08/10/2024
My another write up
Alhamdulillah
আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা সব সময় অভিযোগ করেন যে, তাদের শিশু সন্তানরা কথা শুনে না। যা বলা হয় তার উল্টোটাই করে থাকে। আর খুব জিদ করে। এ কারণে অধিকাংশ সময়ই মনের অজান্তেই শিশুদের বকাবকি করা হয়। কখনো কখনো পিটুনিও দেওয়া হয়। তারা মনের অজান্তেই সন্তানদের নেগেটিভ রিইনফোর্সমেন্ট প্রয়োগ করছেন। তার আগে আমাদের জানা দরকার রিইনফোর্সমেন্ট কী? তার সঙ্গে সঙ্গে প্যারেন্টিং বিষয়টাও বুঝা উচিৎ। প্যারেন্টিং ও রিইনফোর্সমেন্ট এই দুটো কীভাবে একে অপরের সাথে সম্পর্কিত।
প্যারেন্টিং: প্যারেন্টিং একটি ইংরেজি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে সন্তান প্রতিপালনে মা-বাবার ভূমিকা। প্যারেন্টিং হচ্ছে একটি প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি, যার মাধ্যমে সন্তানের দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক,বুদ্ধিবৃত্তিক এবং ধর্মীয় দিক দিয়ে শিশুকাল থেকে যৌবন পর্যন্ত শিক্ষা দান করা হয়। প্যারেন্টিং এর মূল দায়িত্ব সাধারণত পালন করেন মা এবং বাবা। এই দায়িত্ব যে শুধুমাত্র বাবা-মা ই পালন করেন তা কিন্তু নয়, যে বা যারা সন্তানের ভরণ পোষণ করেন তারাও করে থাকেন।
রিইনফোর্সমেন্ট: এটি মূলত একটি তত্ত্ব, যার শুরু হয় প্যাভলবের কন্ডিশনিং পরীক্ষণ এবং বিএফ স্কিনার এর অপারেটিং কন্ডিশনিং পরীক্ষণটির মাধ্যমে। এটি আচরণ মনোবিজ্ঞানের শিক্ষন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। একে আমরা রসায়ন বিজ্ঞানের প্রভাবনের মতোও বলতে পারি যা দ্রবণে মিশবে আর তার লক্ষ্যমান পরিবর্তন ঠিকই করবে কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে তার অস্তিত্ব থাকবে না। শিক্ষণ এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট পূর্বগামী উদ্দীপক বস্তু এর ক্ষেত্রে নিজের আচরণকে শক্তিশালী করা। আর রিইনফোর্সমেন্টের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এটি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর হয়ে থাকে। রিইনফোর্সমেন্টের কিছু ধরণ বা পদ্ধতি রয়েছে। তা হচ্ছে- পজিটিভ রিইনফোর্সমেন্ট, নেগেটিভ রিইনফোর্সমেন্ট, পানিশমেন্ট, ইক্সটিংশন (EXTINCTION)। এ কয়েকটি পদ্ধতির দ্বারা আচরণকে নিয়ন্ত্রণ ও এর শক্তিবৃদ্ধি করা যায়।
পজিটিভ বা ইতিবাচক রিইনফোর্সমেন্ট: এই পদ্ধতিতে কোন কাঙ্খিত আচরণের পর তার সাথে পুরস্কার জুড়ে দেওয়া হয়ে থাকে এবং নির্দিষ্ট আচরনকে বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে, আমার এক আত্মীয়ের মেয়ে যখন বেড়াতে এসে সালাম দিচ্ছে তখন তাকে সালামের উত্তর দিয়ে জড়িয়ে ধরা হয়ে থাকে এবং এতে খুশি হয়ে সে সব সময় এসেই সালাম দিচ্ছে।
নেগেটিভ বা নেতিবাচক রিইনফোর্সমেন্ট: এই পদ্ধতিতে কোনো নির্দিষ্ট আচরণ শিখানো হয়। আর এই শিক্ষনে অবশ্যই ইতিবাচক রিইনফোর্সমেন্ট সংশোধক হিসেবে থাকবে। না হয় শিক্ষনটা সম্পূর্ণ হবে না। আর এতে করে পছন্দ মতো ভালো আচরণগুলোকে বৃদ্ধি করা হয়। উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। যেমন- ধরা যাক, কোনো বাচ্চার খেলার খুবই শখ কিন্তু সে এটাও জানে যে তার পড়াশুনা ও ঠিকমত করতে হবে, নয়তো মা রাগ করবেন। তাই বাচ্চাটি সঠিক সময় পড়াটা শেষ করেই মাকে বলে খেলতে যায়। আর এই ভাবে সে মায়ের ভবিষৎ রাগকে দমালো আবার তার খেলার অনুশীলনও সুষ্ঠভাবে করলো। এখানে ইতিবাচক রিইনফোর্সমেন্ট হচ্ছে পড়াটা ঠিক রেখে মাকে না রাগানো। আর সম্পূর্ণ ব্যাপারটি হচ্ছে নেগেটিভ রিইনফোর্সমেন্ট। নেগেটিভ রিইনফোর্সমেন্ট বলতেই যে শাস্তি বা কড়া শাসন তা কিন্তু নয়। নেগেটিভ রিইনফোর্সমেন্ট বলতে ইতিবাচক সংশোধকের মাধ্যমে আচরণগুলো সংশোধন করা।
পানিশমেন্ট বা শান্তি: এই পদ্ধতিতে কোন নির্দিষ্ট আচরণের জন্য পরিস্থিতি সাপেক্ষে উক্ত ব্যক্তিকে তার কর্ম অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হয়ে থাকে। এতে করে সে তাৎক্ষণিক বুঝতে পারে তার কোন কাজটি ভুল বা কোন কাজটি তার করা ঠিক হয় নি। আর শাস্তি কাজের সাথে সাথেই দিতে হবে। না হয় বিলম্ব হলে ব্যক্তি বুঝবে না তার কোন কাজের জন্য সে শাস্তি পেলো। যেমন- কোন বাচ্চা মেহমানদের সামনে বড়দের সাথে খারাপ ব্যবহার করছে তখন তাকে শাস্তি দিতে হবে। তবে অবশ্যই মেহমানদের আড়ালে কারণ জনসম্মুখে শাস্তি পেলে বাচ্চার আত্মসম্মানে আঘাত আসতে পারে আর সে শাস্তি
প্রদানকারীকে মন্দভাবে দেখবে।
ইক্সটিংশন বা বিলোপ: এই পদ্ধতিতে কোন নির্দিষ্ট আচরণকে একেবারে বিলোপ করে দেয়া হয়। সে আচরণের আর অস্তিত্ব থাকে না। তবে অবশ্যই ইতিবাচক আচরণের প্রভাব দ্বারা। যেমন- বাচ্চাদের খুব স্বাভাবিক একটি অভ্যাস হাতের নখ কামড়ানো যা দেহের জন্য ক্ষতিকারক। একে বিলোপ করার জন্য তাকে উপহার প্রদান করা।
এছাড়া স্বাভাবিক বা ন্যাচারাল রিইনফোর্সমেন্ট হচ্ছে রিইনফোর্সমেন্ট এর অঘোষিত একটি শাখা যেখানে স্বাভাবিক ভাবে কিছু সংযোগ বা বিলোপ করা হয়। যেমন: কোন বাচ্চাকে নিষেধ করা সত্ত্বেও লাফিয়ে হাঁটে আর পরে গিয়ে ব্যাথা পায় তখন সে ন্যাচারাল ভাবে রিইনফোর্সমেন্ট পায়।
উপরিউক্ত আলোচনায় বোঝা গেছে যে, প্যারেন্টিং ও রিইনফোর্সমেন্ট একে অপরের সাথে জড়িত আর নিয়ন্ত্রনের দ্বারা ভবিষ্যৎ আচরণ শিক্ষণেও ভূমিকা রাখে। আর এটাও মোটামুটি পরিস্কার যে পজেটিভ বা ইতিবাচক রিইনফোর্সমেন্ট সবচেয়ে কার্যকরী প্যারেন্টিং এর ক্ষেত্রে।
মেহেজাবীন আক্তার
ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্গানাইজেশনাল সাইকোলজিস্ট