সুইসাইড করি৷ নিজেকে সামলে সাড়া
দিয়ে বললাম, " হ্যাঁ, বলো বইনা৷ "
" একটা বিড়াল এনে দিবেন? "
বউয়ের মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে ওর
দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে বললাম, " বিড়াল
দিয়ে কী করবে শুনি? "
" ভাবী বলেছিল বাসর রাতে বিড়াল
মারতে যেন ভুল না করি। "
একটা মানুষ কী করে এতোটা গাধীরাম হতে
পারে চিন্তা করতে লাগলাম। চিন্তায়
ব্যাঘাত ঘটিয়ে আমার হাতে একটা ধাক্কা
দিয়ে মাইশা বলল, " এনে দিন না একটা
বিড়াল৷ "
ছলছল নয়নে ওর দিকে তাকালাম৷ মেয়েটার
চেহারা বেশ মনোমুগ্ধকর, মায়া-মায়া ভাব
আছে৷ কিন্তু মাথায় যে ঘিলু বলতে কিছু
নেই সেটা আমার আর বুঝার বাকি রইল না।
বললাম, " আচ্ছা ঠিক আছে, কালকে বাজার
থেকে একটা বিড়ালের বাচ্চা এনে দিব
তোমাকে। "
" কিন্তু ভাবি তো বলল, প্রথম রাতে বিড়াল
মারতে৷ "
রেগে গিয়ে বললাম, " তো ভাবির বাড়ী
থেকে একটা বিড়াল নিয়ে আসলেই পারতা,
আমার মতো সাদাসিধে ছেলেটার সাথে
কেন এমন করছো? "
বউ চুপচাপ শুয়ে পড়ল বিছানায়৷ বউয়ের
কার্যকলাপ দেখে মনে হচ্ছে আজও আমাকে
ব্যাচেলারদের মতো রাত কাটাতে হবে। সব
ইচ্ছে মনের মধ্যে ধামাচাপা দিয়ে
মাঝখানে একটা কোলবালিশ দিয়ে আমিও
শুয়ে পড়লাম৷
মাঝরাতে বউ আমাদের মাঝের
কোলবালিশটা সরিয়ে আমাকে জড়িয়ে
ধরে বলল, " ভাইয়া, আমার না খুব ভয়
লাগছে। "
আমি কথা না বাড়িয়ে ওর কানের কাছে
মুখ নিয়ে বললাম, " মাঝরাতে এখানে ভূত
আসে, আলাদা কাউকে দেখলেই ঝাপটে
ধরে৷ ভালো করে জড়িয়ে ধরো আমাকে। "
আহ, কী রোমান্টিক অনুভূতি! মনে হচ্ছে এই
বুঝি ব্যাচেলর লাইফটা কেটে গেল আমার।
বউয়ের মুখে ভাইয়া ডাক শুনতে শুনতে কান
আমার ঝালাপালা। ছুটি থাকা সত্ত্বেও
বেরিয়ে গেলাম অফিসের উদ্দেশ্যে।
কিছুক্ষণ পরপর মাইশা আমাকে কল দিচ্ছে।
রিসিভ করতেই বলছে, " বাসায় কখন আসবেন
ভাইয়া? বাসার ফেরার পথে বিড়াল আনতে
ভুলবেন না কিন্তু! আজকে যে করেই হোক
বিড়াল মারতে হবে। "
কথায় কথায় ভাইয়া বলাটা বোধহয় মাইশার
একটা বদ অভ্যাস৷ কিছু বলার সাহস হচ্ছিলো
না কোনোবারই। শুধুমাত্র "হ্যাঁ" বলেই কল
কেটে দিচ্ছি প্রতিবার।
বিকেলে যখন ক্যান্টিনে খাওয়াদাওয়া
করে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখন আম্মুর কল।
রিসিভ করতেই বললেন, " বাবা, মাইশা
আমাকে শুধুশুধু প্রশ্ন করছে, ভাইয়া আসবে
কখন? আসার পথে মাইশার ভাইয়াকে কল
দিয়ে নিয়ে আসিস তো। "
আবেগে দুচোখ বেয়ে আঁড়াই ফোটা জল
গড়িয়ে পড়ল। " ঠিক আছে৷ " বলে কল কেটে
দিলাম।
একটা খাঁচাতে বিড়ালের বাচ্চা নিয়ে
বাসার কলিংবেলে হাত চাপলাম৷ দেখলাম
মাইশা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে
দেখেই মাইশা জোরে বলতে লাগল, " আম্মু,
দেখো ভাইয়া এসেছে৷ "
হাত থেকে বিড়ালের খাঁচাটা রেখে ওর মুখ
চেপে ধরলাম। সে অবাক হয়ে আমার দিকে
তাকিয়ে চোখগুলো এদিক-সেদিক ঘুরাছে৷
কিছু বলার চেষ্টাও করছে। মুখ চেপে ধরে
টেনেহিঁচড়ে আমার রুমে নিয়ে গেলাম৷
বললাম, " তুমি আম্মুর সামনে আমাকে
ভাইয়া ডাকবে না। "
" কেন! কী হয়েছে? আজ সারাদিন তো
'ভাইয়া' বলে আপনার কথাই বললাম৷ "
আবারও বললাম, " ঠিক আছে, কারোর
সামনে আমাকে ভাইয়া ডাকবে না
বুঝেছো? "
" আচ্ছা ঠিক আছে। "
শান্তভাবে আমার পাশে মাইশা বসে
বিড়ালটা নিয়ে খেলা করছে। কিছুক্ষণ পর
মাইশা বলল, " বিড়ালটা খুব কিউট, এটাকে
আমি আর মারবো না। আদর করবো। "
আমি আর কিছু বললাম না।
প্রথমবার যখন শশুরবাড়িতে গেলাম। লক্ষ্য
করলাম ভাবির সাথে বসে মাইশা কী যেন
গুঁজুর-গুঁজুর করছে। আঁড়ি পেতে শোনার
চেষ্টা করলাম। ভাবি বলছে, " কিরে!
বিড়াল মারলি? "
মাইশা উত্তর দিলো, " উনি বিড়াল কিনে
এনে দিয়েছিলেন, কিন্তু বিড়ালের
বাচ্চাটা দেখে খুব মায়া হলো তাই এটাকে
বাসাতেই রেখে দিয়েছি। "
দুঃখে আমার মরে যেতে ইচ্ছে হলো। লক্ষ্য
করলাম ভাবি মিটিমিটি হাসছে।
অল্প কিছুদিনের মধ্যে আমাদের সম্পর্ক খুব
ঘনিষ্ঠতায় পৌঁছালো৷ কিন্তু মাইশার মুখের
ভাইয়া ডাকটা সরাতে পারলাম না আর৷
যাইহোক, ব্যাচেলর লাইফ থেকে তো মুক্তি
পেলাম। তবে মেয়েটা আমাকে ছাড়া কিছু
বুঝেনা কিন্তু, সবসময় পিঁছু পড়েই থাকে।
বিয়ের পাঁচ মাস যেতেই লক্ষ্য করলাম
মাইশা ঘনঘন বমি করছে৷ আম্মুও কেমন
জানি দুষ্টূমির নজরে আমার দিকে তাকায়৷
বেশ হাসিখুশি পরিবারের সবাই, কিন্তু
কেমন জানি সবাই এড়িয়ে চলছে আমাকে৷
রাত হতে মাইশাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস
করলাম, " আচ্ছা, সবাই আমাকে এভাবে
এড়িয়ে চলছে কেন? "
বিশ্বাস করেন রাসেল ভাই, এরপর যা
শুনলাম আমি তার জন্য মোটেও প্রস্তুত
ছিলাম না। মাইশা মিটিমিটি হাসলো,
আমার বুকে মুখ লোকালো। আস্তে করে বলল,
" আপনি মামা হতে চলেছেন। "