24/10/2025
‘হাজিরাতের চাবি’ নাকি ‘শিরকের প্রবেশদ্বার’? রুকইয়ার বইয়ের নামে কুফর ও শিরকের প্রচারণার চুলচেরা শরয়ী বিশ্লেষণ!
ভূমিকা:
উম্মাহর দরদমাখা লেবাসে মুসলিমদের ঈমান হরণের ষড়যন্ত্র নতুন কিছু নয়। কিন্তু যখন এই ষড়যন্ত্র ‘মুফতী’, ‘রাকী’ এবং ‘কুরআন-হাদীসের আলোকে’র মতো পবিত্র চাদর মুড়ি দিয়ে হাজির হয়, তখন তা সাধারণ বিষের চেয়েও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। সম্প্রতি আমাদের হাতে আসা ‘হাজিরাতের চাবি’ নামক একটি বই ঠিক সেই পর্যায়েরই এক বিষাক্ত ফিতনা, (এই লেখক কে আমরা চিনি না এবং তার সাথে আমাদের কোন ব্যক্তিগত শত্রুতা বা বিদ্বেষ নেই আমরা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে মানুষকে সতর্ক করার জন্য এই লেখাটি প্রকাশ করছি) যা প্রতিটি পৃষ্ঠায় তাওহীদের মূলে কুঠারাঘাত করেছে এবং শিরক ও কুফরের এমন সব পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছে, যা একজন সাধারণ মুসলিমকে চিরস্থায়ী জাহান্নামের পথে ঠেলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
আজকের এই পোস্টে আমরা কোনো প্রকার নমনীয়তা বা ছাড় না দিয়ে, শল্যচিকিৎসকের ছুরির মতো করে এই বইয়ের প্রতিটি ভণ্ডামিকে কেটে কেটে বিশ্লেষণ করব, যেন সত্য দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যায়।
প্রথম খণ্ডন: মোড়কের প্রতারণা ও লেখকের ধৃষ্টতাপূর্ণ পরিচয়!
বইয়ের দাবি:
বইটির মোড়কে লেখা হয়েছে, "কুরআন-হাদীসের আলোকে রুকইয়াহ ও ঝাড়-ফুঁক শিক্ষার্থীদের জন্য এক দ্বিতীয় (?) বই" এবং লেখকের পরিচয় দেওয়া হয়েছে ‘বিশিষ্ট রাকী ও মোদাব্বির মুফ*তী নাই*মুল ইস*লাম ফরিদ*পুরী’।
বিশ্লেষণ ও রদ:
প্রতারণার শুরুটা হয়েছে এখান থেকেই।
মিথ্যা মোড়ক: বইটির ভেতরে যা আছে, তা কুরআন-হাদীসের আলো নয়, বরং জাদুকর, গণক এবং শয়তানের উপাসকদের নিকৃষ্টতম অন্ধকার। এবং এই বইয়ের ভিতরে যে ভণ্ডামির চাষ করা হয়েছে তার স্বপক্ষে কুরআন ও হাদিসের একটি দলিল তো দূরে থাক বরং তার ছিটেফোঁটাও নেই। বরং বইয়ের মোড়কে কুরআন ও হাদিসের যে দাবি করা হয়েছে তা সুস্পষ্টভাবে একটি নির্লজ্জ মিথ্যাচার এবং সাধারণ মুসলিমদের সাথে একটি বড় ধোঁকা। এবং হকে বাতিলের সাথে মিশ্রণ করা হয়েছে।
আল্লাহ তা'আলা জেনে-বুঝে সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রণকারীদের সম্পর্কে বলেন:
وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
"তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে-বুঝে সত্যকে গোপন করো না।" (সূরা আল-বাকারাহ: ৪২)
‘মোদাব্বির’ শব্দের আড়ালে ষড়যন্ত্র: ‘রাকী’ শব্দের পবিত্রতার আড়ালে ‘মোদাব্বির’ (তদবিরকারী) শব্দটিই হলো লেখকের শিরকী কারবারের আসল প্রবেশপথ। রুকইয়াহ যেখানে সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর কালাম এবং দু'আর উপর নির্ভরশীল, সেখানে ‘তদবির’ শব্দটি বিভিন্ন গোপন কলাকৌশল, হাজিরাত, জিন চালান বা গায়েবের খবর জানার মতো শিরকী কর্মকাণ্ডের দিকে ইঙ্গিত করে, যা এই বইয়ের পাতায় পাতায় প্রমাণ করা হয়েছে।
দ্বিতীয় খণ্ডন: "হাজিরাত" ও "মুয়াক্কিল"—সরাসরি জিন ও শয়তানের উপাসনা (শিরকে আকবর)
বইয়ের দাবি (পৃষ্ঠা ৩১ থেকে হুবহু):
"উপরের দুআটি ইশার নামাযের পর ওযু করে পাক-পবিত্র কাপড় পরিধান করে আতর লাগিয়ে, আগরবাতি জ্বালিয়ে একটানা ১১ দিন ৪১ বার করে পাঠ করবেন...১১ দিন পরে আপনার হাজিরাত খুলে যাবে।"
শরীয়তের অকাট্য অবস্থান:
এটি তাওহীদের মূলনীতি ‘ইবাদতে আল্লাহকে একক জানা’-এর উপর সরাসরি আক্রমণ এবং সুস্পষ্ট শিরকে আকবর।
ভ্রান্তি ও প্রতারণার চুলচেরা বিশ্লেষণ:
১. আল্লাহ ছাড়া অন্যকে ডাকা (শিরকী আহ্বান):
এই আমলের মূল উদ্দেশ্য হলো ‘হাজিরাত খোলা’ বা ‘মুয়াক্কিল হাজির করা’। ৩২ নং পৃষ্ঠার দোয়াটি দেখুন, يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ দিয়ে শুরু করে শেষে নির্লজ্জের মতো বলা হয়েছে: يَا قَوْمَ حَاضِرَاتٍ، حَاضِرُشْ (হে হাজিরাতের দল, (হাজিরুশু! এটা কোন আরবি শব্দ নয় বরং দুর্বোধ্য একটি বাক্য) হাজির হও)। এটি সরাসরি জিনদের একটি দলকে হাজির হওয়ার জন্য আহ্বান। ইসলামে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্তাকে—সে নবী হোক, ফেরেশতা হোক বা জিন হোক—সাহায্যের জন্য ডাকা, তাদের কাছে কিছু চাওয়া বা তাদেরকে আহ্বান করা হলো শিরকে আকবর (বড় শিরক), যা একজন ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে সম্পূর্ণরূপে বের করে দেয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা এই ধরনের কর্মকাণ্ডের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলেন:
وَأَنَّهُ كَانَ رِجَالٌ مِّنَ الْإِنسِ يَعُوذُونَ بِرِجَالٍ مِّنَ الْجِنِّ فَزَادُوهُمْ رَهَقًا
"আর মানুষের মধ্য থেকে কিছু লোক জিনের মধ্য থেকে কিছু লোকের আশ্রয় প্রার্থনা করত, ফলে তারা (জিনেরা) তাদের ঔদ্ধত্য ও স্পর্ধা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল।" (সূরা আল-জ্বিন: ৬)
এই আয়াতটি দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ করে যে, জিনদের সাহায্য চাওয়া বা তাদের আশ্রয় প্রার্থনা করা শুধু শিরকই নয়, বরং এটি মানুষের বিপদ ও দুর্দশাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
২. জাদুকরদের পদ্ধতির নির্লজ্জ অনুসরণ:
আগরবাতি জ্বালানো: ইবাদতের নামে আগরবাতি বা বিশেষ সুগন্ধি জ্বালানো ইসলামী শরীয়তে প্রমাণিত কোনো আমল নয়। বরং এটি হিন্দু, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য মুশরিকদের উপাসনার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। জাদুকর ও শয়তানের উপাসকরা জিনদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য এবং তাদের পছন্দের পরিবেশ তৈরি করার জন্য এই সকল বস্তু ব্যবহার করে। জিনদের একটি অংশ বিশেষ সুগন্ধি ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ পছন্দ করে এবং এই সকল বস্তু উৎসর্গ করার মাধ্যমে জাদুকররা তাদের নৈকট্য লাভ করে। সুতরাং, এটি আল্লাহর ইবাদত নয়, শয়তানের পূজা।
নির্দিষ্ট সংখ্যা ও দিন: "১১ দিন" বা "৪১ বার"—এই ধরনের সংখ্যা নির্ধারণ করা, যার পেছনে কুরআন বা সহীহ সুন্নাহর কোনো দলিল নেই, তা সুস্পষ্ট বিদআত। এই সংখ্যাগুলো সাধারণত জাদুকররা তাদের মন্ত্র সিদ্ধ করার জন্য ব্যবহার করে, যা তাদের এবং শয়তানের মধ্যকার একটি চুক্তি।
তৃতীয় খণ্ডন: গায়েবের জ্ঞান দাবির নির্লজ্জ কুফরি
বইয়ের দাবি (পৃষ্ঠা ৩১ থেকে হুবহু):
"হাসিল হওয়ার পর উক্ত দুআটি ৪১ বার পাঠ করে চোখ বন্ধ করে মুরাকাবা করলে জায়েয সব প্রশ্নের উত্তর আপনার অন্তরে দিয়ে দেওয়া হবে এবং যে কোন সমস্যার বিষয় আপনি জানতে পারবেন।" এই পদ্ধতিটি বইয়ে রোগীর সমস্যা বা রোগ নির্ণয় করার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে।
শরীয়তের অকাট্য অবস্থান:
গায়েবের চাবি একমাত্র আল্লাহর হাতে। জিন বা শয়তানের মাধ্যমে অজানা খবর বা রোগ নির্ণয়ের এই পদ্ধতি দাবি করা সুস্পষ্ট কুফরি।
ভ্রান্তি ও প্রতারণার চুলচেরা বিশ্লেষণ:
কুরআনের অকাট্য দলিল: আল্লাহ তা'আলা দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছেন যে, গায়েবের জ্ঞান তাঁর জন্য একচ্ছত্র।
قُل لَّا يََعْلَمُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ
"বলুন, আসমান ও জমিনে আল্লাহ ছাড়া আর কেউই গায়েব জানে না।" (সূরা আন-নামল: ৬৫)
এই আয়াত কোনো প্রকার ব্যাখ্যা বা تأويل (তা'বীল)-এর অবকাশ রাখে না। এরপরও যে ব্যক্তি দাবি করে যে, সে জিন বা মুয়াক্কিলের মাধ্যমে অজানা খবর বা রোগ নির্ণয় করতে পারে, সে সরাসরি এই আয়াতের বিরুদ্ধাচরণকারী এবং আল্লাহর সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপকারী।
হাদীসের কঠোর হুঁশিয়ারি: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে সরাসরি কুফর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
«مَنْ أَتَى عَرَّافًا أَوْ كَاهِنًا، فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ، فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ»
"যে ব্যক্তি কোনো গণক বা কাহিনের কাছে আসল এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করল, সে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর উপর যা নাযিল হয়েছে (কুরআন) তার সাথে কুফরি করল।" (মুসনাদে আহমাদ, সহীহ)
এই বইয়ের লেখক কি নিজেকে গণক বা কাহিনের চেয়ে ভিন্ন কিছু মনে করেন? তিনি তো অক্ষরে অক্ষরে তাদেরই কুফরি পথ অনুসরণ করার শিক্ষা দিচ্ছেন।
চতুর্থ খণ্ডন: "বি-হাক্কি" (بِحَقِّ) ব্যবহারের মাধ্যমে শিরক ও বিদআতের সূক্ষ্ম অনুপ্রবেশ
বইয়ের দাবি (পৃষ্ঠা ৩২ থেকে হুবহু):
দোয়ার মধ্যে بِحَقِّ سُلَيْمَانَ بْنِ دَاوُدَ, بِحَقِّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ, بِحَقِّ كٓهيعٓصٓ ইত্যাদি ওসিলা ব্যবহার করে জিনদের দলকে হাজির হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
শরীয়তের অকাট্য অবস্থান: "بِحَقِّ"
(বি-হাক্কি) বা "এর হকের/অধিকারের ওসিলায়"—এই শব্দগুচ্ছের ব্যবহারই এই দোয়ার ভণ্ডামি এবং শিরকী হওয়ার অন্যতম বড় প্রমাণ। এটি তাওহীদের মূলনীতির উপর একটি সূক্ষ্ম কিন্তু মারাত্মক আঘাত।
ভ্রান্তি ও প্রতারণার চুলচেরা বিশ্লেষণ:
১. ওসিলা গ্রহণের ক্ষেত্রে মারাত্মক বিচ্যুতি (বিদআতী ওসিলা):
ইসলামে ওসিলা বা মাধ্যম গ্রহণ জায়েজ, কিন্তু তা শরীয়ত নির্ধারিত পন্থায় হতে হবে। জায়েজ ওসিলাগুলো হলো: আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর ওসিলা, নিজের নেক আমল এবং কোনো জীবিত নেককার ব্যক্তির দু'আর ওসিলা। কিন্তু এই দোয়াতে যে ওসিলাগুলো নেওয়া হয়েছে, সেগুলো বিদআতী এবং কিছু ক্ষেত্রে শিরকী:
`بِحَقِّ سُلَيْمَانَ بْنِ دَاوُدَ`
(সুলাইমান ইবনে দাউদ-এর হকের ওসিলায়):
এই বাক্যের মধ্যে ভুলটা কোথায়?
এখানে একজন মৃত নবীর সত্তা বা তার "হক"-এর ওসিলা ধরা হচ্ছে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের বিশুদ্ধ আকীদা অনুযায়ী, কোনো মৃত ব্যক্তির সত্তা, মর্যাদা বা "হক"-এর ওসিলা দিয়ে দু'আ করা বিদআত এবং শিরকের দিকে উন্মুক্তকারী একটি দরজা। কারণ, এতে করে মানুষের মনে এই ধারণা জন্মায় যে, আল্লাহ যেন ঐ ব্যক্তির ওসিলা ছাড়া দু'আ কবুল করেন না, যা আল্লাহর ক্ষমতাকে খাটো করার শামিল।
`بِحَقِّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ`
(এই আয়াতের হকের ওসিলায়):
এই বাক্যের মধ্যে ভুলটা কোথায়?
এটি কুরআনের একটি আয়াত। কুরআনের আয়াতের ওসিলা ধরা জায়েজ, কিন্তু এখানে সমস্যা হলো প্রেক্ষাপট। এই দোয়াটি করা হচ্ছে জিন হাজির করার জন্য। অর্থাৎ, আল্লাহর ইবাদতের অঙ্গীকারমূলক একটি পবিত্র আয়াতকে ব্যবহার করা হচ্ছে শিরকী কর্মকাণ্ডের (জিনকে ডাকার) মাধ্যম হিসেবে। এটি আল্লাহর কালামের চরম অবমাননা। উদাহরণস্বরূপ: একজন চোর যেমন চুরি করতে যাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ পড়তে পারে না, ঠিক তেমনি জিনকে ডাকার জন্য এই আয়াতের ওসিলা নেওয়াটাও একটি জঘন্য প্রতারণা।
`بِحَقِّ كٓهيعٓصٓ`
(এই অক্ষরগুলোর হকের ওসিলায়):
এই বাক্যের মধ্যে ভুলটা কোথায়?
এটি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অংশ। `حروف مقطعات` বা এই বিচ্ছিন্ন অক্ষরগুলোর অর্থ বা তাৎপর্য আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না। জাদুকর এবং শয়তান পূজারীরাই এই অক্ষরগুলোকে বিভিন্ন সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসাব-নিকাশ (Numerology/Abjad) করে জিনদের নাম বা সাংকেতিক কোড হিসেবে ব্যবহার করে। তারা সাধারণ মানুষকে বোঝায় যে, তারা কুরআনের অক্ষর ব্যবহার করছে, কিন্তু গোপনে তারা এর মাধ্যমে জিনদেরকে আহ্বান করে এবং তাদের সাথে করা চুক্তি অনুযায়ী তাদের "হক" আদায় করে। এখানে `بِحَقِّ` শব্দটি ব্যবহার করার অর্থ হলো, "হে আল্লাহ, ক্বাফ-হা-ইয়া-'আইন-সাদ-এর (অর্থাৎ, এর সাথে সংশ্লিষ্ট জিন বা শয়তানের) অধিকারের কসম দিয়ে বলছি, আমার কাজটা করে দাও।"—নাউযুবিল্লাহ।
২. আল্লাহর উপর সৃষ্টির অধিকার সাব্যস্ত করা:
بِحَقِّ
শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে এই শিরকী ধারণা দেওয়া হচ্ছে যে, আল্লাহ তা'আলার উপর যেন তার কোনো সৃষ্টির (যেমন: সুলাইমান আঃ বা কোনো অক্ষরের) কোনো "হক" বা "অধিকার" আছে, যা আদায় করতে তিনি বাধ্য। —নাউযুবিল্লাহ। কোনো সৃষ্টিরই আল্লাহর উপর কোনো বাধ্যতামূলক অধিকার নেই।
পঞ্চম খণ্ডন: বিশুদ্ধ রুকইয়ার মূলনীতির সাথে সরাসরি বিশ্বাসঘাতকতা
এই বইয়ের পদ্ধতিগুলোকে রুকইয়ার সাথে মেলানোর কোনো সুযোগ নেই। ইমামগণ বিশুদ্ধ রুকইয়াহ শারইয়াহর জন্য তিনটি foundational (মৌলিক) শর্ত দিয়েছেন, যা এই বইয়ের প্রতিটি পদ্ধতি লঙ্ঘন করে:
১. শর্ত-১: রুকইয়াহ হতে হবে আল্লাহর কালাম, তাঁর নাম বা গুণাবলী দিয়ে:
লঙ্ঘন ও বিশ্লেষণ: বিশুদ্ধ রুকইয়ার ভিত্তি হলো আল্লাহর কালাম। কিন্তু এই বইতে আল্লাহর কালামের বিকৃত প্রয়োগ করা হয়েছে এবং يَا قَوْمَ حَاضِرَاتٍ বলে সরাসরি জিনদেরকে ডাকা হয়েছে। এটি প্রথম এবং প্রধান শর্তকেই লঙ্ঘন করে।
২. শর্ত-২: রুকইয়াহর ভাষা স্পষ্ট ও আরবিতে হতে হবে, অথবা এর অর্থ বোধগম্য হতে হবে:
লঙ্ঘন ও বিশ্লেষণ: এই শর্তটি দেওয়া হয়েছে যেন রুকইয়ার মধ্যে কোনো শিরকী বা কুফরি মন্ত্র লুকিয়ে থাকতে না পারে। কিন্তু এই বইয়ের দোয়াতে দুর্বোধ্য শব্দ (حَاضِرُشْ) এবং সাংকেতিক অক্ষরের (كٓهيعٓصٓ) ব্যবহার রয়েছে, যা স্পষ্ট নয়।
৩. শর্ত-৩: এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আরোগ্য দানকারী আল্লাহই, রুকইয়াহ নিজে নয়:
লঙ্ঘন ও বিশ্লেষণ: বিশুদ্ধ রুকইয়াহ আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল ও ভরসা বৃদ্ধি করে। কিন্তু এই বইয়ের পদ্ধতিগুলো সম্পূর্ণ বিপরীত। এখানে আল্লাহর উপর নয়, বরং জিন (মুয়াক্কিল) এবং নির্দিষ্ট আমলের (যেমন ১১ দিন, ৪১ বার) উপর নির্ভরশীল করে তোলা হচ্ছে, যা তাওহীদ পরিপন্থী।
আমাদের আহ্বান ও তাওবাহর দাওয়াত:
‘হাজিরাতের চাবি’র লেখক মুফ*তী নাই*মুল ইস*লাম ফরিদ*পুরী সাহেব,
আপনার নামের সাথে যুক্ত ‘মুফতী’ খেতাবটি আপনাকে কি এটা শেখায়নি যে, জাদু ও জিন-চালানের মতো বিষয়গুলো শরীয়তে সুস্পষ্টভাবে হারাম এবং কুফরের অন্তর্ভুক্ত? আপনি কোন দলিলের ভিত্তিতে উম্মাহর সর্বসম্মতভাবে পরিত্যক্ত একটি হারাম কাজকে ‘কুরআন-হাদীসের আলোকে’র মোড়কে জায়েজ করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছেন?
আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর আদেশের বিরুদ্ধাচরণকারীদের জন্য আল্লাহর হুঁশিয়ারি স্মরণ করুন:
فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَن تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
"অতএব যারা তাঁর (রাসূলের) আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, তাদের উপর ফিতনা আপতিত হবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি এসে পৌঁছাবে।" (সূরা আন-নূর: ৬৩)
এখনো সময় আছে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কাছে আপনার এই শিরক ও কুফরি শিক্ষা দেওয়ার জন্য খাঁটি দিলে তাওবাহ করুন। অবিলম্বে এই ঈমান-বিধ্বংসী বই বাজার থেকে তুলে নিন এবং জনসমক্ষে আপনার ভুলের জন্য সুস্পষ্টভাবে ক্ষমা চেয়ে উম্মাহকে সঠিক পথের দিশা দিন। নতুবা, দুনিয়া ও আখিরাতে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে আল্লাহর কঠিন পাকড়াও। জেনে রাখুন, হকপন্থীরা আপনার এই বাতিলের বিরুদ্ধে চুপ করে বসে থাকবে না।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই সকল লেবাসধারী ফিতনা থেকে রক্ষা করুন এবং সিরাতে মুস্তাকিমের উপর অটল রাখুন। আমিন।
"প্রিয় পাঠক, যদি আপনার হাতে এই ধরনের কোনো বই আসে বা আপনি এমন কোনো ব্যক্তির সন্ধান পান, তবে তাদের থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকুন। তাদের কথায় প্রভাবিত না হয়ে আপনার এলাকার বিশ্বস্ত আলেম বা হকপন্থী রাকীদের সাথে পরামর্শ করুন। মনে রাখবেন, ঈমান আপনার সবচেয়ে বড় সম্পদ।"
#আয়াত_রুকইয়াহ_সেন্টার
#বন্দুক_কবিরাজ #রুকইয়াহ #যাদু #বদনজর #জ্বীন
(কানেকটেড)