07/01/2024
#জিনেদের_বাস্তবতা_এবং_বিভিন্ন_সাইনের_পিছনের_রহস্য
জিন সম্পর্কে পুরোপুরি সঠিক কথা আমাদের এমনি এমনি বলা সম্ভব নয় কেননা তারা আমাদের থেকে আড়াল করা আল্লাহর ইচ্ছায়। তাই জ্বীনদের নিয়ে মূল বাস্তবতা সেটাই যেটা কুরআন সুন্নাহ তে আছে। এরা এক প্রজাতির প্রানী যাদের মূল আকৃতি আমাদের চোখের ডাইমেনশনের বাইরে যা চোখে দেখা সম্ভব না। তবে জ্বীনেরা বিভিন্ন ফর্ম নিতে পারে। এই প্রজাতির মূল শেইপের সাথে তাদের নরমাল দৃশ্যমান শেইপগুলো সম্ভবত সাদৃশ্যপূর্ন। যেমন যেসকল জ্বীন কে আল্লাহ সাপ/বিচ্ছুর রুপে বানিয়েছেন তারা দৃশ্যমান ফর্মে আসলে সাধারনত বিচ্ছুর রুপেই আসবে। আমরা আমাদের চোখে তাদেরকে সাপ/বিচ্ছুর রুপেই দেখবো। এবং তাদের আচরণ সাপ/বিচ্ছুর মতই হবে এমনকি পেশেন্টের শরীরে প্রবেশ করলেও তারা সাপ/বিচ্ছুর মতই আচরণ করবে।
জ্বীনকে সবসময় অতিপ্রাকৃত কিছু ভাবার প্রয়োজন নেই। দৃশ্যমান ফরমেটে ওর উপর দিয়ে গাড়ির চাকা চলে গেলে সেও চাপা পড়ে মারা যাবে। স্বাভাবিক অন্যান্য প্রাণীর মতই প্রাণী, শুধু শারীরিক কিছু বৈশিষ্ট ভিন্ন। এটা সকল প্রাণীর ক্ষেত্রেই তো সত্য। যেমন পাখি উড়তে পারে কিন্তু থাবা দিতে পারেনা, বাঘ থাবা দিতে পারে কিন্তু উড়তে পারে না। সকল প্রাণীর ক্ষেত্রেই ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট থাকা একটি স্বাভাবিক নিয়ম, জ্বীনকে আলাদা করে বড় কিছু ভাবার প্রয়োজন নেই।
অধিকাংশ জ্বীনই প্রাণী, সরিসৃপ ও জন্তু জানোয়ারের আকৃতির। পার্থক্য শুধু এটুকুই যে এরা আমাদের মতই আল্লাহর বিধানের অধীনস্ত ও বুদ্ধিমান, তাদের আচার চরিত্র ও খাদ্যাভ্যাস ভিন্ন। যেমনটা সুন্নাহ ও কুরআনে এসেছে। এদের কিছু কিছু আকৃতির বর্ননা কুরআন সুন্নাহ তে এসেছে, আর কিছু আমাদেরকে জানানো হয়নি। রাসুল সা: বলেন,
الجن ثلاثة أصناف: صنف لهم أجنحة يطيرون في الهواء، وصنف حيات وعقارب، وصنف يحلون ويظعنون
জ্বীনের রুপ তিন প্রকার। প্রথম প্রকার যাদের ডানা আছে তারা তা দিয়ে বাতাসে উড়ে বেড়ায়, দ্বিতীয় প্রকার যারা সাপ ও বিচ্ছু আকৃতির, তৃতীয় প্রকার যারা তোমাদের আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়। (সহীহ, হাকেম)
الجن: الجن ثلاثة أصناف -كما جاء في الحديث - صنف على صورة الحيات، وصنف على صورة كلاب سود، وصنف ريح طيارة ذو أجنحة.
জ্বীন তিন প্রকার। এক প্রকার যারা সাপের আকৃতির, এক প্রকার কালো কুকুর, এক প্রকার ডানাবিশিষ্ট পাখি। (আহকামুল জ্বীন)
خلق الله تعالى الجن على ثلاثة أصناف: صنف حيات وعقارب وخشاش الأرض، وصنف كالريح في الهوى، وصنف عليهم الحساب والعقاب
আল্লাহ তা'লা জ্বীনকে তিন আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। এক প্রকার সাপ, বিচ্ছু ও পোকামাকড়ের (যেমন মাকড়সার) আকৃতিতে। দ্বিতীয় প্রকার হচ্ছে, বাতাসের ন্যায়, তৃতীয় প্রকার হচ্ছে যাদের উপর হিসেব নিকেশ আছে। (ইবনে আবিদ দুনিয়া)
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহ:) বলেন-
والجن يتصورون في صور الإنس، والبهائم. فيتصورون في صور الحيات، والعقارب وغيرها، وفي صور الإبل، والبقر، والغنم، والخيل، والبغال، والحمير. وفي صور الطير، وفي صور بني آدم، كما أتى الشيطان قريشا في صورة سراقة بن مالك لما أرادوا الخروج إلى بدر، وكما روي أنه تصور في صورة شيخ نجدي لما اجتمعوا بدار الندوة
জ্বীনেরা মানুষের রুপ নিতে পারে, তৃনভোজী চতুস্পদ জন্তুর রুপ নিতে পারে, তারা সাপের রুপ ধারন করে, বিচ্ছু ও অন্যান্য (সরীসৃপের) রুপ ধারন করে। এদের রুপ কখনো উটের আকৃতি, গরুর আকৃতি, ছাগলের রুপ, গাধার রুপ, পাখির রুপ নিতে দেখা যায়। এমনকি এরা মানুষের রুপও নেয় যেমনটা শ*য়-তান সুরাকা ইবনে মালেকের রুপ ধরে কুরাইশদের কাছে আসে যখন তারা বদরে যাওয়ার সংকল্প করেছিলো। অন্য বর্ননা অনুসারে শয়*তা'ন নজদি শাইখের রুপ ধারন করেছিলো যখন মক্কার কুরাইশরা দারুন নদওয়াতে একত্রিত হয়েছিলো।
💠 সরীসৃপ সাপ বিচ্ছু, পোকামাকড় ও অন্যান্য প্রানীদের ভেতরে জ্বীন হয় এটাকে একটা বাস্তবতা, যেটা ইসলাম এসে সত্যায়ন করেছে। সঠিক জ্ঞানের অভাবে আমরা এগুলো ভুলতে বসেছি, ফলে আমাদের জ্ঞানের জগতে জায়গা করে নিয়েছে জ্বীন নিয়ে প্যাগান থিওরী। ফলে জিনকে বুঝতে হলে আগে আপনার মাথাকে একটা ঝাকি দিয়ে মাথা থেকে জ্বীন নিয়ে আবর্জনাগুলো সরান যেগুলো আহাদ, ড্রাকুলা ইত্যাদি দেখে দেখে মনের ভেতরে গেথে আছে।
💠 জ্বীন শয়-তা*ন যখন কাউকে বিভ্রান্ত করতে পজেস করে তখন সেই ব্যক্তির আচরনে সেই শ*য়তানি প্রভাব সাদৃশ্য প্রকাশ পায়। বিভিন্ন মুভি বা গল্পেও ঠিক সেই জিনিসটা দেখানো হয়েছে। যেমন স্পাইডারম্যান মাকড়সার দ্বারা মাকড়সার আচরন ও ক্ষমতা লাভ করে।
💠 স্পাইডারম্যান থিমে সে যেই ক্ষমতালাভ করে সেটা সে নির্দিষ্ট সাইন (স্যাটানি-স্ট সাইন) শো করা ছাড়া এক্টিভও করতে পারেনা। ঠিক স্যাটা-নিস্ট রিচুয়াল গুলোতেও বা যাদুতেও তাই লাগে। আপনি নির্দিষ্ট সাইন সিম্বল ও রিচুয়াল/মন্ত্র ছাড়া শয়-তানকে খুশি করতে পারবেন না এবং যাদু করতে পারবেন না।
💠 জ্বীন জগতের বাস্তবতা জানার উপায় মূলত দুটো। এক. কুরআন সুন্নাহ। দুই. একই ধরনের কমন অভিজ্ঞতা পৃথিবীতে বহু প্রান্তের লোকদের একসাথে লাভ করা, এমন ব্যক্তি যারা হবে সত্যবাদি এবং সুস্থ মস্তিষ্কের। এমন তাদের অভিজ্ঞতালাভের দাবী যাচাইয়ের সুযোগ থাকবে।
রুকইয়াহ সেক্টরের মাধ্যমে আমরা সেম ধরনের এমন অনেক অভিজ্ঞতা লাভ করি। যেখানে সারা পৃথিবীর রুকইয়াহ প্র্যাক্টিশনারদের মাঝে কোনো সম্পর্ক বা যোগাযোগ থাকার প্রয়োজন হয় না।
রুকইয়াহ তে পজেজড পেশেন্টদের শরীরে প্রবেশকারী জ্বীন শয়*তান গুল সাধারনত হিন্দু, নাসারা, ইয়াহুদি, মুনাফিক, ই*বলি-সের সাধনাকারী, দা*জ্জা-লের পুজাকারী... এরকম কিছু কমন ক্যাটাগরির হয়ে থাকে। এবং রুকইয়াহ চলাকালীন রুকইয়াহর ইফেক্ট কে ঠেকানোর জন্য তারা রোগীর হাত পা ব্যবহার করে বিভিন্ন সাইন প্রদর্শন করে, যেগুলো দ্বারা তারা মূলত তাদের প্রভুর কাছে সাহায্য চায় অথবা সমস্যা নির্মূল হওয়াকে ঠেকায়। এ কারণে বিভিন্ন সাইন এবং ভংগিমা দেখা যায় রুকইয়াহ এর সময় পেশেন্টের। কিছু যাদুর পোজ, যা তার যাদুর চুক্তি কিসের বা কোনটার তা বুঝায়। আর কিছু সে কোন শয়তানের পূজারী তা বুঝায়। আর কিছু সে কোন জাতের জিন ও ক্ষমতা ধারণ করে তা বুঝায়। আর কিছু তার যাদু বা গীটের/হুসুনের অবস্থা বুঝায় (যেমন শক্তিশালী আছে বা নষ্ট হচ্ছে বা লুকানো বা কোন জায়গায় আছে ইত্যাদি?)।
©-+Abdullah Fahad