11/09/2025
PLID বা ডিস্ক প্রোলাপ্স কি ভালো হয়? যে জেলিটা বের হলো সেটা কি আগের জায়গায় ফিরে যায়?
কোভিড-১৯ চায়নার যে উহান থেকে, সে এপিসেন্টার এর একটা গবেষণা ২০২৪ সালে এসেছে। তারা বলেছেন ৭৬% থেকে ৯০% রোগীর অপারেশন ছাড়াই PLID এর সরে যাওয়া ডিস্ক জায়গামত ফিরে যায় বা বের হওয়া জেলিটা আর বাইরে থাকে না [১]; তাহলে যে ডিস্ক প্রুট্রুটেড হলো বা এক্সট্রুডেড হলো সেটি কই গেছে? সেটি তো আর ভেতরে ফিরে যাবার জো নেই। উত্তর হলো, ডিস্কের ভেতর রক্ত চলাচল নেই, ডিস্ক ম্যাটেরিয়াল বের হয়ে গেলে সেটি বাইরে এক্সট্রা-ডুরাল স্পেসে থাকে, লংগিটিউডিনাল লিগামেন্টের আশে পাশে থাকে, বা ফ্যাসেটের আশে পাশে থাকে; সবগুলাতে রক্ত চলাচলের ব্যবস্থা আছে। শ্বেত রক্তকনিকা ঐ রক্তনালীর ভেতরের রক্ত থেকে বের হয়ে এ ডিস্ক ম্যাটেরিয়াল খেয়ে ফেলে (সুবহানাল্লাহ)! শুধু তাই নয়, মাইক্রোস্কোপিক এক্সামিনেশনে পাওয়া গেছে সে এনুলার ফিশার বা ডিস্কের গর্ত দিয়ে জেলি লিক হয়, সেটার মধ্য দিয়ে ডিস্কে প্রবেশ করে ঐ গর্ত মেরামত করে বন্ধ করতে কাজ করছে (ছবি কমেন্টে আছে)।
তাহলে, আমাদের কাজ কি? আমরা কিভাবে আল্লাহর এ বিশেষ নেয়ামতকে কাজে লাগিয়ে সুস্থ হবো?
১. রেস্ট ও পেসিং: PLID তে রেস্ট বা বিশ্রাম খুব জরুরি। প্রথম ৭-১০ দিন একেবারে বিছানা, হাই কমোড ব্যবহার, সংক্ষিপ্ত গোসল, বিছানায় খাওয়া। জানি, এটা পৃথিবীর সবচেয়ে বিরক্তিকর কাজ। এ বিশ্রাম প্লাস্টারের মত কাজ দিবে, শুইলে ডিস্কে প্রেসার পড়েই না, কাজেই শুয়ে থাকলে নতুন করে কোন প্রেসার যাবে না, আর এই রক্তকনিকা তার ডিস্কের বের হওয়া ম্যাটেরিয়াল খাওয়া (এংগাল্ফ), ও ডিস্ক মেরামতে কাজ করবে। ৭-১০ দিন পর থেকে ব্যথা প্রায় কমে যাবে, আপনি ধপ করে আগের কাজ ধরলে সেই লাউ সেই কদু। কারন কি? নতুন মাটি, পুতুল গড়ছেন, একটু টাইম দেন। এই টাইমটা হলো দেড় মাস। আপনি পেসিং করেন, কী জিনিস? আস্তে ধীরে কাজে ফেরা। আপনি অফিস করেন, কিন্তু ওখানে শোয়ার একটা ব্যবস্থা যেন থাকে। বসলে ডিস্কে সবচেয়ে বেশি প্রেসার। বসে ঝুকলে আরো বেশি। আর আমাদের ডেস্ক জবে এ কাজটাই বেশি। তাই, অফিসে ফেরার পর প্রথম সপ্তাহ ৩০ মিনিট কাজ ১০ মিনিট শোয়া=> আস্তে ধীরে এটা বাড়ানো ও দেড় মাসে দিনে অন্তত দুইটা শোয়া ব্রেক নেয়া। এভাবে ৩ মাসে ফুল আগের ফর্মে ফিরে গেলে হিলিং ও স্ট্যাবল হয়, আবার ডিস্ক প্রোলাপ্স এত দ্রুত ফিরে আসেনা। অনেকে শুধুমাত্র সঠিক পেসিং না করার জন্য অনেক ভালো ডাক্তারের চিকিৎসা, ইঞ্জেকশন, ফিজিওথেরাপি, সার্জারি সব কিছু করেও ভালো হচ্ছেন না, কাজেই ধীরে ধীরে নিয়ম মেনে কাজে ফিরতে হবে।
২. বেল্ট ব্যবহার ও কাইনেসিও ফোবিয়া: ডিস্ক প্রোলাপ্স এ বেল্ট পরা দরকার, তাও প্রথম দুই সপ্তাহে বসার সময় না হাটার সময়। কিন্তু কেউ কেউ এ বেল্ট বহুদিন পরেন। ডাক্তার সামনে ঝুকতে মানা করেছেন, সেটা সর্বোচ্চ ৩০ দিন। কিন্তু মাথায় এটা রাখলেন, সামনেই ঝুকেন না, দুইটাই খারাপ। বেল্টের ব্যবহার ও মুভমেন্ট করা না হলে মাসল শুকিয়ে যায় ও ডিসফাংশন তৈরি হয়, যা আবার নতুন করে অন্য লেভেলে ডিস্ক প্রোলাপ্স হবার কারন। কাজেই, ২ সপ্তাহ পর বেল্ট ফেলে দিন এবং ৩০ দিন পর মুভমেন্ট শুরু করুন। মুভমেন্ট ইজ মেডিসিন।
৩. ফিজিওথেরাপি: আমরা আল্লাহর প্রদত্ত এই ম্যাকানিজম কাজে লাগাই। ডিস্ক প্রোলাপ্স হবার পর আপনার পজিশন নির্বাচন, আস্তে আস্তে মুভমেন্ট ফিরে আসা আমরা ঠিক করি। কোন পজিশনে গেলে ডিস্ক আবার ভেতরে চলে যাবে, নেগেটিভ প্রেসার হবে, আমরা ঠিক করি, এমনকি ডিস্ক কোন দিকে বের হলো, আর আমরা কোন দিকে চাপ দিবো, এটাও আমরা করি। এটা সার্জারির সকল টেকনিক, শুধু কাটা-ছেড়া আর সেলাই হয়না। আর আমাদের সাহায্য করে ঐ রক্তকনিকা যারা ডিস্ক প্রোলাপ্স পরবর্তীতে ডিস্কের থেকে বের হওয়া ডিস্ক ম্যাটেরিয়াল বা জেলিকে খেয়ে সাফ করে দেয় ও প্রদাহ কমে যায়। এরপর আমাদের হাতের কাজে ডিস্কের রিপজিশনিং, মাসলে ম্যানুয়েল থেরাপি, ফ্যাসেটের স্পেস বাড়ানোর টেকনিক, নার্ভের উপর থেকে চাপ সরানো ও নার্ভকে নড়াচড়া করার টেকনিক, যে মাসল গুলো কাজ করেনি সেগুলোর শক্তি বৃদ্ধি করে ও যে মাসলগুলো স্পাজম হয়ে ছিল সেগুলোর ফ্লেক্সিবিলিটি, যেগুলো দূর্বল সেগুলোর স্ট্রেংদেনিং করে আমরা আল্লাহর ইচ্ছায় আপনাদের সুস্থ করি।
এখানে লাল বাতি বা IRR, ঝিকিমিকি বা TENS, আল্ট্রাসাউন্ড বা UST ঘষামাজা স্রেফ সাপোর্ট, থাকলে হেল্প হবে, না থাকলে ফিজিওথেরাপিস্ট এর হাত সার্জনের হাতের মতই সুনিপূন, যত জ্ঞান তত বেশি দক্ষতা!