10/10/2025
🌍 বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০২৫
বিপর্যয় ও জরুরি পরিস্থিতিতে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব
প্রতি বছর ১০ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য—"Access to services: Mental health in catastrophes and emergencies"—বিশ্বব্যাপী একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিয়ে এসেছে। এই প্রতিপাদ্য আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, যখন মানুষ দুর্যোগ বা জরুরি অবস্থার মধ্য দিয়ে যায়, তখন কেবল খাবার, চিকিৎসা বা নিরাপত্তা নয়, তার মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকারও সমান গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, যেকোনো বিপর্যয়ের সময় মানুষদের মানসিক যন্ত্রণাগুলো অদৃশ্য রয়ে যায়—যা পরবর্তীতে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক সমস্যার জন্ম দেয়।
একটি বড় বন্যা, ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড, দুর্ঘটনা, রাজনৈতিক সহিংসতা কিংবা যুদ্ধ পরিস্থিতি—সবই মানুষের মনে গভীর ছাপ ফেলে যায়। এমন পরিস্থিতিতে অনেকে আতঙ্ক, ঘুমের সমস্যা, দুঃস্বপ্ন, নিঃসঙ্গতা, এবং আত্মহত্যার প্রবণতার মতো সমস্যায় ভোগেন। বিশেষ করে শিশুরা, বয়স্করা, নারী এবং যারা আগে থেকেই মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন—তাদের জন্য এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, বিপর্যয়ের সময় বা পরেও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রায় অনুপস্থিত থাকে। মাঠপর্যায়ে প্রশিক্ষিত সাইকোলজিস্ট বা কাউন্সেলরের অভাব, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সামাজিক কুসংস্কার, এবং মানুষের অসচেতনতা—সব মিলিয়ে এ সেবা সাধারণ মানুষের জন্য অধরাই থেকে যায়।
এই বাস্তবতাকে সামনে রেখেই ২০২৫ সালের এই দিবসটি আমাদের আহ্বান জানায়—জরুরি সেবার প্রতিটি স্তরে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। হাসপাতাল, আশ্রয়কেন্দ্র, রেসকিউ টিম কিংবা কমিউনিটি সেবার প্রতিটি স্তরে এমন কাউকে থাকতে হবে, যিনি শুধু শারীরিক নয়, মানসিক কষ্ট বুঝে সহানুভূতির সঙ্গে পাশে দাঁড়াতে পারেন। একই সঙ্গে প্রয়োজন টেলিহেলথ বা মানসিক সহায়তা হটলাইন, যাতে দুর্গত মানুষ দূর থেকেও কাউকে নিজের কথা বলতে পারেন। সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে এর সমন্বিত উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।
আমাদের সমাজে আজও মানসিক স্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করা হয়, অথচ একেকটি বিপর্যয় একেকটি মনের ভিতর ঝড় তোলে—যার প্রতিচ্ছবি আমরা দেখতে পাই না, কিন্তু তা দীর্ঘমেয়াদে একেকটি জীবনকে ভেঙে দেয়। তাই এবার সময় এসেছে এই অদৃশ্য যন্ত্রণা গুলোকে দৃশ্যমান করার। বিপর্যয়ের সময় মানুষ কাঁদে না শুধু ক্ষয়ক্ষতির জন্য, বরং ভাঙে বিশ্বাস, হারায় ভরসা, এবং সেই আঘাত তাদের ভিতরে দীর্ঘদিন বয়ে চলে।
এই বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে আসুন আমরা অঙ্গীকার করি—মানসিক স্বাস্থ্যসেবা আর বিলাসিতা নয়, এটি একটি মৌলিক অধিকার। জরুরি অবস্থা মানে শুধু শারীরিক চিকিৎসা নয়, মানসিক সহায়তাও।
কারণ মানুষ শুধু বেঁচে থাকতে চায় না, ভালো থেকেও বাঁচতে চায়।
✍
ডা. সৈয়দ ফাহিম শামস
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ
সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
মানসিক রোগ বিভাগ
উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
এমবিবিএস, এমডি (সাইকিয়াট্রি), এমসিপিএস
ফেলো, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন (APA, USA)
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েট মেম্বার, রয়্যাল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্টস (RCPsych, UK