
19/07/2017
প্রাণীজগতের খাদ্য অভ্যাস ও কিছু তথ্য:
মৈত্রেয়ী দেব রায়।
আপনি রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছেন।একটুকরো কাঁচা মাংসের দলা আপনার চোখে পড়লো।মাংসের গায়ে রক্ত লাগানো। মাছি ভনভন করছে। আপনার কি ইচ্ছা করছে? আপনার কি মাংসের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে?? রক্তের গন্ধে আপনার মস্তিকে আনন্দের শিহরণ হচ্ছে?? নাকি, আপনার বমি আসছে? যদি আপনার মস্তিষ্কে কাঁচা রক্ত মাংস আনন্দের অনুভূতি আনে আর তখন ই আপনার মাংস ছিঁড়ে খেতে ইচ্ছে হয়, তবে আপনি biologically মাংসভুক প্রাণী। যাকে বলা হয় Carnivores. আর যদি তা না হয়ে এর উল্টোটা হয় তবে আপনি শাকাহারী প্রাণী/ Herbivores. এটা তো গেলো psychological কথাবার্তা। এবার একটু শারীরতাত্ত্বিক দিকে যাই।
মাংসাশী ও শাকাহারী প্রানীদের শারীরিক গঠনে কিছু basic পার্থক্য থাকে। কি কি সেই পার্থক্য একটু দেখি:
১. নখ, দাঁত ও চোয়াল:
**মানুষের আংগুলের নখ নরম আর canine teeth গুলো ছোট। আর মাংসাশী জীবের থাবা ধারালো আর canine teeth গুলো প্রশস্ত। প্রশস্ত হওয়ায় এরা সহজে মাংস ছিঁড়তে পারে।
** এবার আসি চোয়ালের দিকে। মাংসাশী প্রাণীরা তাদের jaw/ চোয়াল শুধু উপরে ও নীচে নাড়াতে পারে। এভাবে চোয়াল নাড়ানোর ফলে মাংসকে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত করতে সুবিধা হয়। কিন্তু মানুষ ও অন্যান্য শাকাহারী প্রাণীদের চোয়ালের নাড়াচড়া কি কখনো খেয়াল করেছেন? তারা কিন্তু শুধু উপরে নীচে ই নয়, পাশাপাশি (side to side) ও চোয়াল নাড়াচড়া করতে পারে। এতে তারা সহজে সব্জিও খাদ্যশস্য পিছনের দাঁতের সাহায্যে ক্ষুদ্র কণায় (grind)পরিণত করে গলাধঃকৃত করার উপযোগী করতে পারে।
** মানুষসহ অন্যান্য শাকাহারীদের পিছনের molar teeth গুলো চ্যাপ্টাকৃতি থাকে। যার আঁশবহুল সবজি,ফল এরা সহজেই grind করতে পারে। অপরদিকে, মাংসাশী দের back molar কিন্তু flat নয়।
Dr. Richard Leakey নামক একজন স্বনামধন্য Anthropologist বলেছেন, " আমাদের সামনের দাঁতগুলো মাংস ছেঁড়ার জন্য মোটেই সুবিধাজনক নয়। আমাদের large canine teeth নেই এবং large canine teeth এর সাথে জড়িত খাদ্যসমূহ deal করার ও পুরো ক্ষমতা নেই"।
**শাকাহারী ও মাংসাশী প্রাণীদের আভ্যন্তরীণ শারীরিক গঠন / Physiology:
আমাদের পাকস্থলী (stomach) এর অম্লত্ব -ক্ষারত্বের ভারসাম্যের (Ph level) উপর আলোকপাত করছি।
** মাংসাশী জীব তাদের খাদ্য পুরোটা গলাধঃকরণ করে তাই তাদের পাকস্থলী এর Ph হয় অনেক বেশী মাত্রায় অম্লীয় (acidic). কিন্তু, আমাদের পাকস্থলী এর Ph লেভেল এতো বেশী মাত্রায় অম্লীয়/acidic না। কারণ, আধ- চিবানো শাকসব্জি/ ফল হজম করতে খুব বেশি শক্তিশালী অম্লের প্রয়োজন নেই।
** অন্ত্রের মাপ: মাংসাশী প্রাণীদের অন্ত্রের মাপ লম্বায় (length) এ ছোট। এতে সুবিধা হচ্ছে ভক্ষণ করা মাংস দ্রুত হজম হবে। আর এতে মাংস জনিত খাদ্য বিষক্রিয়া (food poisoning) হবে না। অপরদিকে মানুষের অন্ত্র লম্বায় অনেক বেশী (length is more).কারন, আমরা উদ্ভিদজ যে খাদ্য আঁশ গ্রহন করি তা ভেংগে (brek down) খাদ্য পুষ্টি (nutrient) শোষণ (absorption) হতে কিছু বেশি সময় দরকার হয়।
মাংস জাতীয় খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে ব্যাক্টেরিয়া/ অণুজীব থাকে।যদি অন্ত্র length এ বড় হয় তবে তারা প্রজনন করার জন্য (multiply) অতিরিক্ত সময় পায়, যা থেকে বিভিন্ন পেটের সমস্যা সহ আন্ত্রিক ক্যানসার (colonic carcinoma) পর্যন্ত হতে পারে। আর বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে পাওয়া গেছে colonic cancer এর হার meat eater দের অনেক বেশি।
**অতিরিক্ত প্রোটিন ও তার শারীরিক প্রভাব:
মাংসাশী প্রাণী যাদের খাদ্য ই মাংস তাদের কিন্তু এই মাংস খাওয়ার ফলে রক্তচাপ/ অন্যান্য রোগব্যাধি হয়না।কিন্তু মানুষের শরীরে, মাংসে উপস্থিত saturated fat আর cholesterol এর ফলে অনেক রোগ হয়।
পরীক্ষায় দেখা গেছে একজন মানুষ রোজ যা মাংস খায় তার চেয়ে ২০০ গুণ বেশী মাংস যদি মাংসাশী প্রাণীরা খায়, তাও তাদের হৃদরোগ অথবা স্ট্রোক হয় না। কারণ, মানুষের দেহ প্রাণীজ মাংসের জন্য উপযোগী নয়। তাই কেউ যদি অতিরিক্ত মাংস খান অবশ্য ই তার হৃদরোগ সহ বিভিন্ন অসুখ হবে। American Heart Foundation এর তথ্যানুযায়ী, শাকাহারী দের তুলনায় মাংসাহারি মানুষের হৃদরোগের হার ৩২% বেশী।
যখন আমরা রোজ খাবারে মাংস রাখি আমরা আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় দ্বিগুণ প্রোটিন গ্রহণ করি।যার ফলে আমাদের হাড়ের ক্ষয় রোগ, কিডনীতে পাথর সহ নানা রকম অসুখ হয়। প্রানীজ প্রোটিন আমাদের রক্তে অম্লত্বের পরিমাণ বাড়ায়।তখন রক্তে অম্লত্ব ক্ষারত্বের সাম্যাবস্থা রক্ষার্থে ক্যালসিয়াম আমাদের হাড় থেকে রক্তে নি:সরিত হয়। আর ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড়ে ক্ষয় রোগ হয়।যাকে osteoporosis বলে। আর সেই ক্যালসিয়াম যখন অতিরিক্ত পরিমাণে কিডনি দিয়ে excreted (বের) হয়, তখন কিডনীতে পাথরসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়।এমনকি কতিপয় কর্কট রোগের (colonic, breast, prostate cancer etc) সাথে প্রাণীজ প্রোটিনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গিয়েছে।
মানুষের মনস্তাত্ত্বিকতা: (Human psychology)
আমরা মানুষেরা মাংসাশী প্রাণীর মত কোন প্রাণী হত্যা করার সময় তার চিৎকারে , তার রক্ত/ কাঁচা মাংসের গন্ধে পুলকিত হইনা।
ধন্যবাদ সবাইকে।
(বিভিন্ন তথ্যাদি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে)