13/11/2025
ডায়াবেটিস ঔষধ ছাড়াই নিরাময়
>ডায়াবেটিস কী?
>ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ
>ডায়াবেটিস নির্ণয় করার উপায়
>ডায়াবেটিসের ধরন
>ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বা ইনসুলিন প্রতিরোধিতা
>টাইপ—২ ডায়াবেটিসের কারণ
>ডায়াবেটিসের ক্ষতিকর প্রভাব
>টাইপ—২ ডায়াবেটিসের প্রচলিত চিকিৎসা
>ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময়ে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি
>ডায়াবেটিস নিরাময়ে করণীয়:
ক্যাপসুল হর্সটেইল (Capsule Horsetail)
প্রতিটি বাহনের জন্যে প্রয়োজন জ্বালানি, যেমন: ডিজেল পেট্রোল অকটেন ইত্যাদি। শরীররূপী আমাদের এই বাহনেরও জ্বালানি প্রয়োজন। শরীরের মূল জ্বালানি হচ্ছে গ্লুকোজ। আমাদের শরীরের যত ধরনের কাজ আছে—নড়াচড়া হাঁটা দৌড়ানো চিন্তা করাসহ সকল ধরনের কাজে ব্যবহৃত হয় গ্লুকোজ। শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণের পর হজমশেষে গ্লুকোজ ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে রক্তে প্রবেশ করে। ইনসুলিনের সাহায্যে গ্লুকোজ রক্ত থেকে কোষের মধ্যে প্রবেশ করে এবং বিপাকক্রিয়ায় অংশ নিয়ে শক্তি তৈরি করে।
কোনো কারণে রক্ত থেকে গ্লুকোজ কোষের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারলে রক্তে গ্লুকোজ জমা হতে থাকে। ফলে রক্তের গ্লুকোজ লেভেল বেড়ে যায়। একপর্যায়ে এই বাড়তি গ্লুকোজ কিডনি প্রস্রাবের সাথে বের করে দেয়।
রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ কিন্তু কোষের মধ্যে গ্লুকোজ স্বল্পতা, আর প্রস্রাবে গ্লুকোজের উপস্থিতি—এই অবস্থার নামই ডায়াবেটিস।
বার বার ক্ষুধা লাগা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, অবসন্নতা, ওজন কমে যাওয়া, অপুষ্টি। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে ঘটনাচক্রে অর্থাৎ অন্য কোনো রোগের চিকিৎসায় পরীক্ষা—নিরীক্ষাকালে।
ডায়াবেটিস নির্ণয় করার উপায়।
জেনে অবাক হবেন, আমাদের রক্তে যে পরিমাণ সুগার বা চিনি থাকে তার পরিমাণ মাত্র এক চা চামচ। আমরা যদি প্রতিদিন চা/ কফি/ কোমল পানীয়/ মিষ্টান্ন/ অন্য কোনো খাবারের সাথে ২/৩/৪/৫ চা চামচ চিনি খাই, তখন রক্তের সুগার বেড়ে দাঁড়ায় কয়েকগুণ—যা স্থূলতা, ফ্যাটি লিভার ডিজিজ, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ও টাইপ—২ ডায়াবেটিসের কারণ।
১. টাইপ—১ ডায়াবেটিস (১০%)
এ—ক্ষেত্রে অগ্ন্যাশয় থেকে কোনো ইনসুলিন তৈরি হয় না।
একমাত্র চিকিৎসা ইনসুলিন।
এটি জীবনাচারের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়।
২. টাইপ—২ ডায়াবেটিস (৯০%)
এ—ক্ষেত্রে অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন তৈরি হলেও শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বা ইনসুলিন প্রতিরোধিতা সৃষ্টির ফলে শরীর যথাযথভাবে ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না।
ভুল জীবনাচারের কারণে এটি হয়ে থাকে।
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বা ইনসুলিন প্রতিরোধিতা।
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বা ইনসুলিন প্রতিরোধিতা
টাইপ—২ ডায়াবেটিস কীভাবে হয় তা বুঝতে হলে প্রথমেই জানতে হবে কীভাবে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়। এ ব্যাপারে দুটি তত্ত্ব আছে:
তত্ত্ব—১
আমরা যখন প্রাণিজ আমিষ এবং তৈলাক্ত—চর্বিযুক্ত খাবার খাই, তখন এই চর্বি শরীরে গিয়ে কোষে প্রবেশ করে। কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া তখন এই চর্বিকে পুড়িয়ে শক্তি তৈরি করে। কিন্তু অতিরিক্ত তৈলাক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত প্রাণিজ আমিষ খাওয়া এবং শারীরিক পরিশ্রম না করার ফলে কোষের ভেতর অধিক পরিমাণে এই চর্বি প্রবেশ করে, যা মাইটোকন্ড্রিয়া পুরোপুরি বার্ন—আউট করতে পারে না। ফলে তা কোষের মধ্যে জমতে থাকে। একপর্যায়ে এই সঞ্চিত চর্বি কোষের স্বাভাবিক কাজে বাধার সৃষ্টি করে।
যদি কেউ আপনার দরজার লক—এ চুইংগাম ঢুকিয়ে দেয়, তখন আপনি যেমন দরজার লক খুলতে পারবেন না তেমনি কোষের ভেতর অতিরিক্ত চর্বি জমার ফলে ইনসুলিন তার স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। কেননা ইনসুলিন রিসেপ্টরের গায়ে চর্বির প্রলেপ জমে গেছে। অর্থাৎ ইনসুলিন কোষের ভেতরে গ্লুকোজ প্রবেশে সাহায্য করতে পারে না, যা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বা ইনসুলিন প্রতিরোধিতা নামে পরিচিত।
তত্ত্ব—২
রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট (চিনি, সাদা চাল ও সাদা ময়দা) এবং চিনিসমৃদ্ধ খাবার (চা কফি জুস পিঠা পায়েস মিষ্টান্ন ও কোমল পানীয় ইত্যাদি) খেলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্লুকোজ রক্তে প্রবেশ করে। লিভার এই অতিরিক্ত গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তরিত করে লিভারেই জমা করে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্যে।
আবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত এমাইনো এসিড (আমিষের ক্ষুদ্রতম অংশ) রক্তে প্রবেশ করলে তা লিভার কর্তৃক প্রথমে গ্লুকোজ এবং পরে গ্লাইকোজেনে রূপান্তরিত হয়ে লিভারেই জমা হয়। যখন লিভারে আর গ্লাইকোজেন জমা হওয়ার জায়গা থাকে না, তখন লিভার অতিরিক্ত গ্লুকোজকে চর্বি বা ফ্যাটে (ট্রাইগ্লিসারাইড) রূপান্তরিত করে।
এই রূপান্তরিত ফ্যাট লিভার থেকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে জমা হতে থাকে, বিশেষ করে মাংসপেশিতে এবং পেটের মধ্যে অবস্থিত বিভিন্ন অঙ্গে ও এর চারপাশে। একটা পর্যায়ে এই অতিরিক্ত চর্বি লিভারেও জমা হতে থাকে। ফলাফল ফ্যাটি লিভার, যা প্রকারান্তরে তৈরি করে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স।
টাইপ—২ ডায়াবেটিসের কারণ।
>স্থূলতা
>ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স
>অতিরিক্ত তৈলাক্ত—চর্বিযুক্ত—কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার
>রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট (চিনি, সাদা চাল ও সাদা ময়দা)
>চিনিসমৃদ্ধ খাবার (চা কফি জুস পিঠা পায়েস মিষ্টান্ন ও কোমল পানীয়)
>প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ
>শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডের উৎপাদন কমে যাওয়া
>শারীরিক পরিশ্রমের অভাব
>ক্রমাগত মানসিক চাপ বা স্ট্রেস
ডায়াবেটিসের ক্ষতিকর প্রভাব।
দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসে ভুগলে যে—সব রোগ হতে পারে তার মধ্যে করোনারি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ (৭৫% ডায়াবেটিসের রোগী উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত), স্ট্রোক, অন্ধত্ব, কিডনি রোগ, গ্যাংগ্রিন, ক্যান্সার অন্যতম।
টাইপ—২ ডায়াবেটিসের প্রচলিত চিকিৎসা।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময়ে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি।
ডায়াবেটিস নিরাময়ে করণীয়:
জীবনদৃষ্টি ও জীবনাচার পরিবর্তন করে যে ডায়াবেটিস নিরাময় করা যায়—এই বিষয়ে প্রথম গবেষণা করেন আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির মেডিসিন বিভাগের এসোসিয়েট প্রফেসর ডা. নিল বার্নার্ড। এ গবেষণায় আরো এগিয়ে আসেন ডা. জোয়েল ফুরম্যানসহ অন্যান্য গবেষকরা। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচারে আমূল পরিবর্তন এনে তারা ডায়াবেটিস নিরাময় করতে সক্ষম হন।
হাকীম মোঃ আশরাফুল ইসলাম লিটন স্যারের—এর মতামত অনুসারে ডায়াবেটিস নিরাময়ে করণীয়
বর্জন করুন (দুই বছর)
মাছ মাংস ডিম দুধ
তেল ঘি মাখন ডালডা মার্জারিন
তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত ভাজাপোড়া খাবার
চিনি, সাদা চাল ও সাদা ময়দা
প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার
প্রতিদিন খান
পূর্ণ শস্যদানা (হোল গ্রেইন) লাল চালের ভাত বা লাল আটার রুটি এবং এর পরিমাণ হবে খুবই কম। চাইলে ভাত বা
রুটির পরিবর্তে খুব অল্প পরিমাণে ওটস খেতে পারেন।
শাকসবজি, সালাদ ও সবুজ পাতা হতে হবে পর্যাপ্ত।
ডাল মটরশুঁটি বাদাম বীজ বিন পরিমিত ও নিয়মিত।
ফল: প্রতিদিন কমপক্ষে ৪ ধরনের টক ও কম মিষ্টি ফল খান এবং ওষুধ
এ—ছাড়াও ডায়াবেটিসের রোগীরা খেতে পারেন
১. প্রতিদিন সকালে ১ গ্লাস করে কাঁচা করলার জুস, মেথি ভিজানো পানি ও ঢেঁড়স ভিজানো পানি এবং রাতে ৩ চা চামচ অ্যাপল সাইডার ভিনেগার।
২. প্রতিদিন কিছু দারুচিনি, ১ কাপ হার্বাল চা ও ৩—৪ কাপ গ্রিন টি।
এ—ছাড়াও ডায়াবেটিসের রোগীরা যা যা করবেন
১. প্রতিদিন একঘণ্টা ব্যায়াম। ব্যায়াম ইনসুলিনের প্রতি শরীরের কোষগুলোর সংবেদনশীলতা বাড়ায়, ফলে ইনসুলিন রক্তের গ্লুকোজকে কোষের ভেতরে প্রবেশ করাতে সমর্থ হয়। এ—ছাড়াও ব্যায়ামের ফলে সৃষ্ট পেশিসংকোচন গ্লুকোজ পরিবহন বাড়ায়, যা ইনসুলিনের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। অর্থাৎ ইনসুলিনের সহযোগিতা ছাড়াই গ্লুকোজ কোষে প্রবেশ করে। তাই ব্যায়াম করলে ব্লাড সুগার লেভেল বেশ কিছুটা কমে। ফলে ডায়াবেটিস দ্রুত নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
২. প্রতিদিন দুই বেলা মেডিটেশন
৩. প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ দফা প্রাণায়াম
৪. প্রতিদিন কিছু সময় সূর্যস্নান
৫. সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন রোজা/ উপবাস/ ফাস্টিং
ক্যাপসুল হর্সটেইল (Capsule Horsetail)
উপাদান: গাছের তাজা, সবুজ, শুকনো কান্ড বা তা থেকে তৈরী কার্যকর উপাদান ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এতে সিলিসিক এসিড (৫—৭.৭%), ফ্লাভোনয়েডসমূহ (০.৬—০.৯%) যেমন, এপিজেনিন—৫—অক্সিগ্লুকোসাইড, জেনকওয়ানিন—৫—অক্সি—গ্লুকোসাইড, ক্যাম্পফেরল ম্যানোনিল গ্লুকোসাইড, ক্যাম্পফেরল—৩—অক্সি সফোরোসাইড, লুটেওলিন—৫—অক্সি গ্লুকোসাইড প্রভৃতি, কোরজেনিক এসিড ও ডাইক্যাফেয়িল—মেসো—টারটারিক এসিড ইত্যাদি ক্যাফেয়িক এসিড এস্টার (১% পর্যন্ত); প্যালুস্ট্রিন, ইকুইসটামপাইরন ইত্যাদি পাইরিডিন অ্যালকালয়েড থাকে।
ক্রিয়া: মৃদু মূত্রকর, প্রজনন—রেচনতন্ত্রের কষায়কারক, পাথরীনাশক, বৃদ্ধ ও মূত্রাশয়ের শক্তিবর্ধক, আক্ষেপ নিবারক। প্রাকৃতিক সিলিকা সমৃদ্ধ হর্সটেইল দেহে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। ফলে অস্থিগঠন, অস্থিপুনর্গঠন, দাঁত, নখ ও চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
কার্যকারিতা ঃ
ডায়াবেটিস নিরাময়, মূত্রবদ্ধতা, মূত্রকৃচ্ছতা, হাড়ের দুর্বলতা, শোথ, অস্থি অপুষ্টি, অস্থিভঙ্গ, নখ—ভঙ্গুরতা, মূত্রনালীর জীবাণু সংক্রমণ ও প্রদাহিত অবস্থা, বাত এবং খুব ধীর গতিতে সারে এমন ক্ষত ও পোড়া ঘা।
হাকীম মোঃ আশরাফুল ইসলাম লিটন
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মরহুম আমজাদ হোসেন দাতব্য চিকিৎসালয়
ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল ল্যাবরেটরীজ।
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, হাবীব ইউনানী ও আয়ুবেদিক ঔষধালয়
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, আশরাফুল হারবাল এন্ড নিউট্রাসিউটিক্যালস