12/12/2023
♓ শিশুর প্রথম সলিড খাবারঃ
৬ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের কেবলমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার পরে যখন দুধ ছাড়া অন্য খাবার শুরু করা হয় সেটাকে বলে উইনিং (Weaning) এবং যে খাবার দিয়ে উইনিং শুরু করা হয় সেগুলোকে বলা হয় উইনিং ফুড (Weaning Foods)। উইনিং ঘরের খাবার দিয়ে শুরু করলেই সবচেয়ে ভালো।
প্রথমে জেনে নিতে হবে শিশুর প্রথম সলিড খাবার কি কি হতে পারে। প্রথম সলিড ফুড হিসেবে আদর্শ কিছু খাবার হচ্ছে-
✔️চটকানো পাকা কলা
✔️মিষ্টি আলুর পিউরি
✔️ডালের পানি দিয়ে চটকানো নরম ভাত
✔️ফলের রস (টক জাতীয় ফল বাদে)
✔️জাউ ভাত, সবজি সেদ্ধ
✔️আস্তে আস্তে চাল, ডাল ও ২ ধরনের সবজি দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি।
♓ কিভাবে শিশুর প্রথম সলিড খাবার কীভাবে শুরু করবেনঃ
১) প্রথম দিন- ১ চামচ, দুপুর বেলা। দ্বিতীয় দিন- ২ চামচ, সকালে ও দুপুরে। তৃতীয় দিন- ৩ চামচ, সকালে, দুপুরে ও রাতে।
২) শিশু রান্না করা খাবার খাওয়া শুরু করলে শিশুর খাবারে ২/৩ চামচ তেল দিয়ে রান্না করতে হবে।
৩) প্রতিদিন ১ পোয়া বাটির হাফ বাটি করে দিনে দু’বার ঘরে তৈরি বাড়তি খাবার এবং ১-২ বার পুষ্টিকর নাস্তা খাওয়াতে হবে (সব বাবু সমান না, এক এক জনের হজম ক্ষমতা একাক রকম, তাই এই পরিমান খাবার কোনো কোনো বাবু খেতে পারে আবার নাও পারে। এটা নিয়ে হতাশ হবেন না)
৪) এই সময়ে সারাদিন শিশু ৩ ঘন্টা পর পর খাবে, যার মধ্যে দু’টি বাড়তি খাবার এবং একটি পুষ্টিকর নাস্তা দিতে হবে। যেমন- কলা, ডাবের পানি, ফলের রস, দুধ ইত্যাদি। সকাল শুরু করতে হবে বুকের দুধ বা ফর্মুলা মিল্ক দিয়ে। ২ বছর পর্যন্ত শিশুকে বুকের দুধ দেওয়া যায়।
♓ সলিড খাবারে অভ্যস্ত হওয়ার পর ফুড চার্ট কেমন হবে?
১) সকাল ৮টা- নরম খিচুড়ি। (খিচুড়িতে যা যা থাকতে পারে- ১ মুঠ চাল, চালের অর্ধেক পরিমাণে ডাল, দুই রকমের সবজি, ২-৩ চামচ তেল, কাঁটা ছাড়া মাছ, চিকেন অথবা কলিজা)
২) সকাল ১১টা- বুকের দুধ/ফর্মুলা মিল্ক/দুধ দিয়ে রান্না করা সুজি/সেরেলাক/সিজনাল ফল
৩) বেলা ২টা- নরম খিচুড়ি/ডাল দিয়ে নরম ভাত সাথে মাছ বা মাংস এক পিস
৪) বেলা ৫টা- যেকোনো ফল যেমন- পাকা কলা/পাকা পেঁপে/আম অথবা সেদ্ধ ডিমের কুসুম/নরম বিস্কুট/নুডলস
৫) রাত ৮টা- দুপুরের মতো ভাত, সবজি, মাছ
৬) ঘুমানোর আগে- বুকের দুধ/ফর্মুলা মিল্ক
৬ মাসের পর থেকে বাচ্চাকে পানিও দিতে হবে। অনেকে খিচুড়ির বদলে সকালে বাচ্চাকে রোলড ওটস বা সেরেলাক খাওয়ান, এতেও সমস্যা নেই। তবে বাইরের প্যাকেটজাত ফুড না দিয়ে ঘরে তৈরি খাবার দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে ঘরের খাবারে সে অভ্যস্ত হবে। শিশুর কাছে এই খাবারগুলো নতুন, তাই প্রথমেই সব হজম নাও হতে পারে। তাই সব নতুন খাবার একদিনে দেওয়া শুরু করবেন না। পর্যায়ক্রমে একটা একটা করে আরম্ভ করুন। যদি কোনো খাবার বাচ্চাকে স্যুট না করে বা হজম না হয় অথবা হুট করে অ্যালার্জি হয়, তাহলে সেটা দেওয়া বন্ধ রাখুন।
♓ উইনিং এর শুরুতে যেসব সমস্যা হতে পারে
উইনিং এর সময় নতুন খাবার খেয়ে আপনার শিশুর অ্যালার্জি হতে পারে। বাচ্চার যে যে লক্ষণ দেখে আপনি ফুড অ্যালার্জি বলে চিহ্নিত করতে পারবেন, সেগুলো হলো-
➡️পেট ব্যথা সাথে কান্না ও
➡️পেট মোচড় দেওয়া
➡️বার বার বমি
➡️গায়ে র্যাশ ওঠা
➡️লালচেভাব দেখা দেওয়া
➡️নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি
এরকম হলে চেষ্টা করুন কোন খাবারে অ্যালার্জি হচ্ছে সেটা বের করতে। সেই খাবারটি দেওয়া সাময়িকভাবে বন্ধ রাখুন। তারপর কিছু দিন পরে সেটা আবারও দিন। যদি দ্বিতীয়বারও শিশুর অ্যালার্জি হয়, তবে নিশ্চিত ধরে নিন সেই খাবারটিই অ্যালার্জির কারণ।
♓ খেয়াল রাখুন কিছু বিষয়েঃ
শিশুর প্রথম সলিড খাবার দেওয়া যখন শুরু হয়, তখন অনেক ক্ষেত্রে শিশুর পটি শক্ত হয়ে যায় বা টয়লেট করতে তার কষ্ট হয়। এক্ষেত্রে তার ফুড মেন্যুতে কাঁচা পেঁপে, মিষ্টি কুমড়ো রাখতে হবে। জাউ ভাতের সাথে এই সবজিগুলো দিতে পারেন বা খিচুড়ির সাথে এই সবজি মিক্স করতে পারেন। এতে টয়লেট স্বাভাবিক হবে। হজমের সমস্যা হলে ২ বছরের আগে বিফ বা মাটন না দেওয়াই ভালো। আর ২ বছরের আগে সরাসরি গরুর দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন। তবে ১ বছর শেষ হলে গরুর দুধের তৈরি খাবার দিতে পারেন। তবে ৬ মাস শেষ হলে টকদই দিতে পারেন, এটা শিশুদের জন্য খুবই উপকারী। টকদই গরুর দুধের তৈরি কিন্তু এটা ৬ মাস শেষ হলে দিতে পারেন। ১ বছর শেষ হলে বাচ্চার খাবার এ লবন দিবেন, এর আগে খাবার এ লবন দিবেন না। ৩ বছর এর আগে বাচ্চার খাবার এ চিনি না দেওয়া ভালো।
সব খাবার শিশু শুরুতে পছন্দ নাও করতে পারে। তাকে জোর করে খাওয়াবেন না। তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে একবার কোনো খাবার শিশু খেতে না চাইলে যদি সেই খাবারটা তাকে বার বার দেওয়া হয়, আস্তে আস্তে ঐ খাবারের প্রতি তার আগ্রহ হয়। জোর না করে মাকে ধৈর্য রাখতে হবে। খাবারগুলো কালারফুল প্লেটে সার্ভ করলে শিশুর আগ্রহ বাড়বে। সবসময় ব্লেন্ড করে লিকুইড খাবার শিশুকে দিবেন না, এতে সে চিবিয়ে খেতে শিখবে না। শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণে ঘরে বানানো খাবারে তাকে অভ্যস্ত করে তুলুন, তাকে নিজের হাতে খেতে দিন। খেলতে খেলতে সে নিজের হাতে খেতে শিখবে।
📣 ৩দিন রুলসঃ
আপনার শিশুকে একবারে নতুন খাবারের সাথে পরিচয় করানোর পর অন্য একটি নতুন খাবার দেয়ার আগে তিন দিন অপেক্ষা করুন। এটি আপনাকে আপনার শিশুর সম্ভাব্য অ্যালার্জি সনাক্ত করতে সাহায্য করবে। যদি আপনার শিশুর পেট খারাপ বা বমির মতো কোনো সমস্যা হয়, তাহলে তাকে সেই খাবার দেওয়া বন্ধ করুন এবং একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন। মনে রাখবেন, কঠিন খাবার খাওয়া শুরু করার 6 মাস থেকে 3 বছরের মধ্যে কিছু বাচ্চাদের নির্দিষ্ট খাবার সহ্য না করা স্বাভাবিক। সুতরাং, সতর্ক থাকা এবং সমস্যার যে কোনো লক্ষণের দিকে নজর রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার শিশুকে নতুন খাবার দেওয়ার সময় 3-দিনের নিয়ম অবশ্যই অনুসরণ করুন।