28/08/2024
C H C P 👇
Community Health Care Provider.
প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা দানকারী বা সংক্ষেপ সিএইচসিপি।
বর্তমানে সিএইচসিপি দের নিয়ে অনেকেই ঈর্ষান্বিত। অনেকেই না জেনে না বোঝে অনেক সমালোচনা করে থাকেন। সিএইচসিপিরা মূলত ওয়ার্ড পর্যায়ে সাধারণ জনগণের মৌলিক অধিকার প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও জটিল রোগীদের রেফার নিয়ে ২০১১ সাল থেকে অদ্যবধি সুনামের সহিত কাজ করে আসছে। প্রতিটি ইউনিয়নে সরকার ৩টি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে এবং সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ার যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছে। সারা বাংলাদেশে প্রায় ১৪০০০ সিএইচসিপি আছে। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ১ জন করে সিএইচসিপি অফিস প্রধান হিসেবে নিয়োগ আছে। সিএইচসিপি দের সহযোগিতার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার
কল্যান বিভাগের ১জন স্বাস্থ্য সহকারী (HA) ও ১জন পরিবার কল্যান সহকারী (FWA) দায়িত্ব পালন করছেন।
বিগত সরকার ২০১০ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের RCHCIB প্রকল্পের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে ১৩৫০০ জনবল স্থানীয় ভাবে নিয়োগের জন্য দৈনিক সংবাদপত্র মাধ্যমে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেই সময় ১৪ তম গ্রেড হিসেবে যোগ্যতা চেয়েছিল এইচএসসি পাশ, বয়স ৩০, কম্পিউটার সার্টিফিকেট, চারিত্রিক সনদ, ইউনিয়ন পরিষদ কতৃক নাগরিক সনদ, পরীক্ষার ফি বাবদ চালান, নির্ভুল আবেদন ও ডাকটিকেট যুক্ত ফেরত খাম। সব কাইটেরিয়া মেনে আবেদন করা হয় এবং পর্যায়ক্রমে যাচাই-বাছাই করে কতৃপক্ষ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত করে প্রবেশ পত্র পাঠায় সঠিক আবেদনকারীদের। তারপর সারা বাংলাদেশে এক যোগে পরীক্ষা হয় এবং প্রতিটি পদের বিপরীতে ৩জন করে প্রার্থী ভাইবার জন্য মেধা ভিত্তিতে সিলেক্ট করা হয়। তারপর সিভিল সার্জন অফিসে ৫সদস্য বিশিষ্ট ভাইবা বোর্ডে প্রত্যেকের ভাইবা নেওয়া হয় এবং ভাইবা উত্তীর্ণ কারীদের শারীরিক পরীক্ষা করে ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। ফাইনাল নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার আগে পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়। সমস্ত কার্য যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী পালন করে তারপর সিএইচসিপি রা তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব ও প্রকল্প পরিচালক ডাঃ মাখদুমা নার্গিস স্যারের মাধ্যমে স্ব স্ব জেলা নিয়োগ পত্র হাতে পায় এবং ২৩/১০/২০১১ সালে নিজ নিজ জেলার সিভিল সার্জন অফিসে যোগদান করে। যোগদানের পর সিএইচসিপিরা চাকরির ৬ মাস মৌলিক প্রশিক্ষণ ও সরকারী নিয়ম শৃঙ্খলা বিষয়ক প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে নিজ নিজ ইউনিয়নের প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে যোগদান করে। বিগত ১৩ বছরে সিএইচসিপি রা কুমিল্লা বার্ডে রিফ্রেশার ট্রেনিং সহ অসংখ্য ট্রেনিং পেয়েছে।
প্রকল্প শেষ হওয়ার এক বছর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৩ সালে সিএইচসিপিরা রাজস্বের চিঠি পায় এবং তারা যেন চাকরি না ছাড়ে এবং অন্য কোন চাকরিতে না যায় সেজন্য বারবার প্রকল্প অফিস থেকে চিঠি ইস্যু করে। ২০১৪ সালে জুনের পর RCHCIB প্রকল্প থেকে কমিউনিটি ক্লিনিক ও জনবল উন্নয়ন খাতে CBHC তে সরকার স্থানান্তর করল। তারপর এসিআর, সার্ভিস বুক খোলা হল কিন্তু কোন কার্যক্রম আর হল না। তারপর সিএইচসিপি রা বাধ্য হয়ে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হল এবং হাইকোর্ট ২০১৫ সালে রাজস্বের পক্ষে রায় দিল। সরকার পক্ষ রাজস্বের বিপক্ষে আবার আপিল করল এবং ২০১৮ সালে সংসদে পাশ হওয়া স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাষ্টের অনুকলে জনবল রাজস্ব খাতে নেওয়ার জন্য বিচার বিভাগে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে আপিল বিভাগের রায় প্রদান করল। ২০১৮ সালে সিএইচসিপিরা বাধ্য হয়ে ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাব ও বিএমআরসি ভবনে একটানা ৪২ দিন আন্দোলন করেও কোন সফলতার মুখ দেখেনি সরকারের এক ঘেয়েমির কারনে। রাষ্ট্র প্রধানের বিরূপ মন্তব্যে ১৪০০০ সিএইচসিপি সেদিন চোখের পানি নিয়ে বাড়ী ফিরে এবং স্ব স্ব কর্মস্থলে যোগদান করে। তারপর একের পর এক চিঠি আর আশার বাণী শুনতে শুনতে সিএইচসিপি রা একপর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং আবার আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। একপর্যায়ে ট্রাষ্টি বোর্ড এবং CBHC নড়েচড়ে বসে এবং সিএইচসিপির ফাইল নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কাজ করে। কাজের অগ্রগতি যখন ভাল হচ্ছে না তখন সিএইচসিপিরা আবার আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নেয় ঠিক তখনই দেশে দ্বিতীয় স্বাধীনতার ডাক পড়ে যায় এবং সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। সরকার পদত্যাগের কিছুদিন পর সিএইচসিপি রা কর্মস্থল রেখে শাহবাগে রাজস্বের দাবীতে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ২য় দিনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বমন্বয়কদের মাধ্যমে আশ্বস্ত হয়ে এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাত করে দাবি জানিয়ে আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করে এবং স্ব স্ব কর্মস্থলে ফিরে এসে মহামারী বন্যা পরিস্থিতিতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। উল্লেখ্য সিএইচসিপি রা দীর্ঘ ১৩ টি বছর ধরে এক বেতনে এবং মারাত্মক বৈষম্যের শিকার। পৃথিবীর আর কোন দেশে ১৩ বছর ধরে এক বেতন আছে কি না আমার জানা নেই। এক পয়সা বেতন ও কোন সুযোগ সুবিধা বাড়ায়নি তৎকালীন স্বৈরাচার কর্মকর্তারা। করোনা মহামারী থেকে বন্যা সিএইচসিপি রা সর্বদা জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে।
অনেকেই না জেনে বিভিন্ন মন্তব্য করে ফেলেন, সিএইচসিপি রা কোন আউট সোর্সিং নিয়োগ প্রাপ্ত নয় তাই
এদের নিয়ে অযথা চুলকাবেন না, কারণ এরা আপনাদেরই কারো ভাই-বোন।🙏🙏🙏