28/09/2024
অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের মহামারী বিশ্বের জনস্বাস্থ্য সমস্যাগুলির মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশে রোগতত্ত্ব,রোগ নিয়ন্তন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের এক গবেষণায় দেখা গেছে,দেশে প্রচলিত এন্টিবায়োটিকের মধ্যে অন্তত সতেরোটির কাযক্ষমতা অনেকাংশে কমে গেছে,এর ফলে শিশু ও হাসপাতালের রোগীরা মারাত্মক ঝুকির মধ্যে রয়েছে।
অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ বলতে আমরা কি বুঝি, যদি কারও শরীরে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণজনিত রোগ হয় এবং সেই রোগ নিরাময়ে কেউ যদি চিকিৎসকের পরামর্শমত সঠিক পরিমাণে এবং পর্যাপ্ত সময় ধরে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ না করেন তাহলে ব্যাকটেরিয়াগুলো পুরোপুরি ধ্বংস না হয়ে উল্টো আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।তখন এই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে ওই অ্যান্টিবায়োটিক পরে আর কাজ করে না।
বাংলাদেশে বহু মানুষ বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ফার্মেসী থেকে এন্টিবায়োটিক কিনে খায়।তাদের মধ্যে ধারনাই নাই যে এর ফলে তার শরীর এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধ হয়ে যাচ্ছে এবং পরবর্তীতে কোন সংক্রমণ হলে সেটা হয়তো আর কাজ করবে না। এছাড়াও সম্পুর্ন ডোজ শেষ না করে মাঝপথে বন্ধ করলে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধ হতে পারে। আরেকটি কারন হতে পারে, মানুষের সঙ্গে-সঙ্গে প্রাণীর ওপরেও এন্টিবায়োটিক ব্যবহার হয়,যা পুরোপুরি বিলীন হয় না,মাটিতে রয়ে যায়।এর ফলে আমরা যা খাই সবজি, মাছ,মাংস এর মধ্যে থেকে যাওয়া এন্টিবায়োটিকের কারনে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধ হতে পারে।
এ অবস্থায় বাংলাদেশের পাব্লিক হেলথ সেক্টর এবং সরকার কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে যার মধ্যে রয়েছে -
১.জনসাধারণের মধ্যে এন্টিমাইক্রবিয়াল প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতনতা এবং বোঝার ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
২.ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ বিষয়ক ক্যাম্পেন করতে হবে স্কুল,কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে।
৩.সরকারের পক্ষ হতে কিছু বাধ্যতা মূলক নিয়ম করতে হবে হসপিটালের চিকিৎসক এবং রোগীদের জন্য, যেমন: প্যাথোজেনিক অণুজীবের সংক্রমণ কমাতে হাতের স্বাস্থ্যবিধির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা স্বীকার করা সত্ত্বেও, বাংলাদেশের অনেক স্বাস্থ্যসেবা সেটিংসে হাতের স্বাস্থ্যবিধির সামগ্রিক সম্মতি সর্বোত্তম থেকে কম। বেশিরভাগ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে, সুপারিশকৃত হাত ধোয়ার অনুশীলনগুলি অগ্রহণযোগ্যভাবে কম থাকে।
৪.এছাড়া দেশের প্রত্যেক হাসপাতালে কোন রোগীকে, কী কারণে, কোন অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হল - তার নির্দিষ্ট তালিকা এবং সে বিষয়ে গবেষণা থাকাটা খুবই জরুরী। সরকারি ভাবে বাধ্যতামূলক নিয়ম করতে হবে।
৫.বিনা প্রেসক্রিপশনে কেউ এন্টিবায়োটিক ক্রয় এবং বিক্রয় করতে পারবে না।
অবশেষে, সরকার, চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মী,জনস্বাস্থ্য কর্মী, রোগী এবং সাধারণ জনগন সবাইকে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে কার্যকরি ভূমিকা পালন করতে হবে।অন্যথায় আমাদের চোখের সামনে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকের অভাবে আমাদেরই আপনজনকে হারাতে হবে।