16/08/2025
দু'দিন আগে আমার একজন রোগীর ছেলে বায়োপসি রিপোর্ট নিয়ে দেখা করলো। রিপোর্ট দেখে আমি বললাম, "যেরকমটা সন্দেহ করছিলাম রিপোর্ট সেটাই এসেছে। পাকস্থলির ক্যান্সার।" পরবর্তী চিকিৎসার জন্য রেফার করে দিলাম।
রোগীর ছেলে যাবার আগে শক্তভাবে আমার সাথে হাত মিলিয়ে বলে গেল, "আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি প্রথমবারেই আমার বাবার এরকম একটা সিরিয়াস রোগ ধরে দিলেন।"
এবার রোগীর ব্যাপারে জানাই। বয়স ৫০ এর আশেপাশে। নিম্নমধ্যবিত্তই হবেন। সমস্যা সামান্য। কিছুদিন পরপর উপর পেটে ব্যথা করে। স্বাস্থ্য খুব একটা খারাপ না। সমস্যাও খুব বেশি না। দেখলে বোঝার উপায় নেই যে তিনি অসুস্থ। আমি নিজেও ক্যান্সার ধারণা করিনি, কিন্তু আলসার হতে পারে চিন্তা রেখে এন্ডোস্কোপি করতে দিয়েছিলাম। সেই টেস্টে দেখা গেল বাজে রকমের আলসার। সেই আলসার থেকে বায়োপসি নেয়া হলো, আর তাতেই সনাক্ত হলো ক্যান্সার।
রোগীর বর্তমান যে অবস্থা তাতে ধারণা করছি হয়তো ক্যান্সারটি ছড়িয়ে যায়নি। প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত হলে ক্যান্সারের মতো জটিল রোগও চিকিৎসাযোগ্য এবং সুস্থ হওয়ার সুযোগ থাকে। অথচ, রোগীর স্বাস্থ্য খুব একটা খারাপ না, সমস্যা খুব বেশি না বলে আমি যদি এন্ডোস্কোপিটা না করে গ্যাসের ওষুধ সহ অন্যান্য ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা দিয়ে দিতাম তাহলেও হয়তো রোগটা সনাক্ত হতো কিন্তু কয়েক মাস পরে। তখন হয়তো ক্যান্সারের বিস্তার ঘটে যেতো দূরবর্তী কোথাও!
সঠিক সময়ে সঠিক টেস্ট করতে দেয়াটাও চিকিৎসা। রোগ গরীব আর ধনী চেনে না, সেই রোগ সনাক্তে গরীব আর ধনীদের আলাদা পদ্ধতি নেই। আমাদের বইয়ে আলাদা অধ্যায় নেই।
আমি এটা মানি, মানুষের সামর্থ্য সীমিত। কিন্তু, যে মানুষ ৫০ টাকার ওষুধ কিনতে সমস্যা বোধ করে, সেই মানুষটাই হয়তো সিগারেটের পেছনে তারচেয়ে বেশি ব্যয় করে। মানুষ নানা খাতে সঞ্চয় রাখে, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ রাখেনা।
এসব বিষয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবেও কিছু উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। শুধুশুধু ডাক্তার আর রোগী পক্ষের মধ্যে বিবাদ, অবিশ্বাস, অনাস্থা বাড়িয়ে লাভ কি! কত শতাংশ মানুষই বা বিদেশ যেতে পারে? তারচেয়ে বরং এই দূরত্বটা ঘুচিয়ে দিন...