18/09/2025                                                                            
                                    
                                                                            
                                            মায়োফেসিয়াল পেইন সিন্ড্রোম: কোমর ব্যথা পিঠে বা ঘাড়ে যায়, আবার পায়েও যায়!
ক্লিনিক্যাল ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে যদি রোগী এসে বলতো কোমর ব্যথা পিঠে যায়, ঘাড়ে যায়, পেটে যায়, নিতম্বে যায়, পায়ে যায়, একদিকে যায়, দুই পাশে যায়, খালি ঘুরাঘুরি করে! আমি হাসতাম। এটা আবার কি জিনিস? নার্ভ রুটের ব্যথা হলে সুনির্দিষ্ট ডার্মাটোম বা চামড়ার সুনির্দিষ্ট এলাকায় নিয়ম মেনে চলবে, একপাশ থেকে অন্য পাশে যাবে না, এবং শুধু নিচের দিকে নামবে, উপরে উঠার তো জো নেই। কিছুকাল পরেই বুঝতে পেরেছি, আমি কতটা ভুল ছিলাম, আর রোগী কতটা সঠিক ছিল। 
১৯৯১ সালে জন হোপকিন্স এর নিউরোলজি বিভাগের ক্লিনিক্যাল এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন, আমি মূল লেখা (প্রাইমারি সোর্স) কে রেফারেন্স ধরছি, প্রায় সবাই তাকে সাইট করেছে। এর মূলকথা হলো, আমরা জানি নার্ভ হলো মাসলের কারেন্টের লাইন, নার্ভে সমস্যা হলে সেন্সরি সমস্যা যেমন ব্যথা, অবশ, ঝিঝি ইত্যাদি হবে, আবার মোটর সমস্যা যেমন মাসল শুকিয়ে যাবে, দূর্বল হবে ইত্যাদি। প্রতিটা মাংসপেশির জন্য নার্ভ সুনির্দিষ্ট। 
এবার আসি টুইস্টে। আমাদের মাসল নিজেও একটা বড় কারখানা, অনেকটা একতলা, দুইতলা, তিনতলা বাড়ির মত। কারো বাড়ি বড়, কারো ছোট, কারো টিনের বাড়ি, কারো পাকা ছাদ, কারো ছাউনি। যেমন ধরুন পায়ের কোয়াড্রিসেপস মাসল একটা চারতলা বাড়ি, মাঝে ছাদ গুলা হলো "ফাসা"। এ এক আজব শক্ত পর্দা যাতে এক মাসলের একটা অংশের ফাইবার আরেকটির সাথে প্যাচ যাতে না খায়, ভালোমত নড়াচড়া করতে পারে সে জন্য বানায়। আবার দুই ফাসার মাঝখানে একটা মাসলের যে অংশ থাকে সেটি ঘরের কেসি গেইটের মত, আমরা যখন নড়াচড়া করি সেটির সংকোচন ও প্রসারণ ঘটে। এখানে গ্রীজ হলো পানি, আর একটা কমপ্লেক্স মডেল যাকে " স্লাইডিং ফিলামেন্ট থিওরি" বলে। যদি কোন কারনে এ কেসি গেইটের ম্যাকানিজম সমস্যা হয়, তখন মাসল অটোমেটিক ঠিক করে ফেলে, এ ন্যাচারাল পদ্ধতির নাম "স্ট্রেচ রিফ্লেক্স"৷ যখন এই ম্যাকানিজম ফেইল করে তখন মাসলের কেসি গেইটের মত সংকোচন প্রসারণ বন্ধ হয়ে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে মাসলের ফাইবারে গিট্টু লাগে, যাকে " টট ব্যান্ড" বলে। এ গিট্টু খুব সহজে বোঝা যায় না, এ ট্রিগার পয়েন্ট চাপ দিলে অস্বাভাবিক ব্যথা থেকে বোঝা যায়। মনে রাখতে হবে আমাদের শরীরের কিছু কিছু মাসল পয়েন্টে ট্রিগার বা ল্যাটেন্ট ট্রিগার এম্নিতে থাকে, কাজেই কোন মাসলে ট্রিগার পয়েন্ট বোঝার জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক দেখানোই ভালো। 
এবার আসি এ ট্রিগার পয়েন্ট, বা গিট্টু লাগা মাসল পুরা মাসলের কাজই নস্ট করে দেয়। এক তলায় গিট্টু লাগলে সেটি মাসলের সাথে ছাদ বা ফাসার যে স্মুথ স্লাইডিং সেটি নস্ট করে, ফলে মায়ো-ফ্যাসাল পেইন বা ব্যথা হয়, এসব ব্যথায় স্ট্রেচিং করলে মাসল ইঞ্জুরি হয়ে যেতে পারে, এখানে দিতে হয় মায়ো-ফ্যাসাল রিলিজ, ড্রাই নিডল বা ইসকেমিক কমপ্রেশন। তো, কেসি গেইট গেলো, ছাদ গেলো, ফলে বাকী অংশের মাসল টাও ব্যথা ভাব হয়ে যায়, আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভাবে খারাপ কিছু হচ্ছে,তারা ইনফ্লামেশান বা প্রদাহ প্রকৃয়া শুরু করে। ঘটনা এখানে শেষ নয়, মাসলের নিজের তো নার্ভ কানেকশন আছে, এ সমস্যার জন্য নার্ভের ব্যথা বহনকারী ফাইবারগুলি ও নিউরোট্রান্সমিটার সক্রিয় হয় ও পুরা মাসলে ব্যথা হয়, পাশের মাসলে হয়,পুরা এক্সট্রা সেগমেন্টাল রেফার্ড পেইন! 
এখন কোমরের পেছনের প্রায় সব মাসল পেলভিক বোন কিংবা লোয়ার লিম্ব থেকে শুরু আর ঘাড়ে ও হাত অবধি পৌছে গেছে। কাজেই রোগী বলবেই যে আমার ব্যথা কোমর থেকে ঘাড়ে যায়। আবার পায়ের অনেক মাসল কোমর থেকে শুরু একেবারে পায়ের সামনে ও পিছনে হাটুর নিচে গেছে, পায়ের পেছনের কাফ মাসল হাটু থেকে গোড়ালী অবধি যাচ্ছে। এ ব্যথার চেইনকে অনেকে ডিস্ক প্রোলাপ্স বা নার্ভের পেইন হিসেবে ট্রিটমেন্ট করেন, যাতে রোগের চিকিৎসা অনেকটা অস্থায়ী হয়, বারবার ফিরে আসে। আবার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকরা যতটা কোমরের পেছনের ইরেক্টর স্পাইন, মাল্টিফিডাস, ল্যাটিসিমাস ডর্সি, বা থোরাকোলাম্বার ফাসা নিয়ে চিন্তিত ও সতর্ক, কোয়াড্রেটাস লাম্বোরাম, ট্রান্সভার্স ও রেক্টাস অবডুমিনিস নিয়ে উদাসীন। পাইরিফরমিস নিয়ে যত সচেতন, গুল্টস নিয়ে উদাসীন, কোয়াড্রিসেপস নিয়ে সচেতন, এডাকটর ও সোয়াস নিয়ে উদাসীন। আমি মূল আর্টিকেল থেকে কিছু  মায়োফেসিয়াল পেইন সিন্ড্রোমের ছবি কমেন্টে দিচ্ছি। 
একটা কথা স্পস্ট, রোগী তার ব্যথা অল্প বেশি কমেছে এ নিয়ে বায়াসড কথা বলতে পারে, কিন্তু ব্যথা আছে এটা নিয়ে মিথ্যে বলে না। কেউ ব্যথা ছাড়া শুধু শুধু ব্যথা বলে ডাক্তারের কাছে ছুটে আসা সিনেমাতেই সম্ভব, বাস্তবে নয়। মায়োফেসিয়াল পেইনে ব্যথার ঔষধ খেয়ে সাময়িক উপকার পাওয়া যায়, এরজন্য ফিজিওথেরাপি সবচেয়ে বেস্ট। এখানে এক্স রে করলে মাসল স্পাজমের ফিচার পাবে, এমআরআই তে নরমাল বা ডিস্ক বালজিং পাইলেও পাইতে পারেন, এগুলা করবেন অন্য ডিজিজ রুল আউট বা বাতিল করার জন্য, কিন্তু এ রোগ নির্নয়ে ক্লিনিক্যাল ফিচার ও রিজনিং খুব জরুরি। আর সিম্পল ডায়াগনোসিস ও সিম্পল সমাধানই হলো সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা।