04/05/2025
শিরোনাম: অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স—নীরব ঘাতকের আগমন
আজ থেকে কয়েক দশক আগেও যেখানে সাধারণ ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ মানুষের প্রাণনাশ ঘটাতো, সেখানে অ্যান্টিবায়োটিকের আবিষ্কার এক যুগান্তকারী আশীর্বাদ হয়ে আসে। কিন্তু এই আশীর্বাদের অতি ব্যবহারে এবং ভুল ব্যবস্থাপনায় এখন তা এক ভয়ংকর বিপদের রূপ নিচ্ছে—অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা।
অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কী?
অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হলো এমন এক অবস্থা, যখন ব্যাকটেরিয়া কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ফলে সেই ওষুধ আর কার্যকর থাকে না। সহজভাবে বললে, যে অ্যান্টিবায়োটিক একসময় একটি ইনফেকশন সারিয়ে তুলত, এখন সেই ওষুধে কাজ হচ্ছে না।
কেন হয় এই রেজিস্ট্যান্স?
১. অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার: সর্দি-কাশির মতো ভাইরাল ইনফেকশনে যেখানে অ্যান্টিবায়োটিকের দরকারই নেই, সেখানে অপ্রয়োজনে ব্যবহারে ব্যাকটেরিয়া নিজেকে প্রতিরোধযোগ্য করে তোলে।
২. অর্ধেক ডোজ খাওয়া: চিকিৎসকের পরামর্শ না মেনে অর্ধেক কোর্স করে ছেড়ে দিলে ব্যাকটেরিয়া দুর্বল হয়েও পুরোপুরি মরে না। বরং তারা ভবিষ্যতের জন্য আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
৩. প্রাণী পালন ও কৃষিতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার: মাংস ও দুধ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রাণীদের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়, যা মানুষের শরীরে পরোক্ষভাবে প্রবেশ করে।
৪. ফার্মেসি থেকে চিকিৎসক ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সংগ্রহ।
এর ক্ষতিকর প্রভাব
সাধারণ ইনফেকশনগুলোকেও মৃত্যুঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।
অপারেশন বা ক্যান্সার চিকিৎসায় জটিলতা বাড়ে।
চিকিৎসার খরচ অনেক গুণ বেড়ে যায়।
নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারে সময় ও বিপুল অর্থ ব্যয় হয়।
ভবিষ্যতের ভয়াবহ চিত্র
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যদি এখনই এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতিবছর ১ কোটিরও বেশি মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করতে পারে। একটি ‘পোস্ট-অ্যান্টিবায়োটিক যুগ’-এর জন্ম হবে, যেখানে সামান্য কাটা-ছেঁড়া বা সংক্রমণও প্রাণঘাতী হয়ে উঠবে।
কী করা উচিত?
শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার।
পুরো কোর্স সম্পন্ন করা।
অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প ব্যবহার, যেমন প্রোবায়োটিকস, ভ্যাকসিন ইত্যাদি।
জনসচেতনতা বাড়ানো ও নিয়ন্ত্রণমূলক নীতিমালা প্রয়োগ।
শেষ কথা:
অ্যান্টিবায়োটিক এক সময় আমাদের প্রাণ বাঁচিয়েছে। এখন সময় এসেছে, আমরা তাকে সম্মান দেখাই। তার যথাযথ ব্যবহারই পারে ভবিষ্যতের প্রজন্মকে একটি নিরাপদ পৃথিবী উপহার দিতে।
-ডাঃ শিহাব আস সাকিব