
19/05/2025
মা‘কে মনে পড়ে...
অধম সন্তান আব্দুল্লাহ
বৃষ্টিমুখর গভীর রাত। শহরের বাতাসে জলগন্ধ মেশা এক ধরনের নির্জনতা, যেন প্রতিটি ফোঁটা বৃষ্টির সাথে কেঁদে চলেছে কেউ একা, নিঃশব্দে। জানালার পাশে বসে থাকা এই আমার চোখে ঘুম নেই। চশমার কাঁচে বৃষ্টির ধোঁয়াটে প্রতিচ্ছবি, আর হৃদয়ের ভিতরে কেবল একটিই নাম—মা।
বিদ্যুৎ চমকে জানালার পর্দা নড়ে ওঠে। মুহূর্তেই মনটা ফিরে যায় সেই দূর অতীতে—যেদিন সোফে সাদিকের পবিত্রতম সময় বারডেম হসপিটালের সাদা চাদরের নিচে নিঃশব্দে চলে গেলেন মা। বিজ্ঞ চিকিৎসকদের নির্বাক চেয়ে থাকার মধ্যদিয়ে ইসিজি গ্রাফিক্সের পিকিউআর একটু একটু করে নামছিল আর মা আমার শেষবারের মতো বিদায় নিচ্ছিলেন। দুহাত কানে ঠেকিয়ে কান্না বিজড়িত কন্ঠে চিৎকার করে প্রিয় মাকে বিদায় জানাতে বলেছিলাম,"আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার লাইলাহা ইল্লাল্লাহ…"। তারপর এক সময় সারা CCU জুড়ে অবশিষ্ট শুধু নিঃশেষ নীরবতা।
বাবা মা বেঁচে থাকতে কখনো কখনো তাঁদের প্রতি হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা টান অনুভূত হয় না কিন্তু হারানোর পর প্রকৃত ভালোবাসা জাগ্রত হলে তা সহ্য করা সত্যিই দুরূহ হয়ে উঠে।
সাত ভাই বোনের মধ্যে দুরন্ত হবার কারণে বাবা-মার সাথে সখ্যতা তেমন ছিল না বললেই চলে, কিন্তু ইদানিং প্রায়ই গভীর রাত্রে মায়ের মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে ।বার্ধক্যে নিঃসংঙ্গতার গলি পথে মাঝে মাঝে যাত্রা বিরতিতে বৃষ্টিমুখর গভীর রাতে মনে পড়ে প্রিয় বাবা-মা‘কে।কখনো কখনো গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে মা মা বলে চিৎকার করতে ইচ্ছা করে। বাবাকে, বোন জামিলাকেও খুব মনে পড়ে।
দুরন্ত, একরোখা, স্বাধীনচেতা হবার কারণে মায়ের কোমল আদরের বদলে চোখ রাঙানিটাই পেয়েছি বেশী কিন্তু এখন, এই বৃদ্ধ বয়সে, নিঃসঙ্গতার কোরিডোরে সেই চিরচেনা চোখ রাঙানি খুঁজে ফিরি বারেবার। বৃষ্টি ভেজা গভীর রাতে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা এই আমি চোখ বুজে মহান স্রষ্টার সমীপে সেজদাবনত চিত্তে বলতে থাকি, "হে দয়াময় আল্লাহ তায়ালা আমাদের বাবা মা‘কে, আপনজনদেরকে তোমার কাছে ভালো রেখো মালিক। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।"