17/07/2025
আজকে একা পেয়ে এক রোগীর কিডনি বের করে নিলাম! প্রায় প্রতিদিনই দু'চারটা কিডনি এভাবে হাতে চলে আসে আমার!
তারপর কী করি জানেন? প্রিজারভেটিভ হিসেবে কয়েক চামুচ লবন মেশাই। (লবনের পরিমান আপনি স্বাদমত ব্যবহার করতে পারেন।) এরপর এক বালতি ফরমালিনের মধ্যে কয়েক ঘন্টা, কখনো কখনো রাতভর ভিজিয়ে রেখে পাড়ায় মহল্লায় ফেরি করতে বের হই।
কিডনির আবার ব্যাপক চাহিদা। গ্রাহকও প্রচুর। মোড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে ঘন্টা বাজাই। আগে যেসব ঘন্টা বাজিয়ে আইসক্রীম বিক্রি হতো সেরকম একটা ঘন্টা কিনেছি সস্তায় লোহা লক্করের দোকান থেকে। দৈনিক দুই তিনটা কিডনি তো বিক্রি হয়ই হয়। একেকটা লাখ দশেক দাম। খরচা বাদ দিয়েও দৈনিক আমার লাভ বিশ লাখের মত। মাসে ইনকাম ছয় কোটি টাকা।
আসল কথা:
আজকাল মাঝেমাঝেই যেভাবে দেখি বা শুনি যে অমুক ডাক্তার কিডনি বের করে নিয়েছে বা চুরি করেছে তখন উপরের কাল্পনিক ঘটনাও সত্য বলে ভাবতে বাধ্য হই।
আরে ভাই, কিডনি কী এত সোজা জিনিস! একজনের কিডনি আরেকজনকে লাগাতে নানা রকম টেস্ট করে ম্যাচিং হয়েছে কিনা দেখতে হয়। তারপর হয় কিডনি প্রতিস্থাপন। একটা কিডনি বের করে এভাবে ফেরি করে ক্রেতা পাওয়া যায়না। কিডনি সংরক্ষণ করাও ফরমালিন বা কেমিক্যাল দিয়ে ফল সংরক্ষণ করার মত ব্যাপার না।
কিন্তু, কিছু কিছু সাংবাদিক এ সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা না থাকলেও বিশেষজ্ঞের মতো নিউজ করেন। আবার কিছু পাবলিক আছেন যারা এসব বিশ্বাস করেন এবং শুধু বিশ্বাসই করেন না বরং এসব উদ্ভট নিউজ প্রচার করে সামাজিক দায়িত্ব পালন করেন।
কিন্তু, ক্ষতিটা হয় কার?
বাংলার মানুষের। এসব কারণেই বাংলাদেশে কিডনি প্রতিস্থাপনের সুযোগ থাকার পরেও বিষয়টা খুব একটা জনপ্রিয় বা সহজলভ্য হচ্ছেনা।
মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টায় ডাক্তার ইনজেকশন দিলে শুনতে হয়, "ইনজেকশন দিয়ে ডাক্তার রোগী মেরে ফেলেছে।" কিডনি নিয়ে কাজ করলে হয়তো 'কিডনি চোর', 'কিডনি ব্যবসায়ী' বা 'কিডনির দালাল' অপবাদ নিতে হবে। টুকটাক অপবাদ কি এখনো নিতে হচ্ছেনা!
তারচেয়ে বরং বিদেশেই যান। কিডনি লাগানোও হবে। ভ্রমনও হবে। ঐ যে বলেনা, রথও দেখলাম, কলাও বেচলাম।
পুনশ্চঃ
একটা গোপন কথা বলি। বাংলাদেশে কিন্তু প্রতিদিন আসলেই লাখ লাখ কিডনি বিক্রি হয়। ঐ গরু-খাসির কিডনির কথা বলছিলাম আরকি!
লেখা: ১৭ জুলাই, ২০১৭