08/09/2023
একটি হাদিস ও বর্তমানে রুকইয়াহতে বোনদের কেইজগুলোর সাথে এর সম্পর্ক (ধৈর্য সহকারে পড়ার অনুরোধ) :-
হে আমার মুসলিম বোন! ইসলামের সোনালী যুগে রুকইয়াহ শুধু ঝাড়ফুঁক তথা কুরআনের আয়াত ও দুআ পড়ে ফু দেওয়া এবং মৃদু আঘাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে এর ক্ষেত্র অনেক ব্যাপকতা পেয়েছে। বিশেষ করে জীবন ব্যবস্থার সাথে এর রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। যার ফলে আপনি শুধু রুকইয়াহ করেই যে সুস্থ হয়ে যাবেন এখন, বিষয়টা তা না। আপনাকে নিজের জীবনটা ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসতেই হবে। তা না হলে রুকইয়াহ আপনাকে সাময়িক উপকার দিলেও দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতি এবং তা এমন ক্ষতি যা পরকালে নতুন মাত্রা নিবে।
তাই একটি হাদিস যদি আপনি আমলে পরিণত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন এবং দুআ করে রব থেকে এই হাদিসের উপর আমল সহজ করার তরীকা জেনে নিয়ে আমল করে জীবন সাজাতে পারেন। তাহলে আশা করা যায় আপনি একদিকে যেমন সুস্থ হবেন অন্যদিকে আল্লাহর প্রিয় বান্দী হবেন ইন শা আল্লাহ।
হাদিসটি হলো;
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, ‘যে নারী-
১।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে;
২। রমজানের রোজা রাখবে;
৩। স্বীয় গুপ্তস্থানের হেফাজত করবে ( পর্দা রক্ষা করে এবং ব্যভিচার থেকে বিরত থেকে);
৪। স্বামীর আনুগত্য করবে।
এমন নারীদের জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (তিরমিজি ও তাবরানি)
১। পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে;
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- (হে আল্লাহর রাসুল!) আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় আমল কোনটি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘নামাজ’। (বুখারি ও মুসলিম)
উল্লেখিত হাদিস বর্ণনা প্রসঙ্গে বিশিষ্ট ইসলামি স্কলার আল্লামা মোল্লা আলি ক্বারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘এ হাদিসের মাধ্যমেই আলেমগণ ঈমানের পর নামাজকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে করেন।
হজরত আবু যর গিফারি রদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক সময় শীতকালে বাইরে তাশরিফ আনলেন। তখন গাছের পাতা ঝরার মওসুম ছিল। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গাছের একটি ডাল হাত দিয়ে ধরলেন। ফলে তার পাতা আরও বেশি ঝরতে লাগল।
অতঃপর তিনি বললেন, হে আবু যর! আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি উপস্থিত। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন-
‘মুসলমান বান্দা যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নামাজ আদায় করে, তখন তার থেকে পাপসমূহ ঝরে পড়ে; যেমন এ গাছের পাতা ঝরে পড়ছে। (মুসনাদে আহমদ)
২। রমজানে রোজা রাখবে;
রমজানকে কেন্দ্র করেই জিবরাইল আলাইহিসসালামের একটা বদদোয়া আছে, যে বদদোয়ার সঙ্গে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম -এর ‘আমীন’ আছে। স্থানটা ছিল মসজিদে নববি। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম ছিলেন মিম্ববের প্রথম ধাপে। জিবরাইল আলাইহিসসালাম বদদোয়া করে বসলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান পেল অথচ নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না, সে আল্লাহ তাআলার রহমত থেকে দূরে সরে যাক।’ আর আল্লাহর তাআলার রহমত-বঞ্চিত হওয়াটাকেই পরিভাষায় ‘গজব’ বা লানত বলা হয়। প্রতি উত্তরে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আমীন’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! কবুল করে নিন! (বাইহাকি, শুয়াবুল ঈমান ১৬৬৮)
অপর বর্ণনায় এসেছে, জিবরাইল আলাইহিসসালাম বলেছিলেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে রমযান পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম বলেন, তখন আমি বললাম, আমীন। (আলআদাবুল মুফরাদ ৬৪৬)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম বলেন,
আল্লাহ তাআলার কসম! মুসলমানদের জন্য রমযানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসে নি এবং মুনাফিকদের জন্য রমযান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসে নি। কেননা মুমিনগণ এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনীমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ। (মুসনাদে আহমদ ৮৩৬৮)
৩। স্বীয় গুপ্তস্থানের হেফাজত করবে ( পর্দা রক্ষা করে এবং ব্যভিচার থেকে বিরত থেকে);
পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত হয়েছে।
আর তোমরা অবস্থান কর তোমার বসবাসের গৃহে। নিজেদের মুর্খতার যুগের মহিলাদের মত প্রকাশ করো না। {সূরা আহযাব-৩৩}
এ আয়াত কি প্রকাশ করছে?
শুধু কাপড় চোপড় দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখাকেই যথেষ্ট মনে করবে না, বরং এমনভাবে পর্দা করবে যে, শরীরসহ কাপড়ও যেন পরপুরুষের সামনে প্রকাশিত না হয়। যেন কোন পরপুরুষের নজরই নারীর উপর নিবদ্ধ না হতে পারে। তবে প্রয়োজনের বিষয়টি ভিন্ন। তখন প্রয়োজনে বাহিরে যেতে পারবে।
অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}
বিখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী রহিমাহুল্লাহ উক্ত আয়াতের আলোচনায় বলেন, উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের কাছে কোনো প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ হলেন সকল মুমিনের মা। অথচ তাঁদের সাথেই লেনদেন বা কথা-বার্তা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে করতে বলা হয়েছে। তাহলে অন্যান্য সাধারণ বেগানা নারীদের ক্ষেত্রে হুকুমটি কত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত তা তো সহজেই অনুমেয়।
কয়েকটি হাদীস দেখা যেতে পারে-
হযরত আব্দুল খায়ের বিন সাবেত বিন কায়েস বিন শাম্মাস তার পিতা, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা এক মহিলা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেন। যাকে উম্মে খাল্লাদ বলা হয়। তিনি এমতাবস্থায় এলেন যে, তার চেহারা পর্দাবৃত ছিল। সে এসে তার নিহত সন্তানের ব্যাপারে অভিযোগ জানায়। তখন কতিপয় সাহাবী তাকে বলেন, “তুমি তোমার ছেলের ব্যাপারে অভিযোগ দাখিল করতে এসেছে, তারপরও তুমি পর্দাবৃত হয়ে এলে?” তখন উম্মে খাল্লাদ বলেন, যদিও আমার ছেলের উপর বিপদ এসেছে, এর মানেতো আমার লজ্জা শরমেরও বিপদ আসেনি। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৪৮৮}
হযরত উম্মে সালামা রদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, যখন কুরআনে কারীমের এ আয়াত
তথা “তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। [মাথার দিক থেকে]” -সূরা আহযাব-৫৯} নাজিল হয়, তখন আনসারী মহিলারা স্বীয় ঘর থেকে এমনভাবে বের হতো যেন তাদের মাথায় কাক বসে আছে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১০১}
হযরত মুফতী শফী রহিমাহুল্লাহ “আহকামুল কুরআন”গ্রন্থে লিখেন যে,
এ আয়াত একথা বুঝাচ্ছে যে, যুবতী মেয়েরা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এমনভাবে বের হবে যেন তাদের চেহারা পরপুরুষের সামনে প্রকাশিত না হয়। {আহকামুল কুরআন-৩/১৪৫৮}
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নারী জাতি হল আপাদমস্তক সতর। যখনি সে বের হয়, তখনি শয়তান তাকে চমৎকৃত করে তোলে। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১৭৩, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২০৬৫, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৬৮৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৫৯৮}
৪। স্বামীর আনুগত্য করবে
যেসব নারী স্বামীকে ভালোবাসে না ও স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞ নয়— আল্লাহ তাআলা ওই সব নারীদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন না। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ সেই নারীর প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন না, যে স্বামীর কৃতজ্ঞতা আদায় করে না। অথচ সে তার প্রতি মুখাপেক্ষী।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৯০৮৭)
আবু হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘(একবার) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করা হলো- কোন নারী উত্তম? তিনি বললেন, যার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে— সে স্বামীকে সন্তুষ্ট করে। স্বামী আদেশ করলে, তার আনুগত্য করে, এবং (স্ত্রী) নিজের ব্যাপারে ও তার ধন-সম্পদের ব্যাপারে যা স্বামী অপছন্দ করে, এমন কাজের মাধ্যমে স্বামীর বিরোধিতা করে না। (নাসায়ি, হাদিস : ৩২৩১)
হে আমার মুসলিম বোন! হয়তো জিন জাদুতে আক্রান্ত অবস্থায় নিজেকে নতুন করে সাজানো অনেক ভারী মনে হচ্ছে। কিন্তু মনে রাখবেন আপনার মতোই একজন আল্লাহর বান্দী যিনি ছিলেন সদ্য মা হওয়া একজন নারী এবং ছিলেন অনেক দিন অনহারে। কিন্তু তাঁর রবের প্রতি এতো আশা ও ঈমান এবং তাওয়াককুল ছিলো যে তিনি ঐ খালি পেটে সাফা মারওয়া ৭ বার সাই বা প্রদক্ষিণ করেছিলেন যা হাজিরা এখন অনেকে গাড়ি দিয়ে করে। তিনি হলেন মহীয়সী নারী হাযরত হাজেরা আলাইহিসসালাম। আল্লাহ তো পরে আমাদের দিয়েছিলেন জমজম যা আজও আছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে।
আপনি তো সেই নারীদের অনুসারী যিনি গর্ভবতী অবস্থায় স্বামীর জন্য খাবার নিয়ে রাতের আঁধারে পৌঁছে যেতেন হেরা পর্বতের গুহায়। আমাদের আম্মাজান খাদিজাতুল কুবরা রদিয়াল্লাহু আনহার কথা বলছি।
তাই সব জাহিলিয়াত ঝেড়ে ফেলুন, ইসলামকে আঁকড়ে ধরুন। শয়তানের দল পালাতে বাধ্য হবেই বিইযনিল্লাহ।
আল্লাহ আমল করার তাওফিক দান করুন আমীন।
(রেফারেন্স অংশ গুলো সংগ্রহীত)
©️ ফারহাত হোসাইন ভাই