13/07/2025
✰ রোগ ও প্রতিকার-প্রতিরোধ ➤ সিরিজ ➤ [07]
#🫁হাঁপানি ): একটি নীরব কিন্তু নিয়ন্ত্রণযোগ্য শ্বাসজনিত রোগ:
◑➤হাঁপানির সংজ্ঞা (Definition):
➤হাঁপানি হলো শ্বাসনালী (bronchial tube) এর একটি প্রদাহজনিত দীর্ঘমেয়াদি রোগ। এতে শ্বাসনালী ফুলে যায় এবং অতিরিক্ত স্নিগ্ধ পদার্থ (mucus) সৃষ্টি হয়, ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এটি বিভিন্ন সময়কালে বেড়ে যেতে বা হঠাৎ বাড়তে পারে, যাকে “Asthma Attack” বলা হয়।
➤ হাঁপানির কারণ ও উত্তেজক উপাদান (Triggers):
➤ প্রধান কারণ:
বংশগত বা জেনেটিক প্রভাব।
অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসা।
➤ উত্তেজক (Triggering) উপাদান:
ধরণ উপাদান
পরিবেশগত ধুলা, ধোঁয়া, ফুলের রেণু, ঠান্ডা বাতাস, বায়ুদূষণ
শারীরিক ব্যায়াম (Exercise-induced asthma), ভাইরাল সংক্রমণ
রাসায়নিক পারফিউম, ডিটারজেন্ট, পেইন্ট
খাদ্য কিছু খাবারে সংবেদনশীলতা (দুধ, ডিম, বাদাম ইত্যাদি)
ঔষধ NSAIDs, Aspirin
মানসিক উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা
◑➤হাঁপানির ধরণ (Types of Asthma):
➤ অ্যালার্জিক হাঁপানি – ফুলের রেণু, ধুলা ইত্যাদি থেকে হয়।
➤নন-অ্যালার্জিক হাঁপানি – ভাইরাস, আবহাওয়া, রাসায়নিক ইত্যাদিতে সংবেদনশীল।
➤ এক্সারসাইজ-ইনডিউসড অ্যাস্থমা – ব্যায়াম বা দৌড়ের পর শ্বাসকষ্ট।
➤অকুপেশনাল অ্যাস্থমা – কাজের পরিবেশে কিছু কেমিক্যালের কারণে।
➤ নাইটটাইম অ্যাস্থমা – রাতের বেলায় হাঁপানির উপসর্গ বৃদ্ধি পায়।
➤উপসর্গ ও লক্ষণ:
⇨বারবার শ্বাসকষ্ট হওয়া।
⇨বুকে বাঁশির মতো শব্দ (Wheezing)।
⇨বুকে চাপ, ভারী অনুভব।
⇨শুকনা কাশি (বিশেষ করে রাত বা সকালে)।
⇨দম আটকে আসা।
⇨ক্লান্তি, অস্থিরতা।
➤ পরীক্ষা ও নির্ণয় (Diagnosis):
⇨Spirometry Test – ফুসফুসের কার্যক্ষমতা পরিমাপ
⇨Peak Flow Meter – শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা নির্ণয়
⇨Allergy Test – সংবেদনশীলতা নির্ণয়
⇨X-ray/CT Scan – অন্য রোগ排除 করার জন্য
◼️ দুই ধরণের ইনহেলার:
➤রিলিভার (Reliever) তাৎক্ষণিক উপশম – যেমন: Salbutamol (Ventolin)
➤কন্ট্রোলার (Controller) দীর্ঘমেয়াদী নিয়ন্ত্রণ – যেমন: Budesonide, Fluticasone
◼️ অন্যান্য ওষুধ:
Montelukast (Singulair) – অ্যালার্জির জন্য।
Antihistamines – অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে।
Oral steroids – গুরুতর অবস্থায়।
◼️ প্রাকৃতিক ও বিকল্প পদ্ধতি:
➤হালকা ব্যায়াম (Yoga, Breathing Exercise)।
➤গরম পানির ভাপ।
➤মধু ও কালোজিরা (সহায়ক হিসাবে)।
◑➤ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা (Prevention Tips):
➤ধুলা-ময়লা, ধোঁয়া ও অ্যালার্জেন থেকে দূরে থাকা।
➤ নিয়মিত ইনহেলার ব্যবহার ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলা।
➤ ঠান্ডা আবহাওয়া ও ভাইরাল সংক্রমণ থেকে রক্ষা।
➤ ধূমপান থেকে দূরে থাকা (নিজে ও পরিবেশ)।
➤পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন ও ঘর-বাড়ি পরিষ্কার রাখা।
➤ মাস্ক ব্যবহার।
➤ব্যায়াম করার আগে ইনহেলার ব্যবহার।
➤"যখন আমি অসুস্থ হই, তিনিই আমাকে আরোগ্য দান করেন।"
— (সূরা আশ-শু'আরা, আয়াত ৮০)
➤রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
"হে আল্লাহ! আমাদের দেহের সুস্থতা দিন এবং আমাদের রোগ দূর করুন।"
— (তিরমিজি)
➤তিব্বে নববীর চিকিৎসা পদ্ধতিতে হাঁপানিতে সহায়ক:
⇨কালোজিরা মৃত্যু ছাড়া সব রোগের ওষুধ।
⇨মধু গলায় আরাম দেয়, প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
⇨জামবাজার পাতার ধোঁয়া বা বাষ্প – উপকারী (ঐতিহ্যবাহী ব্যবহার)।
➤হাঁপানি চিকিৎসাযোগ্য, লজ্জার নয়।”
সঠিক সময়ে চিকিৎসা, ইনহেলার ব্যবহার এবং জীবনধারার পরিবর্তনে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।