18/06/2025
মৃত্যুর পর দেহ পচে যাওয়া বা না যাওয়ার ওপর হক-বাতিল নির্ভর করে কি?
ফেরাউনসহ অনেকের লাশও পচেনি। আর সব ওলীর রওজা খুঁড়ে দেখা হয়নি। যদি দেহ অক্ষত থাকার ওপর ওলীয়তির প্রমাণ নির্ভর করে, তাহলে আগামীতে ওহাবীরা ওলীদের রওজা খুঁড়ে দেখবে। শর্ত দেবে যে, লাশ অক্ষত থাকলে মাজার থাকবে; অক্ষত না থাকলে ভণ্ড বিবেচনা করে ভেঙে ফেলা হবে।
নিদর্শন একটি খাছ বিষয়, এটাকে আম হিসেবে নেওয়ার মানেই হয় না। অল্প কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কিছু ঘটে, যা অবিশ্বাসীদের হৃদয়ে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য এবং বিশ্বাসীদের বিশ্বাস স্থায়ী করার জন্য। মাটির দেহ মাটিতে মিশে যাওয়াই আল্লাহর বিধান। দেহ এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয় যে, মৃত্যুর পরও তা অক্ষত থাকা লাগবে। তাহলে তো নায়ক-নায়িকারাই প্রকৃত দেহের সাধক বিবেচিত হতো। তারা দেহের চর্চা করে, দেহকে সুন্দর রাখা তাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহর ওলীরা আত্মার পরিচর্যা করেন, তাই ওলীদের দেহ জরাজীর্ণও থাকে। আর আত্মা যখন দেহ ত্যাগ করে, তখনই রওজা হয়। ওলীরা আরেফেল অজুদ (মাটির দেহ) নিয়ে রওজায় আবদ্ধ থাকেন না। তাঁরা মুক্তিপ্রাপ্ত, বন্দী নন।
সাম্প্রতিককালে দেহ অক্ষত থাকার অনেক ভিডিও দেখে তরিকাপন্থীরা এমনভাবে প্রচার চালায় যে, যেন দেহ অক্ষত রাখাই ওলীয়তির প্রমাণ। অথচ ওলীয়তির সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। বিশেষ নিদর্শন হিসেবে আল্লাহ অনেক প্রিয় (আউলিয়া) ও অপ্রিয় বান্দার (যেমন: ফেরাউন) দেহ অক্ষত রাখেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তো এই পঞ্চভূতের দেহ আগুনে পুড়িয়ে প্রকৃতিতে মিশিয়ে দেন। যদি তরিকাপন্থীরা এভাবেই বিষয়টি প্রচার করে, তবে আগামীতে ওহাবীরা এটা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে। এটা এতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে যে, তরিকাপন্থীরা নিজেরাই ওলীয়তির প্রমাণ খুঁজতে রওজা ভাঙা শুরু করতে পারে। আমি আন্দাজে নয়, বরং উপলব্ধি থেকেই কথাগুলো বলছি। একজন তরিকাপন্থী আমাকে কিছুদিন আগে বলছিলেন (হুবহু নয়) যে, "মাজারগুলো ভেঙে ভালো হয়েছে, কে ওলী আর কে ওলী নয়, তাও প্রমাণ হয়েছে। অনেক ভণ্ডের মাজার ভাঙা হয়েছে, তাদের কবরে দেহহীন হাড় বা কঙ্কাল পাওয়া গেছে।"
হে দয়াল প্রভু! আপনি আমাদের সত্যকে বোঝার তাওফিক দান করুন। অজ্ঞানতা-ধর্মান্ধতা থেকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখুন।
লেখা: DM Rahat