06/08/2025
সূফীবাদী ও আহলে কুরআন: অজ্ঞতার ফাঁদে এক শ্রেণির অনুসারী
বর্তমান সময়ে তথাকথিত সূফীবাদের অনুসারীদের মধ্যে একটি বড় সমস্যা হলো, তারা নতুন কোনো কিছু দেখলেই মনে করে সেটি একেবারেই নতুন একটি ধারণা। অথচ এগুলো অনেক পুরোনো বিষয়। সম্প্রতি তারা হাদিস অস্বীকার করা শুরু করেছে। তাদের ধারণা, 'শুধু কুরআন মানা এবং হাদিস অস্বীকার করা'- একটি নতুন দর্শন, যা আগে ছিল না। তাদের মতে, আগের ওলি-আউলিয়ারা এই বিষয়গুলো বুঝতেন না, যা তাদের নতুন আদর্শ আহলে কুরআন-রা বোঝেন।
একজন মুসলিম কখনো সমস্ত হাদিস অস্বীকার করতে পারে না। কারণ, কুরআনও রাসূল (স.) নিজে লিখে দিয়ে যাননি; মানুষই কুরআন একত্র করেছেন। যারা কুরআন একত্র করেছেন, কুরআন নিয়ে তাদের মাঝে মতানৈক্য ছিল (এখনও মতানৈক্য আছে, কিন্তু ফেতনার আশঙ্কায় সবাই চুপ থাকেন)। সেই বিতর্কিত কুরআন মানলে হাদিস মানতে অসুবিধা কোথায়? তাদের ভাব এমন, যেন আল্লাহ লিখিত পাণ্ডুলিপির আকারে একটি কুরআন পাঠিয়েছেন, আর হাদিস বাতাস থেকে উড়ে এসেছে।
যার মানুষের প্রতি বিশ্বাস নেই, সে শুধু কুরআনের পাতা গিলে খেলেও কী হবে? বিশ্বাস নেই মানে তো সে ইমানদারই নয়। তারা হাদিস মানে না, অথচ তাদের কথা ঠিকই মেনে নিতে বলা হচ্ছে। এর মানে হলো, রাসূল (স.)-এর কথার চেয়েও আহলে কুরআনদের কথা বেশি গুরুত্বপূর্ণ (নাউজুবিল্লাহ)। এগুলো কি হাস্যকর নয়?
সব হাদিস মানা যাবে না, এটা ঠিক। কেউ সব হাদিস মানেও না। কিন্তু "কোনো হাদিসই মানা যাবে না"—এটা কোনো ইমানদারের কথা হতে পারে না। যেমন জাল হাদিস আছে, তেমনি **সহীহ হাদিস**-ও আছে। হাজার হাজার বছর আগের অলিখিত কথাও মানুষ ধরে রেখেছে, সেখানে মাত্র ২৫০ বছরের ব্যবধানে সব হাদিস বাতিল বা জাল হতে পারে না। এই ন্যূনতম বোধ যাদের নেই, তারা ভেতর থেকেই জাহেল।
যাই হোক, যদি আহলে কুরআনরা হক হয়, তাহলে তথাকথিত সূফীবাদীরা সবাই বাতিল। সেই দিকে খেয়াল নেই হাদিস অস্বীকারকারী সূফীবাদীদের। আপনাদের উচিত সূফীবাদ বাদ দিয়ে আহলে কুরআন হয়ে যাওয়া। কারণ, আপনারা হাদিসই মানেন না, তাহলে ওলিদের কথা আর কী মানবেন! সূফী দর্শনে নির্বাক কুরআনের চেয়ে মানুষ কুরআন বা সবাক কুরআনের গুরুত্ব বেশি। যারা হাদিস মানে না, তারা মহাপুরুষদের কথাও মানতে পারে না। তাছাড়া, সূফীবাদে পীর বা মুর্শিদের কথার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কথা নেই। সেখানে আহলে কুরআনগণ তো ৬২৩৬টি আয়াতের বাইরে কিছু মানাকেই হারাম মনে করে। যেখানে হাদিসই মানে না, সেখানে মানুষ পীর বা মানুষ-গুরুর কথা মানা তো বিলাসিতা।
সময় থাকতে পথে ফিরে আসুন। ওলি-আউলিয়াদের জীবনের দিকে তাকান। তারা কি হাদিস অস্বীকার করেছেন নাকি গ্রহণ করেছেন, সেদিকে নজর দিন। সুপথপ্রাপ্তদের পথে চলাই সূফীবাদের পথে চলা, হেদায়েত প্রাপ্তদের পথে থাকাই সূফীবাদের পথে থাকা। ওলি-আউলিয়াগণের পথই কুরআনের পথ।
লেখাঃ DM Rahat