
20/08/2024
নেত্রী এবং তার ডাক্তার…
ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ দিকে, রাত নয়টার সময় আমার ওয়াইফকে নিয়ে শ্যামলীর এক বাসা থেকে বের হয়েছি। হঠাৎই মনে হলো কয়েকজন ব্যক্তি আমাদেরকে ফলো করছেন। দুজনকে দেখে মনে হলো ডিফেন্সেরই কেউ হবে। বাকিদের দেখে মনে হলো, এলাকার বখাটে যুবক। হতে পারে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী কিংবা তাদের পালিত লোকজন…
এসব ক্ষেত্রে আমি বেশ চৌকষ। কেউ ফলো করছে কিনা এবং তাদের সাথে কোথা থেকে কে জয়েন করলো, তা বুঝতে পারি। লোকগুলো আমাদেরকে ওভারব্রিজ পর্যন্ত ফলো করলো। ওয়াইফকে ব্যাপারটা বলিনি। শুধু বললাম, "যে ছেলেটা মারা গেছে, বা মামলার যে প্রসিডিউর চলছে, তা নিয়ে এখন কোনো কথা না বলতে…"
ব্রিজের ওপাশে গিয়ে মনে হলো, এখান থেকে আরো একজন বা দুজন ফলো করা শুরু করলেন। মানুষের ভীড়ের কারণে ঠিকঠাক বুঝতে পারলাম না। ঝামেলার আশংকায় উবার নেয়ার সাহস হলোনা। বাসে চড়ে যাত্রাবাড়ীর দিকে রওনা দিলাম…
যে বাসায় গিয়েছিলাম, সেটা মূলত রাহিব রেজার বাসা। রাহিব রেজা হচ্ছে সেই ছেলেটা, যিনি সামান্য গ্যাসের সমস্যা নিয়ে নিজ পায়ে হেঁটে ল্যাবএইডে ডাক্তার মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল মাহতাব) এর কাছে গিয়েছিলেন। ভুল চিকিৎসা, অ্যানেস্থেশিয়ার অপপ্রয়োগ ও ডাক্তারের অবহেলায় তাকে ফিরতে হয়েছে লাশ হয়ে…
রাহিবের বোন আমার বন্ধু। ওদের বাসায় গিয়েই প্রথমে যেটা শুনলাম, ডাক্তার খুব প্রভাবশালী। তিনি একজন শহীদ বুদ্ধিজীবীকন্যার হাজবেন্ড। একইসাথে আওয়ামীলীগের একজন কার্যকরী সদস্য। শেখ হাসিনার অন্যতম একজন প্রাইভেট ডাক্তার।
সেখানে বসেই টেলিফোনে কয়েক জায়গায় খোঁজ নিয়ে জানলাম, কথা সত্য। প্রতিমন্ত্রীও তার কথায় উঠে বসে !!
সেখান থেকে বিদায় নিয়ে বাসার নিচে নেমে তো হাতেনাতে প্রমাণ পেলামই ! কিভাবে আমার বন্ধুর উপর নজরদারী করা হয়েছিলো…
ঘটনার কিছুদিন পর রাহিবের নামে ফেসবুক আইডি খুলে সেখান থেকে পোস্ট করা হয়, "আমি মরি নাই, বেঁচে আছি" !!
তার বোনের নামে অসংখ্য ফেক আইডি খোলা হয় এবং তার আইডিটাও বাতিল করে দেয়া হয়। আরো নানাভাবে হুমকিবার্তা পাঠিয়ে তাকে মানসিক হয়রানি করা হয়। যদিও এই সাহসী মেয়েটি এসব হুমকিতে একদমই দমে যায়নি…
… মামুন আল মাহতাব এভাবেই মানুষকে তটস্থ রাখতেন। শুনেছি, পরের টার্মে নাকি তার স্ত্রী স্বাস্থ্যমন্ত্রীও হবার কথা ছিলো। আর মামুন প্রস্তুতি নিচ্ছিলো এমপি নির্বাচন করার ! একইসাথে, এবারই তার পিজি হাসপাতালের ভিসি হবার কথা ছিলো, রাহিবের ঘটনাটার পর তিনি আর ভিসি হতে পারেননি।
রাহিব মারা যাবার ঘটনায় ডাক্তার মামুন আল মাহতাব কি বলেছিলো জানেন? "আপনারা মামলা করেন, ভাঙচুর করেন। যা খুশি করেন। আমি এইসব নিয়ে বদার্ড না। আমার প্রিভিয়াস ট্র্যাক রেকর্ড চেক করলে দেখবেন আমি এইসব অনেক কিছু পার করে এখানে আসা মানুষ" !! ভাবখানা এমন যে, আপনারা আমার বালটাও করতে পারবেন না !
একজন বৃদ্ধ বাবা তার সন্তানকে হারানোর পর ডাক্তারের কাছেই এভাবে পাল্টা হুমকি পেলো ! ভাবা যায়?
ঠিক একইসময়ে যতগুলো পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে খবরগুলো ছাপা হয়েছিলো, তার প্রায় অনেকগুলোই দিনে দিনে তাদের নিউজ লিংক ও ভিডিওগুলো সরিয়ে নিয়েছিলো ডাক্তারের রাজনৈতিক প্রভাবে !!
… এ তো গেলো কেবল একজন মামুন আল মাহতাবের কথা। আওয়ামীলীগের মদদপুষ্ট এরকম অসংখ্য ডাক্তার রয়েছেন। শুধু ডাক্তারই নন, কমবেশ সব পেশায়ই এরকম কিছু কুলাঙ্গার নিয়োজিত ছিলেন। অনেকে হয়ত এখনো আছেন। এর বিরুদ্ধে সরব হওয়া দরকার।
শুনেছি, মামুন আল মাহতাব এখনো দেশেই আছেন। শীঘ্রই নাকি চেম্বারও খুলবেন। এখন আপনিই সিদ্ধান্ত নেন, এই কসাইয়ের কাছে চিকিৎসা নিতে যাবেন কিনা। আর প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিক, দুর্নীতিবাজ এই অমানুষের বিরুদ্ধে তারা কোনো ব্যবস্থা নিবে কিনা…