22/11/2025
❖ ১. “রুকইয়াহ ডায়াগনোসিস” কি?
বর্তমান সময়ে অনেক রুকইয়া-প্র্যাকটিশনার যে জিনিসটি করেন—
রোগীকে কিছু দুআ/আয়াত শোনানো বা কিছু শারীরিক পরীক্ষা করা—এর মাধ্যমে জ্বীন, যাদু, নজর লাগা ইত্যাদি নির্ণয় করাকে “রুকইয়াহ ডায়াগনোসিস” বলা হচ্ছে।
অর্থাৎ তারা দাবি করেন—
• “যদি এই আয়াত শুনে তোমার হাত কাঁপে → জ্বীন আছে”
• “যদি বুকে চাপ লাগে → ম্যাজিক করা”
• “যদি মাথা ব্যথা বেড়ে যায় → নজর লাগা”
ইত্যাদি।
এটি আধুনিক যুগেই জনপ্রিয় হয়েছে—আরব ও দক্ষিণ এশিয়ায় বিশেষ করে ১৯৮০’র পর থেকে।
⸻
❖ ২. এই রুকইয়াহ ডায়াগনোসিসের কোনো শারঈ ভিত্তি আছে কি?
✘ স্পষ্ট উত্তর: না, এই পদ্ধতির কোনো সরাসরি শারঈ ভিত্তি নেই।
➤ প্রমাণ:
(১) নবী ﷺ, সাহাবা, ইমামগণ—কেউ জ্বীন বা যাদু নির্ণয়ের জন্য কোনো পদ্ধতি চালু করেননি।
তারা শুধুমাত্র চিকিৎসা (রুকইয়া) করেছেন, কিন্তু—
• “এক্স-রে স্টাইলে” শনাক্ত করা
• “পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা”
—এ জাতীয় কিছু কখনো করেননি।
(২) শায়েখ বিনবাজ, উছাইমিন, সালিহ আল-ফাওজান, ইরাকী—সবাই বলেছেন:
রুকইয়ার উদ্দেশ্য চিকিৎসা, নির্ণয় নয়।
জ্বীন-নির্ণয়ের দাবিগুলো গায়েব সম্পর্কে কথা বলা, আর গায়েব জানা কেবল আল্লাহর জন্য।
➡ ফতোয়া:
“রুকইয়াহ দ্বারা রোগ নির্ণয়—এটি শরিয়তে প্রতিষ্ঠিত নয়। এটি অনেক সময় প্রতারণার দরজা খুলে দেয়।”
—শাইখ ইবন উথাইমিন (রাহি.)
⸻
❖ ৩. তাহলে রুকইয়া ডায়াগনোসিস আদৌ প্রয়োজন আছে কি?
✘ না, প্রয়োজন নেই — বরং ক্ষতিকর হতে পারে।
কারণ:
1. এতে গায়েব নিয়ে অনুমান করা হয়।
2. অনেক রুকইয়া-কারক ব্যবসায়িক কারণে ভয় দেখায় (“তোমার ওপর ম্যাজিক আছে”)।3. ভুল ডায়াগনোসিসে প্রকৃত চিকিৎসা দেরি হয় (যদি আসলে মানসিক/চিকিৎসাজনিত রোগ হয়)।
4. মানুষ নির্ভরশীল ও ভীত হয়ে যায়।
⸻
❖ ৪. তাহলে রোগ কিভাবে চেনা যাবে? (সঠিক ইসলামি পদ্ধতি)
✔ পদ্ধতি–১: লক্ষণসমূহ দেখে ‘সম্ভাবনা’ বোঝা
নবিজি ﷺ কোনো নির্ণয় পদ্ধতি দেননি, তবে কিছু হাদীসে যাদু বা নজরের প্রভাবের লক্ষণ পাওয়া যায়।
➤ যাদুর সম্ভাব্য লক্ষণ:
• আচমকা ভীষণ দাম্পত্য দ্বন্দ্ব
• অকারণে ভয়/বিভ্রান্তি
• বারবার একই রোগ হওয়া
• অতিরিক্ত ভুলে যাওয়া (যেমন নবী ﷺ-এর ঘটনা।
এগুলো কেবল সম্ভাব্য, চূড়ান্ত প্রমাণ নয়।
➤ নজর/হাসাদের লক্ষণ:
• কারণ ছাড়া অসুস্থতা
• হঠাৎ দুর্বলতা
• নবজাতকের ক্ষেত্রে হঠাৎ কান্না, দুধ না খাওয়া
(ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম উল্লেখ করেছেন)
আবারও বলছি—এটি নিশ্চিত প্রমাণ নয়।
⸻
✔ পদ্ধতি–২: রুকইয়া করা – তারপর উন্নতি বা পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা
এটাই সালাফদের পদ্ধতি।
যদি লক্ষণ কমে যায় →
জ্বীন/যাদু/নজর-এর সম্ভাবনা বাড়ে।
যদি কোনো পরিবর্তন না হয় →
সম্ভাবনা কমে যায়।
এ ক্ষেত্রে হয়তো শারীরিক, মানসিক বা অন্য চিকিৎসা প্রয়োজন।
এতে গায়েব দাবি করা লাগছে না।
⸻
✔ পদ্ধতি–৩: শারীরিক/মেডিক্যাল পরীক্ষা করা
নবী ﷺ নিজেও চিকিৎসা করতেন এবং চিকিৎসার অনুমতি দিয়েছেন।
যদি—
• হার্ট
• থাইরয়েড
• ভিটামিন
• ডিপ্রেশন/anxiety
ইত্যাদির সমস্যা থাকে—তাহলে তা আগে চিকিৎসা করতে হবে।
⸻
❖ ৫. কিভাবে “নিশ্চিত হওয়া যাবে”?
✘ “১০০% নিশ্চিত হওয়া” সম্ভব নয়—গায়েব হওয়ায়।
✔ তবে যা করা যায়:
১) লক্ষণ পর্যবেক্ষণ
২) নিয়মিত রুকইয়া করলে অগ্রগতি দেখা
৩) দোয়া, যিকর, তিলাওয়াত নিয়মিত বজায় রাখা
৪) চিকিৎসা পরীক্ষাও করা
রোগীর অবস্থা সমষ্টিগতভাবে বিবেচনা করাই ইসলামি পদ্ধতি।
⸻
❖ সংক্ষেপ:
✔ রুকইয়া ডায়াগনোসিস = আধুনিক উদ্ভাবন
✔ শরিয়িতে কোনো ভিত্তি নেই
✔ ভুল নির্ণয়ের ঝুঁকি বেশি
✔ রুকইয়া চিকিৎসা হিসেবে বৈধ, কিন্তু নির্ণয় পদ্ধতি নয়
✔ নিশ্চিত জ্ঞান → কেবল আল্লাহর কাছে
✔ লক্ষণ + রুকইয়া প্রতিক্রিয়া + মেডিকেল চেক মিলিয়ে ধারণা করা যায়
⸻
ASC
01972668345