04/08/2023
অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর খাবারঃ
অটিজম একটা নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিস-অর্ডার। অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা না গেলেভূমিকা রাখতে পারে। অটিজম শিশুর সমস্যার মাত্রা বুঝে সঠিক নিউট্রিশন থেরাপি বা খাদ্য ব্যবস্থাপনা দিলে কিছু আচরণগত সমস্যা কমিয়ে আনা সম্ভব।
যেসব খাবার বর্জনীয়ঃ
অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের কিছু খাবার বর্জনের কথা বলা হয়। যেমন-
আটা বা গমের তৈরি খাবার : এসব খাবারে গ্লুটেন থাকে। এই গ্লুটেন গ্রহণে শিশুদের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হয়, মনোযোগের ঘাটতি হয়, অতিচঞ্চলতা দেখা যায় ইত্যাদি। তাই এসব লক্ষণ থাকলে গ্লুটেন আছে এমন খাবার যেমন—রুটি, পাউরুটি, পিঠা, পাস্তা, নুডলস, চানাচুর, ফ্রায়েড ফুড কিছুদিন বন্ধ রেখে শিশুর আচরণগত দিকগুলো পর্যবেক্ষণ করুন। তবে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সব শিশুর সমস্যা নাও হতে পারে।
দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার : এই জাতীয় খাবারে বিদ্যমান থাকে কেজিন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দুধ বা দুধের তৈরি খাবারেও অটিজম শিশুর ভেতর নেতিবাচক আচরণের প্রবণতা বেড়ে যায়। তবে দই খেলে সমস্যা হয় না। অস্থিরতা, নিজেকে নিজে কামড় দেওয়া, মনোযোগের অভাব, স্থির হয়ে বসে না থাকা, বারবার হাত-মাথা দোলানো ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে কিছুদিন দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার বন্ধ রাখুন।
অন্যান্য : চকোলেটে থাকা অক্সালেট, প্যাকেটজাত খাবারে থাকা প্রিজারভেটিভ, টেস্টিং সল্ট, বাইরের ফাস্ট ফুডে থাকা ট্রান্সফ্যাট, কোল্ড ড্রিংকস, ক্যান জাতীয় খাবারে থাকা সিসা ইত্যাদি অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর মস্তিষ্ক গঠন এবং আচরণগত সমস্যার জন্য ক্ষতিকারক।
উপকারী খাবারঃ
অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের জন্য কিছু খাবারের পরামর্শ দেওয়া হয়। যেমন—
সামুদ্রিক মাছ : সামুদ্রিক মাছে থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, যা শিশুদের মস্তিষ্ক গঠনে সহায়ক। তাই সপ্তাহে এক-দুই দিন বয়স এবং চাহিদা অনুযায়ী দৈনিক ৬০ গ্রাম থেকে ৮০ গ্রাম পরিমাণ সামুদ্রিক মাছ দেওয়া উচিত।
ফলমূল : অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুরা পিকি ইটার হয়। অর্থাৎ কিছু নির্দিষ্ট খাবার ছাড়া অন্য খাবার খেতে চায় না। তাই প্রায়ই এই শিশুদের ভিটামিন ও মিনারেলসের ঘাটতি দেখা যায়। এ জন্য খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন ১০০ গ্রাম পরিমাণ ফল রাখার চেষ্টা করুন। ফল সরাসরি খেতে না চাইলে জুস করে দেওয়া যাবে। নতুন খাবার দেওয়ার আগে কিছুদিন আগে থেকে সেই খাবারের স্বাদ, গন্ধের সঙ্গে পরিচিত করান।
শাক-সবজি : খাবার সঠিকভাবে পরিপাক হয় না এবং হজমশক্তি কম থাকে বলে এই শিশুদের প্রায়ই কোষ্টকাঠিন্যের সমস্যা দেখা যায়। এ জন্য সহজপাচ্য সবজি যেমন পেঁপে, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ঢেঁড়স, লালশাক ইত্যাদি শাক-সবজি খাদ্যতালিকায় রাখুন।
মেনে চলুন কিছু নিয়মঃ
* আটা, ময়দার তৈরি খাবারের পরিবর্তে চালের আটা দিয়ে বানানো রুটি, রাইস নুডলস, পাস্তা—এই ধরনের গ্লুটেন ফ্রি খাবার খাদ্যতালিকায় রাখুন।
* অ্যালার্জি না থাকলে দুধের পরিবর্তে নারকেল বা কাঠবাদামের দুধ দেওয়া যেতে পারে।
* বাদামের ভেতর চিনাবাদাম ও কাঠবাদাম এই দুই ধরনের বাদাম প্রতিদিন ১৫ গ্রাম পরিমাণে খাওয়ান। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিডের আরেকটি ভালো উদ্ভিজ্জ উৎস হলো আখরোট, যা খাদ্যতালিকায় সপ্তাহে দুই দিন রাখার চেষ্টা করুন।
সতর্কতাঃ
* সব অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুরই যে একই ধরনের খাবারে সমস্যা হবে তা নয়। তাই একই ডায়েট সবার জন্য প্রযোজ্য নয়।
* অ্যালার্জি আছে এমন খাদ্য নির্বাচনে সতর্ক হোন।
* ইন্দ্রিয় সম্পর্কিত সমস্যার জন্য অনেক সময় শিশুরা কিছু খাবারের গন্ধ নিতে পারে না; যেমন কোনো ফল বা রান্না করা খাবার। তাই এ ধরনের সমস্যা আছে কি না সেটা খেয়াল রাখুন।
* খাবারে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করুন। খুব পছন্দ করলেও একই খাবার প্রতিদিন দেবেন না। এতে খাবারের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি বা অভক্তি আসতে পারে। তখন শিশু অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থেকে বঞ্চিত হয়।
#সুমাইয়া সিরাজী, পুষ্টিবিদ ও বিশেষ শিক্ষক, প্রয়াস, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
১৪ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০