28/09/2023
ডাঃ বা চিকিৎসক কারা
সাধারণত কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে খোঁজ পড়ে একজন চিকিৎসকের, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ডক্টর, বাংলায় যাকে ডাক্তার হিসেবে অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশে চিকিৎসকদের মধ্যে ডক্টর বা ডাক্তার হিসেবে কাউকে অভিহিত হতে হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ফ্যাকাল্টি অধিভুক্ত যেকোনো স্বীকৃত মেডিকেল কলেজ বা চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে চার বছরের থিউরি ও এক বছরের ইর্ন্টার্নি সহ মোট পাচ বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি থাকতে হয়, নয়তো নামের আগে ডক্টর বা ডাক্তার শব্দটি ব্যবহার তারা করতে পারেন না।
এবার আসুন জেনে নেয়া যাক কারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ফ্যাকাল্টি অধিভুক্ত পাচ বছর মেয়াদী ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করে নামের আগে ডাঃ বা চিকিৎসক শব্দটি ব্যবহার করতে পারবেন।
এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ফ্যাকাল্টি অধিভুক্ত পাচ বছর মেয়াদী ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করে নামের আগে ডাঃ বা চিকিৎসক শব্দটি ব্যবহারকারী ডাঃ বা চিকিৎসকদের দেখাশোনা করার জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা কাউন্সিল। এক কাউন্সিল অন্য কাউন্সিলের চিকিৎসকদের ব্যাপারে নাক গলানো বা খবরদারী করার কোন এখতিয়ার নেই।
০১. প্রথমেই আসা যাক মেডিকেল ও ডেন্টাল চিকিৎসকদের ব্যাপারেঃ-
বাংলাদেশে এম বি বি এস ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের মেডিকেল এবং বি ডি এস ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের ডেন্টাল চিকিৎসক নামে ডাকা হয় বা এ নামে তারা পরিচিত। মেডিকেল ও ডেন্টাল চিকিৎসকদের দেখাশোনার জন্য যে কাউন্সিল রয়েছে তাকে বলা হয় বি এম ডি সি বা বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল। এই কাউন্সিলের কাজ হচ্ছে বাংলাদেশের প্রাকট্রিসরত মেডিকেল ও ডেন্টাল চিকিৎসক দের বি এম ডি সি কতৃক রেজিস্ট্রেশন দেয়াএবং আছে কিনা, তা যাচাই করা এবং দেখাশোনা করা। পাশাপাশি ভূয়া মেডিকেল ও ডেন্টাল চিকিৎসক খুজে বের করে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। পাশাপাশি মেডিকেল এ্যাসিসটেন্ট বা ডি এম এ পাশকৃত দের রেজিস্ট্রেশন দেয়া ও দেখা শোনা করা।
বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) বাংলাদেশ মেডিকেল কাউন্সিল অ্যাক্টের আওতায় প্রতিষ্ঠিত। ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই আইনের নাম বাংলাদেশ মেডিকেল এবং ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ১৯৭৩। ঢাকার বিজয় নগরে বিএমডিসির প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। মেডিকেল কলেজ এবং ডেন্টাল কলেজের অনুমোদন দেয় বিএমডিসি। এর ফলে উক্ত মেডিকেল কলেজ এবং ডেন্টাল কলেজ চিকিৎসক তৈরির ক্ষেত্রে অনুমোদন প্রাপ্ত হয়। এছাড়া মেডিকেল এবং ডেন্টাল পড়াশোনার পর বাংলাদেশে এ সেবা দেয়ার ব্যাপারে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরদের অনুমোদন দেয় বিএমডিসি। সংস্থাটি বাংলাদেশে মেডিকেল এবং ডেন্টাল শিক্ষার ব্যাপারেও নীতিমালা প্রনয়ন করে।
বিএমডিসির কাজ
০১. মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল চিকিৎসার কারিকুলাম প্রনয়ন
০২. মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠার অনুমোদন প্রদান
০৩. মেডিকেল ও ডেন্টাল চিকিৎসকদের লাইসেন্স প্রদান
০৪. পেষাদার মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট দের রেজিষ্ট্রেশন প্রদান।
বিএমডিসি অ্যাক্ট ২০১০ শুধুমাত্র এমবিবিএস ও বিডিএস চিকিৎসকদের জন্য। অন্য কোনো চিকিৎসকদের জন্য এই এ্যাক্ট বা কাউন্সিল প্রযোজ্য নয়। কেননা তাদের দেখাশোনা করার জন্য রয়েছে পৃথক কাউন্সিল।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক, অকুপেশনাল থেরাপি চিকৎিসক, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক, ইউনানী-আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ও বিকল্প ধারার চিকিৎসকদের জন্য আলাদা এক্ট বা রেগুলেটরি বডি বা কাউন্সিল রয়েছে।
হোমিওপ্যাথি, ইউনানী-আয়ুর্বেদিক ও বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির বিষয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার বিএমডিসির নেই এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একার নেওয়ার ক্ষমতা নেই।
বিএমডিসি এক্ট ২০১০ এর ৯ বছর পর ভেটিনারি কাউন্সিল অ্যাক্ট ২০১৯ এ স্পষ্ট বলা আছে ভেটিনারি চিকিৎসকরা নামের আগে ডাক্তার লিখবে। তাই তোমাদের এই এ্যাক্ট অন্যদের উপর প্রযোজ্য নয়।
বিএমডিসি এক্ট ২০১০ এর ৮ বছর পর বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল ( বি আর সি) অ্যাক্ট ২০১৮ তৈরি হয়েছে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের জন্য। বি এম ডি সি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের নামের আগে ডাঃ লেখা বন্ধ করার জন্য একটি রিট করেন হাইকোর্টে। হাইকোর্ট সমস্ত কিছু দেখাশোনার পর বলেছে তারা নামের আগে ডাঃ শব্দটি ব্যবহার করবে কিনা এই সিদ্ধান্ত নিবে বি আর সি কাউন্সিল। এটা নেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত বি এম ডি সি র নেই। ফিজিওথেরাপি কাউন্সিল এর কাজ এখনো প্রক্রিয়াধীন থাকায়, হাইকোর্ট বলেছে কাউন্সিল পুর্নগঠন না হওয়া পর্যন্ত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকরা নামের আগে ডাঃ শব্দটি ব্যবহার করতে পারবেন। এখানে বি এম ডি সি ২০১০ এর এ্যাক্ট প্রযোজ্য নয়।