ডেন্টাল X-ray অ্যান্ড OPG
একজন ডেন্টিস্ট সচরাচর দুই ধরনের এক্স-রে করতে বলেন। একটি হলো পেরিএপিকাল এক্স-রে (Periapical X-ray)। আর অন্যটি হলো ওপিজি (OPG)। পেরিএপিকাল এক্স-রে গুলো আকারে ছোট এবং এটি সাধারণত দুই বা তিনটা দাঁতের প্রতিচ্ছবি ধারণ করতে পারে। ওপিজি বড় এক্স-রে, যা মুখের সবগুলো দাঁতের প্রতিচ্ছবি ধারণ করতে পারে। একই সাথে দাঁতের আশেপাশে হাড়ের মধ্যে কোনো টিউমার বা অন্য কোনো সমস্যা আছে কি-না, তাও দেখতে পাওয়া যায় এতে। এই হলো দাঁতের এক্স-রের প্রাথমিক পরিচিতি।
•       এবার মনে করুন, আপনার কোনো একটি বা পাশাপাশি দুটি দাঁত শিরশির করছে কিংবা ব্যথা করছে; কিন্তু, আপনি আয়নায় দাঁতে কোনো সমস্যা দেখতে পাচ্ছেন না। আপনি আসলেন আপনার ডেন্টিস্টের কাছে। তখন ডেন্টিস্ট আপনাকে একটি এক্স-রে করার পরামর্শ দিবেন। এই এক্স-রে তে দেখা যাবে আপনার দাঁতের ভেতরে কি সমস্যার কারণে দাঁত ব্যথা বা শিরশির করছে, যা দাঁতের বাইরে থেকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল না।
•       আবার ধরুন, আপনার শিশু সন্তানের দাঁত তুলতে হবে। দাঁত হালকা নড়ে; কিন্তু, সাধারণভাবে টেনে তোলার উপযোগী নয়। তখন, আপনাকে এক্স-রে করতে হবে। কেননা, এই দাঁত শিশুর দুধ দাঁত এবং এর নিচ থেকেই আসছে তার স্থায়ী দাঁত। যদি কোনো কারণে তার স্থায়ী দাঁত তৈরি না হয়, তাহলে শিশুর দুধ দাঁত তুলে ফেললে সেই জায়গা সারাজীবন ফাঁকা থেকে যাবে। উপরন্তু পাশের দাঁতগুলো সেই ফাঁকা জায়গার দিকে সরে আসতে থাকবে। পুরো মুখের দাঁতগুলোই বিশ্রী হয়ে যাবে। সেটা ঠিক করতে আপনাকে হয়তো অনেক টাকা খরচ করতে হবে; সাথে আফসোস বিনামূল্যে। অথচ, মাত্র ২০০  টাকার একটি এক্স-রে বা ৪০০ টাকার একটি ওপিজি করলেই আপনি এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে পারতেন।
•       দাঁত থেকে পুঁজ আসছে, কিংবা দাঁতের মাড়ির কোনো জায়গায় অনেকটা ফুলে আছে। অথচ আপনি নিয়মিত ব্রাশ করেন। কি করতে হবে বুঝতে পারছেন না। ডেন্টিস্ট এর কাছে আসলে আপনাকে এক্স-রে করতে বলা হলো। এই এক্স-রে তে বোঝা যাবে আপনার এই ফোলা কি আসলে কোনো ফোঁড়া (cyst, abscess) নাকি কোনো টিউমার অথবা অন্য কি কারনে ফুলে আছে জায়গাটা। আপনি এক্স-রে করার ঝামেলা এড়াতে মুখের ফোলাটাকে গুরুত্ব দিলেন না। পরবর্তীতে জটিল অপারেশনে আপনার চোয়ালের একাংশ কেটেও ফেলতে হতে পারে। অথচ, সহজ সমাধান ছিল মাত্র একটি এক্স-রে।
•       আপনার বয়স ২৫ বছরের বেশি; তাও আক্কেল দাঁতের কোনো চিহ্নও নেই। এক্স-রে করলেই বোঝা যাবে কী অবস্থায় আছে আপনার আক্কেল দাঁতগুলো।
•      দাঁতে রুট ক্যানেল করতে হবে। এক্স-রে ছাড়া বোঝা যাবে না আপনার দাঁতের শিকড় মাড়ির কতটা ভেতরে ঢুকে আছে।
•       স্থায়ী দাঁত অল্প বয়সেই নড়তে শুরু করেছে। এক্স-রে করে দেখতে হবে কী কারণে নড়ছে। আসলে, এক্স-রে এর প্রয়োজনীয়তা বলে শেষ করার মতো নয়। খালি চোখে যা দেখা যায় না, তা দেখার জন্যই এক্স-রে এর প্রয়োজন হয়। আপনি ভালো ট্রিটমেন্ট চান। তাহলে, আপনাকে অবশ্যই ডেন্টিস্টকে সাহায্য করতে হবে; তিনি যেন আপনার দাঁত ও মাড়ির ভেতর ও বাহিরের অবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পান। তারই একটি প্রক্রিয়া হলো দাঁতের এক্স-রে।
এবার আসি রেডিয়েশন প্রসঙ্গে। এক্স-রে মানেই রেডিয়েশন। তবে, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানও রেডিয়েশনের কুপ্রভাব সম্পর্কে সচেতন। আবার এক্স-রে এর প্রয়োজনীয়তাকেও অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই, দিনের পর দিন গবেষণা হচ্ছে কিভাবে এক্স-রে মেশিনগুলোকে আরও আধুনিক করা যায়; যেন অল্প রেডিয়েশনেই উদ্দ্যেশ্য হাসিল করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, একটা মানুষের শরীরে ৫০ গ্রে (রেডিয়েশনের মাপকাঠি) এর বেশি রেডিয়েশন প্রয়োগ করলে সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। যেমন: তার হৃদপিন্ডের কোষগুলোতে রক্ত চলাচল ক্ষতিগ্রস্থ হয়, কিংবা তার স্নায়ুগুলো সঠিকভাবে কাজ করে না। তাছাড়া শরীরের কোষগুলোতে পরিবর্তন ঘটে, যা ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে। কিন্তু একটি দাঁতের এক্স-রে তে এর ৮০ ভাগের এক ভাগ রেডিয়েশন হয়। তাও আবার পুরো মুখের এক্স-রে বা ওপিজি করলেই কেবল এই ৮০ ভাগের এক ভাগ রেডিয়েশন পাওয়া যায়। পেরিএপিকাল এক্স-রেতে আরও কম রেডিয়েশন হয়। সুতরাং, এতে শারীরিক ক্ষতির চান্স নেই বললেই চলে। তবে, সাবধানতার কোনো মার নেই। একজন গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে এই সামান্য রেডিয়েশনও ক্ষতি করতে পারে তার ভবিষ্যত সন্তানের। তাই, ডেন্টিস্টকে অবশ্যই এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি জানাতে ভুলবেন না। তাও যদি জরুরী কারণে এক্স-রে করাতেই হয়, তাহলে লেড অ্যাপ্রোন (lead apron) দিয়ে গর্ভবতী নারীর গলা থেকে পেটের নিচের অংশ পর্যন্ত ঢেকে নেয়া জরুরী।
দাঁতের এক্স-রেকে অবহেলা করার মতো কোনো অবকাশ নেই। এই এক্স-রে আপনাকে মারাত্মক রেডিয়েশন এর সম্মুখীন করে না এবং একজন ডেন্টিস্টকে আপনার দাঁত ও মাড়ি কতটুকু সুস্থ, তা বুঝতে সাহায্য করে। তাই, আপনার নিজের প্রয়োজনে ডেন্টিস্ট-এর পরামর্শ অনুযায়ী এক্স-রে করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিন।
সৌজন্যে: 
বন্ধু ডেন্টাল X-ray অ্যান্ড OPG
রেজাউল করিম পাম্পের বিপরীত পার্শ্বে
জেলা পরিষদ মার্কেট (২য় তলা)
হামদহ, ঝিনাইদহ।