27/06/2024
সোমাটােফ্রম ডিজঅর্ডার:মানসিক রোগে যেখানে শারীরিক রোগের আবির্ভাব ঘটে:
৩ মে,২০১৩। ৩১০ নং ওয়ার্ড।ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের ৩১০ নং ওয়ার্ড -এ দাঁড়িয়ে আমি ।রোগীর নাম পেয়ারা বানু(ছদ্ম নাম),বয়স -৫০।বাড়ি- চাঁদপুর।১৪ দিন যাবৎ মহিলাটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।যেহেতু ঐ মহিলার সাইকোথেরাপির দায়িত্বটা আমার হাতে পড়েছে,তাই তার সম্পর্কে জানাটা ছিল একান্তই জরুরী।হাসাতালে উপস্থিত ছিল তার স্বামী -মজিদ মিয়া ও তার মেয়ের জামাই।আমি তার ফাইলটা হাতে নিলাম।
★It was a case of somatoform disorder/somatic symptom disorder/somatization disorder ....
সোমাটিক সিম্পটম ডিজঅর্ডার এমন এক ধরনের মানসিক রোগ, যেখানে ব্যক্তির মধ্যে কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় কিন্তু মেডিক্যাল টেস্ট আসে স্বাভাবিক। ফলে তা দিয়ে কোন রোগ ব্যাখ্যা করা যায় না।এর দরুন, সে কোন শারীরিক রোগে আক্রান্ত কিনা তাও চিহ্নিত করা যায় না।
√√Chief Complain(প্রধান সমস্যাসমূহ)ঃ
Sleep-Normal(ঘুম-স্বাভাবিক)
Appetite-Normal..(ক্ষুধা -স্বাভাবিক)
Feeling headache... (মাথা ব্যথা)
Restlessness..... (অশান্তি)
Neck pain....(ঘাড় ব্যথা)
joint pain(গিড়ায় ব্যাথা)
Forgetfulness (ভুলে যাওয়া)
√SpeechঃNormal(স্বাভাবিক)
√MoodঃDepressed(বিষন্ন)
√ThoughtঃSuicidal Ideation(আত্মহত্যা প্রবণতা)
নিয়ম অনুযায়ী সমানুভূতি দিয়ে আমি তার সাথে পরিচয় পর্ব শেষ করে নিলাম।কথা বলার সময়ও মহিলাটি তার মাথা,গলা,চাপা ও ঘাড়ে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করছিল।আমি প্রথমেই তাকে দশবার শ্বাস এর ব্যায়াম করিয়ে নিলাম। এতে সে কিছুটা ভাল বোধ করল।অতঃপর বিষন্নতা ও উদ্ধিগ্নতার স্কেল মেপে দেখি দুটোই ছিল সর্বোচ্চে।
হিস্ট্রি নিতে গিয়ে দেখা গেল-১৯৭৫ সালে পেয়ারা বানুর বিয়ে হয়।সংসার জীবনের প্রথম দিকে সে মোটামুটি সুখী ছিল।পেয়ারা বানুর ছিল চার মেয়ে এবং এক ছেলে । তার বয়স যখন আট বছর, সেই সময় তার বাবা মারা গিয়েছিল। দেড় বছর আগে সে তার মাকে হারিয়েছে।সন্তানদের সাথে তার সম্পর্ক ভালোই ছিল।গত সাতটি বছর ধরে তার স্বামী তাকে মানসিকভাবে প্রচন্ড অত্যাচার করছে।একই পাড়ার এক ভাবীর বাসায় (ভাবীর স্বামী বিদেশ থাকতো) সে তার স্বামীকে যেতে সর্বদাই বারণ করতো।তবু মজিদ মিয়া ঐ বাসায় প্রচুর আসা-যাওয়া করতো।পেয়ারা বানু কিছু বললে তাকে বাপ-মা তুলে গাল-মন্দ করা হতো এবং নানান ভাবে মানসিক নির্যাতন করত।যখন পেয়ারা বানুর একমাত্র ছেলে বিয়ে করে বাড়ি ছেড়ে দূরে চলে গেল,এরপর থেকে তার উপর শারীরিক নির্যাতন করা শুরু হল।মেয়েরাও শত চেষ্টা করে বাবাকে ফিরিয়ে আনতে পারেনি।ধীরে ধীরে মজিদ মিয়া সংসারের সকল দায়-দায়িত্ব ছেড়ে দিল। এরপর থেকে পেয়ারা বানুর প্রায়ই আত্মহত্যা করতে মন চাইতো।সে খুব বেশি একাকীত্ব অনুভব করতো।আরো মনে হতো, সহযোগীতা করার মত তার কেউ নেই।যে আসে তার কাছে, মন থেকে আসে না-আসে স্বার্থের জন্য।গত সাড়ে ছয় বছর ধরে পেয়ারা বানুর মধ্যে এই রোগের লক্ষ্মণগুলো দেখা যাচ্ছে।প্রথমদিকে এই লক্ষ্যণগুলো এত তীব্রাকারে ছিল না।ধীরে ধীরে এগুলো তীব্রাকার ধারণ করেছে।
((((((সোমাটােফ্রম ডিজঅর্ডারের লক্ষণ/উপসর্গ))))))
★মাথাব্যথা
★ শারীরিক দুর্বলতা
★ ক্লান্তি
★বুকব্যথা
★পিঠে ব্যাথা
★গিড়ায় ব্যাথা
★বমিভাব
★ পেটে অস্বস্তি
★হাত পা অবশ লাগা
★চোখে ঝাপসা দেখা
★কানে শব্দ হওয়া
★গলায় কিছু আটকে থাকার অনুভূতি
★শ্বাসকষ্ট
★হাতের তালু-পায়ের তালুতে জ্বালা-পোড়া
★খাওয়ার অরুচিবোধ
★পায়খানায় রাস্তায় ব্যাথা
★প্রসাবের রাস্তায় ব্যাথা
★যৌন মিলনের সময় ব্যাথা
★ঢোক গিলতে অসুবিধা হওয়া
★অলীক কিছু দেখা বা শুনা
★স্মৃতি লোপ পাওয়া
★চোখে দুইটা করে জিনিস দেখা
★মাঝে মাঝে অজ্ঞানের মত হওয়া
★অনিয়মিত অতিরিক্ত রক্তস্রাব
★যৌন চাহিদা কমে যাওয়া
উপরোক্ত উপসর্গগুলোর সবগুলোই একাধারে একজনের মধ্যে থাকে না।একজন ব্যক্তির মধ্যে একাধারে ৬-৮ টা উপসর্গ বিদ্যমান থাকে। এসব উপসর্গের স্থায়ীত্ব ৬ মাস বা তার বেশি সময় ধরে দেখা গেলে তা সোমাটাইজেশন ডিজঅর্ডার হিসেবে বিবেচিত হবে।
তবে উপসর্গ হিসেবে ব্যথার অবস্থান সবার প্রথমে। আবার অল্পবয়সীদের বেশি হয় পেটে ব্যথা, নারীদের ক্ষেত্রে বেশি হয় তলপেটে ব্যথা।
((((((((((সোমাটাইজেশন ডিজঅর্ডারের কারণ))))))))
√পারিবারিক ইতিহাস
√দীর্ঘমেয়াদী কোন শারীরিক বা মানসিক রোগ
√অতীতের কোন আঘাত
√নিম্ন স্তরের শিক্ষা
√সামাজিকভাবে কোন চাপের শিকার
√সমস্যা-পূর্ণ শৈশবের ইতিহাস
√অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা
√তিলকে তাল মনে করা
(((((((((((((এ রোগের ক্ষতিকর দিক))))))))))))))))))))
চিকিৎসা না করালে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব এবং সারাজীবনব্যাপী এর জন্য পস্তানো লাগতে পারে। এর সম্ভাব্য ক্ষতিকর দিকগুলো হচ্ছে --
★রোগীর ব্যক্তিগত,পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের স্বাভাবিকতা মারাত্মকভাবে ব্যহত হয়।
★বার বার ভুল অপারেশন ও ঔষধ প্রয়োগের কারণে অবস্থা জটিল থেকে জটিলতর হতে পারে।
★চরম আর্থিক ক্ষতি হয়।
★ক্ষেত্র বিশেষে ডিভোর্সের ঘটনাও ঘটে থাকে।
★অনেক সময় রোগী যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
(((((((((((((((((এ রোগের চিকিৎসা)))))))))))))))))))))
1)মেডিসিন
2)সাইকোথেরাপি
2-i)রোগীর মধ্যে যেসব ভ্রান্ত ধারণা থাকে কিংবা রোগীর আচরণগত কোন ত্রুটি থাকলে তা দূর করার জন্য Cognitive Behavioural Therapy ব্যবহার করা হয়। ।
2-ii)ট্রান্জেক্সনাল এ্যানালাইসিস করে রোগীর অতীত আর বর্তমান সম্পর্কে জানা যায়।
2-iii)বর্তমানের সাথে যাতে রোগী খাপ খেয়ে যেতে পারে, এর লক্ষ্যে রেশনাল ইমোটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি ব্যবহার করা হয়।
2-iv) মানসিক চাপ দূর করতে রোগীকে কাউন্সেলিং করা হয়।
2-v)রোগীকে Relaxation Training শেখাতে হয়।
2-vi)রোগীর পরিবারের সদস্যদের এ রোগ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা দেওয়া হয়, যাতে তারা রোগীকে এ ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করতে পারেন। একে বলে Family Therapy.
------ফৌজিয়া শারমীন হোসেন
অনার্স (মনোবিজ্ঞান),
এম.এস(কাউন্সেলিং মনোবিজ্ঞান),
সাইকোথেরাপি (ডি.এম.সি.এইচ,এন.আই.এম.এইচ, টি.এ,সি.বি.টি,টি.এস.সি,ডি.ইউ)
এস.এফ.এস.সি(লন্ডন)
(কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট ও সাইকোথেরাপিস্ট)
ঠিকানাঃ
মাইন্ডসেট সাইকোথেরাপি এন্ড কাউন্সেলিং সেন্টার
★★প্রধান শাখাঃ
৬৯/বি গ্রীনরোড,পান্থপথ(মনোয়ারা প্লাজা -৫ম তলা), ঢাকা-১২০৫।
(প্রতি মাসের ১ম,৩য় ও ৪র্থ সপ্তাহে রোগী দেখা হয়)
★★দ্বিতীয় শাখা ঃ
৫১/এফ হামিদ উদ্দিন রোড(কলেজ রোড)
কাচিজুলি, ময়মনসিংহ।
(প্রতি মাসের ২য় সপ্তাহে রোগী দেখা হয়)
Call for appointment :
01711345291,01991333503