হার্ট ব্লকের আমাদের চিকিৎসা:
ডায়োমেড হার্ট সেন্টার, হৃদরোগ চিকিৎসায় নেচারাল বাইপাস, আর্টারি ক্লিনজিং ও ডা. অরনিশের ফরমুলা (আদর্শ খাদ্যাভ্যাস, যোগ ব্যায়াম, ধ্যান, সামাজিক/ধর্মীয় আচার অনুসরণ ও চিন্তামুক্ত জীবন যাপন) সমন্বয়ে হৃদরোগীদের একটি পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। এ পদ্ধতি রোগীদের জন্য যন্ত্রণা মুক্ত ও স্বস্তিদায়ক হিসেবে পরীক্ষিত হয়েছে।
১) ইইসিপি মেশিনের মাধ্যমে নেচারাল বাইপাস
এ পদ্ধতির
মাধ্যমে হার্টের ঘুমন্ত ধমনির শাখা-প্রশাখায় রক্ত প্রবাহ এবং সরু ধমনিকে সম্প্রসারণ করার মাধ্যমে হৃদযন্ত্রে অক্সিজেন বৃদ্ধি করা। EECP (Enhanced External Counter Pulsation) মেশিন দিয়ে যন্ত্রণাদায়ক অস্ত্রোপচার ও ওষুধ ছাড়াই হার্ট ব্লকের আধুনিক চিকিৎসার পরীক্ষিত থেরাপি। ইইসিপি থেরাপি এফ.ডি.এ. (ইউ.কে) কর্তৃক অনুমোদিত পদ্ধতি হওয়ায়, এ দুই দেশে এর ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই থেরাপি প্রতিদিন ১ ঘণ্টা করে মোট ৩৫ দিনে ৩৫ ঘণ্টা সেশনের মাধ্যমে সঞ্চালন একটি পরিপূর্ণ ও গুণগত মান ধরা হয়েছে। একজন রোগীকে এ মাত্রায় থেরাপি দিলে পরিপূর্ণ ফল পাওয়া যায়। পরবর্তীতে পুরাতন রোগীগণ যদি নিয়মিত ভাবে বুস্টার-ডোজ (চিকিৎসকের নির্ধারিত মাত্রায় থেরাপি নিতে পারলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। ডায়োমেড হার্ট সেন্টার সফল ভাবে এ পদ্ধতির মাধ্যমে সেবা দিয়ে আসছে। সেন্টারের পাশে অবস্থান করে বা বাসা থেকে এসেও প্রতিদিন এ থেরাপি গ্রহণ করা যায়। ঘণ্টাব্যাপী থেরাপি গ্রহণের সময় সুফল বা আরাম অনুভবের কারণে রোগীগণ কোন কিছু পড়তে বা গান শুনতে ভালোবাসেন বা আরামদায়ক হওয়ায় বেশির ভাগ সময় ঘুমিয়ে পরেন।
থেরাপির পূর্ণ সেশনের পর একজন রোগী যা অনুভব করেন বা হৃৎপিণ্ডের যে পরির্বতন হয়; বুকের ব্যথা কমিয়ে বা ব্যথা মুক্ত করে, ওষুধের মাত্রা বা প্রয়োজন হ্রাস করে, হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। থেরাপি গ্রহনের পর যদি পরীক্ষা করা যায় তবে দেখা যাবে যে, ইজেকশন ফ্রেকশন উন্নতি হয়েছে, বহুমাত্রিক প্রাকৃতিক বাইপাসের মাধ্যমে মাইওকার্ডিয়াল পারফিউশন (Myocardial Perfusion) ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ হলো হৃৎপিণ্ডের প্রধান ধমনিতে যে ব্লক তার সামনে বা পরে সরু ও ছোট ছোট শাখা ধমনি থাকে তা সরু অবস্থান হতে প্রসার লাভ করে এবং প্রাকৃতিক ভাবে ব্লকের সামনে ও পরের ধমনিসমূহ পরস্পর সংযুক্ত হয়ে যেতে সহায়তা করে, কোন কোন ক্ষেত্রে নতুন ধমনী বা শিরা সৃষ্টি হয়ে থাকে। দ্রুত বা ঘনঘন শ্বাস প্রশ্বাস সমস্যা হতে মুক্তি দেয়। এ থেরাপি গ্রহণের ফলে শরীরের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির ফলে রেনাল সার্কুলেশন বৃদ্ধি পায়, যকৃত, অগ্নাশয় ও মস্তিস্কে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্টেমিনা বাড়িয়ে দেয়।
অর্থাৎ মানুষের শারীরিক সামর্থ্য বৃদ্ধি পায় ও সক্রিয় জীবন ধারা উপভোগ করার ক্ষমতা উন্নত করে। সর্বোপরি হৃদরোগের জন্য ব্যবহৃত ওষুধের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ যোগ্যভাবে হ্রাস পায় বা কোন কোন ক্ষেত্রে কোনপ্রকার অতিরিক্ত ওষুধের প্রয়োজন হয় না। এটি একটি যন্ত্রণামুক্ত ও স্বস্তিদায়ক ব্যবস্থা যার জন্য কোন প্রকার কাটা ছেঁড়া, সূঁচ পড়ানো বা অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয় না। থেরাপি নেয়ার পূর্বে ও পরের অবস্থার পার্থক্য বৈজ্ঞানিক ভাবে পরীক্ষিত। এ ক্ষেত্রে রোগী চাইলে, চিকিৎসার প্রারম্ভে MPI (Myocardial Perfusion Images)পরীক্ষা করে থেরাপি আরম্ভ করতে পারেন এবং কোর্স সমাপ্তিতে পুনরায় একই পরীক্ষা করে উন্নতির বা পরিবর্তনের পরিমাপ করতে পারবেন।
২) আর্টারি ক্লিনজিং থেরাপি (Artery Cleansing Therapy)
আর্টারি ক্লিনজিং বা এলোপ্যাথিক ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে হার্ট ব্লক বা ধমনিতে জমে থাকা ক্যালসিয়াম, ও অন্যান্য হেভি মেটাল অপসারণ করা। অর্থাৎ মানুষের দেহে সহনীয় মাত্রার অতিরিক্ত হেভিমেটাল যেমন শিশা, পারদ, আর্সেনিক ও লোহা অপসারণ এবং ব্লক ধমনিতে জমে থাকা ক্যালসিয়াম কমানোর প্রক্রিয়াই হলো আর্টারি ক্লিনজিং বা চিলেশন বা বায়ো-কেমিক্যাল-এজিওপ্লাস্টি থেরাপি।
চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুসারে বিশেষ ধরণের ওষুধ স্যালাইনের মাধ্যমে একদিন পরপর ২০টি স্যালাইন প্রায় তিন ঘণ্টার ড্রপ মাত্রায় ধমনীতে ইনজেক্ট করা হয়। উক্ত ওষুধের মিশ্রণ সমস্ত শরীরে প্রায় ৯০,০০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য পথ পরিক্রমণকালে রক্তের সাথে মিশে থাকা মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকর পদার্থ ও ধমনীতে জমে থাকা ক্যালসিয়াম প্রস্রাবের সাথে অপসারিত করে।
ACT (Artery Cleansing Therapy) পদ্ধতি যে সকল রোগীদের বা রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে সুফল পাওয়া যায়, কন্ঠনালিতে প্রদাহ, ধমনিতে ব্লক বিশেষ করে যাদের ইতোপূর্বে বাইপাস সার্জারি বা এঞ্জিওপ্লাস্টি হয়েছে তাদের পুনরায় ব্লকজনিত সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিক, হাঁপানি, শারীরিক প্রতিবন্ধি, বাধাগ্রস্ত স্নায়ু সিস্টেমের কারণে পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগী, গ্যাঙ্গরিন এবং বয়স্কদের শারীরিক দুর্বলতা ও প্রতিবন্ধকতা দূর করতে।
ACT পদ্ধতি, আমেরিকার আইবিসিএমটি ও এবিসিএমটি এবং ইউরোপ ও ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসেস দ্বারা স্বীকৃত।
৩) ডা. অরনিশের এর ফরমূলা
ডিন মাইকেল অরনিশ (এম.ডি.), একজন আমেরিকান চিকিৎসক, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও গবেষক। তিনি হৃদরোগীদের ওপর দীর্ঘ গবেষণার ফলাফলে দেখেছেন যে, কি কারণে হার্ট ব্লক হয় এবং কিভাবে করনারি ধমনি বাইপাস সার্জারি/এঞ্জিওপ্লাস্টি/ওষুধ বা অন্যান্য থেরাপি ছাড়াও হার্ট ব্লকজনিত হৃদরোগীকে সুস্থ করা সম্ভব। যে সকল কারণে হার্ট অ্যাটাক/ফেইলর হয় বা ঝুঁকি থাকে তা হলো রক্তে কোলেস্টেরল বেশি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান, স্থুলতা ও স্ট্রেস এবং এ সবের সঠিক ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াই হলো ডা. ডিন মাইকেল অরনিশের পদ্ধতি। তিনি রোগীর জন্য আদর্শ খাদ্যাভ্যাস, যোগ ব্যায়াম, ধ্যান, সামাজিক/ধর্মীয় আচার অনুসরণ ও চিন্তামুক্ত জীবন যাপনের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে হৃদরোগীদের চিকিৎসা দেন।
রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ:
কোলেস্টেরল হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক ও প্রধান কারণ, এর ফলে ধমনিতে আবরণ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের শরীরে হৃদরোগ বা হার্ট ব্লক হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং বেশ কয় বছর পর চুড়ান্ত সমস্যা ধরা পরে। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায়, দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন যেমন খাদ্যে তেল ও চর্বির নিয়ন্ত্রিত মাত্রা নির্ধারণ করা বা চর্বিযুক্ত মাংস পরিহার করা, নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম করা, যোগ ব্যায়াম, ধ্যান করা এবং সামাজিক ও ধর্মীয় আচার পালনের মাধ্যমে রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:
রক্ত চলাচলের সময় রক্তনালিতে যে চাপ দেয়, তাকেই রক্তচাপ বলে। আর এই রক্তচাপ ধমনি, শিরা তথা রক্তনালির আকারের ওপর নির্ভর করে, আর রক্তনালি সংকীর্ণতর হলে শরীরের বিভিন্ন অংশে একই পরিমাণে রক্ত সরবরাহের জন্য হৃৎপিণ্ডকে অপেক্ষাকৃত বেশি কাজ করতে হয়। এ রকম অবস্থায় হৃৎপিণ্ডকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চাপ দিয়ে রক্ত সরবরাহ বজায় রাখতে হয়। আর এ বেশি চাপ দেয়ার অবস্থাকেই উচ্চ রক্তচাপ বলে।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণঃ- মাথাব্যথা, মাথা ঝিমঝিম ভাব, বমি বমি ভাব, ঝিঝি লাগা, ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কমে আসে, ঘুম কম হওয়া; শ্বাসকষ্ট এবং নাক দিয়ে রক্ত পড়া।
উচ্চ রক্তচাপের ক্ষতিকর দিকঃ- উচ্চ রক্তচাপ জীবনের হুমকিস্বরূপ। উচ্চ রক্তচাপ আমাদের শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে যেসব সমস্যা হয় তা হলো:- স্ট্রোক (মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ), হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলর, কিডনি ফেইলর হওয়ার আশঙ্কা থাকে, চোখের রক্তনালির ক্রমাগত চাপ বাড়ে ও তা স্ফীত হয়ে যায়, রক্তনালির বাইরে দেয়ালে ক্ষত সৃষ্টি ও শক্ত হওয়া, রক্তনালির ভেতরের দেয়ালে চর্বি ও অন্যান্য পদার্থ জমে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া এবং যৌনকাজে অক্ষমতা দেখা দেয়।
উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের সম্পর্কঃ- উচ্চ রক্তচাপ বা অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ দীর্ঘ সময় থাকলে হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে চর্বির আস্তর জমে ব্লকেজ হতে পারে এবং রক্তপ্রবাহ বাধা পাওয়ার ফলে Ischemic heart disease হতে পারে, যা হৃৎপিণ্ডের একটি ভয়াবহ রোগ। উচ্চ রক্তচাপে হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে চর্বির আস্তর পড়ে Ischemic heart disease ছাড়াও হৃৎপিণ্ডের দেয়াল মোটা হয়ে হাইপারটেনসিভ হার্ট ডিজিজ, হার্ট ফেইলর হতে পারে।
যে সকল কারণে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে:- বেশি লবণ গ্রহণ, অতিরিক্ত মেদ, কাজের চাপ, মদ্যপান এবং ঘিঞ্জি পরিবেশে থাকা। উচ্চরক্তচাপ সর্বাপেক্ষা সাধারণ জটিল উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অসুস্থতার একটি। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ওপর গবেষণায় এখন পর্যন্ত ৫০টির অধিক জিনকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এই সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। শতকরা ১০ ভাগ পর্যন্ত মহিলা গর্ভধারণের কারণে উচ্চ রক্তচাপের শিকার হন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ:
দেহযন্ত্র অগ্ন্যাশয় যদি যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে রোগ হয় তা হলো ডায়াবেটিস বা বহুমুত্র রোগ। তখন রক্তে চিনি বা শর্করা উপস্থিতিজনিত অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। ইনসুলিনের ঘাটতিই হলো এ রোগের মূল কথা। অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন ইনসুলিন, যার সহায়তায় দেহের কোষগুলো রক্ত থেকে গ্লুকোজকে নিতে সমর্থ হয় এবং একে শক্তির জন্য ব্যবহার করতে পারে। ইনসুলিন উৎপাদন বা ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতা-এর যেকোনো একটি বা দুটোই যদি না হয়, তাহলে রক্তে বাড়তে থাকে গ্লুকোজ। আর একে নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ঘটে নানারকম জটিলতা, দেহের টিস্যু ও যন্ত্র বিকল হতে থাকে।
ডায়াবেটিসে চোখ, কিডনি, হৃৎপিণ্ড, স্নায়ুতন্ত্র, ত্বক, সন্ধি বা জয়েন্ট, প্রজননতন্ত্রসহ দেহের প্রতিটি তন্ত্রই তার স্বাভাবিক কার্যকারিতা হারায় ও রোগাক্রান্ত হয়। এর মধ্যে হৃদরোগের ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা দু’টিই মারাত্মক। ডায়াবেটিস রোগীরা অধিকহারে ও তীব্রতরভাবে হৃদরোগের শিকার হয়। ডায়াবেটিসের ফলে অতিরিক্ত দৈহিক ওজন, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে বেশি মাত্রায় গ্লুকোজ, রক্তনালিতে লিপিড জমাকরণ প্রক্রিয়া ইত্যাদি একসাথে বিরাজ করে বিধায় সহজে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগী প্রাত্যহিক জীবন ধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে দীর্ঘকাল স্বাভাবিক জীনযাপন করতে পারবে।
ধূমপান বর্জন:
সিগারেটের নিকোটিন হৃৎপিণ্ডের ধমনিকে সংকুচিত করে । ফলে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্থ হয়,যা করনারি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই হৃৎপিণ্ডের সুস্থতার জন্যে ধূমপান বর্জনের মাধ্যমে জীবন-অভ্যাসে পরিবর্তন ভালো থাকার একটি পন্থা। এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে ডা. ডিন অরনিশ শত শত হৃদরোগীকে এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস সার্জারি ছাড়াই সুস্থ করে তুলেছেন। হৃদরোগের এ অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা পদ্ধতি, যা সমস্ত মেডিকেল জার্নাল, গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে, এর ভিত্তি আছে, এতে মিথ্যা কিছু নেই।
স্থুলতা প্রশমন:
BMI পদ্ধতিতে একজন ব্যক্তির দৈহিক আকার স্থুল, স্বাভাবিক নাকি শীর্ণকায় তা নির্ধারণ করা যায়। এ পদ্ধতিতে ওজন কেজিতে ও উচ্চতা মিটারে পরিমাপ করা হয়। এরপর ওজনকে উচ্চতার বর্গফল দিয়ে ভাগ করলে বিএমআই এর পরিমাপ পাওয়া যায় এবং একজন ব্যক্তির স্বাভাবিক ওজন পরিমাপের মান ১৮ হতে ২৪.৯ পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ মানদণ্ডের কম হলে শীর্ণকায় এবং বেশি হলে স্থুলতা বলা হবে।
স্থুলতার কারণ হলো অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন, কায়িক পরিশ্রম না করা, অধিক ভোজন অভ্যাস, ক্রমবর্ধমান হারে উচ্চ ক্যালোরি ও অধিক চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ, অতিরিক্ত বা অপর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ, বিষন্নতা, হতাশা, হরমোনজনিত সমস্যা (থাইরেড, সুপ্রারেনাল, পিটুইটারি), কুশিং সিনড্রোম, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম, কিছু কিছু ওষুধ সেবনের ফলে (বার্থ কন্ট্রোল পিল, স্টেরয়েড ইত্যাদি) এ ছাড়া বংশগত কারণেও স্থুলতা হতে পারে।
স্থুলতার জন্য যে সকল উপসর্গ ও রোগ দেখা যায়, হার্ট ডিজিজ, উচ্চ রক্তচাপ, ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস, ডায়াবেটিস, লিভার সিরোসিস, গলস্টোন, আথ্রাইটিস, বিভিন্ন প্রকার ক্যান্সার (ব্রেস্ট, কোলন, জরায়ু, কিডনি, প্রোস্টেট)।
স্থুলতা প্রতিকারে ডা. ডিন মাইকেল অরনিশের পরামর্শ হলো, পরিমিত আহার, পর্যাপ্ত ঘুম, কায়িক পরিশ্রম, নিয়মিত ব্যায়াম, ধ্যান, মানসিক ডিপ্রেশনকে জয় করতে হবে এবং মনোবল বাড়াতে হবে। ডায়োমেড হার্ট সেন্টার, হার্ট ব্লকের রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি এ পদ্ধতি ব্যবহার করছে।
স্ট্রেস ব্যবস্থাপনা:
স্ট্রেস কেবল মানসিক প্রশান্তিই নষ্ট করে না, এটি দেহে নানা প্রকার রোগের জন্ম দেয়। গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে (প্রায় ১০০ বছর পূর্বে হার্ভার্ডের ফিজিওলজিস্ট ওয়ালটার ক্যানন), মানুষ যখন স্ট্রেসড হয় তখন রক্তচাপ, হৃৎস্পন্দন, মাংসপেশীর চাপ এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বৃদ্ধি পায় যা হৃদরোগের পূর্বাভাস দেয়। তাই আমাদেরকে হৃদরোগ উপসর্গ হতে মুক্ত থাকতে স্ট্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
ডা. ডিন অরনিশের আদর্শ জীবনযাত্রার জন্য স্ট্রেসকে পরিহার করতে বলেছেন এবং তা নিয়ন্ত্রণ করতে যোগ ব্যায়াম, ধ্যান অনুশীলন করতে পরামর্শ দিয়েছেন। এ প্রাণায়ামের ফলে মন ও দেহকে অধিক শান্ত ও সুখী অবস্থায় নিয়ে আসে। ডায়োমেড হার্ট সেন্টার, হার্ট ব্লকের রোগীদের সেবায় এ পদ্ধতির অনুশীলন করছে।