07/10/2023
স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের কাছে ওজন কমানোর সর্বপ্রথম উপায় হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ডায়েট। এর মাঝে একটি পরিচিত ডায়েট হচ্ছে কিটো ডায়েট। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছেঃ
-কিটো ডায়েট কি?
-কিটো ডায়েটে খাদ্য উপাদানের পরিমাণ কেমন হবে? -কিটো ডায়েট কি সত্যিই ওজন কমায়?
-কিটো ডায়েট করতে পুষ্টিবিদের পরামর্শ প্রয়োজন আছে কি না ?
কিটো ডায়েট কি❓
মূলত কিটো ডায়েট আপনি যে খাবার খাচ্ছেন তা আপনার শরীর কিভাবে গ্রহণ করবে সেই পথটাকে পরিবর্তন করে। আমাদের শরীর কার্বোহাইড্রেট থেকে প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করে থাকে। কিন্তু কিটো ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ কমিয়ে গ্লুকোজের পরিবর্তে দেহকে ফ্যাটের জারণের মাধ্যমে শক্তি উৎপাদন করা শিখায়। কিটো ডায়েট হচ্ছে লো-কার্বোহাইড্রেট, মডারেট প্রোটিন এবং হাই ফ্যাট সমৃদ্ধ ডায়েট।
কিটো ডায়েটে খাদ্য উপাদানের পরিমাণ কেমন হবে❓
স্ট্যান্ডার্ড কিটো ডায়েটে ফ্যাটের পরিমাণ থাকে ৭০% থেকে ৮০%, প্রোটিনের পরিমাণ থাকে ১০% থেকে ২০% এবং কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ থাকে ৫% থেকে ১০%।
অনেক পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারে উচ্চ পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে। এর মধ্যে রয়েছে গোটা শস্য, ফল এবং সবজি। সব সোর্স থেকে কার্বোহাইড্রেট কিটো ডায়েটের জন্য সীমিত করতে হবে। সুতরাং আপনাকে সব ধরনের পাউরুটি, সিরিয়াল এবং অন্যান্য শস্য বাদ দিতে হবে। ফল এবং সবজি খাওয়ার সতর্ক থাকতে হয়। কিটো ডায়েটের জন্য চর্বি সরবরাহকারী খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে:
-মাছ, মাংস,ডিম
-বাদাম, বিভিন্ন ধরনের বিচি
-বাটার, ঘি, চিজ
-অলিভ অয়েল
কিটো ডায়েট কি সত্যিই ওজন কমায়❓
শরীরকে কেটোসিসে প্রবেশ করাতে এবং কিটোসিস ফেইজে রাখার জন্য আমাদের প্রতিদিন 50 গ্রাম কার্বোহাইড্রেটের নিচে খেতে হয়। কিটোসিস হচ্ছে মূলত এমন একটি প্রক্রিয়া যা দেহে আগে থেকে থাকা ফ্যাট বা বর্তমানে গ্রহণ করা ফ্যাটকে জারিত করে দেহের জন্য শক্তি উৎপাদন করে। এ শক্তি উৎপাদনের মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট কমে যায়। যার ফলে ধীরে ধীরে ওজন কমতে থাকে। খাবারে কম কার্বোহাইড্রেট থাকায় তার শরীরে জমে ওজন বাড়াতে পারে না।
কিটো ডায়েট করতে পুষ্টিবিদের পরামর্শ প্রয়োজন আছে কি না❓
আজকাল ইউটিউব বা ফেসবুকে সার্চ দিলে অনেক ধরনের কিটো ডায়েটের চার্ট চলে আসে। কিন্তু কথা হচ্ছে এগুলো কি সবার জন্যই ঠিক? আমাদের একেকজনের শরীর একেক ভাবে কাজ করে। একেকজনের প্রয়োজন তাই একেক রকম। প্রয়োজনের বাইরে কিছু করা হলে তা অবশ্যই শরীরের জন্য হিতে বিপরীত হয়। ভিডিও দেখে যারা কিটো ডায়েট মেনে চলে তারা তাদের খাদ্য তালিকা থেকে কার্বোহাইড্রেটকে একদম বাদ দিয়ে দেয় অর্থাৎ তাদের কিটো ডায়েট লো-কার্বোহাইড্রেট এর পরিবর্তে হয়ে যায় নো-কার্বোহাইড্রেট ডায়েট যা একটি মারাত্মক ক্ষতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। প্রয়োজন ভেদে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণের পার্থক্য হয়ে থাকে এ ডায়েটে যা একজন পুষ্টিবিদ নির্ধারণ করেন। কিন্তু নিজে নিজে এ পরিমাণ নির্ধারণ করলে ওজন কমার পরিবর্তে নানা জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ সময় কার্বোহাইড্রেট না খেলে সিরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে রক্তে LDL এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যা হৃদরোগের কারণ হতে পারে । দীর্ঘদিন কার্বোহাইড্রেট না খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। কিডনিতে পাথর হতে সাহায্য করে।
সুতরাং বোঝা যাচ্ছে নিঃসন্দেহে এটি একটি জটিল প্রকৃতির ডায়েট যা একা করা শুধু ক্ষতি নয় মারাত্মক সমস্যা ফেলে দিতে পারে আপনার শরীরকে। আক্রান্ত হতে পারেন বিভিন্ন মারাত্মক রোগে। তাই এক্ষেত্রে অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী এই ডায়েট মেনে চলতে হবে। পুষ্টিবিদের প্রত্যেকটি পরামর্শ কঠোরভাবে মানতে হবে। তবেই আপনার ওজন দ্রুত হ্রাস পাবে, বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাবেন, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবেন।