22/10/2020
ব্লাড ক্যান্সার প্রতিরো
রক্তশরীরের একটি অতীব প্রয়োজনীয় উপাদান। এর মধ্যে রয়েছে লাল রক্তকণিকা, শ্বেতরক্তকণিকা ও অনুচক্রিকা। এর সবই বোনম্যারো থেকে উৎপত্তি লাভ করে এবং শরীরেরবিভিন্ন স্থানে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে থাকে। আর বস্ন্যাড ক্যান্সার বলতেসাধারণভাবে রক্তের উলি্লখিত যে কোনো উপাদান থেকে সৃষ্ট ক্যান্সারকে বুঝি।
ব্লাড ক্যান্সারের প্রকারভেদ :
যেমন-
ক. লিউকেমিয়া (শ্বেতকণিকা থেকে সৃষ্ট বস্নাড ক্যান্সার)
র) একিউট মাইলোবস্নাস্টিক লিউকেমিয়া
রর) একিউট লিমফোবস্নাস্টিক লিউকেমিয়া
ররর) ক্রনিক লিমফোসাইটিক লিউকেমিয়া
খ. লিমফোমা : (লসিকা গ্রন্থি থেকে সৃষ্ট এক ধরনের বস্নাড ক্যান্সার)
* হজকিন ও নন হজকিন লিমফোমা,
* লিমফোবস্নাস্টিক লিমফোমা ইত্যাদি।
গ. মাইলোমা ও প্লাজমা সেল লিউকেমিয়া: প্লাজমা সেল থেকে সৃষ্ট বস্নাড ক্যান্সার।
ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ :
রক্ত কণিকাগুলো সঠিক মাত্রায় উৎপন্ন না হলে রক্তশূন্যতা, রক্তক্ষরণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে রোগীর মৃত্যু ঘনিয়ে আসে।
রক্ত শূন্যতা জনিত লক্ষণ :
যেমন-অবসাদ ও দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় ইত্যাদি।
শরীরে ইনফেকশনের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ফলে লাগাতার জ্বর থাকতে পারে।
রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা দেখা দেয়, যেমন নাক, দাঁতের মাড়ি, চোখ ও ত্বকে রক্তক্ষরণ এবং মাসিকের সময় বেশি রক্ত যাওয়া প্রভৃতি হতে পারে।
শরীর বা হাড়ে ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা।
লিভার ও স্পিলিন বড় হয়ে যাওয়া।
গলায়, বগলে বা অন্যত্র লিম্ফনোড বড় হওয়া।
ব্লাড ক্যান্সারের কারণগুলো :
যেসব ফ্যাক্টর বস্নাড ক্যান্সারের আশঙ্কা বাড়ায় তা হলো জেনেটিক, পরিবেশ ও পেশাগত ফ্যাক্টর।
ক. তেজস্কিয়তা: বোমা বিস্ফোরিত হওয়া।
খ. রাসায়নিক পদার্থ: বেনজিন, পেট্রোল ও প্লাস্টিক কারখানায় ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ।
গ. জেনেটিক ডিজ অর্ডার: এনিমিয়া, ডাউন সিনড্রোম। অনকোজিনের আধিক্য অথবাটিউমার সাপ্রেসর জিনের অক্ষমতায় রক্তকণিকার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে বস্নাডক্যান্সার হয়ে থাকে।
প্রতিরোধের উপায় :
ক. যেসব রোগীকে কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি একসঙ্গে দেয়া হয় তাদের মধ্যে বস্নাড ক্যান্সারের প্রবণতা প্রায় ২০ গুণ বেড়ে যায়।
খ. তেজস্ক্রিয়তা পরিহার করতে হবে।
গ. রাসায়নিক দ্রব্যাদির সংস্পর্শ পরিহার করতে হবে।
ঘ. এক্স-রে বিভাগে ও নিউক্লিয়ার বিভাগের কাজ করার সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
ঙ) ধূমপান ও তামাক জর্দা পরিহার করতে হবে।
ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি : আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রতি লাখে ৪ থেকে ৫ জনবস্ন্যাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। সে হিসাব অনুযায়ী ১৫ কোটি মানুষেরমধ্যে প্রতিবছর ৬-৭ হাজার লোক আক্রান্ত হচ্ছেন।
অধিক ঝুঁকির কারণ :
* কৃষি কাজে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা।
* কলকারখানায় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা।
* পরিবেশ দূষণ।
ব্লাড ক্যান্সার নির্ণয় :
ক্স সিবিসি ও বস্নাড ফিল্ম পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে বস্নাড ক্যান্সার সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়।
* বোনাম্যারো ও ট্রিফাইন বায়োপসি পরীক্ষা: কোমরের হাড় থেকে অস্থিমজ্জা সংগ্রহ করে পরীক্ষা।
* লিমফোনোড এফএনএসি ও বায়োপসি পরীক্ষা: লসিকা গ্রন্থি থেকে টিস্যু নিয়ে পরীক্ষা।
আধুনিক চিকিৎসা :
* কেমোথেরাপি
* বোনম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন (মেরুমজ্জা প্রতিস্থাপন)
* টার্গেট থেরাপি।
* ইমিউনো বা বায়োলজিক্যাল থেরাপি।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা :
মেরুমজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করা যায় কিন্তু তাব্যয়বহুল যে সবাই করতেও পারে না আর পারলেও নিশ্চিত সফলতা লাভ করা যায় না।হোমিওপ্যাথিক মতে এ রোগের চিকিৎসা রয়েছে। সার্বিক লক্ষণের বিশ্লেষণে যেওষুধের সঙ্গে লক্ষণ মিলে যায় ওই ওষুধ দিয়েই রোগীর চিকিৎসা করতে হয়।হোমিওপ্যাথিতে প্রায় ৩৭টি ওষুধ আছে।
তবে সাধারণত যেসব ওষুধ সাদৃশ্য লক্ষণের ভিত্তিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে_ আর্সেনিক এল্বাম ক্যাডমিয়াম সাল্ফ, রেডিয়াম ব্রোমাইড, সিয়েনোথাস, চিয়োনান্থাস, ফেরামফস, ফেরামমেট, ফেরাম-আইওড, আর্নিক, আর্সন-আইওড, ক্যালফস, ক্যাল-কার্ব, চায়না, ফেরাম পিকরিক, কেলি ফস, নেট্রাম এসিটিক, নেট্রামমিউর ন্যাট ফস, এসিড পিক, এক্স-রে ও সালফার ইত্যাদি।
বস্ন্যাড ক্যান্সার বা লিউকেমিয়া মানবদেহে ঘাতক ব্যাধিগুলোর মধ্যে অন্যতমবলে বিবেচিত। তাই এ রোগের উৎপত্তি, কারণ উপসর্গ প্রতিরোধ ও চিকিৎসাসম্পর্কে সবারই ধারণা থাকা উচিত।