28/10/2021
এই যে এত "লো কার্ব ", "নো কার্ব " করেন, আপনি জানেন কি, এই "কার্ব" শব্দটার অর্থ কি ? কার্ব বা কার্বোহাইড্রেট কাকে বলে?
- কার্বহাইড্রেট মূলত ৩টি গুরুত্বপূর্ণ গ্রুপকে রিপ্রেজেন্ট করে,
১. সুগার ২. স্টার্চ ৩. ফাইবার
কিন্তু অনেকের ধারনা কার্ব মানেই সুগার। আবার অনেকেই মনে করেন, এটি কম খেলে অথবা না খেলেই চলে।
হ্যা, অবশ্যই কোন কিছু অতিরিক্ত ভালো না। আর বর্তমান বাজার রিফাইন কার্বের তৈরী খাবারে ভরপুর৷ সেগুলো এভয়েড করা জরুরী। রিফাইন ছাড়া শস্য জাতীয় কার্ব (whole grain) বাছাই করতে হবে, যেগুলো প্রকৃতি থেকে খুব কম প্রসেসিং এর মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। যেমনঃ লাল চাল, লাল আটা, ওটস, লাল চিড়া ও খই, লাল চালের মুড়ি ইত্যাদি। আরো আছে বার্লি, ভুট্টার ছাতু, কাওনের চাল, মিলেট শস্য ইত্যাদি । দুধ, কিছু ফল ও সবজিতেও কার্ব থাকে।
☢️ আবার ভাত-রুটিকে যারা শত্রু মনে করেন, আপনারা জানেন কি? এই ভাত রুটিতে কার্ব ছাড়াও অন্যান্য দরকারী ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকে?
জানেন, বাংলাদেশের কত ভাগ মানুষ কোন চালের ভাত খায়?
আরো জানেন, রিফাইন চাল থেকেও যত টুকু পুষ্টি উপাদান পাওয়ার কথা, ভাতের মার ফেলে দেয়ার কারনে সেটুকু থেকেও তারা বঞ্চিত?
➡️ তাই আগে জানুন, রিফাইন কার্ব কোনগুলো আর কেন এগুলো আমাদের জন্য ভালো নয়।
🚸🚸 আর আলাদা করে সংক্ষেপে যদি জানতে চান, সুগার কি আর কোন কোন খাবারে সুগার থাকে, তাহলে পুরো লেখাটাতে একবার চোখ বুলাতে পারেন।
♻️সুগারঃ
সুগার খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়ে ব্লাডে চলে যায়। তারাতারি শক্তি দেয়। অতিরিক্ত হলে বিপদ। আবার বিপদে কখনো সুগার জীবন বাঁচায়, যেমনঃ হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে সুগার একেবারে কমে গেলে।
আমরা খাবার থেকে দুভাবে এই সুগার পেয়ে থাকিঃ
✔️প্রকৃতি থেকে সরাসরি- দুধ ও ফল থেকে
✔️আর সুগার বা চিনি যোগ করা খাবার থেকে - মিষ্টি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার, জুস, বেকারির খাবার, ক্যান্ডি, চকোলেট, আইস্ক্রিম, সোডা বা সফট ড্রিংক্স ইত্যাদি।
আমাদের দেহে সুগার একই ভাবে শক্তি দিলেও, প্রকৃতি থেকে পাওয়া সুগারের সাথে ভিটামিন, খনিজ উপাদান, আর কখনো কিছু ফাইবার পাওয়া যায়।
সুগারের অনেক নামঃ
চিনি(sugar), গুর (molasses), মধু, ডেক্সট্রোস, ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ, ক্যান সিরাপ, কর্ন সিরাপ, নেকটার (agave necter)
⭕খাবারের লেবেলে এগুলোর কোনটি লেখা থাকলে বুঝে নিবেন, সেই খাবারে সুগার আছে।
সুগার এভয়েড করতে চাইলে আপনাকে সুগার যোগ করা খাবার গুলো এভয়েড করতে হবে সবার আগে। আর রিফাইন খাবারগুলো (রিফাইন্ড চাল, সাদা আটা ও ময়দার তৈরি খাবার , ইন্সট্যান্ট নুডুলস ও পাস্তা) এভয়েড করতে হবে।
♻️স্টার্চঃ
স্টার্চকে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট বলে৷ এটি হজম হতে সময় নেয়। ফলে রক্তের সুগার লেভেল ঠিক থাকে, খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে যায় না। এবং খুব তাড়াতাড়ি ক্ষিধেও লাগে না।
বিশেষ করে শস্যদানায় ভালো পরিমানে স্টার্চ পাওয়া যায়ঃ যেমন - লাল চাল, লাল আটা ও লাল আটা দিয়ে তৈরি খাবার, ব্রাউন পাস্তা, ওটস, লাল চিড়া ও মুড়ি ইত্যাদি।
এছাড়া আলু, কিছু সবজি ও ফলে পাওয়া যায়।
ডাল, বিচি জাতীয় সব্জিতে ভালো পরিমানে স্টার্চ থাকে।
♻️ফাইবারঃ
ফাইবারকেও কমপ্লেক্স কার্ব বলে। প্লান্ট সোর্স ছাড়া ফাইবার পাওয়া সম্ভব না। অর্থাৎ দুধ, মাছ, মাংস, ডিম থেকে ফাইবার পাওয়া যাবে না।
ফাইবার আমাদের দেহ ভাঙতে পারবে না। কিন্তু ফাইবার অত্যাবশ্যকীয় অর্থাৎ খেতে হবেই। কারন এর উপকার এককথায় বলে শেষ করা যাবে না। শুধু বলবো, যে কারনে মানুষ কার্ব খেতে চায় না, সেই কারনেই এই ফাইবার নামক কার্ব খেতে হয়।
✅ফাইবার শরীরে শোষণ না হলেও আমাদের হজম প্রক্রিয়ায় বিশেষ ভুমিকা রাখে।
✅যাদের ওজন বেশি তাদের জন্য ভালো।
✅যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রনে কাজ করে।
✅আবার যাদের কোলেস্টেরল বেশি বা লিপিড প্রফাইল ঠিক নেই, তাদের জন্যেও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে কাজ করে থাকে।
✅✅এককথায় বলা যায়, সুস্থ থাকতে হলে ফাইবার নামক কার্ব খেতে হবে।
একজন মানুষের প্রতিদিন ২৫ - ৩০ গ্রাম ফাইবার গ্রহন করা উচিত।
আর এই ফাইবার আছে শস্য জাতীয় খাদ্যে, চাল, আটা, ওটস, ডাল, বাদাম, বিচি জাতীয় সবজি, শাক, সবজি ও ফলে। বেশি ভালো পরিমানে পেতে হলে লাল চাল, লাল আটা, লাল চিড়া, মুড়ি, খই, মিল্লেট শস্য, ওটস, শাক এবং খাওয়া যায় এমন খোসা সহ সবজি ও ফল খেতে হবে।
☢️প্রতিদিন কতটুকু কার্ব খাবেনঃ
কতটুকু কার্ব খাবেন, তা নির্ভর করে - আপনার বয়স, কেমন কাজ করেন, ওজন, উচ্চতা, শারিরীক অবস্থার উপর।
কিন্তু আপনার প্লেট কেমন হবে এটা USDA নির্দেশ করে দিয়েছে। যা থেকে বোঝা যায় কার্ব কেমন খাওয়া উচিত।
সংক্ষেপেঃ
➡️আপনার প্লেটের অর্ধেক শাক/সবজি ও ফল থাকবে।
➡️চার ভাগের একভাগে থাকবে শস্য জাতীয় খাবার।
➡️অন্য চার ভাগের এক ভাগে থাকবে প্রোটিন। যেমনঃ মাছ, মাংস, ডাল, ডিম ও দুধ বা দই।
এখানে সবকিছুই ব্যাক্তির চাহিদার উপর নির্ভর করে। ফাইবার ও আরও বিশেষ কিছু সুবিধার জন্য নিয়মিত ও পরিমান মত ডাল খেতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। (শুধু বিশেষ কিছু অসুখে ডাল ও বিচি জাতীয় সবজি ও ফল খেতে নিষেধ করা হয়, যেমনঃ কিডিনির রোগ।)
বিঃদ্রঃ সময় স্বল্পতার কারনে অনেক কার্ব সমৃদ্ধ খাবার নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়নি। পরবর্তী কোন লেখায় তুলে ধরবো, ইনশাআল্লাহ!
ছবিঃ সংগ্রহীত, তাই ছবিতে কিছু বিদেশি খাবার আছে, যা আমাদের দেশে সচরাচর পাওয়া যায় না। তবে মনে হয়, যা বোঝাতে চেয়েছি, সংক্ষেপে তা বোঝাতে পেরেছি। 🙂
ধন্যবাদ।
- পুষ্টিবিদ রিজওয়ানা হোসেন।