22/07/2025
পুরো লেখাটি লিখেছেন
Md Mobasshar Rahman
এটা কোনো ব্যাখ্যা না। এর কোনো ব্যাখ্যা হয় ও না৷ যার যায়, কেবল সে ই বুঝে, বাকিরা বুঝার ভান করে, কেউ প্রচন্ড আবেগে ব্যাথিত হয়, আবার কেউ নিজের কোনো স্বার্থ হাসিলে৷ কিন্তু আমাদের শিক্ষা হয় না৷ সমস্যা রয়ে যায় কারন আমরা যা দরকার তা নিয়ে কথা বলি না, যা নিয়ে কথা বলতে একটু কম্ফোর্ট ফিল করি তা নিয়ে কথা বলি৷
যারা পরিবার হারিয়েছেন, তাদের প্রতি কিছু বলার ভাষা বা সক্ষমতা আমার নাই। কিন্তু যারা প্রচন্ড ক্ষুব্ধ, যারা জবাবদিহিতা চান তাদের জন্য, আমার ২-৩ টা অগোছালো কথা৷ আপনারা যারা জবাব চান, তাদের প্রশ্ন গুছিয়ে দেওয়া৷ আমি আপনাদের বিরুদ্ধে না, শুধু মাত্র আমার সামান্য পেশাগত জ্ঞানের আলোকে কথা গুলো বলা৷ কারন আপনারা যদি সঠিক প্রশ্ন না করেন আপনাদের প্রশ্ন মূল্যায়িত হবে না৷ পাত্তাই দিবে না৷
প্রথম কথা: বিমান বাহিনী কেন এই জনবসতিপূর্ন এলাকায় প্রশিক্ষন করে?
উত্তর: একটা প্রশিক্ষন বিমান প্রথমে Take-off করতে হয়, তারপর সিলেবাস অনুযায়ী কিছু পরিচালনা করতে হয়, এবং তারপর Landing করতে হয়৷ Take off এবং landing করতে দরকার হয় runway. বাকি প্রশিক্ষন এর জন্য নির্ধারিত এলাকা আছে, সেগুলো সোজা বাংলায় 'ট্রেনিং এরিয়া' বলে৷ যেগুলো জনবসতি থেকে দূরে হয়ে থাকে৷ বিমান বাহিনীর প্রতিটি প্রশিক্ষন ও সেখানেই হয়৷
জনবসতিপূর্ন এলাকায় প্রশিক্ষনের শুধু Take off, landing এবং এর সাথে জড়িত কাজগুলো অনুশীলন করা হয়৷ কারন? কারন এর জন্য runway দরকার৷runway ছাড়া সেটা সম্ভব না৷ runway এবং এর চারপাশ জনবসতি পূর্ন হওয়ার কথা না। কেন হলো এটার দায় কাদের আপনারা জবাব চাইবেন দয়া করে৷ কারন রানওয়ে আগে হয়েছে, জনবসতি পরে, জনবসতির মাঝে এসে রানওয়ে বানানো হয় নাই৷
আমি একটা ছবি সংযুক্ত করেছি৷ runway এর যেখানে বিমান এসে টাচ করে, সেখান থেকে দূর্ঘটনার জায়গাটার দূরত্ব, এভিয়েশন এর হিসাব এ ১.৯ নটিকাল মাইল৷
এই যে runway বরাবর যে এলাকাটা? হলুদ চিহ্ন দিয়ে দেখানো, এটাকে এভিয়েশন এর ভাষায় বলে 'Final'। এই এলাকাটার টেকনিকাল নাম 'Final'. এই runway তে যেকোন, I repeat, সামরিক বেসামরিক আধাসামরিক, যেকোন বিমান land করতে গেলে এই রাস্তা ধরেই আসতে হবে৷ আসতেই হবে, তানাহলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ল্যান্ড করা সম্ভব না৷ এবং এই Final এর কত দূর পর্যন্ত বিমান থাকে জানেন? ৬-৮ নটিকাল মাইল পর্যন্ত৷ সেখানে স্কুলটা মাত্র ১.৯ ন্যটিকাল মাইল দূরে৷ অর্থাৎ যত বিমান নামে এই ডিরেকশন এ, সকল বিমান এই স্কুলের উপর দিয়েই যাবে৷ সেটা শুধু বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষন বিমান না৷ আমাদের রেমিটেন্স যোদ্ধা ভাইদের যে বিমান মধ্য প্রাচ্য থেকে এসে ল্যান্ড করে সেটা ও৷ তাহলে এরকম একটা ক্রিটিকাল জায়গায় স্কুল কিভাবে পার্মিশন পায়? আল্লাহ না করুক, অন্য যেকোন বিমান, যেগুলা কিনা আজকের বিধ্বস্ত বিমানের থেকে ১৫-২০ কিংবা ৩০ গুন বেশি বড়, সেরকম একটা বিমান যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য এখানে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই?
আজ যে কথাটা উঠছে যে ঘন বসতি পূর্ন এলাকায় প্রশিক্ষন কেন করে? ধরেন করলো না প্রশিক্ষন, শুধু কমার্শিয়াল বিমান runway তে ল্যান্ডিং করবে, তাহলে কি এই জায়গাটা স্কুল কিংবা হাসপাতাল বানানোর জন্য সেইফ? উত্তর চাইতে হবে এই প্রশ্নের৷ কে দিল এখানে স্কুল বানানোর অনুমতি? আদৌ দিয়েছে?
দ্বিতীয় কথা, এই সময় একটা ব্যাপার খুব সামনে আসছে যে লাশের হিসাব লুকানো যাবে না! আমি এখানে জনগনের কোনো দায়ই দেখি না৷ আমার দেশের জনগন মনে করে, সরকার, প্রশাসন লাশ লুকায়, এটা সরকার, প্রশাসনের দায়৷ আমরা সেই বিশ্বাস অর্জন করতে পারিনি, এটা আমাদের ব্যার্থতা৷ যেকোন এরকম দূর্ঘটনায়, সর্বোচ্চ ট্রান্সপারেন্সি ই পারে জনগনকে আশ্বস্ত রাখতে, জনগন আমাদের বিশ্বাস করছে না, এই দায় আমাদেরই৷ আমাদের এখানে কাজ করতে হবে আরও৷ তবে এটাও সবার মাথায় রাখতে হবে, যে কিছু মানুষ 'Chaos' পছন্দ করে৷ কিছু মানুষের কাছে লাশের সংখ্যা বাড়লে তার কিছু ভিউ বাড়বে, উপরি ইনকাম হবে, এদের থেকে সবাই একটু সাবধান থাকাই ভাল৷ তবে জনগন কাকে বিশ্বাস করবে, আর কাকে করবে না, এইটা দায়িত্বশীল যারা আছে তাদের উপরই বর্তায়৷ তবে আমার মনে হয়, এই আন্তর্জাতিক Tragedy তে লাশের সংখ্যা লুকায়ে আর্মি বা এয়ারফোর্স বা সরকার কারও কোনো লাভ আছে।
তারপর, এত এত ডিফেন্স বাজেট, তারপরও এই বিমান কেন? এটা খুবই উপযুক্ত প্রশ্ন৷ দেখেন বাজেট যতই হোক, আমার বেতন পে গ্রেড অনুসারে আসে, আমার রেশন নির্ধারিত মূল্যে কিনে খেতে হয়, আমার ইউনিফর্ম ও কিনে পরতে হয়, মোদ্দা কথা আমরা বেতনভূক্ত কর্মচারী, বাজেটের ব্যাপার স্যাপার দেখে মূলত মন্ত্রনালয়, কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ মোটামুটি ঘন্টায় ৫০০ মাইল বেগে ছুটে চলা একটা উড়ন্ত মেশিনে বসতে চাইবে না, যদি সে ঐ মেশিনের প্রতি ভরসা না পায়৷ দুনিয়া কত আগায়ে গিয়েছে, আমরা কেন এই মেশিনে পড়ে আছি? কেউ চায় না ভাই, কেউ চায় না৷ তবে এটাও ঠিক, যুদ্ধবিমান শুধু টাকা থাকলেই কিনা যায় না৷ আমি ভাল কিছু যাতে কিনতে না পারি, তার জন্য আমার প্রতিবেশিরা, শত্রুরা অনেক দেন দরবার, লব্যিং করে প্রতি মুহূর্তে৷ আর আমাদের নিজেদের দুর্নীতি তো ছিলই৷ সেগুলো অনেক উচু লেভেল এর ব্যাপার৷ সেখানে জনগনই পারে হাত দিতে কারন তা মূলত জনপ্রতিনিধিদের ব্যাপার৷ আমরাও চাই অত্যাধুনিক বিমান, সরঞ্জাম দিয়ে নিরাপদে, সগর্বে সাজানো থাকুক আমাদের অফিস৷
কেন বিল্ডিং এ ক্রাশ করলো, কেন মাঠে ক্রাশ করলো না?
আজ ক্রাশ করার ফলে যেই পাইলট জীবন দিয়েছেন, আমি তাকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনতাম৷ সেই হিসাব না হয় বাদই দিলাম৷ স্কুল হাসপাতাল সব বাদ দেন, একটা পাগল ও যদি বিমানের মধ্যে থাকে, আর তার কাছে যদি নিয়ন্ত্রন থাকে, সে চাইবে খোলা জায়গায় যেয়ে নামতে। লোকের সেফটির কথা বাদ দিলাম, নিজের সেফটির জন্যই সে খোলা জায়গায় ক্রাশ ল্যান্ডিং করতে চাইবে৷ আর যদিও বা এটা নিশ্চিত না, তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে, তবে এটা নিশ্চিত যে বিমান ফেলে দিয়ে ইজেকশন করতে চাইলে পাইলট ২০০০ ফিটের উপরেই ইজেকশন করতে চাইবে, অথবা যতটা উপরে থেকে করা যায়, নিজের স্বার্থেই, নিজের বাঁচার স্বার্থে৷ তাই একদম ক্রাশ করা পর্যন্ত বিমানের সাথে লেগে থাকা পাইলটকে আমরা যৌক্তিক ভাবে বলতে পারি যে তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ঘটনার নিয়ন্ত্রন নিতে৷ তাকে সুপার হিরো আপনারা না ভাবতেই পারেন, গ্লোরিফাই না করতেই পারেন, তাকে ভিলেন ভাবার যৌক্তিক কোনো কারন নাই৷ তবে এখানেও একদম প্রচন্ড আবেগ থেকে, এতগুলা বাচ্চার প্রানহানীর কারনে বলছেন পাইলট এটা করতে পারতো কেন করলো না বা ওটা করতে পারতো কেন করলো না! that is completely understandable. কিন্তু absurd কথা বইলেন না যে মিরপুর DOHS এর উপর পড়লো না, এখানে পড়লো কেন?কারন ওখানে বড় বড় সামরিক কর্মকর্তারা থাকে তাই? একটা মানুষ বুঝতেছে মৃত্যু তার অনেক কাছে, তখন তার মাথায় এই ক্যালুলেশন কাজ করে যে কোন এলাকায় কে থাকে? সোজা কথা মিরপুর DOHS এর উপর যাওয়ার কথা না, ওদিকে কেন যাবে, এখানের উপর দিয়েই যাওয়ার কথা ছিল, সেখান দিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু যেভাবে যাওয়ার কথা ছিল, যান্ত্রিক ত্রুটি(আপাতত ধারনা করা হচ্ছে) সেটা সম্ভব হয়ে ওঠেনি৷
দিনশেষে একটা কথা বলি, আমি নিজে বাবা হওয়ার পর থেকে আমার বাস্তবতা অনেক অনেক চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে৷ আগে যেখানে আমি নিজের কথা বেশি ভাবতাম, এখন আমি আমার বাচ্চার কথা ভাবি৷ মনে হয় সমস্ত দুনিয়া উলটে পালটে যাক, আমার বাচ্চাটা ঠিক থাকুক৷ আমি বাবা না হলে আজকের এই ঘটনা আমাকে যতটা ব্যাথিত করেছে, ততটা বেশি হয়তো ব্যাথিত করতো না৷(এখনের থেকে কম করতো) এখন আমার সব ঘটনার ভিতরে, জাজমেন্ট এর ভিতরে পিতৃত্ব চলে আসে, চিন্তা করে বসি আমিও একজন বাবা, একদিন আমার ছেলেটাও স্কুলে যাবে৷ ভেবে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে৷ না এটা নিছক কোন দূর্ঘটনা না(আমি বিমান ক্রাশের কথা বলছি না, আমি বলছি বিমান ক্রাশের পরবর্তী ফলাফলের কথা) এটা অনেকগুলো অপকর্মের সামষ্টিক ফল, যেটা কিনা তারা ভোগ করছে যারা এটা ডিজার্ভ করতো না৷
আল্লাহ আমাদের ধৈর্য দিক৷ আমাদের সুবুদ্ধি দিক৷ আমাদের সাহায্য করুক৷ no one deserves this. আল্লাহ সকলকে জান্নাতবাসী করুক৷
প্রশ্ন করুন৷ সঠিক প্রশ্ন, সঠিক জায়গায়৷