22/04/2022
********** দালাল হইতে সাবধান ***********(collected)
( পর্ব: ২ )
প্রথমেই কিছু ঘটনা দিয়ে শুরু করি আজকের পর্ব।
@ ঘটনা ১:
এক মহিলা রোগী আসছেন একজন সার্জারির প্রফেসরের কাছে ফলোআপ চেকআপ করাতে। ইতোপূর্বে এই মহিলা উক্ত সার্জনের কাছে দুইবার দুই পাশের প্যারোটিড গ্ল্যান্ড এর অপারেশন করিয়েছেন।
>> চেম্বারে গিয়ে উনি সার্জনকে বললেন স্যার আপনার কাছে চিকিৎসা করিয়ে আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি, এখন আমার কাছে আপনার ভিজিট দেয়ার মত টাকা নেই।
** ডাক্তার খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন ক্যামনে আপনি সর্বস্বান্ত হলেন।
>> রুগী বলল স্যার আমি আমার পিতামাতার কাছ থেকে যে জমিটা পেয়েছিলাম সেটা বিক্রি করে আমার দুইবার অপারেশনের খরচ যুগিয়েছে।
** ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন তা আপনি কত টাকা পেয়েছেন জমি বিক্রি করে।
>> রুগী বলল দেড় লক্ষ টাকা।
** ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন: তা আপনার অপারেশন বাবদ কত খরচ হয়েছে?
>> রুগী বললো স্যার যে লোকটা আমারে আপনার কাছে নিয়ে আসছিল সে আমার কাছ থেকে একবার নিছে ৭৫ হাজার আরেকবার নিছে ৬৫ হাজার টাকা। এখন আর আমার কাছে একটা টাকাও নাই চিকিৎসা করার।
** তখন ডাক্তার বললেন, মা আমি তো আপনার কাছ থেকে অপারেশন বাবদ প্রতিবার ৮ হাজার টাকা করে মোট ১৬ হাজার টাকা নিয়েছিলাম।
>> রুগীর চেহারা তখন 😥😥😥😥😥
@ ঘটনা ২:
দালাল ফোন দিয়েছে ডাক্তারের কাছে।
>>দালাল: স্যার একটা অ্যাপেন্ডিসাইটিসের রোগী আছে, অপারেশন করতে হইবো।
** ডাক্তার: ঠিক আছে করে দেবো, নিয়ে আসেন।
>>দালাল: স্যার অপারেশন চার্জ, এনেসথেসিয়া চার্জ, রুম চার্জ, অপারেশন থিয়েটার চার্জ, ওষুধ খরচ সব কিন্তু আপনার।
** ডাক্টার: রোগীর সাথে কত টাকার কন্টাক্ট করেছেন?
>> স্যার ২০০০০ টাকা।
** তা আপনাকে কত দিতে হবে?
>> স্যার আমাকে দিবেন ১০ হাজার টাকা এবং বাকি ১০ হাজার টাকা আপনার এবং বাকি সব খরচ সহ।
** ডাক্টার: 🙄🙄🙄🙄🙄🙄
@ ঘটনা ৩:
এক রোগীর স্বামী থাকে বিদেশে। এরমধ্যে রোগী হয়ে গেছে প্রেগনেন্ট। পাশের বাড়ির দেবরের সাথে চলছিল অনেক ইটিশ পিটিশ। যাই হোক সে দেবর পরে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসছে অপারেশন করে বাচ্চাকে নষ্ট করে ফেলার জন্য। দালালের সাথে কন্টাক হলো ৭০হাজার টাকার। এর কমে কোনভাবেই করানো যাবে না সেটাই ছিল দালালের ভাষ্য। দালালও তাদের গোপনীয়তার সুযোগ নিয়ে ইচ্ছামত টাকা দাবি করে বসলো। অনেক ঝামেলা আছে এই অপারেশনে, কোন ডাক্তার এই অপারেশন করতে চাইবেনা, হানিফানি অনেক কিছু বুঝিয়ে চড়া মূল্যে অপারেশন করিয়ে নিতে দালাল তাদের রাজি করালো । রোগীও গোপনীয়তার স্বার্থে অন্য কোন উপায় না পেয়ে রাজি হয়ে গেল। যাই হোক যথা সময় অপারেশন করে বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলা হলো। অপারেশন শেষে দালাল হাসপাতলে ১৯ হাজার টাকার বিল দিয়ে রুগী নিয়ে চলে গেল। বাকি টাকা দালালের পকেটে।
ঘটনাটা ৪:
আমার বড় বোনের সিজার করতে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাই, অপারেশন শেষে বিল পরিশোধ করতে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও অতিরিক্ত ২০০০ টাকা বেশি দাবি করেন। কারণ জানতে চাই কেন ২০০০ টাকা বেশি লাগবে। ম্যানেজার উত্তর দিল আপনার বোনের ব্যাপারে তিনজন দালাল ফোন দিয়ে দাবি করেছে যে তারা এই রোগীকে পাঠিয়েছে। আমি বললাম যে, আমি নিজে ডাক্তার , আর আমি তো আমার বোনের ডাক্তারের সাথে কথা বলেই রোগী নিয়ে আসলাম, এর মাঝে দালাল আসলো কেমনে?
ঘটনা হলো আমার বোনকে হাসপাতালে আনার পথে যতজন ওষুধের দোকানদার তথা আরো কিছু দালাল হাসপাতালের নিতে দেখেছে তারা সবাই ফোন করে হাসপাতালের ম্যানেজারের বলেছে যে সে একটা রুগী পাঠাচ্ছে । যাই হোক সব মিলিয়ে তিনজন একই রোগে পাঠানোর দাবি করেছে। এখনই তিনজনকেই তাদের পার্সেন্টেজ না দিয়ে ম্যানেজার সাহেব কোন উপায় না পেয়ে আমাদের কাছে বেশি টাকা দাবি করেছে।
এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে দালালদের। একজন ডাক্টার দালাল এর প্রস্তাবে রাজি হবেনা তো আরেকজন ডাক্তারকে তারা ফোনে দিবে। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ডাক্তাররা তাদের প্রাকটিস ধরে রাখার জন্য দালাল এর প্রস্তাবে রাজি হতে বাধ্য হয়। রাজি না হইলে ওইসব দালাল ওই ডাক্টার এর নামে অপপ্রচার শুরু করে দিয়ে তার প্রাকটিস এর ১২ টা বাজাবে। রোগীদের বলে বেড়াবে যে এই ডাক্টার ভালনা, ভালো অপারেশন করেনা ইত্যাদি। এবং ভবিষ্যতে ওই দালাল ওই ডাক্তারকে আর কোনো রোগী দিবে না।
এভাবেই একশ্রেণীর লোক নিজের উপার্জন এর একটা ব্যবস্থা করে ফেলেছে। আর হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। সর্বস্বান্ত হচ্ছে রুগী আর বদনাম হচ্ছে ডাক্টার এর। তবে এটাও ঠিক ডাক্তাররা যদি এসব দালালদের ফাঁদে পা না দেয় তাহলে তারা একসময় নিস্তেজ হয়ে যেত। কিন্তু অনেকেই এই স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে দিয়ে নিজেকে মানিয়ে চলার চেষ্টা করেন, না হলে তো তার প্রাইভেট প্র্যাকটিস জমবে না। আসলে মেডিকেল সিস্টেমটাই এখন দালালের জালে বন্দি হয়ে গেছে।
দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য দালাল। যাদের কাজই হলো রুগী ভাগিয়ে নিয়ে নিজের চুক্তিভুক্ত ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া। এরা কেউ কেউ ওইসব ক্লিনিক এর বেতন ভুক্ত কর্মচারী, আবার কেউ কেউ চুক্তিভিখিক। যে যত বেশি রুগী আনতে পারবে তার ততো বেশি বোনাস। ক্লিনিক ওয়ালারাও তাদের একটা ভদ্র নাম দিয়েছে যাকে বলে "মার্কেটিং"। যার ফলে এরা হয়ে যায় সুশীল সমাজ। এদের শিকড় তথা সংযোক অথবা নেটওয়ার্ক অনেক গভীরে। প্রতিটি গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে আছে এদের নেটওয়ার্ক। আপনি যেখানেই থাকুন না কেনো এদের থেকে রেহাই নেই। প্রতিটা ওষুধ এর দোকানে এদের কন্টাক্ট নম্বর দেয়া আছে, দেয়া আছে সেইসব ক্লিনিক এর সিল প্যাড। যখনই আপনি এসব ওষুধের দোকানে যাবেন সামান্য পরামর্শ নিতে, তখনই এরা আপনাকে সেইসব ক্লিনিকের সিল প্যাড সম্বলিত কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলবে ওই ক্লিনিকে গিয়ে আমার নাম বলবেন তাহলে আপনার স্পেশাল কেয়ার নিয়ে, স্পেশাল ডিস্কাউন্ট করে চিকিৎসা করে দিবে। সাথে আরো অনেক গুনোগান গেয়ে দিবে। আপনিও আপনার সীমিত জ্ঞান এর জন্য সেখানেই চলে যাবেন। যার ফলে সেই দোকানদার পেয়ে যাবে আপনার চিকিৎসা খরচ এর একটা পার্সেন্টেজ।
এদের দৌরাত্ম্য শুধু গ্রামেগঞ্জে ছিটিয়ে নয় বরং এরা সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে আনে, এমনকি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারে থেকেও রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যায় নিজস্ব ক্লিনিক গুলোতে । আপনাকে স্বল্প খরচে, স্বল্প সময়ে দ্রুত সিনিয়ার কোন চিকিৎসককে দিয়ে অপারেশন করিয়ে দেবে অথবা কারো সিরিয়াল নিয়ে দিবে অথবা এর চেয়ে ভাল চিকিৎসা করিয়ে দিবে এই বলে তারা রোগীদেরকে সেখান থেকে প্রতারিত করে নিয়ে ক্লিনিকে ভাগে। রোগীর অপারেশন কেমন হলো অথবা চিকিৎসা কেমন হলো সেটা তাদের দেখার মুখ্য বিষয় নয়। তাদের মুখ্য বিষয় হচ্ছে কেমন করে সে অধিক লাভবান হতে পারে। যার ফলশ্রুতিতে প্রতারিত হচ্ছে রোগীরা।
এই দালাল প্রথা তথা মধ্যসত্তা ভোগকারি ব্যাক্তি যদি না থাকতো তাহলে আপনার চিকিৎসা খরচ অনেক কমে যেতো। কমে যেত আপনার ভোগান্তি সাথে আপনি রেহাই পারেন প্রতারণা থেকে। সেইসাথে চিকিৎসকরাও যদি এইসব দালাল থেকে দূরে থাকতো তাহলে একসময় এই দালালরা দালালি ছেড়ে অন্য পেশা খুজার চেষ্টা করতো।
দেশের আনাচে কানাচে কবুতরের খোপর মতন গড়ে উঠেছে ছোট ছোট মানহীন ক্লিনিক। মানসম্মত সেবা দেবার চেয়ে যেখানে ব্যবসায়ীক মনোভাবটাই বেশি প্রকাশ পায়। সময় এসেছে এইসব মানহীন ক্লিনিকগুলোকে বন্ধ করার। তার পরবর্তীতে সেখানে গড়ে উঠতে পারে মানসম্মত, স্বাস্থ্যসম্মত হাসপাতাল যেখানে প্রাধান্য পাবে কোয়ালিটি সার্ভিস। ছোট ছোট হসপিটাল অথবা ক্লিনিক না বানিয়ে সবাই মিলে বানানো যায় মানসম্মত একটি বড় হসপিটাল।
এই অবস্থা থেকে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের প্রতিত্রান পাবার উপাই কি........!
প্রথম পর্বের লিংক:
https://www.facebook.com/100654992456828/posts/150604214128572/
ধন্যবাদ
Dr. Khalid Nur Md Mahbub
MBBS, DA, FCPS
******** দালাল হইতে সাবধান **********
( পর্ব: ১ )
সরকারি হাসপাতালের দেয়ালে দেয়ালে এরকম লেখা প্রায়ই আপনি দেখতে পাবেন যে "দালাল হইতে সাবধান" । কেন এমন লেখা আর এই দালালিই বা কারা? আর এমন লেখার কারণই বা কি? এমন লেখার মূল কারণ হচ্ছে সরকারি হাসপাতালে আপনার চারপাশের আপনি দালাল দ্বারা বেষ্টিত আছেন। সুতরাং আপনি যেন তাদের ফাঁদে না পরেন এজন্য আপনাকে সতর্ক করা হয়েছে।
খুব সহজ একটা উদাহরণ দেই। ধরুন আপনি রোগী নিয়ে হাসপাতালে গেছেন। আপনি রিক্সা, সিএনজি অথবা এম্বুলেন্স থেকে নামার আগে কিছু লোকজন আপনার সাহায্য করার জন্য দৌড়ে আসবেন। আপনাকে নামাতে সাহায্য করবে অথবা একটা খালি ট্রলি অথবা হুইল চেয়ার জোগাড় করতে সাহায্য করবে। এর ফাকে অত্যন্ত দরদ মাখা মুখে আপনাকে জিজ্ঞেস করবে আপনার কি হয়েছে, কি সমস্যা, কই থেকে আসছেন । এমনভাবে কথা বলবে যেন সে আপনার খুব আপন। তারপর সবকিছু শুনে উনি আপনাকে একটা খুব সুন্দর উপদেশ দেয়ার চেষ্টা করবেন। বলবেন এখানে নিয়ে আসছেন ভিতরেতো ডাক্তার নাই, ডাক্তার তো চা খেতে গেছে, অথবা নামাজ পড়তে গেছে অথবা লাঞ্চ করতে গেছে, এসব বলে বলবে যে, ডাক্তার তো আসতে অনেক দেরি হবে । আপনার রোগী তো বেশি খারাপ এখন কি করবেন? তার চেয়ে চলুন আমি আপনাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে তাড়াতাড়ি ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা করে দেই। আপনি যদি তার টোপে পা দেন তাহলেই আপনি তার জালে ফেঁসে গেলেন। এরপর উনি যথা সম্ভব খুব দ্রুততার সহিত আপনাকে উনার পছন্দের ক্লিনিকে নিয়ে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করে দেবে।
হাসপাতালের প্রবেশপথে আপনি অনেক গুলা ট্রলি অথবা হুইলচেয়ার দেখবেন। এগুলো সাধারণত এক শ্রেণীর লোকজন দখল করে রেখে দেয়। এই ট্রলি গুলো তারা অন্য কাউকে ধরতে দেয় না। আপনি আপনার রোগীকে ট্রলিতে শুয়ে অথবা হুইল চেয়ারে বসিয়ে নিয়ে যাবেন, তাহা তারা করতে দেবে না। তারা বাধ্য করবে আপনাদেরকে তাদেরকে দিয়ে আপনার রোগীকে ট্রলি অথবা হুইলচেয়ারে ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে। এরপর আপনার কাছে দাবি করে বসবে ট্রলি ভাড়া। অথচ এই ট্রলি এবং হুইল চেয়ার গুলো সরকারিভাবে ফ্রিতে রোগীদের পরিবহনের জন্য রাখা হয়েছে। আপনার কোন ক্ষমতা নাই তাদেরকে বাইপাস করে এই ট্রলি অথবা হুইল চেয়ার দিয়ে আপনার রোগীকে নিয়ে যাওয়ার। সুতরাং আপনি এখানে তাদের কাছে জিম্মি। এসকল দালালরা সাধারণত হাসপাতালে বেতনভুক্ত কর্মচারী হয়ে থাকে। অনেক সময় বাইরের লোকজনও এসে হাসপাতালে এরকম সিন্ডিকেট পাকিয়ে থাকে।
এই গেল রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর প্রাথমিক চিত্র। এখন আসুন দেখা যাক রোগীকে ভর্তি করানোর পর ওয়ার্ডে নিয়ে আসার পর কি কি সমস্যাগুলো আমরা দেখতে পাই। একটা মুমূর্ষু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে রোগীকে ক্যাথেটার, NG টিউব থেকে শুরু করে আরো অনেক কিছু প্রসিডিউর করতে হয়। ক্যাথেটার করা বা NG Tube দেওয়া সাধারণত ডাক্তারের দায়িত্ব হয়ে থাকেন এবং উনারা এটা করেও থাকেন। কিন্তু হাসপাতালে দাদুদের অথবা আয়া, ওয়ার্ডবয়দের কে ক্যাথেটার করতে না দিলে তারা কাজ করতে চায়না। আর এই ক্যাথেটার করে তারা রুগী থেকে বকশিশ হিসেবে বাগীয়ে নেয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
হাসপাতালে যে সকল ইনভেস্টিগেশন হয় না সেগুলো সাধারনত ডাক্তার রোগীর লোককে একটা কাগজে লিখে কাগজটা ধরিয়ে দেন এটা করে নিয়ে আসার জন্য। এসবের প্রতি দৃষ্টি থাকে দালালদের। সাধারণত আয়া, বুয়া, ওয়ার্ডবয়, দাদুরা রোগীর লোকের কাছে গিয়ে বলে দেন আমি করে নিয়ে এসে দেই। অথবা বলে আসেন আমার সাথে, আমি আপনাকে চিনাইয়া নিয়ে যাই কোথায় এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। এই বলে তারা রুগীর পরীক্ষার স্যাম্পল গুলো তাদের পছন্দমতো ক্লিনিকে নিয়ে করে নিয়ে আসে। ক্লিনিক থেকে একটা ভালো পার্সেন্ট বকশিশও পায়, আবার রুগীর লোকের কাছ থেকেও তারা বকশিশ নেয়।
প্রায় সময়ই দেখবেন হাসপাতালে বড় বড় ইনভেস্টিগেশন মেশিন গুলো নষ্ট হয়ে থাকে। এই নষ্ট হওয়ার অজুহাতে মাসের-পর-মাস ইনভেস্টিগেশন গুলো বন্ধ থাকে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দালালরা হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা। এই ইনভেস্টিগেশন গুলো তখন চলে যায় তখন নিকটবর্তী ক্লিনিকে।
হাসপাতালে যেসকল রোগী ফ্লোরে অথবা বারান্দায় থেকে চিকিৎসা নেয় তাদেরকে এই দালালরা খুব সেবা করে। তাদেরকে স্বেচ্ছায় উপকার করার চেষ্টা করেন। এবং তাদেরকে একটা রোগীর বেড ম্যানেজ করে দেওয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা বাগিয়ে নেয়।
সার্জারি অথবা গাইনি ওয়ার্ডের সাধারণত অপারেশনের জন্য যেসকল ওষুধ হাসপাতালে সাপ্লাই নেই সেগুলো কিনতে দেওয়ার হয়। ওষুধ এর একটা লিস্ট দেওয়া হয় রুগীর লোকের কাছে। এসকল দালালরা তাদের প্রতি নজর রাখে। তারপর আস্তে ধীরে কথা বলে তাদের কাছে গিয়ে বলে চলেন আপনার ওষুধ গুলো এনে দেই। আমার পরিচিত দোকান আছে কম দামে আপনাকে এনে দেয়া যাবে, তাছাড়া তো আপনি এখানে সবকিছু চিনবেনও না।
তারপর উনি রোগীর লোককে নিয়ে যায় তার পরিচিত ওষুধের দোকানে। সেখানে ১৫০০ টাকার ওষুধের কিনে বিল বানায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার। তারপর লোকের সামনে ঔষধের দোকানদারকে খুব করে রিকোয়েস্ট করে কিছু ডিসকাউন্ট দেয়ার জন্য। দোকানদারও তাকে দেখানোর জন্য ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা ডিসকাউন্ট করে দেয়। এত ডিসকাউন্ট দেখে রোগীর লোকও খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। আর সেই লোক কে উনি আপন করে নেয়। বাকি টাকা দোকানদার এবং সেই দালাল ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে নেয়।
সরকারি হাসপাতালে বেশিরভাগ অপারেশনই ফ্রিতে করা হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে কিছু ইন্সট্রুমেন্ট এর খরচ বাবদ সরকারি কোষাগারে টাকা নেয়া হয়। এই সকল দালালরা ডাক্তারের নাম ভাঙ্গিয়ে, রোগীর লোকের কাছে ডাক্তারের ফিস এর কথা বলে অপারেশন ফিস দাবি করে। বলে এইটা হাসপাতালে চার্জ, এটা ডাক্তারের চার্জ, ডাক্তারকে এখনই দিতে হবে, নাহলে আপনার রোগীর অপারেশন হবে না। এভাবেই তারা রোগীর লোকের কাছ থেকে বাগিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা এসব কাজে জড়িত থাকে । আপনি প্রতিবাদ করতে যাবেন তারা স্ট্রাইক করে সব কাজ বন্ধ করে রাখবে। এরপর দেখবেন হাসপাতালে কি অবস্থা হয়। তখন আপনি হাসপাতালে দুর্গন্ধে আর টিকতে পারবেন না, কারণ ময়লা পরিষ্কার থেকে শুরু করে ডাস্টবিন পরিষ্কার, বাথরুম পরিষ্কার এগুলা এরা তখন আর করবে না। যার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিগত ব্যবস্থাও নেয়া যায়না। পুরা হাসপাতালকে তারা এভাবে জিম্মি করে রাখে। আবার ডাক্তার-নার্স যদি বেশি কিছু বলতে যায় তাহলে তাদেরকে দেখে নেবার হুমকি দিয়ে দেয়। যার কারণে অনেকেই ব্যক্তিগত নিরাপত্তার স্বার্থে কোনো কথা বলে না বা তাদের সাথে কোন গ্যাঞ্জামে জড়ায়না।
তারপর আসেন বলা যাক হাসপাতালে ওয়ার্ডের গেটম্যানের চাঁদাবাজির কথা। আপনি আপনার রোগীকে দেখতে গেছেন হাসপাতলে, সে আপনাকে ঢুকতে দেবেনা যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি তাকে কিছু বকশিশ দেন। বকশিস দিল ঢুকতে পারবেন, না দিলে আপনাকে কোনোভাবেই সে ঢুকতে দেবেনা। এরকম ঘটনা প্রতিদিনই দেখা যায়। মাঝে মাঝে রোগীর লোকের সাথে এইসব গেটম্যানদের হাতাহাতিও হয়ে যায়। আপনি যখন এদের নামে কমপ্লেন করবেন তখন অথরিটি এদেরকে চেঞ্জ করে দেবে। কিন্তু তাতেও খুব বেশি সমস্যার সমাধান হবে না কারন এরা হাসপাতালে স্থানীয় নিয়োগ। যার কারণে এদেরকে খুব বেশি হলে এক ওয়াড থেকে অন্য ওয়াডে বদলি করা যায় কিন্তু অন্য হাসপাতলে বদলি করা যায় না। যার কারণে যুগ যুগ ধরে একই হাসপাতলে ঝিম মেরে বসে থাকে। আর আপনি এদের সিন্ডিকেটের জালে বন্দি থাকেন।
আর অপারেশন এর রুগী হাসপাতাল থাকে ভাগিয়ে ক্লিনিক নেবার ইতিহাস তো অনেক পুরনো। রোগীর ভিড়ের কারণে অনেক সময়ই রোগীদের অপারেশন এর সিরিয়াল পেতে অনেক দেরি হয়। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দালালরা রোগীকে ফুসলিয়ে ভাগিয়ে নিয়ে যায় ওলি গলির ক্লিনিকে।
এর থেকে পরিত্রান পাবার উপায় কি.......?
To be continue.................
Dr. Khalid Nur Md Mahbub
MBBS, DA, FCPS