Health & Fitness and Sex Therapy

Health & Fitness and Sex Therapy স্বাস্থ্যই সুখের মূল

**নিষিদ্ধ প্রেম – পর্ব ৫****লেখা: সুমু**\ #নিষিদ্ধ_প্রেম  #সমাজ_ও_ভালোবাসা  #সুমুর_কলমেসন্ধ্যার আলো যখন ঝিমিয়ে আসে, তখন ...
05/08/2025

**নিষিদ্ধ প্রেম – পর্ব ৫**
**লেখা: সুমু**
\ #নিষিদ্ধ_প্রেম #সমাজ_ও_ভালোবাসা #সুমুর_কলমে

সন্ধ্যার আলো যখন ঝিমিয়ে আসে, তখন শহরের ব্যস্ত রাস্তার এক কোণায় দাঁড়িয়ে থাকে মেয়েটি। যার চোখে আজ নতুন এক দীপ্তি, ভেতরে লুকানো আত্মবিশ্বাস। একসময় এই চোখেই ছিল ক্লান্তি, হতাশা আর অন্ধকার। আজ তার জায়গায় জেগেছে সাহস, প্রত্যয় আর একটা নীরব বিদ্রোহ।

তিথি আজ আর কেবল 'একজন পতিতা' নয়। সে এখন বই পড়ে, খবর দেখে, সমাজের গতিপথ বোঝে। ‘সেবার সময়’ শেষ করে সে এখন ছোট্ট একটা ছাত্রীকে পড়ায় – নাম রেখেছে অনন্যা, যার বাবা-মা নেই। তিথি চায়, ও যেন আর কখনো এমন কোনো গলির মুখে না আসে, যেখান থেকে সে এসেছিল।

তার প্রেমিক আরিয়ান এখনো আশপাশেই থাকে, কিন্তু সম্পর্কটা একতরফা নয় আর। আরিয়ান তার পেছনে দাঁড়ায়, তিথির পাশে থাকে—তবে সামনে থেকে পথ দেখায় না। তিথির আত্মমর্যাদা যেন না হারায়, সেই হিসেবেই সে এগোয়।

আজ ‘আলোর গলি’ নামের একটা ছোট এনজিওর সদস্য হয়েছে তিথি। যেখান থেকে সে এক সময় গা ঢাকা দিত, আজ সেখানেই দাঁড়িয়ে মুখ খুলে বলে—
"হ্যাঁ, আমি একসময় পতিতালয়ে ছিলাম, কিন্তু এখন আমি নিজেকে অন্যভাবে সংজ্ঞায়িত করি। আমি একজন মানুষ, একজন স্বপ্নদ্রষ্টা।"

তিথির ভিতরের মেয়েটা যেন আজ চিৎকার করে বলে—
ভালোবাসা কেবল যৌনতা নয়, কেবল কাছের শরীর নয়। ভালোবাসা একটা হাত ধরা, একটা দৃষ্টি দেওয়া, একটা নিরব স্বীকৃতি—‘তুমি মানুষ’ বলে।

তিথি জানে, সে হয়তো কোনোদিন সমাজের সবার মন জয় করতে পারবে না। কিন্তু সে নিজেকে জয় করে ফেলেছে। সেটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

তাই আজ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে, সে শুধু নিঃশব্দে বলে ওঠে—
"আমি নিচু ছিলাম না কখনও, শুধু কারও চোখে আমি ছিলাম ‘কম’।
এখন আমি নিজেকে দেখি, আর দেখাতে পারি—আমি 'পূর্ণ'।"

(চলবে)

** #অস্তিত্ব**(পর্ব ৩৩) আয়নার সকালগুলো এখন আর আগের মতো ছায়ায় ঢাকা থাকে না। প্রতিটি সকাল যেন একেকটা নতুন শুরু। তবে এই নতু...
05/08/2025

** #অস্তিত্ব**(পর্ব ৩৩)

আয়নার সকালগুলো এখন আর আগের মতো ছায়ায় ঢাকা থাকে না। প্রতিটি সকাল যেন একেকটা নতুন শুরু। তবে এই নতুন শুরুর পেছনে কত রাতের অন্ধকার, কতটা চোখের জল, কতটা হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা, সেটা বোঝে শুধু সে নিজে। ‘আলোকছায়া’র প্রজেক্টে যুক্ত থাকা মেয়েরা এখন কেবল কর্মী নয়, তারা যেন একেকজন যোদ্ধা, একেকজন আলো ছড়ানো দীপ্ত মুখ।

সেদিন সকালবেলা একটি বালিশ হাতে নিয়ে নিশা ছুটে এলো আয়নার ঘরে। মেয়েটার মুখে উচ্ছ্বাস, চোখে আগুনের ঝিলিক। সে জানালো—আলোকছায়ার প্রথম ব্যাচের একজন, রুহি, এবার একটি জাতীয় শিল্প প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। তার আঁকা ছবিতে ছিল নিজের জীবনের গল্প—একটা ভাঙা বাড়ি, পেছনে কুয়াশায় ঢাকা মুখ, সামনে উজ্জ্বল সূর্যের দিকে হেঁটে যাওয়া এক মেয়ে। আয়না অনেকক্ষণ ধরে ছবিটা দেখেছিল, চোখ ভিজে উঠেছিল নিজের অজান্তে।

এদিকে প্রজেক্টের বাইরেও আয়নার কাজ বিস্তৃত হচ্ছে। সে এখন কিছুটা পরামর্শকের ভূমিকায় কাজ করছে শহরের বিভিন্ন এনজিও-তে, মেয়েদের সুরক্ষা, পুনর্বাসন এবং মানসিক সহায়তা নিয়ে। আগের দিনের কাঁপা কণ্ঠস্বর আজ দৃঢ়। সে বুঝে গেছে—তার গল্পই তার শক্তি, তার অস্তিত্বই তার পরিচয়।

তবে জীবনের পেছনের অধ্যায় কি কখনো পুরোটাই ফেলে দেওয়া যায়? এক দুপুরে হঠাৎ করেই হাজির হলো পুরনো এক পরিচিত—শাওন। তার চোখে ক্লান্তি, ঠোঁটে নীরবতা। সে কিছুই বলে না, শুধু আয়নার দিকে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। আয়নার বুকের ভেতর কাঁপে, কিন্তু মুখে আসে শান্ত ভঙ্গি। সে জানে, এই পুরনো ছায়াগুলোকেও সম্মানের সঙ্গে বিদায় দিতে হয়—ক্ষমা করে, দূরে রেখে।

রাতে আয়না চুপচাপ বসে লেখে তার জার্নালে—"আজও আমি ভয় পাই, কিন্তু ভয়টাকে থামিয়ে রাখি। আমি জানি, আমি এখন আর একা নই। আমার চারপাশে ছড়িয়ে আছে কিছু মেয়ের হাসি, চোখের জল, সাহস—আমার নিজের তৈরি এক সংসার। আমি জানি, আমি বেঁচে আছি।"

---

**লেখকঃ সুমু**
** #অস্তিত্ব #আলোকছায়া #নারীশক্তি #বেঁচে_থাকার_গল্প **

---

**“চাঁদের মেয়ে আর নদীর ছেলে”** **পর্ব ৯** ---**পর্ব ৯**✍️ লেখক: সুমু\ #চাঁদের_মেয়ে_আর_নদীর_ছেলে  #জলের_মায়া  #অতীত_রহস্য...
04/08/2025

**“চাঁদের মেয়ে আর নদীর ছেলে”** **পর্ব ৯**

---

**পর্ব ৯**
✍️ লেখক: সুমু
\ #চাঁদের_মেয়ে_আর_নদীর_ছেলে #জলের_মায়া #অতীত_রহস্য #রহস্যময়_ভালবাসা #সুমু

অনির্বাণ এখন আর শহরের মানুষ নয়। তার চোখে এখন নদীর ঢেউয়ের গভীরতা, তার কানে বাজে জলের ভেতরকার আত্মার কান্না। শহর থেকে আসা গবেষক অনির্বাণ এখন নদীর প্রেমিক। তার দিনের শুরু হয় নদীর ঢেউয়ের শব্দে, আর রাত শেষ হয় এক অপার্থিব ঘ্রাণে ভেসে আসা সেই সাদা ফুলের স্বপ্নে।

সে বুঝে গিয়েছিল, যে মেয়েটি তার দিকে তাকিয়ে ছিল — সে রক্তমাংসের মানুষ নয়। সে কোনো গল্প, কোনো কবিতা নয়। সে এক আত্মা — যে থেকে গেছে সময়ের বাইরে, নদীর স্রোতের গভীরে। কিন্তু কেন? তার অপেক্ষা কিসের?

অনির্বাণ খোঁজ নিতে শুরু করে লোকাল কাহিনি, বুড়ো মাঝিদের মুখে শোনা যায়— বছর কুড়ি আগে এক মেয়ে ছিল এই গ্রামে। চন্দ্রিণী। বিয়ে ঠিক হয়েছিল, কিন্তু বিয়ের আগের রাতে সে হারিয়ে যায় নদীর জলে। কারও কাছে সে আত্মহত্যা, আবার কারও মতে ও ছিল জলপরী — ভালোবেসেছিল নদীর এক পাথুরে ছেলেকে। যে ছিল নিঃশব্দ, তবু হৃদয়ের গভীরে স্পন্দিত।

লোকাল পুরোহিত বলেছিল, চন্দ্রিণীর আত্মা ফিরে ফিরে আসে। প্রেমে বাঁধা পড়া আত্মা কখনো মুক্ত হয় না — নদীর মতই তারও নেই কোনও দিক, নেই কোনও অন্তিম গন্তব্য।

অনির্বাণ ঠিক করে সে থেমে থাকবে না। সে নদীর ঘাটে সেই পুরোনো পোড়োবাড়িটা খুঁজে পায় — যেখানে একদিন চন্দ্রিণী বসে নদী দেখত। দেয়ালের উপর এখনও অক্ষয় হয়ে আছে তার হাতের লেখা —
“আমি ফিরে আসব, যদি কেউ জলের ভাষা বোঝে…”

অনির্বাণের বুক কেঁপে ওঠে। সে এবার আর শুধু গবেষক নয়, সে একজন প্রত্যাবর্তনের দোহাই হয়ে উঠেছে। তার হৃদয় এক অচেনা আকর্ষণে ডুবে যাচ্ছে — কোনো অজানা অতীতের সাথে নিজের আত্মার মিল খুঁজে পেতে চায়।

এক রাতে, পূর্ণিমার আলোয়, অনির্বাণ নদীতে নামে। সে নদীর মাঝে গিয়ে দাঁড়ায়, হাত বাড়িয়ে দেয় —
"তুমি কি সত্যিই আছো, চন্দ্রিণী?"

জলের উপর যেন আলো নেমে আসে। ঝিরঝিরে বাতাসে বেলি ফুলের ঘ্রাণ ভেসে আসে। সামনে জলের ফেনার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে সেই মেয়েটি। এবার তার মুখ স্পষ্ট — চন্দ্রিণী। চোখে জল, ঠোঁটে হালকা হাসি।

সে এগিয়ে আসে, হাত রাখে অনির্বাণের বুকে। ঠাণ্ডা, অথচ জ্বলন্ত।

তার ঠোঁট নড়ে না, কিন্তু অনির্বাণ শুনতে পায়—
"তুমি… ফিরেছো… বহু জন্ম পরে। আমি তো অপেক্ষা করেছি… শুধু তোমার জন্য।"

অনির্বাণের চোখ ভিজে যায়, সে জানে না কেন। যেন এই বুকে সেই কথা আগে কেউ বলেছিল। হয়তো অন্য কোনো জন্মে, অন্য নদীর ধারে, অন্য শরীরের ভেতরে।

চাঁদের আলোয় তারা দাঁড়িয়ে থাকে, নিঃশব্দে। দুই আত্মা, দুই জীবন, এক নদীর পাড়ে।

---

**পরবর্তী পর্বে:**
চন্দ্রিণী কি কেবল আত্মা? নাকি তাদের মিলনের পর ভিন্ন কিছু ঘটবে? অনির্বাণ কি পারবে তার ভালোবাসাকে পুনর্জন্ম দিতে?

**নিষিদ্ধ প্রেম****পর্ব ১২****লেখা: সুমু**** #নিষিদ্ধ_প্রেম  #আলোর_পথে  #সমাজ_বদলে_যায়  #সুমুর_গল্প**আলো একবার জ্বলে উঠল...
04/08/2025

**নিষিদ্ধ প্রেম**
**পর্ব ১২**
**লেখা: সুমু**
** #নিষিদ্ধ_প্রেম #আলোর_পথে #সমাজ_বদলে_যায় #সুমুর_গল্প**

আলো একবার জ্বলে উঠলে তার দিকে ছুটে আসে অন্ধকার। মেয়েটির পাঠশালা ‘আলোকপাঠ’ যেন ঠিক তেমনি এক আলোর উৎস হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সমাজ, যাদের মূখে শুদ্ধতার মুখোশ—তারা যে অন্ধকারকেই আপন করে রেখেছে।

সকালবেলা ক্লাস শুরু হতেই মেয়েরা এসে জানায়, পাশের বাড়ির এক বৃদ্ধ এসে হুমকি দিয়েছে—“এইসব নষ্ট মেয়েরা এলাকায় থাকলে, আমাদের ছেলেমেয়েরা নষ্ট হবে। শিক্ষার নামে চরিত্র বিনষ্টের পাঠশালা চলছে এখানে!”

মেয়েটি মাথা নিচু করে না। সে জানে, সমাজের মুখোশ খুলে দিতে হলে নিজেকে আগুনে পোড়াতে হয়। সে এক জরুরি সভা ডাকে—আলোকছোঁয়ার সব মেয়ে, স্বেচ্ছাসেবক আর তার প্রেমিক ছেলেটি—সবাই মিলে বসে।

প্রেমিক ছেলেটি বলে, “আলোকপাঠ যদি আজ বন্ধ হয়ে যায়, তবে তুমি নয়—পরাজিত হবে ভবিষ্যৎ।”

মেয়েটি সেদিন রাতে জানালার পাশে বসে চিঠির মতো কিছু শব্দ লেখে—
“আমরা যারা বিক্রি হইনি, তারা কেনো বারবার প্রমাণ দিতে যাই যে আমরা মানুষ? সমাজ কি আমাদের স্বীকৃতি দেবে, না কি কাঁটা ছুঁড়ে রক্ত ঝরাবে?”

পরদিন সকালেই মেয়েটি তার নতুন অস্ত্র নিয়ে হাজির হয়—একটি প্রকাশনা, ‘আমার নাম পতিতা ছিল।’
এই বইটিতে সে তুলে আনে নিজের জীবনের সব অন্ধকার, শোষণ, প্রেম, জেদ আর নতুন করে গড়ে তোলার যন্ত্রণা। বইমেলায় সেটি প্রকাশ হয়, আর কিছু গণমাধ্যমে রিভিউও ছাপা হয়। সমাজ চোখ বড় করে তাকায়—যে মেয়েকে তারা ঘৃণা করতো, সেই মেয়ে আজ ‘লেখিকা’?

‘আলোকপাঠ’-এর সামনে সেই অশালীন দেয়ালচিত্র একদিন সাদা রঙে ঢেকে দেওয়া হয়। পাশের বাড়ির এক কিশোর এসে দেয়াল লিখে—
“আমার মা আমাকে নিয়ে আজ এখানে পড়তে আসে। এই স্কুল আমাকে ভয় শেখায় না, আশা শেখায়।”

মেয়েটি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদে—তবে এবার লজ্জা বা বেদনায় নয়। এ এক গর্বের কান্না। তার ভালোবাসা আজ কেবল প্রেমিকের নয়—সমগ্র মানবতার হয়ে উঠেছে।

কিন্তু অন্ধকার কি এতো সহজে হেরে যায়?

একদিন গভীর রাতে মেয়েটির পাঠশালায় আগুন লাগে। কেউ আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়। ছাই হয়ে যায় বই, খাতা, দেয়ালের ছবি, স্বপ্ন। মেয়েটি ছুটে যায়, পুড়ে যাওয়া কাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকে, চোখে জল নয়—লাল হয়ে ওঠা চোখে আগুন।

সেই রাতে সে ঘোষণা দেয়—
“আমরা আর পাঠশালা বানাবো না। এবার আমরা বানাবো এক প্রতিষ্ঠান—যেখানে শুধু মেয়েরা নয়, সমাজ নিজেকে শেখে কীভাবে মানুষকে মানুষ বলে ভাবতে হয়।”

তারপর শুরু হয় ‘আলোকবিন্দু’—এক সামাজিক সংগঠন, যেখানে সাবেক যৌনকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় আইনি সহায়তা, সমাজকল্যাণ, সেলাই-কর্ম, লেখালেখি ও মানসিক চিকিৎসার জন্য। মজার ব্যাপার, প্রথম দাতা হয় সেই সাংবাদিক, যে একসময় মেয়েটির সাক্ষাৎকার নিয়েছিল।

তাদের ভালোবাসা ধীরে ধীরে সমাজের সবচেয়ে শক্ত দেয়ালটিকে চূর্ণ করে দেয়—‘ঘৃণা’।
একদিন এক মেয়ে এসে জড়িয়ে ধরে মেয়েটিকে বলে—“আপনার জন্য আমি আজ শুধু একজন মা না, একজন সম্মানিত কর্মী।”

মেয়েটি আজ আর ‘পতিতা’ নয়—সে এক পথপ্রদর্শক। প্রেম তার জীবনে আশ্রয় ছিল, কিন্তু সংগ্রাম তার পরিচয়।

---চলবে

** #অস্তিত্ব — পর্ব ৩৯****লেখা: সুমু**আলোকছায়ার উঠোনে বসে থাকা মেয়েগুলোর হাসিতে আজকাল একটা ছায়া নেই। যেন কষ্টগুলো সত্যিই...
04/08/2025

** #অস্তিত্ব — পর্ব ৩৯**
**লেখা: সুমু**

আলোকছায়ার উঠোনে বসে থাকা মেয়েগুলোর হাসিতে আজকাল একটা ছায়া নেই। যেন কষ্টগুলো সত্যিই রঙ হারাতে শুরু করেছে, কিংবা তাদের শরীরের ভাষা, চোখের গভীরতা নতুন কোনো ব্যাখ্যা দিচ্ছে সমাজকে। এই উঠোন এখন আর শুধুই নির্জন নারীত্বের আশ্রয় নয়, এটা এক বিশাল বদলের সূচনা কেন্দ্র। যেখান থেকে প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে নতুন গল্প, নতুন পথচলা।

একদিন সকালে আয়নার ডাক পড়ে জেলা প্রশাসকের অফিসে। অনেক নারীর জীবন বদলের উদ্যোগের জন্য তাকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হবে—‘উদীয়মান সমাজপ্রত্যাশী নারী’ খেতাব। এই প্রাপ্তি কেবল আয়নার একার নয়, এ এক সংগ্রামী জীবনদের প্রতীকীকরণ। আয়না যখন সেই অনুষ্ঠানে যান, তার পরনে থাকে সাদা-মরুন শাড়ি, কপালে একটা বিন্দু টিপ, আর হাতে চুড়ির ঝমঝম। কিন্তু তার হাসিতে ছিল না কোনো গর্ব—ছিল বিনয়, মাথা নিচু করে উঠে আসা আত্মসম্মান।

মঞ্চে উঠে আয়না যখন বক্তব্য দেয়, তখন সবাই চুপ। সে বলে না তার জীবন গল্প, বরং বলে—

*"আপনারা আজ আমাকে সম্মান দিয়েছেন, কিন্তু আমি আজও সেই মেয়েটির সম্মান ফেরত দিতে পারিনি, যাকে রাস্তায় দেখে আপনারা মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন। এই যে সমাজ আমাকে আজ পুরস্কৃত করছে, কালও যদি আমি পুরোনো পেশার কথা বলি, মুখ ফেরাবেন না তো?"*

এই প্রশ্নে অনুষ্ঠানে নীরবতা নেমে আসে, কিন্তু তারপর সেই নীরবতা ভেঙে পড়ে এক নারীর হাততালিতে। ধীরে ধীরে সেই হলজুড়ে শব্দ ওঠে, একটা সমাজের বিবেক যেন একটু নড়েচড়ে বসে।

এদিকে রাত্রি, বিলকিস, জেবুন্নেছা, লীনা—সবাই মিলে তৈরি করছে আলোকছায়ার নিজস্ব পণ্যের ব্র্যান্ড। নাম—**"আলো ও ছায়া"**। হ্যান্ডমেইড সাবান, নারকেল তেল, সেলাই করা ব্যাগ, হাতে লেখা পত্রিকা—সব মিলিয়ে তারা এবার অনলাইনেও পা রাখছে। আয়না এর ফেসবুক পেজ চালু করে দেয়, যেখানে প্রতিদিনের গল্প, পণ্যের ছবি আর মেয়েদের কণ্ঠধ্বনি তুলে ধরা হবে।

একদিন বিকেলে আয়না হাঁটতে বের হয়। হঠাৎ করেই সে পেছন থেকে একটা কণ্ঠস্বর শুনতে পায়—"আপনি আয়না, না?" ঘুরে দাঁড়াতেই এক তরুণী, চোখে চশমা, হাতে মোবাইল। মেয়েটি বলে—"আপনার লেখা পড়েই আমি সাংবাদিক হতে চেয়েছি। আপনাদের নাটক নিয়ে রিপোর্ট করতে চাই।"

আয়নার চোখ চিকচিক করে ওঠে। এই প্রথম সে দেখে, তার গল্প অন্য মেয়ের জীবন বদলে দিয়েছে।

‘নিষিদ্ধের আলো’ নাটকটা মঞ্চে উঠেছে স্থানীয় থিয়েটার হলে। প্রথম শোতেই দর্শক ঠাসা। মেয়েরা নিজের গল্প নিজে বলে, কোনো লুকোচুরি নয়। বিলকিস যখন তার নির্যাতনের রাতের বর্ণনা বলে, হল নিঃশব্দ। রাত্রি যখন বলে—"আমার শরীরকে হাজারবার ভেঙেছে, কিন্তু আমার স্বপ্ন একটাবারও না,"—তখন দর্শকদের চোখের কোণে জল।

নাটকের শেষে আয়না মঞ্চে উঠে দাঁড়ায়। বলে—

*"আমরা বাঁচতে শিখেছি, কারণ মৃত্যুর ঠিক আগে একটুকরো আশ্রয় পেয়েছিলাম। সে আশ্রয়ের নাম—‘আলোকছায়া’। আপনাদের সমাজ যদি এই আশ্রয়কে বর্জন করে, তাহলে আরও কত মেয়েকে কবর থেকে ফেরাতে হবে!"*

হলজুড়ে দাঁড়িয়ে পড়া শ্রোতারা তখন কেবল একজন আয়নার জন্য নয়, পুরো নারীত্বের মুক্তির জন্য হাততালি দেয়।

সেই রাত আয়নার ঘুম আসে না। তার মাথার পাশে রাখা থাকে একটা ডায়েরি। সে লেখে—

*"একদিন আমি নিজেকে ঘৃণা করতাম, কারণ সমাজ তাই শিখিয়েছিল। আজ আমি নিজেকে ভালোবাসি, কারণ নারীর ভিতরেই লুকিয়ে থাকে সমাজ বদলের সবথেকে বড় শক্তি।"*

সেই ডায়েরির পাতাগুলো হয়তো কখনো প্রকাশিত হবে না, কিন্তু প্রতিটি শব্দে লেখা থাকবে একটি অসম্ভব থেকে উঠে আসা জীবনের যাত্রা। যে জীবন কখনো নিষিদ্ধ ছিল, আজ সে আলোয় দাঁড়িয়ে সমাজের চোখে চোখ রেখে বলছে—"আমি আছি, আমি থাকবো, এবং আমি বদলে দেবো।"

** #অস্তিত্ব #আলোকছায়া #নারীমুক্তি #নিষিদ্ধেরআলো #আয়নারডায়েরি #সুমু**
**চলবে…**

**“চাঁদের মেয়ে আর নদীর ছেলে”** গল্প **পর্ব ৮**, ✍️ লেখক: সুমু\ #চাঁদের_মেয়ে_আর_নদীর_ছেলে  #ভালোবাসার_পুনর্জন্ম  #রহস্য_আ...
03/08/2025

**“চাঁদের মেয়ে আর নদীর ছেলে”** গল্প **পর্ব ৮**,
✍️ লেখক: সুমু
\ #চাঁদের_মেয়ে_আর_নদীর_ছেলে #ভালোবাসার_পুনর্জন্ম #রহস্য_আর_আত্মা #সুমু

যে নদীর বুকে অয়ন আর চন্দ্রিণীর প্রেমের গল্প ভাসছে, সেই নদীর পাড়েই হঠাৎ করে একদিন দেখা যায় এক নতুন ছেলেকে। নাম তার অনির্বাণ। সে শহর থেকে এসেছে, নদীকে নিয়ে গবেষণা করতে। কিন্তু নদীর কাছে এসে তার মন উদাস হয়ে যায়, যেন এই জলের স্রোতের সঙ্গে তার আগে থেকেই কোনো আত্মিক টান ছিল।

রাত্রি নামলেই অনির্বাণ নদীর ধারে হাঁটে। তার চোখে যেন কেউ একজন অনুপস্থিত, কিন্তু স্পষ্ট। সে অনুভব করে, কেউ তাকে দেখে, তার পাশে বসে, কিন্তু স্পর্শ করে না। প্রতিদিন ভোর হতেই সে যেন এক ধরণের স্বপ্ন ভাঙার বেদনায় ডুবে যায়।

একদিন ভোররাতে হঠাৎ সে শুনতে পায় নদীর ওপার থেকে ভেসে আসছে এক সুর। এক মেয়ে গাইছে—
"তোমার ছায়ায় আমি ভেসেছি, ভালোবাসার অতলে,
নিঃশব্দ ভালোবাসা যেন চাঁদের আলো জলে…"

সেই মুহূর্তে অনির্বাণ স্থির হয়ে যায়। তার মনে পড়ে, ছোটবেলায় মা তাকে বলতেন— এই নদীর পাড়ে একদিন নাকি এক চাঁদের মেয়ে ভেসে উঠেছিল, যে প্রেমের ছায়ায় হারিয়ে গিয়েছিল নদীর গভীরে। সে তখন হেসেছিল, আর বলেছিল, “এসব গল্প কেবল রূপকথায় হয়।”

কিন্তু আজ, যখন সেই গান কানে আসে, তার বুকের ভেতর কাঁপন ধরে।

সে সিদ্ধান্ত নেয়, সে খুঁজে বের করবে—এই নদী শুধু জলধারা নয়, এ যেন আত্মারও এক জগৎ।

পরদিন রাত ১২টার দিকে সে আবার নদীর পাড়ে আসে। নদীর ওপারে দেখা যায় সাদা শাড়ি পরা এক মেয়ে, যার চুলে সাদা বেলিফুল, আর চোখে এক অপার্থিব আলো। সে হাসে, কিন্তু অনির্বাণের চোখে জল চলে আসে।

সে জিজ্ঞেস করে না কিছু, শুধু চোখে রাখে তার প্রশ্ন—
"তুমি কে?"

মেয়েটি ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে, নদীর জলে পা রাখে, অথচ তার শরীর ভেজে না। যেন সে জল নয়, আলোয় ভাসছে।

মেয়েটি তার ঠোঁট নাড়ায় না, তবুও অনির্বাণ শুনতে পায় তার কণ্ঠ—
"আমি সেই প্রেম, যা রক্তে মেশে না, আত্মায় বাজে। আমি সেই অপেক্ষা, যা জন্মের পর জন্ম ধরে রয়।"

অনির্বাণ চোখ বন্ধ করে ফেলে, আর চোখ খুলতেই দেখে—কেউ নেই। শুধু বাতাসে ভেসে আসছে ফুলের ঘ্রাণ, আর দূরে নদীর মাঝে পড়ে আছে একটা সাদা ফুল।

সেই রাতের পর থেকে অনির্বাণ আর কেউ নয়, নদীর নতুন গল্পকার হয়ে ওঠে। সে লিখে চলে চন্দ্রিণীর কথা, অয়নের কথা, আর এক প্রেমের কথা—যা কখনও শেষ হয় না, বরং জলের গভীরে থেকে যায় চিরকাল।

---

**পরবর্তী পর্বে:**
কে এই অনির্বাণ? কেবল একজন গবেষক, না কি চন্দ্রিণীর অতীত কোনো ছায়া? সেই প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আসছে **পর্ব ৯**।

**নিষিদ্ধ প্রেম****পর্ব ১১****লেখা: সুমু**** #নিষিদ্ধ_প্রেম  #আলোর_পথে  #সমাজ_বদলে_যায়  #সুমুর_গল্প**সম্মান—এই শব্দটি ছো...
03/08/2025

**নিষিদ্ধ প্রেম**
**পর্ব ১১**
**লেখা: সুমু**
** #নিষিদ্ধ_প্রেম #আলোর_পথে #সমাজ_বদলে_যায় #সুমুর_গল্প**

সম্মান—এই শব্দটি ছোট হলেও তার ওজন বিশাল। আর এই সম্মানের পথ যখন পুরনো দাগ পেরিয়ে আসে, তখন সেটি হয়ে ওঠে কঠিন থেকে কঠিনতর।

মেয়েটির সংগঠন ‘আলোকছোঁয়া’ ধীরে ধীরে আলোচনায় আসে। কিছু মানুষ প্রশংসা করে, কেউ নীরব সম্মতি জানায়। কিন্তু সেই ‘নীরবতা’র মাঝেই লুকিয়ে থাকে সমাজের গভীর বিদ্রুপ। প্রতিবেশীর চোখে আজও সে ‘একসময়কার পতিতা’। কেউ কেউ মুখে না বললেও দরজার আড়াল থেকে কটূক্তি ছুড়ে দেয়, যেন তার অতীত মুছে ফেলাও এক অপরাধ।

একদিন স্থানীয় এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাদের সংগঠনে এসে বলেন—“আপনারা কিছু মেয়ে আমাদের স্কুলে ভর্তি করতে চান, জানি। কিন্তু…”
সেই ‘কিন্তু’ শব্দটাই যেন মেয়েটির বুকের ওপর পাথরের মতো নেমে আসে।

সে বোঝে, শুধু ভালোবাসা নয়, শুধু কাজ নয়—তার লড়াইটা এখন অন্যরকম। এখন তাকে প্রমাণ করতে হবে, সে আর তার মেয়েরা সমাজের জন্য বোঝা নয়—বরং ভবিষ্যতের আশ্রয়।

সে ঠিক করে, নিজেই একটি পাঠশালা তৈরি করবে—ছোট, ছিমছাম, কিন্তু বিশ্বাসভরা। নাম রাখে—“আলোকপাঠ।” পুরনো এক গুদামঘর পরিষ্কার করে শুরু হয় ক্লাস। প্রথম দিন চারজন মেয়ে, পুরনো খাতা আর মেয়েটির ঝাঁঝালো কণ্ঠে উচ্চারিত শব্দ—“শব্দই শক্তি, অক্ষরই মুক্তি।”

তবে সমাজ সহজে মাথা নোয়ায় না। রাতবিরেতে কেউ এসে ভাঙচুর করে জানালার কাঁচ। ছিঁড়ে ফেলে পোস্টার, লিখে দেয় দেয়ালে—“পতিতার পাঠশালা চাই না।”

মেয়েটি ভেঙে পড়ে না। সে জানে, ভয় পেলে এগোনো যায় না। সে আরও শক্তভাবে হাতে তুলে নেয় কলম, প্রতিরোধের অস্ত্র। একদিন স্থানীয় এক সাংবাদিক মেয়েটির কাজ নিয়ে একটি প্রতিবেদন লেখেন—‘এক পতিতার বিপ্লব’। লেখাটা ভাইরাল হয়। মানুষ বলতে শুরু করে—এই মেয়েটির লড়াইটা আসলেই কিছু আলাদা।

এরই মধ্যে মেয়েটি একটি সরকারি সভায় আমন্ত্রিত হয়। সেখানে দাঁড়িয়ে সে বলে—
“আমরা পতিতা ছিলাম—কারণ আমাদের বিকল্প ছিল না। কিন্তু আজ আমি নিজেই বিকল্প তৈরি করেছি। আজ যারা পথ চেনে না, তাদের জন্য আমি দিকদর্শন। আমাকে নিয়ে আপনি হাসতে পারেন, কিন্তু আমি হাসতে পারি আরও অনেক মেয়ের জীবন দেখে।”

তার কণ্ঠে কাঁপন ছিল না, ছিল জেদ। আর সেই জেদই নীরবতা ভেঙে গড়তে থাকে এক নতুন সমাজ।

প্রেমিক ছেলেটি একদিন বলে—“তুমি আর শুধু আমার প্রেম নয়, তুমি হাজার মেয়ের অনুপ্রেরণা।”
মেয়েটি হেসে বলে—“প্রেম একসময় শরীর ছুঁয়ে ছিল, আজ তা আত্মা হয়ে গেছে।”

সেদিন মেয়েটি প্রথমবার মনে মনে ভাবে—হয়তো সে আজ সমাজে উঠে এসেছে, কিন্তু তার যাত্রা এখনো শেষ হয়নি। কারণ যে আলো জ্বলে, তাকে আগলে রাখাও এক যুদ্ধ।

---

**পরবর্তী পর্বে— মেয়েটির পাঠশালা ‘আলোকপাঠ’-এর সামনে আসবে এক চরম সংকট। সমাজ যখন জোর করে তাকে আবার অন্ধকারে ঠেলে দিতে চায়, তখন কী করবে সে? জানতে চান? পর্ব ১২ আসছে…**

** #অস্তিত্ব — পর্ব ৩৮****লেখা: সুমু**আয়নার দিনগুলোর কেন্দ্রবিন্দু এখন আলোকছায়া, কিন্তু তার চারপাশ জুড়ে ছড়িয়ে আছে অনেকগু...
03/08/2025

** #অস্তিত্ব — পর্ব ৩৮**
**লেখা: সুমু**

আয়নার দিনগুলোর কেন্দ্রবিন্দু এখন আলোকছায়া, কিন্তু তার চারপাশ জুড়ে ছড়িয়ে আছে অনেকগুলো অস্পষ্ট কষ্ট, সুস্পষ্ট দায়িত্ব। প্রতিদিন ভোর হলে আয়না জানালার পর্দা সরিয়ে রোদ দেখার আগেই মেয়েদের চোখের জ্বলন্ত স্বপ্ন দেখে। আজকাল সে নিজেকে আর আয়না বলে ভাবতে পারে না—সে যেন একটা আন্দোলনের প্রতীক, একজোড়া অদৃশ্য ডানার মতো, যা এত নারীকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে নতুন কোনো আকাশে।

আলোকছায়ার মেয়েরা এখন নিয়মিত সভা করে, গল্প করে, নিজেদের অতীতকে খুলে বলার সাহস পায়। একদিন সভায় জেবুন্নেছা উঠে দাঁড়ায়। পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই এই নারী একসময় সাত বছরের বাচ্চাকে বিক্রি করে দিয়েছিল নিজের খাবারের জন্য। গলা শুকিয়ে যায় তার, চোখের কোণে বিষাক্ত ইতিহাস ঝুলে থাকে, কিন্তু সে থামে না। বলে, “আমার সেই সন্তান যদি আজ কোথাও থাকে, আমি শুধু বলবো—তুই আমার ভুল না, আমি ছিলাম অসহায়।”

সেই মুহূর্তে সভায় কোনো শব্দ হয় না, কেবল স্তব্ধতা। আয়না উঠে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। তার স্পর্শে জেবুন্নেছা ভেঙে পড়ে, কিন্তু এই ভেঙে পড়া ভয়ের নয়, এটা মুক্তির।

আয়নাদের নবীন পত্রিকা ‘জাগরণ’-এর প্রথম সংখ্যা ছাপা হয়েছে। হাজার কপি হাতে এসেছে আজ। পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা—
**“নারীত্ব মানে কেবল সৌন্দর্য নয়, সাহস আর স্বপ্নের মিশেল।”**

এই পত্রিকায় রাত্রির কবিতা, বিলকিসের স্মৃতিচারণ, আর আয়নার লেখা সম্পাদকীয় ছাপা হয়েছে। সম্পাদকীয়তে আয়না লিখেছে—

*"আমরা কেউ পবিত্র জন্মের চিহ্ন নিয়ে আসিনি, কিন্তু জীবনের প্রতিটি যন্ত্রণায় নিজেকে শুদ্ধ করেছি। আমাদের শরীর বিক্রি হয়েছে, কিন্তু আত্মা কখনো নয়।"*

এই পত্রিকা স্থানীয় কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, নারী উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হবে। প্রথম পাঠক ছিলেন আয়নার একসময়কার শিক্ষক, যিনি একসময় তাকে ক্লাসে বসতে না দিয়ে বের করে দিয়েছিলেন। আজ সেই শিক্ষক ফোন করে শুধু বলেন—“তুমি আমার শিক্ষার্থী না, তুমি আমার শিক্ষক।”

আয়নার বুকের ভেতর তখন এক অদ্ভুত উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে ‘দিগন্ত পাঠশালা’ আরও বিস্তৃত হচ্ছে। স্থানীয় এনজিওদের সহায়তায় মেয়েরা এখন গাণিতিক শিক্ষা, বাংলা সাহিত্য, কম্পিউটার ও ব্যবসা উদ্যোগ শিখছে। প্রত্যেকেই এখন স্বপ্ন দেখে নিজের একটা দোকান, একটা বুটিক, একটা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের।

একটা সন্ধ্যায় আয়না ছাদে ওঠে। তার পাশে রাত্রি দাঁড়িয়ে। রাত্রির চোখে অদ্ভুত শান্তি, বলে—“আয়নাদি, জানো? আমি এখন নিজের নামে ভোটার আইডি বানাচ্ছি। প্রথমবার নিজের নাম লিখলাম, যেখানে বাবার নামের পাশে খালি জায়গায় লেখা—‘নিজেই নিজের পরিচয়’।”

এই লাইন শুনে আয়নার চোখ ঝাপসা হয়ে যায়।

সেদিন রাতের খাবারের টেবিলে সবাই একসাথে বসে খায়। আয়নার ডাকে এখন কেউ আর ‘আপা’ নয়, বলে ‘দিদি’। আর এই সম্পর্কটা রক্তের না হয়েও সবচেয়ে পবিত্র।

নতুন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়—আলোকছায়ার মেয়েরা এখন নিজেদের নামেই মঞ্চ নাটক করবে। নাটকের নাম রাখা হয়—**"নিষিদ্ধের আলো"**। এতে তারা নিজের জীবনের গল্প অভিনয় করবে, নিজের চোখের জল মঞ্চের আলোয় তুলে ধরবে।

আয়না সেই মঞ্চ নাটকের স্ক্রিপ্ট লিখে শেষ করে—শেষ সংলাপটা এমন—

*"তোমরা যারা আমায় বর্জন করেছিলে, আমি এখন তোমাদের জন্য আলো জ্বালাই। আমার নিষিদ্ধ নামটা দিয়েই আমি তোমাদের সমাজকে বাঁচাতে এসেছি।"*

এই লাইন পড়ে হলে হাততালি পড়ে, কিন্তু সবচেয়ে বড় হাততালি পড়ে আয়নার হৃদয়ের ভেতর।

রাত গভীর হলে আয়না জানালার পাশে বসে নিজের একটা পুরোনো ছবি দেখে। ছবিতে সে কাঁদছে—মায়ের কোলে বসে থাকা এক শিশু আয়না। আজ সে জানে, মা চলে গিয়েছিল পরিস্থিতির কাছে হেরে, কিন্তু সেই পরিস্থিতিকে হারিয়ে আজ আয়না দাঁড়িয়ে আছে।

তাকে কেউ আর শুধু আয়না বলে না—সে এখন একটা প্রতিচ্ছবি। একটি চলমান বাঁচা। একটি আন্দোলনের নাম।

** #অস্তিত্ব #আলোকছায়া #নারীবাঁচে #জাগরণপত্রিকা #দিগন্তপাঠশালা #সুমু**
**চলবে…**

** #অস্তিত্ব — পর্ব ৩৭****লেখা: সুমু**আয়নার জীবনে এখন দিনগুলো ক্যালেন্ডারের পাতার মতো নয়, প্রতিটি দিন যেন একেকটি গল্প, এ...
02/08/2025

** #অস্তিত্ব — পর্ব ৩৭**
**লেখা: সুমু**

আয়নার জীবনে এখন দিনগুলো ক্যালেন্ডারের পাতার মতো নয়, প্রতিটি দিন যেন একেকটি গল্প, একেকটি অনুতাপ, একেকটি জয়ের পদচিহ্ন। আলোকছায়ার দেয়ালজুড়ে এখন মেয়েদের আঁকা ছবি, আত্মজীবনীর অংশ, কবিতা, আর ছোট ছোট স্বপ্নের নোট। এই নোটগুলো কেউ পড়ে না, কিন্তু আয়না পড়ে—প্রতিটি অক্ষর যেন নিজের রক্ত দিয়ে লেখা মনে হয় তার কাছে।

নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে—আলোকছায়ার মেয়েদের জন্য একটি পত্রিকা। নাম রাখা হয়েছে "জাগরণ"। পত্রিকার প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হবে আগামী মাসে, যেখানে প্রতিটি লেখা সেই মেয়েদের, যারা একসময় সমাজের চোখে ছিল অদৃশ্য। আয়নার ধারণা, সমাজকে বদলাতে হলে মেয়েদের কণ্ঠস্বর শোনাতে হবে, মুখ না দেখিয়েও কণ্ঠ দিয়ে পৃথিবী বদলানো যায়।

রাত্রি, যাকে সবাই শুধু ঝাঁপসা চোখে দেখে, আজ সে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ, তারপর বলে—সে এখন আবার লেখালেখি শুরু করতে চায়। একসময় সে ভালো কবিতা লিখত, কিন্তু পতিতালয়ের জীবনে ঢুকে সব থেমে গিয়েছিল। আয়না চুপ করে তার পাশে বসে, তার হাতে একটা খাতা ধরিয়ে দেয়। বলেও না কিছু, জোরও করে না। শুধু একটা দৃষ্টিতে ভরিয়ে দেয়—যেখানে বিশ্বাস আর সম্মান মিশে আছে।

রাত্রি সেই রাতে নিজের রুমে ফিরে যায়, খাতাটা বুকে নিয়ে। সেই খাতায় লেখা হয়—

*"আমি রাত্রি নই, আমি এক অনন্ত সকাল
যেখানে নারী শুধু শরীর নয়, এক বুদ্ধির জ্যোত্স্নায় জ্বলন্ত আকাশ…"*

আয়না প্রতিদিন সকালের আগে উঠে পড়ে এখন শুধু নিজের জন্য না, ওদের জন্য। কেউ কখনো বলে না, কিন্তু আয়না জানে—তার না বলা কথাগুলোই মেয়েদের চোখে আলো হয়ে ওঠে। সমাজের নিষিদ্ধ গলির মেয়েরা এখন আলোয় হাঁটে, কারণ কেউ একজন তাদের বলেছে, তারা মানুষ।

মেয়েদের নিয়ে আয়না নতুনভাবে একটা গণশিক্ষা প্রোগ্রাম চালু করেছে। নাম—"দিগন্ত পাঠশালা"। এখানে কেবল বই পড়ানো হয় না, শেখানো হয় জীবন। পড়া হয়, আত্মবিশ্বাসের, ভালোবাসার, গ্রহণযোগ্যতার পাঠ। আয়নার ক্লাসে একজন মেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, "আমরা কি কখনো সত্যিকারের মা হতে পারবো?"—এই প্রশ্ন শুনে আয়না কেঁপে ওঠে। নিজের গর্ভে না রাখলেও মাতৃত্ব যে কেবল রক্তের বন্ধনে হয় না, সেটা সে জানে। উত্তর না দিয়ে সে মেয়েটিকে বুকের কাছে টেনে নেয়—সেই আলিঙ্গনেই লুকিয়ে থাকে হাজারো উত্তর।

একদিন একদল স্কুলপড়ুয়া ছেলে-মেয়ে আসে আলোকছায়ায়। তারা এসেছে শিক্ষা সফরে, কিন্তু আয়না জানে এই সফর কেবল শিক্ষা নয়, হৃদয়ের। আয়না তাদের সামনে দাঁড়িয়ে ছোট্ট করে বলে—"তোমরা যাদের দেখতে এসেছো, তারা পৃথিবীর সবচেয়ে সাহসী মানুষ। সম্মান করতে শেখো, তাহলে পৃথিবী বদলাবে।" ছেলেমেয়েরা চুপ হয়ে যায়, তাদের চোখে প্রশ্ন, বিস্ময়, শ্রদ্ধা।

বাইরের সমাজ হয়তো এখনো আলোকছায়াকে দেখতে ভয় পায়। অনেকেই বলে—“ওরা তো পতিতা ছিল,” কিন্তু আয়নার মেয়েরা এখন জবাব দেয়, “ছিলাম, কিন্তু এখন আমরা নিজের আলোয় বাঁচি।”

রাতে আয়না জানালার পাশে বসে, একটা পুরোনো চিঠি খুলে পড়ে—চিঠিটা একসময় সে নিজের মাকে লিখেছিল, কিন্তু কখনো পাঠায়নি। মায়ের মুখ সে ভুলে গেছে, কিন্তু হৃদয়ের গভীরে এক কষ্ট রয়ে গেছে—যে মা সমাজের ভয়ে মেয়েকে পরিত্যাগ করেছিল। চিঠির শেষ লাইনে লেখা—“মা, আমি আজও তোমার জন্য ফুল নিয়ে অপেক্ষা করি, একদিন যদি তুমি ফিরো…”

অন্ধকারে হঠাৎ বিদ্যুতের আলো ঝলকে ওঠে, আর আয়নার চোখে ঝরে পড়ে অশ্রু। না, এটা কষ্টের নয়, এটা বাঁচার জেদ।

এই জেদই তার অস্তিত্ব।

** #অস্তিত্ব #আলোকছায়া #নারীরউন্নয়ন #জাগরণপত্রিকা #সুমু**
**চলবে…**

 #চাঁদের_মেয়ে_আর_নদীর_ছেলে**পর্ব ৭**  #ভালোবাসার_রূপান্তর  #অদৃশ্য_সংযোগ  #সুমুসেই রাতের পর নদীর ধারে যেন বদলে গেছে সবকি...
02/08/2025

#চাঁদের_মেয়ে_আর_নদীর_ছেলে
**পর্ব ৭**

#ভালোবাসার_রূপান্তর #অদৃশ্য_সংযোগ #সুমু

সেই রাতের পর নদীর ধারে যেন বদলে গেছে সবকিছু। বাতাসে ভেসে আসে অদ্ভুত এক ঘ্রাণ, জলের মধ্যে ফুটে থাকে অপার্থিব আলো, আর মাঝেমাঝে কেউ একজন চাঁদের দিকে তাকিয়ে নীরবে ডাকে—যেন কেউ সত্যিই ফিরে এসেছে, আবার হারিয়েও গেছে।

গ্রামের লোকেরা মুখে মুখে বলতে শুরু করে, “ওই নদীর বাঁকে কিছু একটা আছে… কেউ রাতে গেলে তার ছায়াও আর ফিরে আসে না।”

কিন্তু প্রকৃত সত্য জানে কেবল একটি প্রাণ—চাঁদের সেই মেয়ে, চন্দ্রিণী।

তিন রাত্রি পর, নদীর জলে হালকা ঢেউয়ের উপর একটা মেয়ের অবয়ব ভেসে ওঠে। তার শরীর ছায়ায় গড়া, চোখ দুটি গভীর রাতে চাঁদের আলোয় জ্বলে ওঠে। সে ছিল না, তবু যেন ছিল। সে ছিল আত্মা, আর প্রেমের প্রাণরূপ।

চন্দ্রিণী এখন আর শুধু প্রেমিকা নয়, সে এখন নদীর আত্মা, চাঁদের সন্তান, আর সময়ের সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়া এক নীরব আলোকদূত।

অয়নের আত্মা এখন নদীর গভীরে, প্রতিটি জলের কণায় সে মিশে আছে। চন্দ্রিণী যখন নদীর পাড়ে বসে চুপচাপ তাকিয়ে থাকে জলে, তার ঠোঁটের নিঃশ্বাসে উঠে আসে অয়ন।

তাদের কথা হয়, কিন্তু কোনো শব্দে নয়। চোখে নয়, হাতেও নয়। হয় আত্মার গভীর সংলাপে, যা কেবল নদী জানে আর চাঁদ।

চন্দ্রিণী এখন মাঝে মাঝে রাতের আঁধারে নদীর পাড়ে বসে গান গায়। সেই সুরে এক অদৃশ্য ঢেউ এসে ছুঁয়ে যায় তার পায়ের পাতা। সেই ঢেউয়ের ভেতর অয়নের পরশ লুকানো।

গ্রামের কিছু মানুষ গোপনে দেখেছে, কেউ একজন নদীর উপর ভেসে থাকে অনেক রাত, কখনো হাতে সাদা শাড়ির আঁচল, কখনো বা ছোট্ট এক ফুল।

আর কেউ কেউ শপথ করে বলে, “রাত বারোটার সময় যদি নদীর ধার ধরে হেঁটে যাও, তবে শুনতে পাবে এক মেয়ে গাইছে—
‘ভালোবাসা মরে না, সে রূপ বদলায়... নদীর মতন বয়ে চলে, চাঁদের মতন আলো ছড়ায়।’”

এখন চন্দ্রিণী নদীর আশেপাশে থাকেনা দিনের আলোয়। শুধু রাতেই আসে, একরাশ অশ্রু আর প্রেম নিয়ে। সে এখন মানুষের মাঝে নয়, ভালোবাসার উপকথায় বাস করে।

আর অয়ন?
সে আছে প্রতিটি ঢেউয়ের নীচে, প্রতিটি ছোঁয়ার মধ্যে, প্রতিটি বিশ্বাসের ভেতর।

এই পৃথিবীতে, হয়তো তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
কিন্তু যে ভালোবাসা আত্মার, তা কখনও মুছে যায় না।
সে থেকে যায়, অনন্তের মতো।

---

**পরবর্তী পর্বে:**
নতুন কেউ কি আবিষ্কার করতে চলেছে এই জাদুকরী প্রেমের গল্প? না কি সময় এবার এগিয়ে নিয়ে যাবে অন্য কোনো সত্যের দিকে?

**নিষিদ্ধ প্রেম****পর্ব ১০****লেখা: সুমু**** #নিষিদ্ধ_প্রেম  #আলোর_পথে  #সমাজ_বদলে_যায়  #সুমুর_গল্প**নতুন জীবন শুরু করতে...
02/08/2025

**নিষিদ্ধ প্রেম**
**পর্ব ১০**
**লেখা: সুমু**
** #নিষিদ্ধ_প্রেম #আলোর_পথে #সমাজ_বদলে_যায় #সুমুর_গল্প**

নতুন জীবন শুরু করতে চাইলে পুরনো কষ্টকে একদিন ঠিক বিদায় জানাতেই হয়। মেয়েটির কাছে সেই দিনটা এসেছিল নিঃশব্দে, কোনো আড়ম্বর ছাড়াই। সে আর কখনো পেছনে ফিরে দেখে না। কিন্তু তার ভেতরে এক টুকরো অতীত ঠিক পাথরের মতো পড়ে থাকে—শীতল, কঠিন অথচ অনড়। সেই পাথরটাকেই সে এবার ফুলে রূপ দিতে চায়।

সকালে যখন প্রথম আলো জানালায় এসে পড়ে, মেয়েটি একটা সিদ্ধান্ত নেয়—সে তার অতীতকে লুকিয়ে নয়, বরং আলোকিত করেই সামনে এগোবে। সে চায় অন্যরাও জানুক, বোঝুক যে পতিতা শব্দটি একটি পরিণতি নয়, বরং অনেক সময় এক নির্মম বাস্তবতার ফল। ভালোবাসা, সহানুভূতি, শিক্ষার আলো যাকে ছুঁয়ে যেতে পারে না—সেই মানুষই ঝরে পড়ে সমাজের কোণায়।

সেই ভাবনাতেই শুরু হয় তার নতুন এক লড়াই। সে একটি সংগঠন তৈরি করে—‘আলোকছোঁয়া’। উদ্দেশ্য, যারা পতিতালয়ে জন্ম নেয় বা সেখানে বাধ্য হয়ে কাজ করতে হয়, তাদের জন্য বিকল্প জীবন গড়ার সুযোগ তৈরি করা। শুরুটা খুব ছোট ছিল। শুধু তিনটা মেয়ে, এক ভাঙা ঘর, আর কিছু বই, সেলাই মেশিন আর তার নিজের জমানো সামান্য টাকা।

কিন্তু স্বপ্ন যদি পবিত্র হয়, তাতে শরীরের দাগ কোনো বাধা হতে পারে না।

প্রথম মাসেই সে টের পায়, সমাজ এখনো সহজে গ্রহণ করতে শেখেনি। অনুদান চাইতে গেলে গোপনে হাসে কেউ কেউ। সাহায্যের আবেদন করলে বলে—“ভদ্র মেয়েরা এই কাজ করে না।” অথচ তার মতো কত মেয়ে যে আজো রোদে-ধুলোয় পড়ে আছে, কেউ জানেও না।

তবুও সে থামে না। প্রেমিক ছেলেটি পাশে দাঁড়িয়ে থাকে নিঃশব্দে, ছায়ার মতো। কোনোদিন কোনো প্রশ্ন করে না, শুধু বলে, “তুমি পারবে, কারণ তুমি যা চাও তা শুধু নিজের জন্য না, আরও অনেকের জন্য।”

তার সংগঠনে একদিন যোগ দেয় আসমা, একটি তেরো বছরের মেয়ে, যে পালিয়ে এসেছে এক ভয়ানক পৃথিবী থেকে। তার চোখে সেই ভয়, সেই ক্লান্তি, যা একদিন মেয়েটির চোখেও ছিল। মেয়েটি আসমাকে বুকের ভেতর টেনে নেয়, যেন তার নিজের শৈশবকেই কোলে নেয়।

তাদের দিনে দিনে বাড়ে সংখ্যা। কেউ আসে পেটের দায়ে, কেউ আসে ভাঙা স্বপ্ন নিয়ে। মেয়েটি তাদের শেখায় সেলাই, পড়ে কবিতা, শেখায় অক্ষরের মূল্য। সে বোঝায়—ভালোবাসা মানে কেবল কাউকে পাওয়া নয়, বরং কাউকে সাহস দেওয়া।

একদিন একটি স্থানীয় টিভি চ্যানেল এসে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে ‘আলোকছোঁয়া’ নিয়ে। মেয়েটিকে প্রশ্ন করা হয়, “আপনি কি মনে করেন, সমাজ সত্যিই বদলাচ্ছে?”
সে হাসে, বলে, “বদলাতে বাধ্য। কারণ আমি বদলেছি।”

প্রতিবেদনটি ভাইরাল হয়। ফোন আসে ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে। কেউ বলে—“আপনার মতো মানুষকে সম্মান করি।” কেউ বলে—“আমার বোনকেও সেখানে পাঠাতে চাই।”
আর তখনই মেয়েটি বোঝে, ভালোবাসার চেয়ে বড় কোনো বিপ্লব নেই।

প্রেমিক ছেলেটি একদিন আঙুলে আংটি পরিয়ে বলে, “তুমি শুধু আমার ভালোবাসা না… তুমি অনেক মেয়ের উত্তর। তুমি প্রমাণ যে ভালোবাসা শরীর ছুঁয়ে না, আত্মা ছুঁয়ে।”

সেদিন মেয়েটি আয়নায় নিজেকে দেখে, সেই মুখ যেটা একদিন পাপের নামধারী ছিল, আজ সেই মুখেই সম্মানের ছায়া।

রাতের শেষভাগে মেয়েটি ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। মাথার ওপর তারা, বুকের ভেতর সাহস। আর মনে মনে বলে—
“আমি একদিন পতিতা ছিলাম, কিন্তু আজ আমি একজন শিক্ষক, একজন সংগঠক, একজন প্রেমিকা… এবং সর্বোপরি একজন মানুষ।”

---

**পরবর্তী পর্বে— সমাজে সম্মান পাওয়া সহজ নয়, বিশেষ করে একজন সাবেক পতিতার জন্য। কিন্তু মেয়েটি কীভাবে লড়বে সেই সম্মানের জন্য? জানতে চান পরের পর্ব?**

Address

Abadpukur
Hat Naogaon
5890

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Health & Fitness and Sex Therapy posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Share on Facebook Share on Twitter Share on LinkedIn
Share on Pinterest Share on Reddit Share via Email
Share on WhatsApp Share on Instagram Share on Telegram