13/06/2025
আজকাল আমরা অনলাইনে কিংবা সোস্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন ধরনের রং ফর্সাকারী ক্রিম, সিরাম,ফেশওয়াশ,শ্যাম্পু, জেল ইত্যাদির জন্য নানা চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে থাকি।কিন্তু এই প্রোডাক্টগুলো ত্বকের জন্য আসলেই কতখানি উপকারী তা কি আমরা জানি?বা এগুলোর মধ্যে কি কোন ক্ষতিকারক উপাদান আছে যা আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক?অনেক সময় এসব পদার্থে ক্ষতিকর এমন কিছু পদার্থ বিশেষ করে স্টরয়েড বা উচ্চমাত্রায় পারদ ব্যবহার করা হয়েছে যা আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।আজ আমরা এ ধরনের কসমেটিকস বা ত্বক পরিচর্যাকারী বিভিন্ন প্রোডাক্ট এর উপাদানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানব।
১. ত্বকের সমস্যা:
(ক) অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন:
কিছু কসমেটিক্সে পারাবেন, ফরমালডিহাইড, সালফেটস, এবং ফ্র্যাগ্রেন্স থাকে, যা স্কিন ইরিটেশন, র্যাশ, চুলকানি এবং রেডনেস সৃষ্টি করতে পারে।
সেনসিটিভ স্কিনের জন্য এই কেমিক্যালগুলো অ্যালার্জিক কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস তৈরি করতে পারে।
(খ) ব্রণ এবং একনে:
সিলিকন, মিনারেল অয়েল এবং কমেডোজেনিক (Clogging) উপাদান ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করে দেয়, যা ব্রণ এবং একনে বৃদ্ধি করতে পারে।
অয়েল-বেসড মেকআপ প্রোডাক্ট নিয়মিত ব্যবহারে তেলতেলে ত্বক এবং ব্রণ সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।
(গ) সময়ের আগেই বয়সের ছাপ:
কিছু ফাউন্ডেশন, প্রাইমার এবং স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে থাকা অ্যালকোহল ত্বককে শুষ্ক করে এবং প্রিম্যাচিউর রিঙ্কেল ও ফাইন লাইনস তৈরি করে।
রেটিনল বা AHA/BHA এসিড অতিরিক্ত ব্যবহারে ত্বক পাতলা হয়ে যায় এবং সহজেই রোদে পোড়ে।
ঘ) ত্বকের ক্যান্সার সৃষ্টি :
বিভিন্ন ধরনের রং ফর্সাকারী ক্রিমে উচ্চমাত্রায় মারকারি বা পারদ ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এসব ক্রিম ব্যবহার করলে ত্বকের ক্যান্সার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২. চোখের সমস্যা
কাজল, আইলাইনার এবং মাসকারা-তে থাকা কিছু কেমিক্যাল (যেমন কোল-টার ডেরিভেটিভস এবং লিড) চোখে সংক্রমণ, চুলকানি, লালচে ভাব এবং অশ্রুগ্রন্থি সমস্যা তৈরি করতে পারে।
ওয়াটারপ্রুফ আই মেকআপ পরিষ্কার করতে ব্যবহার করা কেমিক্যালযুক্ত রিমুভার চোখের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
৩. চুলের ক্ষতি
(ক) চুল পড়া এবং মাথার ত্বকের ক্ষতি:
সালফেট, পারাবেন, সিলিকন এবং অ্যালকোহলযুক্ত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার চুলের স্বাভাবিক আর্দ্রতা নষ্ট করে।
অতিরিক্ত কেমিক্যাল হেয়ার কালারিং, স্ট্রেইটনিং এবং পার্মিং চুলের প্রোটিন গঠন নষ্ট করে এবং চুল পড়ার কারণ হতে পারে।
(খ) খুশকি এবং চুলের রুক্ষতা:
কিছু কেমিক্যাল যেমন সোডিয়াম লরিল সালফেট (SLS) এবং সোডিয়াম লরেথ সালফেট (SLES) মাথার ত্বকের শুষ্কতা ও খুশকি বাড়াতে পারে।
৪. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
ফিথালেটস এবং পারাবেন (যা অনেক পারফিউম, বডি লোশন ও মেকআপে থাকে) এন্ডোক্রাইন ডিসরাপ্টর হিসাবে কাজ করে, যা হরমোনাল ইমব্যালান্স, পিরিয়ডের অনিয়ম এবং ফার্টিলিটির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারে থাইরয়েড, ব্রেস্ট ক্যান্সার ও রিপ্রোডাক্টিভ ডিজঅর্ডার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৫. কিডনি এবং লিভারের বা অন্যান্য অংগের ক্ষতি:
কিছু লিপস্টিক ও ফাউন্ডেশনে লেড (Lead), ক্যাডমিয়াম ও মার্কারি থাকে, যা ব্লাডস্ট্রিমে মিশে লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
বেশি মাত্রায় ভারি ধাতু গ্রহণে নিউরোলজিকাল সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৬. শ্বাসকষ্ট এবং অ্যালার্জি
কিছু স্প্রে ডিওডোরেন্ট, পারফিউম এবং হেয়ার স্প্রে-তে থাকা ফ্লোরোকার্বন এবং ফর্মালডিহাইড ফুসফুসে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
অ্যাজমা এবং ব্রঙ্কাইটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য কিছু কসমেটিক পণ্য শ্বাসকষ্ট এবং অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন তৈরি করতে পারে।
৭. গর্ভধারণে ঝুঁকি
গর্ভবতী নারীদের জন্য ফথালেট, প্যারাবেন এবং ট্রাইক্লোসান ক্ষতিকর, কারণ এটি ভ্রূণের বিকাশে বাধা দেয় এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
কিছু স্কিন কেয়ার ও মেকআপ উপাদানে রেটিনল ও স্যালিসিলিক এসিড থাকে, যা ভ্রূণের জন্মগত ত্রুটি সৃষ্টি করতে পারে।
তাহলে আমরা কি কোন কসমেটিকস ব্যবহার করব না? অবশ্যই করবো।কিন্তু সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
কীভাবে নিরাপদ থাকবেন?
✔ নতুন পণ্য ব্যবহারের আগে "প্যাচ টেস্ট" করুন।
✔ "পারাবেন-ফ্রি," "ফথালেট-ফ্রি" এবং "অর্গানিক" লেবেলযুক্ত প্রোডাক্ট বেছে নিন।
✔ হার্বাল এবং প্রাকৃতিক উপাদানসমৃদ্ধ স্কিন কেয়ার ও মেকআপ ব্যবহার করুন।
✔ সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে আসা রাসায়নিক পণ্য (যেমন ব্লিচ) কম ব্যবহার করুন।
✔ কসমেটিকস ব্যবহারের পর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন এবং ত্বকের যত্ন নিন।