Ghotok Mama

Ghotok Mama Islamic Marriage Media

স্ত্রী বেগানা পুরুষের সামনে মুখ ঢাকতে চায় না; করণীয় কী?·সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের প্রবীণ সদ...
08/07/2024

স্ত্রী বেগানা পুরুষের সামনে মুখ ঢাকতে চায় না; করণীয় কী?

·
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাকিহ আশ-শাইখুল আল্লামা ইমাম সালিহ বিন ফাওজান আল-ফাওজান হাফিজাহুল্লাহ (জ. ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.) প্রদত্ত ফতোয়া—

প্রশ্ন : “আমার স্ত্রী নিকাব (মুখ ঢাকার বস্ত্রবিশেষ) পরতে অস্বীকার করে। আমি দীর্ঘদিন তার এ কাজের প্রতি ধৈর্যধারণ করেছি এবং তাকে নিকাব পরার নসিহত করেছি। এই কারণে আমি যদি তাকে তালাক দিই, তাহলে আমি কি পাপী হব?”

উত্তর : “না। বরং আল্লাহ চাইলে এই কাজের জন্য আপনি সওয়াব পাবেন। সে যদি নিজেকে পর্দাবৃত করতে অস্বীকার করে তাহলে তাকে তালাক দেওয়া আপনার জন্য ওয়াজিব। আর আল্লাহ আপনাকে তার চেয়ে উত্তম কারও ব্যবস্থা করে দেবেন।”

নোট : ইসলামি শরিয়তে যে পুরুষের সাথে একজন নারীর বিবাহ বৈধ, সেই পুরুষই তার জন্য গাইরে মাহরাম বা বেগানা পুরুষ। অর্থাৎ পিতা, আপন চাচা, আপন ভাই, আপন মামা, আপন শ্বশুর প্রমুখের মতো যাদের সাথে একজন নারীর চিরতরে বিবাহ হারাম, তারা ছাড়া সবাই তার জন্য বেগানা পুরুষ। এমন পুরুষদের সামনে পর্দা মেইন্টেইন করা উক্ত নারীর জন্য ফরজ।

·
ভিডিয়ো-সোর্স : https://x(ডট)com/FawaidAlUlama/status/1790393711441928503

অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
fb.com/SunniSalafiAthari

স্ত্রী কেমন হওয়া চাই।
08/07/2024

স্ত্রী কেমন হওয়া চাই।

08/07/2022
▌বিয়ে ও আমাদের ভাবনা।বিয়ে একটি ইবাদাত, বিয়ে একটি জরুরত। চরিত্র হিফাযতের সবচেয়ে উত্তম ও স্থায়ী মাধ্যম হল বিয়ে। বিয়ের বিকল...
14/05/2022

▌বিয়ে ও আমাদের ভাবনা।

বিয়ে একটি ইবাদাত, বিয়ে একটি জরুরত। চরিত্র হিফাযতের সবচেয়ে উত্তম ও স্থায়ী মাধ্যম হল বিয়ে। বিয়ের বিকল্প শুধুমাত্র বিয়েই। মহান আল্লাহ বলেন,
" তিনি (আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা) তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন" ।
--- [সূরা রুম, আয়াত : ২১]।

প্রিয়নবী মুহাম্মদূর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, "বিবাহের মাধ্যমে দম্পতির পরস্পরের মাঝে যে গভীর প্রেম ও ভালোবাসা জন্মায় তা তুমি অন্যকোন নারী- পুরুষের মাঝে দেখতে পাবে না।' --- [সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৮৪৭]।
এই বিয়ে নিয়ে টিনএজারদের মধ্যে ব্যাপক কৌতুহল কাজ করে। কল্পনার সমুদ্রে ডুব দিয়ে রাজকন্যার দর্শন লাভে প্রত্যাশীরা সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি ও উচ্চবিলাসী চাহিদার জাঁতাকলে চাপা পড়ে যেনার দিকে ধাবিত হচ্ছে। অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিবাহকে সহজ করে দিতে বলেছেন যাতে যেনার রাস্তাগুলি কঠিন হয়ে যায়। বিয়ে নিয়ে যুবকদের মধ্যে দুটো বড়োসড়ো সমস্যা আমার কাছে পরিলক্ষিত হয়েছে।
এক, নিজের যৌন-জীবন নিয়ে কনফিউজড, আর
দুই, অর্থনৈতিক ক্রাইসিস। অধিকাংশ যুবকই (যারা পূর্বে কোনো নারীর সাথে অনৈতিক কর্মে লিপ্ত হয় নি) প্রথম সমস্যার কারণে মারাত্মক হীনমন্যতায় ভোগে। যৌন শিক্ষার অভাব বা ভুল জানা থেকে এমন ভয় কাজ করে। এক্ষেত্রে ডা.ফাইজুল হক স্যারের ভিডিওগুলি দেখতে পারেন। বেশ ভাল কাজ দেবে।
আর দ্বিতীয় সমস্যাটি খাঁড়া করে দিয়েছে এই সমাজব্যবস্থা এবং আমাদের অভিভাবকগন। সকলের একটাই প্রশ্ন, বিয়ে করে বউকে খাওয়াবি কি? সুতরাং "আরেকটু স্টাবলিস্ট হয়ে বিয়ে করব যাতে বউকে খাওয়ানোর টেনশন কমে যায়" সেই পলিসিতে পা দিয়ে যুবকদের বৃহৎ একটা অংশ ত্রিশের কৌটা পার করে দেয়। দেখা যাচ্ছে ততক্ষণে অর্থনৈতিক ক্রাইসিস না থাকলেও লেট ম্যারেজের কারণে সুখে শান্তিতে থাকাটা দুস্কর হয়ে পড়ে। সত্যি কথা বলতে কি, বউকে খাওয়ানোর দায়িত্ব একমাত্র তার রিযকদাতার, আপনার-আমার নয় । এটা সবাইকে বুঝতে হবে। তাছাড়া অল্প বয়সে বিয়ে করার অনেকগুলো সুফলের মধ্যে একটা মজার সুফল হচ্ছে, কেয়ারিং-শেয়ারিং যা ত্রিশের কৌটা পেরিয়ে যাওয়া ভ্রাতাগন বুঝতে অক্ষম।
অত:এব, একটিই উপদেশ দিব, দ্রুত বিয়ে করুন।

▌মুসলিম নারীদের উচ্চশিক্ষা অর্জনের বিধান।❛❛যদি নারী বেহায়াপনা থেকে বেঁচে থেকে, পর্দার সহিত এবং ইসলামী রীতি ও নিয়মনীতি অন...
13/05/2022

▌মুসলিম নারীদের উচ্চশিক্ষা অর্জনের বিধান।


❛❛যদি নারী বেহায়াপনা থেকে বেঁচে থেকে, পর্দার সহিত এবং ইসলামী রীতি ও নিয়মনীতি অনুসরণ করে (অর্থাৎ ইসলামী শরি'আহ) উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে চায় --- তাতে কোন অসুবিধা নেই। ব্যাস শর্ত হল, সে যেন ইসলামী নিয়মনীতি ভঙ্গ না করে। কলেজে গিয়ে ছেলেদের সাথে উঠা-বসা, গাল-গল্প করা, আর বেপর্দা চলা, এরসাথে যদি মেয়ের এই শিক্ষা (কু-শিক্ষা) থেকে থাকে যে, পরবর্তীতে পিতা-মাতার আত্ম-সম্মান বিনষ্ট করে ফেলতে পারে, তাহলে এরচেয়ে ঘরে থাকাই উত্তম। কিন্তু যদি সে ইসলামী সীমারেখার ভেতরে থেকে উচ্চশিক্ষা অর্জন করে, ডাক্তার কিংবা টিচার হয় --- তাহলে এতে কোন অসুবিধা নেই। বরং উত্তমই হবে যদি আমাদের বাচ্চাদের পড়ানোর জন্য (শিক্ষকা হিসেবে)
একজন মুসলিম নারী হন, যিনি প্রকৃতপক্ষেই দ্বীনকে বুঝেন,
আর বাচ্চাদেরকেও দ্বীনদার বানাবেন।
আমাদের স্ত্রীলোকদের (জরুরতবশত) পুরুষ মানুষরা (ডাক্তার) স্পর্শ করেন, কখনো প্রেগনেন্সির সমস্যা, আবার কখনো অন্যান্য সমস্যার কারণে। যদি আমাদের এখানে মহিলা ডাক্তার থাকে, তাহলে আমরা স্ত্রীলোকদেরকে তাঁর কাছেই নিয়ে যাবো আর তিনিই পরামর্শ দিয়ে বলবেন, --- 'আপনার কোন সমস্যা নেই, আপনি আরও বাচ্চা নিলেও কোন সমস্যা হবেনা, অথবা এখন বাচ্চা (পেটে) আছে, এখন বিরতি দিন, অথবা এখন (বাচ্চা) নিন ইত্যাদি সবই (খোলামেলা) জানাবেন। আর প্রেগনেন্সি বিষয়ক সঠিক দিক-নির্দেশনা দিবেন। কিন্তু আপনি দেখুন-না অসংখ্য অমুসলিম ডাক্তার রয়েছেন যারা একদম শেষ-সময়ে এসে বলে থাকেন যে, আপনার সিজার করতে হবে'! এখন একটি, দুইটি কিংবা তিনটি (বাচ্চা জন্মদান) অত:পর অবসর। তো, এভাবেও মুসলমানদের জন্য বাধা সৃষ্টি করা হয়ে থাকে। আবার কখনো কখনো পরপুরুষ অর্থাৎ পুরুষ ডাক্তারদের কাছে অনেক কেইস এসে থাকে (যার বিস্তারিত বিশ্লেষণের সময় নেই), আমাদের নেক্বকার মহিলারা ডাক্তারদের (পুরুষ) কাছে যান আর ডাক্তারগণ তাদের স্পর্শ করেন, অত:পর তাদের (ডাক্তারদের) সামনে (জরুরতবশত) দেহের পুরো অঙ্গ-প্রতঙ্গ উন্মুক্ত করতে হয় --- তখন বড়োই (বিব্রতকর) সমস্যার সম্মুখীন হন!
তো, যদি আমাদের মেয়েই ডাক্তার হয় আর সে ঠিকভাবে
পর্যবেক্ষণ করে --- তাহলে আমাদের নারীরা তাঁর কাছেই গিয়ে নিজেদের চিকিৎসা করাতে পারবেন। সুতরাং এটাই সঠিক ফিল্ড। আবার এটা না হয় যে, (উচ্চশিক্ষার নামে) আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে আমরা এয়ার-হোস্টেস বানানো শুরু করে দেই! সেখানে (কর্মস্থলে) গিয়ে লোকদের টাই বেঁধে দিচ্ছে, কিংবা তাদের সামনে (খেদমতের নামে) নিচু হচ্ছে --- এই ফিল্ড আমাদের নয়, এই বেহায়ামি জিনিসও আমাদের নয়। কেউ তাকে (মেয়েকে) গায়িকা বানাচ্ছে, অভিনেত্রী বানাচ্ছে কিংবা টেনিস প্লেয়ার বানাচ্ছে --- এগুলো আমাদের কাজ নয়। বরং আমাদের কাজ হচ্ছে, সত্যিকারার্থে যা থেকে মানবজাতির উপকার সাধিত হয় --- এমন ফিল্ডে ইসলামী গন্ডির ভেতরে থেকে মুসলিম নারীরা (কাজ) করতে পারবেন। (এমনকি) ঘরে বসেই মুসলিম নারীরা বড়ো বড়ো ব্যবসা করতে পারেন। কেন, আম্মাজান খাদীজাহ্ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-র কি ব্যবসা ছিলনা!? আল্লাহর রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর ব্যবসার কাজে উনার কাছে গিয়েছিলেন। অত:পর উনার (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর যোগ্যতা (চারিত্রিক গুণাবলী) দেখে তিনি বিবাহের প্রস্তাব পাঠিয়ে দেন। সুতরাং একজন নারী তাঁর বাসগৃহে অবস্থান করে, নিজের স্বস্থানে থেকে, পর্দার ভেতরে থেকেও বড়ো বড়ো ব্যবসা করতে পারেন, এমনকি আন্তর্জাতিক মানের ব্যবসাও করতে পারেন --- এতে কোন অসুবিধা নেই। তাকে স্রেফ শরীয়তের সীমারেখা মেনে চলতে হবে, ব্যাস এতটুকুই। ইসলাম কোথাও (জায়েজ কাজে) বাধা প্রদান করে না, শরীয়তের সীমারেখা মেনে চলার ক্ষেত্রেই কেবল বাধা প্রদান করে থাকে, ব্যাস। সুতরাং সীমা অতিক্রম করিও না। ❞
--- মূল: শাইখ আবূ যাইদ যামীর (হাফিযাহুল্লাহ্)।
গৃহীত:
https://youtu.be/jP3_WtSJjVE
--- অনুবাদক: আখতার বিন আমীর।

▌এই দুনিয়াতে কে কার স্বামী বা স্ত্রী হবে, তাও নিদিষ্ট রয়েছে।অন্যের বউয়ের রূপের ঝলকানি, জাদুকরী কথা, আর মায়াবী চাহনি দেখে...
12/05/2022

▌এই দুনিয়াতে কে কার স্বামী বা স্ত্রী হবে, তাও নিদিষ্ট রয়েছে।
অন্যের বউয়ের রূপের ঝলকানি, জাদুকরী কথা, আর মায়াবী চাহনি দেখে কেউ কেউ আফসোস করে বলেন, "ইসস! আমার বউটা যদি এমন হত, এই মেয়েকে বিয়ে করে বোধহয় ঠকেই গেলাম, উমুক মানুষটাকে যদি স্বামী বা স্ত্রী হিশেবে পেতাম কতই না উত্তম হত কিংবা উমুকের সাথে একই ছাদের নিচে কিছুকাল কাটাতে পারলে বোধহয় জীবনটাই ধণ্য হয়ে যেত --- ইত্যাদি। সবসময় এ-ধরণের আক্ষেপ কিংবা আফসোস ঈমানের জন্য বড়োই ক্ষতিকর এবং তাক্বদীরের প্রতি আমাদের বিশ্বাসকে দূর্বল করে দেয়। এ প্রসঙ্গে ইমাম মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,"রিযিক্ব যেভাবে লিপিবদ্ধ আছে, বিবাহ করাও সেভাবে নির্ধারিত রয়েছে। এই দুনিয়াতে কে কার স্বামী বা স্ত্রী হবে, তাও নিদিষ্ট রয়েছে। আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই আল্লাহর কাছে গোপন নয়।" --- [ফাতওয়া আরকানুল ইসলাম: ১৭৬]।
এ প্রসঙ্গে উস্তাযুল আলিম, ইমাম নাসিরুদ্দীন আল আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ্) আরও বলেন,“কোন মানুষ ধনী হবে নাকি গরীব হবে, সুন্দর হবে নাকি কুৎসিত হবে --- এই বিষয়গুলো যেমন মহান আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত, ঠিক তেমনি কার সাথে কার বিয়ে হবে সেটাও তাঁর ভাগ্যের লিখা। যার ভাগ্যে যা লিখা আছে তা অবশ্যই সংঘঠিত হবে, কোন মানুষ তা ফিরিয়ে রাখতে পারবে না। তবে একজন বান্দার জন্য করণীয় হচ্ছে, যেকোন ব্যাপারে (কল্যাণ লাভের আশায়) সে (আপ্রাণ) চেষ্টা করবে, তাহলে সে-কাজের মন্দ পরিণতির জন্য জিজ্ঞাসিত হবে না।"
গৃহীত:
https://www.youtube.com/watch?v=dwdbdwEhBc4
সুতরাং, আল্লাহর পক্ষ থেকে যা পেয়েছেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকুন, হতে পারে মহান আল্লাহ্ এতেই কল্যাণ নিহিত রেখেছেন। ঐ শুনুন আপনার রবের বাণী: "হতে পারে তোমরা কোন জিনিস অপছন্দ কর কিন্তু তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর, আর এমনও হতে পারে তোমরা কোন জিনিস পছন্দ কর কিন্তু তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। এবং আল্লাহ্ জানেন আর তোমরা জানো না।" --- [সূরাহ আল বাকারাহ, আয়াত: ২১৬]।

▌আগে বিয়ে, না পড়াশোনা?·মাদীনাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক আচার্য, বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, আমাদের সম...
11/05/2022

▌আগে বিয়ে, না পড়াশোনা?

·
মাদীনাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক আচার্য, বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, আমাদের সম্মানিত পিতা, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, ইমাম ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ আল-বাদর (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৩ হি./১৯৩৪ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—

প্রশ্ন: “আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন। একটি প্রশ্ন রয়েছে। আর তা হলো—একজন প্রাথমিক পর্যায়ের ত্বালিবে ‘ইলমের প্রতি আপনার নসিহত কী? তার কি বিয়ে করা ঠিক হবে? না কি সে তার স্টাডি কন্টিনিউ করবে, এবং কয়েক বছর ‘ইলম অর্জনে ব্যাপৃত থাকার পর বিয়ে করবে?”

উত্তর: “না, এটি সঠিক পদ্ধতি নয়। সঠিক পদ্ধতি হলো, সামর্থ্য হওয়ামাত্র সে জলদি বিয়ে করবে। যেসব জিনিস ব্যক্তিকে ‘ইলম অর্জনে আগ্রহী করে, বিয়ে তার মধ্যে অন্যতম। কেননা কেউ যখন ‘ইলম চর্চায় লিপ্ত হয়, অথচ তার স্ত্রী নেই, তখন সে বিয়ে নিয়ে অনেক বেশি চিন্তা করে এবং বিয়ে ও তার আনুষঙ্গিক বিষয়াদি নিয়ে মশগুল হয়। পক্ষান্তরে যখন সে বিয়ে করে, তখন সে তার চক্ষু অবনমিত করে, নিজের যৌনাঙ্গ হেফাজত করে এবং পড়াশোনায় মনোযোগী হয়। এটা পরিক্ষিত বিষয়। এমন অসংখ্য ত্বালিবে ‘ইলম আছে, যারা পড়াশোনায় শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর রেখেছে এবং অন্যদের চেয়ে ভালো করেছে; অথচ তারা বিয়ে করেছিল খুব কম বয়সে।

কিন্তু যে দেরি করে বিয়ে করে এবং পড়াশোনা চালিয়ে যায়, সে ওই ছাত্রের মতো হয় না—যে তার অন্তর-ঈপ্সিত বিষয় গ্রহণ করেছে, নিজে সচ্চরিত্র হয়েছে, অন্যকে সচ্চরিত্র করার প্রয়াস পেয়েছে এবং পড়াশোনায় মনোযোগী হয়েছে। বিয়ে ও পড়াশোনার মধ্যে সমন্বয় করা এবং দ্রুত বিবাহ করাকে ছোটো করে দেখা যাবে না। যেহেতু রাসূল ﷺ বলেছেন, “হে যুব-সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে। কারণ বিবাহ চক্ষুকে অবনমিত করে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। আর যে ব্যক্তি ওই সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোজা রাখে। কেননা তা তার জন্য ঢালস্বরূপ (অর্থাৎ, কামভাব প্রশমনকারী)।” [সাহীহ বুখারী, হা/৫০৬৬; সাহীহ মুসলিম, হা/১৪০০]

তাই যেসব ত্বালিবে ‘ইলম বিবাহ করতে সক্ষম, তাদের সবাইকে আমি নসিহত করছি, তারা যেন বিয়ে করতে দেরি না করে, বরং দ্রুত বিবাহ সম্পন্ন করে। কারণ বিবাহ হলো ফলদায়ক ‘ইলম অর্জনের জন্য খুবই সহায়ক।”

·
তথ্যসূত্র:

www.tasfiatarbia.org/vb/showthread.php?t=9222।

·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari

▌স্বামীর আনুগত্যের আবশ্যকতা·মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, মসজিদে নাবাউয়ীর মুদার্রিস এবং মসজিদে কুবার সম্মাননীয় ই...
10/05/2022

▌স্বামীর আনুগত্যের আবশ্যকতা

·
মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, মসজিদে নাবাউয়ীর মুদার্রিস এবং মসজিদে কুবার সম্মাননীয় ইমাম ও খতিব, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, আল-ফাক্বীহ, ড. সুলাইমান বিন সালীমুল্লাহ আর-রুহাইলী (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন—

❝মহিলার জন্য স্বামীর আনুগত্য করার ব্যাপারটি বাড়িতে সুন্দর সহাবস্থানে থাকার আওতাভুক্ত। আল্লাহর নাফরমানি হয় না, এমন প্রতিটি কাজে স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর জন্য ওয়াজিব। এমনকি ‘উলামাগণ বলেছেন, স্বামীর আনুগত্য করা পিতামাতার আনুগত্যের চেয়েও অগ্রাধিকারযোগ্য। অর্থাৎ আনুগত্যের ক্ষেত্রে পিতামাতার অধিকারের চেয়ে স্ত্রীর ওপর স্বামীর অধিকারই প্রাধান্য পাবে।

তাঁরা বলেছেন, স্বামী যদি স্ত্রীকে এমন কাজের আদেশ দেয়, যা কোনো পাপের কাজ নয়, আবার তার (স্ত্রীর) পিতা যদি তাকে এমন কাজের আদেশ দেয়, যা কোনো পাপের কাজ নয়, তাহলে তার জন্য স্বীয় স্বামীর আনুগত্য করাই আবশ্যক হবে। এমনকি স্বামী যদি স্ত্রীকে তার পরিবারের কাছে যেতে বাধা দেয়, যদিও কাজটি স্বামীর জন্য বৈধ নয়, তথাপি এক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য করাই হবে তার জন্য ওয়াজিব।

কোনো ক্ষতি না থাকা সত্ত্বেও এমনিতেই স্ত্রীকে (পরিবারের কাছে যেতে) বাধা দেওয়া স্বামীর জন্য জায়েজ নয়। কিন্তু যখন স্বামী তদীয় স্ত্রীকে এ কাজের নির্দেশ দিবে, তখন তা পালন করা আবশ্যক বিবেচিত হবে। মহান আল্লাহ বলেছেন, “নেককার স্ত্রীগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাজতযোগ্য করে দিয়েছেন লোকচক্ষুর অন্তরালেও তারা তা হেফাজত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা করো, তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ করো এবং প্রহার করো। তারা যদি তোমাদের অনুগত হয়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোনো পথ অনুসন্ধান কোরো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমুন্নত, সুমহান।” [১]

স্বামীর আনুগত্য যে স্ত্রীর ওপর ওয়াজিব, তার দলিল এ আয়াতে রয়েছে। তিনটি দিক থেকে এ দলিল গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথম দিক: আয়াতে উদ্ধৃত ‘ক্বানিতাহ’ তথা ‘অনুগতা’ বিশেষণটি সে মহিলার জন্যই প্রযোজ্য হয়, যে তদীয় স্বামীর আনুগত্য করে। এ ব্যাখ্যা করেছেন ইবনু ‘আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) ও একাধিক সালাফ। সুতরাং ‘অনুগতা’ মহিলা তিনিই, যিনি নিজের স্বামীর আনুগত্য করেন। সালাফদের থেকে এমন তাফসীরই বর্ণিত হয়েছে। [২]

দ্বিতীয় দিক: স্বামী যখন স্ত্রীর থেকে অবাধ্যতার আশঙ্কা করবে, অথবা স্ত্রী অবাধ্যতা করবে, তখন সেক্ষেত্রে স্বামীর জন্য আল্লাহ বৈধতা দিয়েছেন, সে তার স্ত্রীকে সদুপদেশ দিবে। যদি স্ত্রী সদুপদেশ না শোনে, তাহলে আল্লাহ বৈধতা দিয়েছেন, এক্ষেত্রে স্বামী তার স্ত্রীর সাথে শয্যায় যাওয়া বর্জন করতে পারবে। এরপরও যদি স্ত্রী না শোনে, তাহলে আল্লাহ বৈধতা দিয়েছেন, এক্ষেত্রে স্বামী তদীয় স্ত্রীকে প্রহার করতে পারবে। সেটা হবে এমন প্রহার, যা তার রাগের প্রকাশ ঘটায় মাত্র, উগ্রতার দরুন জখম করে দেয় না।

বরং প্রহার হবে অতি সামান্য, যা কেবল রাগের প্রকাশ ঘটায়। স্বামীর আনুগত্য করা যদি ওয়াজিব না হতো, তাহলে আনুগত্য পরিত্যাগের দরুন স্ত্রীকে শাস্তি দেওয়া সিদ্ধ হতো না।

তৃতীয় দিক: এ আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, “তারা যদি তোমাদের অনুগত হয়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোনো পথ অনুসন্ধান কোরো না।” এ কথা প্রমাণ করছে, স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর জন্য ওয়াজিব। আর স্ত্রী তদীয় স্বামীর আনুগত্য না করলে, স্বামীর জন্য সুযোগ তৈরি হয় যে, সে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অন্য পথ অনুসন্ধান করবে (অর্থাৎ ক্রমান্বয়ে সদুপদেশ, শয্যা বর্জন, প্রহার)। সুতরাং এ আয়াতাংশটি আনুগত্যের আবশ্যকতা প্রমাণ করে।

আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “কোনো মহিলা যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমাজানের রোজা রাখে, যৌনাঙ্গের হেফাজত করে, আর স্বামীর অনুগত্য করে, সে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে দরজা দিয়েই প্রবেশ করবে।” ইবনু হিব্বান তাঁর ‘সহিহ’ গ্রন্থে এ হাদিস বর্ণনা করেছেন। আল-আলবানি বলেছেন, এ হাদিসের সনদ: হাসান লি গাইরিহি। [৩]

আহমাদের বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “কোনো মহিলা যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমাজানের রোজা রাখে, যৌনাঙ্গের হেফাজত করে, আর স্বামীর অনুগত্য করে, তাকে বলা হবে, তুমি যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করো।” [৪]

এখানে দলিল হচ্ছে: হাদিসে উল্লিখিত বিধানগুলোর সংযোগ। বলা হয়েছে, ‘কোনো মহিলা যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে’, আর এ কাজ ফরজ। এরপর বলা হয়েছে, ‘রমাজানের রোজা রাখে’, এটাও ফরজ বিধান। তারপর বলা হয়েছে, ‘যৌনাঙ্গের হেফাজত করে’, এটাও ফরজ। সবশেষে বলা হয়েছে, ‘আর স্বামীর অনুগত্য করে’, এটাও ফরজ বিধান। এ বিধানগুলো পালন করলে তাকে বলা হবে, তুমি যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করো।

উপরন্তু যে রমনী স্বামীর আনুগত্য করে না, তার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি বর্ণিত হয়েছে। ইবনু ‘উমার (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “দু ব্যক্তির নামাজ তাদের মাথা অতিক্রম করে না।” অর্থাৎ, মাথার ওপরে ওঠানো হয় না, নামাজের সওয়াব দেওয়া হয় না। হ্যাঁ, নামাজ পড়ার মাধ্যমে নামাজের দায়িত্ব পালন হয় বটে। কিন্তু তাদের দুজনকে নামাজের সওয়াব দেওয়া হয় না।

তারা কারা? নবিজি ﷺ বলেছেন, “একজন সেই গোলাম, যে তার মনিবের নিকট থেকে পলায়ন করেছে; যতক্ষণ না সে মনিবের কাছে ফিরে আসছে। অপরজন সেই মহিলা, যে তার স্বামীর অবাধ্য হয়েছে; যতক্ষণ না সে ফিরে আসে।” ত্বাবারানী ও হাকিম এ হাদিস বর্ণনা করেছেন। আলবানী এ হাদিসকে সহিহ ও হাসান বলেছেন। [৫]

সুতরাং মহিলা যখন তদীয় স্বামীর অবাধ্য হবে, তখন তার নামাজের সওয়াব তাকে দেওয়া হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার অবাধ্যতায় অটল থাকে। হ্যাঁ, কিছু ‘উলামা হাদিসটিকে শয্যায় অবাধ্যতার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছেন। কিন্তু সঠিক কথা হচ্ছে, হাদিসটি ব্যাপক, মহিলার সকল অবাধ্যতার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে।❞

·
পাদটীকা:
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂

[১]. সুরা নিসা: ৩৪।

[২]. তাফসীরে তাবারী, খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ২৯৪-২৯৫; গৃহীত: ইসলামওয়েব ডট কম।

[৩]. ইবনু হিব্বান, হা/৪১৬৩; তাবারানী, মু‘জামুল আওসাত, হা/৪৫৯৮; সহিহ তারগীব, হা/২৪১১; সনদ: হাসান লি গাইরিহি (তাহকিক: আলবানি)।

[৪]. আহমাদ, হা/১৬৬১; সহিহ তারগীব, হা/১৯৩২; সনদ: হাসান লি গাইরিহি (তাহকিক: আলবানি)।

[৫]. তাবারানী, মু‘জামুল আওসাত, হা/৩৬২৮; হাকিম, হা/৭৩৩০; সহিহুল জামি‘, হা/১৩৬; সিলসিলাহ সহিহাহ, হা/২৮৮; সহিহ তারগীব, হা/১৮৮৮ ও ১৯৪৮; সনদ: সহিহ, হাসান (তাহকিক: আলবানি); গৃহীত: দুরার ডট নেট।

·
উৎস:

https://youtu.be/vRXAqNLJa4M।

·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari

10/05/2022
▌স্বামী-স্ত্রীর অধিকার [শেষ পর্ব]·রচয়িতা: আল্লামাহ সুলাইমান বিন সালিমুল্লাহ আর-রুহাইলি হাফিযাহুল্লাহ·[স্ত্রীর অধিকার]স্ব...
09/05/2022

▌স্বামী-স্ত্রীর অধিকার [শেষ পর্ব]

·
রচয়িতা: আল্লামাহ সুলাইমান বিন সালিমুল্লাহ আর-রুহাইলি হাফিযাহুল্লাহ

·
[স্ত্রীর অধিকার]

স্বামীই কিশতির নাবিক, বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক। তার যেমন প্রাপ্য অধিকার আছে, তেমনি তার প্রদেয় অধিকারও রয়েছে। মুসলিম পতি আপন স্ত্রীর অধিকার আদায় করে মহান আল্লাহর নৈকট্য কামনা করে। সে দয়িতার অধিকার আদায় করে, কারণ সে তার দায়িত্বশীল। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, كُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، الإِمَامُ رَاعٍ وَمَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ فِي أَهْلِهِ وَهْوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ “তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। একজন পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।” [সহিহ বুখারি, হা: ৮৯৩; সহিহ মুসলিম, হা: ১৮২৯] একজন পুণ্যবান পুরুষ জানে, তাকে স্ত্রীর দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে এবং সে এই দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ফলে সে স্ত্রীর প্রতি কল্যাণকামী হতে আর স্ত্রীর হক আদায় করতে গিয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করে। সে জানে, এ কাজ আল্লাহকে ভয় করারই অন্তর্গত। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, فَاتَّقُوا اللَّهَ فِي النِّسَاءِ “তোমরা স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো।” [সহিহ মুসলিম, হা: ১২১৮; হজ অধ্যায় (১৬); পরিচ্ছেদ: ১৯]

পুণ্যবান পুরুষ নিজ স্ত্রীর অধিকার আদায় করে। কেননা তার জানা রয়েছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মর্মে অসিয়ত করেছেন। সে ভয় ও আশঙ্কা করে, হয়তো সে তার প্রাণপ্রিয় রসুল ও আদর্শমানব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসিয়ত নষ্ট করে ফেলবে। কারণ আমাদের প্রাণপ্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا “(তোমাদের অসিয়ত করা হচ্ছে) তোমরা স্ত্রীবর্গের প্রতি কল্যাণকামী হও।” [সহিহ বুখারি, হা: ৫১৮৬; সহিহ মুসলিম, হা: ১৪৬৮]

বরকতময় সৎ পুরুষ স্ত্রীর হক আদায় করে। কারণ সে জানে, স্ত্রী তাঁর নিকটে প্রদত্ত আমানত। কার আমানত? নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের মহান পালনকর্তা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত আমানত। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانَةِ اللَّهِ “তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত দিয়ে গ্রহণ করেছ।” [সহিহ মুসলিম, হা: ১২১৮; হজ অধ্যায় (১৬); পরিচ্ছেদ: ১৯; আবু দাউদ, হা: ১৯০৫; হাদিসের শব্দগুচ্ছ আবু দাউদের]

কল্যাণময় পুণ্যবান স্বামী আপন পত্নীর অধিকার বিনিময় হিসেবে আদায় করে না। বরং সে নিজের দায়িত্ব হিসেবে দয়িতার অধিকার আদায় করে। কেননা সে তার রবের সামনে নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। হে পুরুষসকল, এজন্য আমাদের উচিত আমাদের স্ত্রীদের অধিকারগুলো জেনে নেওয়া এবং আমাদের সন্তানদেরও তা শিক্ষা দেওয়া; যেন আমরা আমাদের ওপর অর্পিত অবশ্যপালনীয় আমানত আদায় করতে পারি।

·
[এক. স্ত্রীর যথোচিত ভরণপোষণের বন্দোবস্ত করা]

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর একটি অন্যতম অধিকার—লোকাচারে প্রচলিত হিসেব অনুযায়ী স্বামী নিজ স্ত্রীর জন্য ব্যয় করবে। নিজে যখন খাবে, তখন তাকেও খাওয়াবে। নিজে যখন পরিধান করবে, তখন তাকেও পরিধান করাবে। পুরুষের কর্তব্য হচ্ছে—সে প্রথাগতভাবে প্রচলিত পরিমাণ অনুসারে স্ত্রীর জন্য খরচ করবে এবং স্ত্রীর আহার্যের ব্যবস্থা করবে। এতে অপচয় ও কার্পণ্য কোনোটাই করবে না। প্রথায় প্রচলিত খরচের চেয়ে কম করে সে স্ত্রীর প্রতি নিজের সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করবে না। আবার প্রথায় প্রচলিত খরচের চেয়ে বেশি করে সে নিজের ওপর সাধ্যাতীত ভারও চাপিয়ে না। কারণ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ “তোমাদের ওপর তাদের (স্ত্রীদের) ন্যায়সঙ্গত ভরণপোষণ ও পোশাক-পরিচ্ছদের অধিকার রয়েছে।” [সহিহ মুসলিম, হা: ১২১৮; হজ অধ্যায় (১৬); পরিচ্ছেদ: ১৯]

·
[দুই. স্ত্রীর প্রতি সদাচার করা]

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অন্যতম অধিকার—স্বামী প্রথানুযায়ী যতরকম সদাচার আছে তা স্ত্রীর জন্য ধার্য করবে। বিশ্ব-পালনকর্তা আল্লাহর শরিয়ত লঙ্ঘিত হয় না এমন সমুদয় ক্ষেত্রে স্ত্রীর প্রতি সদাচার করবে। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, أَلاَ وَحَقُّهُنَّ عَلَيْكُمْ أَنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ “জেনে রাখ, তোমাদের প্রতি তাদের অধিকার হলো—তোমরা তাদের প্রতি সদাচার করবে।” [তিরমিজি, হা: ১১৬৩ ও ৩০৮৭; ইবনু মাজাহ, হা: ১৮৫১; সনদ: হাসান]

·
[তিন. বিশেষ অবস্থা ছাড়া স্ত্রীকে প্রহার না করা]

স্বামীর প্রতি সহধর্মিণীর অন্যতম অধিকার—সে আপন জীবনসঙ্গিনীকে প্রহার করবে না। স্ত্রীকে প্রহার করার অনুমতি স্বামীকে দেওয়া হয়নি। তবে স্ত্রী অবাধ্য হবে বলে আশঙ্কা হলে, স্ত্রী স্বামীর অবাধ্যতা করলে এবং তাকে আদব শেখানোর জন্য প্রহার ভিন্ন অন্য কোনো উপায় না থাকলে প্রহারের অনুমতি রয়েছে। স্ত্রীকে উপদেশ দেওয়া সত্ত্বেও সে উপদেশ না মানলে এবং তাকে বয়কট করেও কাজ না হলে স্বামী তাকে প্রহার করতে পারবে। কিন্তু সে দয়ার্দ্র শিষ্টাচার-শিক্ষাদাতার মতো মারবে, প্রতিশোধগ্রহণকারী শাস্তিদাতার মতো নয়। আর তার চেহারায় আঘাত করা বিলকুল না-জায়েজ।

বলা বাহুল্য, স্ত্রীকে অননুমোদিত উপায়ে এবং অননুমোদিত ক্ষেত্রে প্রহার করা জুলুম। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَن ضرَب سوطًا ظُلْمًا اقتُصَّ منه يومَ القيامةِ “যে লোক জুলুম করে কাউকে একটি আঘাতও করেছে, এর দরুন কেয়ামতের দিন তার নিকট থেকে বদলা নেওয়া হবে।” [বুখারি কৃত আদাবুল মুফরাদ, হা: ১৮৬; সনদ: হাসান] নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অধিকার প্রসঙ্গে বলেছেন, وَلَا يَضْرِبْ الْوَجْهَ “সে কখনও তার মুখমণ্ডলে আঘাত করবে না।” [আবু দাউদ, হা: ২১৪২; ইবনু মাজাহ, হা: ১৮৫০; সনদ: সহিহ]

মহান আল্লাহ বলেছেন, وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ ۖ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا “আর যাদের (যে স্ত্রীদের) অবাধ্যতার আশঙ্কা করো, তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ করো এবং প্রহার করো। তারা যদি তোমাদের অনুগত হয়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোনো পথ অনুসন্ধান কোরো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমুচ্চ, সুমহান।” [সুরা নিসা: ৩৪] মুফাসসিরগণ বলেন, স্ত্রী যদি ধর্মপতির কথা মান্য করে, তাহলে তাকে প্রহার করা কিংবা বয়কট করার কোনো উপায় নেই। আল্লাহ আয়াতের শেষে বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ সমুচ্চ, সুমহান।’ এ আয়াতাংশে স্বামীদের প্রতি ধমক ও হুঁশিয়ারি রয়েছে। তারা যদি স্ত্রীদের প্রতি সীমালঙ্ঘন করে, তবে সমুচ্চ ও সমুহান আল্লাহই হবেন তাদের অভিভাবক। তাদের প্রতি যারা জুলুম করেছে, তাদেরকে তিনি কঠোর শাস্তি দেবেন।

সুতরাং হে ধর্মপতি, তুমি যদি নিজেকে শক্তিধর মনে করে থাক, স্ত্রীকে প্রহারে সক্ষম মনে করে থাক এবং আল্লাহর অনুমোদন ছাড়াই, আর কোনো সমস্যা ব্যতিরেকেই স্ত্রীকে প্রহার করতে চাও, তবে মনে রেখ, তার অভিভাবক সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান, তার অভিভাবক সমুচ্চ ও সুমহান। আল্লাহর বান্দা, তোমার রবকে ক্রোধান্বিত করা থেকে সাবধান থাক। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لاَ يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُونَهُ ‏.‏ فَإِنْ فَعَلْنَ ذَلِكَ فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ “স্ত্রীদের প্রতি তোমাদের অধিকার হচ্ছে, তারা যেন তোমাদের শয্যায় এমন কোন লোককে বসতে না দেয় যাকে তোমরা অপছন্দ কর। যদি তারা এরূপ করে, তবে তাদেরকে হালকা প্রহার করো।” [সহিহ মুসলিম, হা: ১২১৮; হজ অধ্যায় (১৬); পরিচ্ছেদ: ১৯]

নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, لَا تَضْرِبُوا إِمَاءَ اللَّهِ فَجَاءَ عُمَرُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: ذَئِرْنَ النِّسَاءُ عَلَى أَزْوَاجِهِنَّ، فَرَخَّصَ فِي ضَرْبِهِنَّ “তোমরা আল্লাহর দাসীদের মারবে না। অনন্তর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললেন, ‘মহিলারা তাদের স্বামীদের অবাধ্য হচ্ছে।’ তখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে প্রহার করার অনুমতি দিলেন।” [আবু দাউদ, হা: ২১৪৬; ইবনু মাজাহ, হা: ১৯৮৫; সনদ: সহিহ; হাদিসের উদ্ধৃত শব্দগুচ্ছ আবু দাউদে রয়েছে]

নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে প্রহার করার অনুমতি দিলেন। কারণ কী? কারণ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন স্ত্রীদের প্রহার করতে নিষেধ করলেন, তখন পুরুষরা পুরোপুরি নিজেদের হাতকে সংযত করে ফেলল। ফলে কিছু মহিলা তাদের স্বামীদের অবাধ্য হলো। তখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে প্রহার করার অনুমতি দিলেন। পরে দেখা গেল, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবারের কাছে অনেক মহিলা উপস্থিত হলো, তারা তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছিল। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, لَقَدْ طَافَ بِآلِ مُحَمَّدٍ نِسَاءٌ كَثِيرٌ يَشْكُونَ أَزْوَاجَهُنَّ لَيْسَ أُولَئِكَ بِخِيَارِكُمْ “মুহাম্মাদের পরিবারের কাছে অনেক মহিলা তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এসেছে। প্রকৃতপক্ষে এসব লোকেরা (যারা অন্যায়ভাবে স্ত্রীদের প্রহার করে) তোমাদের মধ্যে উত্তম মানুষ নয়।” [সহিহ বুখারি, হা: ৫৩৬৩]

সুতরাং হে ধর্মপতি, আল্লাহর অনুমোদন ব্যতীত অন্যক্ষেত্রে তোমার স্ত্রীকে প্রহার করার মতো কাজ উত্তম কর্ম নয়।

·
[চার. কথা ও কাজে স্ত্রীর প্রতি মমতা প্রকাশ করা]

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর একটি অন্যতম অধিকার—সে কথা ও কাজের মাধ্যমে স্ত্রীর প্রতি মমতা ও ভালোবাসা প্রকাশ করবে। যদিও সে কথায় অতিরঞ্জন করা হয়ে থাকে, কিংবা প্রশংসায় এমন অতিশয়োক্তি থাকে যা বাস্তবে স্ত্রীর মাঝে নেই, অথবা তাকে এমন হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার কথা জানানো হয়ে থাকে, যা বাস্তবিক ভালোবাসার চেয়ে অনেক অতিরঞ্জিত। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীর কাছে স্বামীর আলাপে এবং স্বামীর কাছে স্ত্রীর আলাপে মিথ্যে বলার অনুমোদন দিয়েছেন।

সুপ্রিয় উপস্থিতি, বাড়িতে সুখের আবেশ নিয়ে আসবে এমন মিথ্যে কথা স্ত্রীর কাছে বলায় কোনো সমস্যা নেই। স্বামী হয়তো সহধর্মিণীর এমন রূপলাবণ্যের কথা ব্যক্ত করল, বাস্তবে যেই রূপমাধুরী তার মাঝে নেই। অথবা তার প্রতি এমন ভালোবাসা ও প্রণয়ের কথা ব্যক্ত করল, যেরূপ মমতা সে হৃদয়গহীনে অনুভব করে না। স্ত্রী যদি স্বামীর কাছে কোনো কিছুর আবদার করে, কিন্তু স্বামী তা নিয়ে আসতে অসমর্থ হয়, আর আশঙ্কা করে, ‘সে এটা আনতে পারবে না’—বললে তার জীবনসঙ্গিনী বিষণ্ন হবে, সুখের সংসার পরিণত হবে অগ্নিকুণ্ডে, তাহলে সে তাকে বলতে পারে, ‘আমি নিয়ে আসব ইনশাআল্লাহ।’ পরে এসে বলে দেবে, ‘আমি ওটা পেলাম না।’ কিংবা বলবে,‘ ওটার দাম অনেক, আমি এখন এই মূল্য দিতে পারছি না।’ এ জাতীয় মিথ্যা আসলেই কল্যাণকর, যেহেতু এসব মিথ্যা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সুখ ও শান্তি নিশ্চিত করছে।

সুপ্রিয় উপস্থিতি, পুণ্যবান স্বামী আপন ধর্মপত্নীর জন্য সাজুগুজু করে। পুরুষদের জন্য মানানসই সুরভি মেখে কান্তিময় অবয়ব নিয়ে সাজগোজ করে। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوف “আর নারীদের ওপর তাদের স্বামীদের যেরূপ অধিকার আছে, স্ত্রীদেরও আপন স্বামীদের ওপর তদ্রূপ ন্যায়সঙ্গত অধিকার রয়েছে।” [সুরা বাকারা: ২২৮] কুরআনের ভাষ্যকার ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, إِنِّي أُحِبُّ أَنْ أَتَزَيَّنَ لِلْمَرْأَةِ ، كَمَا أُحِبُّ أَنْ تَتَزَيَّنَ لِي الْمَرْأَةُ “আমার জন্য আমার সহধর্মিণীর সাজগোজ যেমন আমি পছন্দ করি, তেমনি আমার স্ত্রীর জন্যও আমি নিজে সাজগোজ করতে ভালোবাসি।” [ইবনু আবি শাইবা কৃত মুসান্নাফ, হা: ১৫৭১২]

অর্ধাঙ্গিনী স্ত্রীকে বাড়ির কাজে সহযোগিতা করা তার প্রতি স্বামীর ভালোবাসা ও মমতারই বহিঃপ্রকাশ। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যিনি ছিলেন আল্লাহর নবি, যিনি ছিলেন ওহিপ্রাপ্ত রসুল, তাঁর ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে, كان يكونُ في مِهْنَةِ أهلِهِ، فإذا حضرتِ الصَّلاةُ خرجَ إليها “তিনি নিজ পরিবারের (স্ত্রীদের) কাজেও যুক্ত হতেন। আর নামাজের সময় হলে তিনি বেরিয়ে যেতেন।” [ইবনু আবি শাইবা কৃত মুসান্নাফ, খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ২৭২; তাফসিরু ইবনি আবি হাতিম, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ২১৯৬; তাবারি কৃত তাফসির, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৪৭৬৮]

আমাদের নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উৎকৃষ্ট সঙ্গের মানুষ ছিলেন, তাঁর সঙ্গ উত্তমবোধ হতো। তিনি সদাপ্রফুল্ল থাকতেন। পরিবারের সাথে ক্রীড়াকৌতুক করতেন, তাদের সাথে কোমল আচরণ করতেন। তিনি সহধর্মিণী আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে দৌড়প্রতিযোগিতা করেছেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল তেপ্পান্নরও বেশি! আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে, একবার তিনি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সফরে গিয়েছিলেন। তখন তিনি বালিকা। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের বললেন, ‘তোমরা সামনে আগাও।’ তাঁরা সামনে এগিয়ে গেলেন।

এরপর তিনি আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, ‘এসো, তোমার সাথে দৌড়প্রতিযোগিতা করি।’ আম্মিজান বলেন, ‘আমি তাঁর সাথে দৌড়প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হলাম এবং তাঁকে হারিয়ে দিলাম।’ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ! রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সের মানুষ, তিনি সাহাবিদের একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং তাদের সাথেই সফর করছেন। সফরসঙ্গিনী হিসেবে তাঁর সাথে রয়েছেন সহধর্মিণী আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা। তিনি তাঁর সাহাবিদের বললেন, ‘তোমরা সামনে আগাও।’ তাঁরা সামনে এগিয়ে গেলেন। এরপর তিনি স্ত্রী আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, ‘এসো, তোমার সাথে দৌড়প্রতিযোগিতা করি।’

তিনি আল্লাহর রসুল হয়ে পত্নীর সাথে দৌড়প্রতিযোগিতা করেছেন এবং পত্নীর কাছে পরাজিতও হয়েছেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেলামেশা আর আচরণের দিকে খেয়াল করুন। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলছেন, ‘এরপর তিনি ক্ষান্ত থাকলেন। পরবর্তীতে আমার মেদ যখন বেড়ে গেল, আমি মোটা হয়ে গেলাম। ততদিনে দৌড়প্রতিযোগিতার এ ঘটনাও ভুলে গিয়েছি। তখন একবার তাঁর সঙ্গে সফরে গেলাম। তিনি তাঁর সাহাবিদের বললেন, ‘তোমরা সামনে আগাও।’ তাঁরা সামনে এগিয়ে গেলেন। এরপর বললেন, ‘এসো, তোমার সাথে দৌড়প্রতিযোগিতা করি।’ আমি বললাম, ‘আমি এ অবস্থায় (মেদবহুল অবস্থায়) কীভাবে আপনার সাথে দৌড়প্রতিযোগিতা করব?’ তিনি প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘তুমি অবশ্যই করবে।’ আমি তাঁর সাথে আবার প্রতিযোগিতা করলাম। এবার তিনি আমায় হারিয়ে দিলেন। তিনি হাসতে লাগলেন, আর বললেন, ‘এটা হলো আগেরবার পরাজয়ের বদলা।’ [নাসায়ি কৃত সুনানুল কুবরা, খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ৮৯৪২; ইবনু হিব্বান, খণ্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ৪৬৯১; সিলসিলা সহিহা, হা: ১৩১; সনদ: সহিহ]

আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এ ঘটনা ভুলে গিয়েছিলেন। কিন্তু রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভুলেননি। তিনি তাঁর সহধর্মিণীর সাথে ক্রীড়াকৌতুক করেছেন, তাঁর প্রতি মমতা প্রকাশ করেছেন এবং তাঁর সাথে প্রতিযোগিতা করেছেন। প্রবল ধারণার ভিত্তিতে মনে হয়, এ ঘটনা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেষ জীবনে সংঘটিত হয়েছিল।

আমাদের নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গ-মেলামেশা কী নান্দনিকই না ছিল! আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা একদিন বলে ওঠলেন, وَا رَأْسَاهْ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : بَلْ أَنَا وَا رَأْسَاه ‘হায়! যন্ত্রণায় আমার মাথা গেল!’ এ শুনে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সহধর্মিণীর প্রতি সমব্যথী হয়ে) বললেন, ‘না, বরং যন্ত্রণায় আমারও মাথা গেল!’ [সহিহ বুখারি, হা: ৫৬৬৬]

আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন, كُنْتُ أَتَعَرَّقُ الْعَظْمَ وَأَنَا حَائِضٌ، فَأُعْطِيهِ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم فَيَضَعُ فَمَهُ فِي الْمَوْضِعِ الَّذِي فِيهِ وَضَعْتُهُ وَأَشْرَبُ الشَّرَابَ فَأُنَاوِلُهُ فَيَضَعُ فَمَهُ فِي الْمَوْضِعِ الَّذِي كُنْتُ أَشْرَبُ مِنْهُ ‏ “আমি ঋতুমতী অবস্থায় হাড় চুষে খেয়ে তা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিতাম। তিনিও তাঁর মুখ হাড়ের ওই স্থানে লাগাতেন, যেখানে আমি লাগিয়েছি। আবার পানীয় দ্রব্য পান করে তাঁকে দিতাম। তিনি তখনও ওই স্থানে মুখ লাগিয়ে পান করতেন, যেখানে মুখ লাগিয়ে আমি পান করেছি।” [সহিহ মুসলিম, হা: ৩০০; আবু দাউদ, হা: ২৫৯; হাদিসের উদ্ধৃত শব্দগুচ্ছ আবু দাউদের]

আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা আরও বলেছেন, كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَضَعُ رَأْسَهُ فِي حِجْرِي فَيَقْرَأُ وَأَنَا حَائِضٌ ‏ “রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঋতুমতী অবস্থায় আমার কোলে মাথা রেখে কুরআন তেলাওয়াত করতেন।” [সহিহ বুখারি, হা: ২৯৭ ও ৭৫৪৯; সহিহ মুসলিম, হা: ৩০১; আবু দাউদ, হা: ২৬০; হাদিসের উদ্ধৃত শব্দগুচ্ছ আবু দাউদের]

সহধর্মিণী ঋতুমতী হলেও নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই সেমিজের মধ্যে তার সাথে রাত কাটাতেন। ঋতুস্রাবের রক্ত তার গায়ে লেগে গেলে তিনি ওই জায়গাটুকু ধুয়ে ফেলতেন, যেখানে রক্ত লেগেছে। [আবু দাউদ, হা: ২৬৯; নাসায়ি, হা: ২৮৪; সনদ: সহিহ] রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্র থেকে তাঁর স্ত্রীর সাথে মিলে গোসল করতেন। [সহিহ বুখারি, হা: ২৭৩; সহিহ মুসলিম, হা: ৩২১]

এই ছিল আমাদের নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেলামেশা। তিনি ছিলেন আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর মধ্যে আমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। অথচ দেখা যায়, কিছু স্বামী বলে বসেন, ‘আমাদের এত সময় নেই, আমাদের বয়স হয়ে গেছে, এসবের প্রয়োজন ফুরিয়েছে আমাদের।’ অথচ এই তো আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি যে দায়িত্বের বোঝা বহন করেছেন, লক্ষকোটি লোকও তা বহন করে না। তিনি উম্মতের দায়িত্ব বহন করেছেন, রিসালাতের দায়িত্ব পালন করেছেন। জীবনের দীর্ঘ একটি সময় কাটিয়ে ফেলেছেন। সেই তিনি কিনা আপন সহধর্মিণীর সাথে দৌড়প্রতিযোগিতা করেছেন। এমনকি প্রতিযোগিতার জন্য সুযোগের প্রতীক্ষাও করেছেন। সুপ্রিয় উপস্থিতি, ব্যাপারটি কতইনা চমৎকার! একজন পুরুষ তার স্ত্রীকে নিয়ে কোনো এক জায়গায় বেড়াতে যাবে, তার সাথে খেলাধূলা করবে, প্রতিযোগিতা করবে, খোশ করে দেবে তার দিল!

·
[পাঁচ. স্ত্রীকে গালিগালাজ না করা]

স্ত্রীকে গালিগালাজ না করা এবং তাঁর কলেবর ও কর্মাদিকে কুৎসিত আখ্যা না দেওয়া স্বামীর প্রতি স্ত্রীর একটি অন্যতম অধিকার। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অধিকার প্রসঙ্গে বলেছেন, وَلَا يُقَبِّحْ “স্বামী তাকে গালিগালাজ করবে না।” [আবু দাউদ, হা: ২১৪২; ইবনু মাজাহ, হা: ১৮৫০; সনদ: সহিহ]

·
[ছয়. বিনা দোষে স্ত্রীকে বয়কট না করা]

বিনা দোষে স্ত্রীকে বয়কট না করা স্বামীর প্রতি স্ত্রীর আরেকটি অধিকার। তবে তাকে বয়কট করার মতো কারণ উপস্থিত হলে আদব শেখানোর জন্য তাকে বয়কট করা সিদ্ধ হবে। স্ত্রীকে বয়কট করা স্বামীর জন্য বৈধ হলে সে স্ত্রীর বাসগৃহকে বর্জন করবে না। বরং স্ত্রীর বাড়িতেই (তথা স্বামীর আপন গৃহেই) তাকে বয়কট করবে। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অধিকার প্রসঙ্গে বলেছেন, وَلَا يَهْجُرْ إِلَّا فِي الْبَيْتِ “নিজ বাড়ি ছাড়া অন্যত্র তাকে বয়কট করবে না।” [প্রাগুক্ত]

·
[সাত. স্ত্রীর গুপ্তবিষয় ফাঁস না করা]

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর একটি অন্যতম অধিকার—সে নিজ ধর্মপত্নীর গুপ্তবিষয় ফাঁস করবে না, স্ত্রী যে গুপ্তবিষয়ের দ্বার রুদ্ধ করেছে তা নিয়ে আলাপ করবে না। বিশেষত স্ত্রী-মিলন সম্পর্কিত বিষয় কাউকে জানাবে না। এ বিষয়ক দলিলপ্রমাণ আমরা ইতঃপূর্বে আলোচনা করেছি ‘স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অধিকার’ শীর্ষক আলোচনায়।

·
[আট. স্ত্রীকে ক্রোধান্বিত না করা এবং শুধু তার দোষত্রুটি না দেখা]

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর একটি অন্যতম অধিকার—সে স্বীয় জীবনসঙ্গিনী স্ত্রীকে ক্রোধান্বিত করবে না, শুধু তার দোষত্রুটির প্রতি নজর দেবে না, বরং তার ভালো গুণগুলোও দেখবে। ভালো বৈশিষ্ট্যগুলোকে বড়ো করে দেখবে, আর মন্দ গুণগুলোকে ছোটো হিসেবে উপেক্ষা করবে। সে যথাসাধ্য চেষ্টা করবে, স্ত্রীর মধ্যে কল্যাণ বৈ অন্যকিছু না দেখতে। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, لاَ يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ “কোনো মুমিন পুরুষ যেন কোনো মুমিন নারীর প্রতি বিদ্বেষ-ঘৃণা পোষণ না করে। কেননা তার কোনো চরিত্রবৈশিষ্ট্যকে অপছন্দ করলেও সে তার অন্য কোনো চরিত্রবৈশিষ্ট্যকে পছন্দ করতে পারে।” [সহিহ মুসলিম, হা: ১৪৬৯; স্তন্যপান অধ্যায় (১৮); পরিচ্ছেদ: ১৮]

·
[নয়. স্ত্রীর নিকট থেকে যতটুকু সম্ভব ততটুকু লাভ করেই সন্তুষ্ট থাকা]

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর একটি অন্যতম অধিকার—সে তার নিকট থেকে যতটুকু সম্ভব ঠিক ততটুকুই গ্রহণ করবে এবং স্ত্রীর মর্জির প্রতি খেয়াল রেখে যতটুকু লাভ করা সম্ভব তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, اسْتَوْصُوْا بِالنِّسَاءِ فَإِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ أَعْلَاهُ فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيْمُهُ كَسَرْتَهُ وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ فَاسْتَوْصُوْا بِالنِّسَاءِ “তোমরা নারীদের প্রতি কল্যাণকামী হও। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে ওপরের হাড়টি বেশি বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে তা ভেঙে যাবে, আর যদি বিলকুল ছেড়ে দাও, তাহলে সব সময় তা বাঁকাই থেকে যাবে। কাজেই নারীদের প্রতি তোমরা কল্যাণকামী হও।” [সহিহ বুখারি, হা: ৩৩৩১; সহিহ মুসলিম, হা: ১৪৬৮; হাদিসের উদ্ধৃত শব্দগুচ্ছ সহিহ মুসলিমের]

নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, إِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ لَنْ تَسْتَقِيمَ لَكَ عَلٰى طَرِيقَةٍ فَإِنِ اسْتَمْتَعْتَ بِهَا اسْتَمْتَعْتَ بِهَا وَبِهَا عِوَجٌ وَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيْمُهَا كَسَرْتَهَا وَكَسْرُهَا طَلَاقُهَا “নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, কক্ষনো সে তোমার জন্য সোজা হবার নয়। অতএব তুমি যদি তার নিকট থেকে ফায়দা নিতে চাও, তবে ঐ বক্রাবস্থাতেই তা আদায় করতে হবে। তুমি যদি সোজা করতে যাও, তবে ভেঙে ফেলতে পার। ‘ভেঙে ফেলা’র মানে তাকে (উপায় না পেয়ে) তালাক প্রদান করা।” [সহিহ বুখারি, হা: ৩৩৩১; সহিহ মুসলিম, হা: ১৪৬৮]

সুপ্রিয় উপস্থিতি, এ হাদিসের মর্ম হচ্ছে, পুরুষকে তার সহধর্মিণীর মেজাজ বুঝতে হবে। তার মেজাজ-মর্জির প্রতি খেয়াল রেখে তার থেকে যতটুকু লাভ করা সম্ভব তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে। তার ওপর সাধ্যাতীত ভার চাপিয়ে দেবে না। তার ভুলগুলো উপেক্ষা করবে। কারণ সে পাঁজরের অস্থি থেকে সৃষ্ট হয়েছে।

·
[দশ. স্ত্রীর সাথে সর্বোত্তম চরিত্রমাধুর্য রক্ষা করে চলা]

স্বামীর ওপর স্ত্রীর আরেকটি অধিকার—সে আপন পত্নীর সাথে সর্বোত্তম চরিত্রমাধুর্য রক্ষা করে চলবে এবং দয়িতার প্রতি তার উত্তমতা ও উৎকৃষ্টতা হবে সুস্পষ্ট-প্রকাশিত। কিন্তু কিছু মানুষকে দেখা যায়, তারা বাজারঘাটে সর্বোত্তম চরিত্রমাধুর্যের অধিকারী মানুষ, বন্ধুবান্ধবের সাথে এমনকি জনমানুষের সাথেও তারা সর্বোৎকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী। এদের উত্তমতা ও উৎকৃষ্টতা সুস্পষ্ট, প্রকাশিত। কিন্তু সে-ই যখন বাড়িতে ঢুকে, তখন পরিণত হয় হিংস্র সিংহে! তার মধ্যে কোনো কল্যাণের দেখা মেলে না, বরং সে হয়ে থাকে অশ্রাব্য গালিগালাজকারী, ক্রোধে উন্মত্ত! তার জন্য কোনো সুন্দর কথা শোনাও দায় হয়ে ওঠে, আর না তার কাছ থেকে শোনা যায় কোনো ভালো কথা। অথচ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا وَخِيَارُكُمْ خِيَارُكُمْ لِنِسَائِهِمْ خُلُقًا ‏ “তোমাদের মধ্যে সে-ই ইমানে পরিপূর্ণ মুমিন ব্যক্তি, যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। যেসব লোক নিজেদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম, তারাই তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম।” [তিরমিজি, হা: ১১৬২; সনদ: সহিহ]

আল্লাহর বান্দা, তোমার বন্ধুবান্ধবের প্রতি তোমার সহযোগিতার মানেই তুমি উত্তমতার অধিকারী, ব্যাপারটি ঠিক এমন নয়। ওহে আল্লাহর বান্দা, মানুষের প্রতি তোমার কল্যাণকামিতার মানেই তুমি উত্তমতার অধিকারী, ব্যাপারটি তাও নয়। যদি আপন পরিবারের জন্য তোমার মাঝে উত্তমতা না থাকে তবে তুমি কোনোভাবেই উত্তম নও। তোমার পরিবারের জন্য যদি তোমার মাঝে কল্যাণ থাকে, পাশাপাশি মানুষের জন্যও কল্যাণ থাকে, তবে তুমি সুসংবাদ গ্রহণ করো, তুমি কল্যাণ ও উত্তমতার ওপরেই রয়েছ। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لأَهْلِهِ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لأَهْلِي “তোমাদের মাঝে সে-ই উত্তম, যে তার পরিবারের নিকট উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের নিকট তোমাদের সবার চেয়ে উত্তম।” [তিরমিজি, হা: ৩৮৯৫; সনদ: সহিহ]

·
[এগারো. জাহান্নাম থেকে স্ত্রীর নাজাতপ্রাপ্তির মাধ্যম হওয়া]

স্ত্রীকে ইলম শিখিয়ে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে, এসব কাজে ধৈর্যধারণ করে এবং সর্বোপরি জাহান্নামে যাওয়ার মাধ্যম থেকে স্ত্রীকে বিরত রেখে স্ত্রীর নাজাতপ্রাপ্তির মাধ্যম হওয়া স্বামীর ওপর স্ত্রীর একটি অন্যতম অধিকার। মহান আল্লাহ বলেছেন, قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ “তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারপরিজনকে রক্ষা করো অগুন হতে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।” [সুরা তাহরিম: ৬] আমাদের মহান রব বলেছেন, وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا “তোমার পরিবারবর্গকে নামাজের আদেশ দাও এবং তাতে অবিচল থাক।” [সুরা তহা: ১৩২]

·
[বারো. স্ত্রীর ব্যাপারে ঈর্ষান্বিত হওয়া]

অর্ধাঙ্গিনী স্ত্রীর ব্যাপারে ঈর্ষান্বিত হওয়া (Jealousy) স্বামীর ওপর স্ত্রীর আরেকটি অধিকার। ধর্মপত্নী দেখবে, তার আপন শৌহর তার ব্যাপারে ঈর্ষান্বিত হচ্ছে। কিন্তু ঈর্ষা হতে হবে বুদ্ধিসম্পন্ন, যা কল্যাণ আনয়ন করে, আর অকল্যাণকে প্রতিহত করে। স্বীয় সহধর্মিণীর ব্যাপারে সে ঈর্ষান্বিত হবে, যেন তার দেহসৌষ্ঠবের কোনো অংশ সে প্রকাশ করে না ফেলে। তার ব্যাপারে ঈর্ষান্বিত হবে, সে যেন পরপুরুষের প্রতি দৃকপাত না করে, যেন পরপুরুষের সাথে মেলামেশা না করে, বিনা প্রয়োজনে যেন পরপুরুষের সাথে কথা পর্যন্ত না বলে।

পক্ষান্তরে স্রেফ সন্দেহের বশবর্তী হয়ে আর বিনা কারণে ছিদ্রান্বেষণ হেতু আগত ঈর্ষা আসলে হারাম ঈর্ষা। কোনো কোনো পুরুষ নিজেকে খুব আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন ঈর্ষাপরায়ণ মানুষ মনে করে। তাকে দেখা যায়, সন্দেহ হওয়ার মতো কোনো কারণ ছাড়াই স্ত্রীর ছিদ্রান্বেষণে ব্যস্ত থাকে। বিনা কারণে স্ত্রীকে সন্দেহ করে বসে। বাড়িতে ঢুকলেই সেলফোন চেক করে, নম্বরগুলো দেখে নেয়। ফোন বাজলেই স্ত্রীর পাশে উপস্থিত হয়। ভালো করে শোনে, কার সাথে কথা বলছে। প্রকৃত ব্যাপার জানার জন্য অনুসন্ধান চালায়, গোয়েন্দাগিরি করে, স্ত্রীকে সন্দেহ করে।

স্ত্রীর কথা শুনে বলে ওঠে, ‘তুমি কী বোঝাতে চাইছ?’ বাইরের মানুষের কটুক্তি শোনলে বলে, ‘তারা তার স্ত্রীকেই মিন করছে।’ নিজের স্ত্রীকে সে সন্দেহ করে, আর বলে, ‘সে আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন ঈর্ষাপরায়ণ!’ এমন ঈর্ষা হারাম। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, مِنَ الْغَيْرَةِ مَا يُحِبُّ اللَّهُ وَمِنْهَا مَا يُبْغِضُ اللَّهُ، فَأَمَّا الَّتِي يُحِبُّهَا اللَّهُ فَالْغَيْرَةُ فِي الرِّيبَةِ، وَأَمَّا الْغَيْرَةُ الَّتِي يُبْغِضُهَا اللَّهُ فَالْغَيْرَةُ فِي غَيْرِ رِيبَةٍ “আল্লাহ এক প্রকার ঈর্ষা পছন্দ করেন এবং আরেক প্রকার ঈর্ষা ঘৃণা করেন। মহান আল্লাহ যেটা পছন্দ করেন তা হলো—সন্দেহজনক বিষয় বর্জনের জন্য কৃত ঈর্ষা। সন্দেহজনক বিষয় ব্যতীত অন্য ক্ষেত্রে ঈর্ষান্বিত হওয়াকে আল্লাহ ঘৃণা করেন।” [আবু দাউদ, হা: ২৬৫৯; নাসায়ি, হা: ২৫৫৮; সনদ: হাসান]

·
[শেষের উপদেশ]

ভাইয়েরা আমার, আদর্শ পরিবারগঠন এবং স্ত্রীর অধিকার আদায় প্রসঙ্গে এই ছিল শরিয়তের দিকনির্দেশনা। মুসলিম স্বামীরা যদি এসবের প্রতি আমল করে, তাহলে সবাই মহাসুখ ও প্রশান্তির পরশ পেয়ে ধন্য হবে। ভাইয়েরা, আমি আপনাদের কাছে স্বামী-স্ত্রীর অধিকার বিষয়ে কিঞ্চিৎ আলোচনা করলাম। আমি আপনাদের কাছে এ আলোচনায় যে হাদিসই উল্লেখ করেছি, সে হাদিসের সনদ বিষয়ে আমি জেনেছি, সনদের পর্যালোচনাও করেছি এবং এ ব্যাপারে আলেমগণের বক্তব্যও অধ্যয়ন করেছি। আলেমগণের মন্তব্য থেকে আমি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, আমার উদ্ধৃত প্রতিটি হাদিস দলিল হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী। আমি যে হাদিসই উল্লেখ করেছি, তার মান ‘হাসান’ কিংবা তার চেয়ে উঁচু পর্যায়ের। আলহামদুলিল্লাহ, এসব হাদিস সুসাব্যস্ত এবং দলিলগ্রহণেরও উপযুক্ত। আমরা এসবের মাধ্যমে আলোকিত হব। কেননা এগুলো আমাদের রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী।

পুণ্যবান স্বামীর কর্মপরিস্থিতি এমনই হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে অসৎ স্বামী নিজের অধিকার তলব করে, কিন্তু স্ত্রীর অধিকারের ব্যাপারে গাফেল থাকে। তার চলাফেরা হয় অত্যন্ত কদর্য। আর ঘৃণা করে বসে অল্পতেই। স্ত্রী তার কাছে কিছু আবদার করলে রাগে বিড়বিড় করে, অপছন্দ করে এসব আবদার। স্ত্রী বারবার চাইলে মুখ অন্ধকার করে ফেলে, আর বিকৃত মুখভঙ্গি করে। পীড়াপীড়ি করলে তো মারপিটই শুরু করে দেয়। বাড়িতে আসলে এমন পোশাকে থাকে, যার কোনো শ্রী-ই নেই। কিন্তু বাইরে বেরোলেই সাজগোজ শুরু করে, সুগন্ধি মাখে, চুল আঁচড়িয়ে নেয়, দাড়িতে চিরুনি করে, দাড়ির কেশবিন্যাস করে। অথচ সেই লোকটিই বাড়িতে এলে এমন মানুষে পরিণত হয়, যেন সে পেশাগত কর্মে ব্যস্ত! ভাইয়েরা আমার, এগুলোই সাংসারিক কলহ, বিবাহবিচ্ছেদ ও অনৈক্যের অন্যতম কারণ।

প্রিয় ভাইয়েরা, আমি একটি সার্বজনিক মূলনীতি বলে আমার আলোচনার ইতি টানব। লোকাচার সিদ্ধ নীতি মান্য করে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে পারস্পরিক মেলামেশা বজায় রাখা স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই অধিকার। মহান আল্লাহ বলেছেন, وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ “তোমরা স্ত্রীদের সাথে প্রথাসিদ্ধ পারস্পরিক মেলামেশা বজায় রাখ।” [সুরা নিসা: ১৯] মহান আল্লাহ বলেছেন, وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ “আর নারীদের ওপর তাদের স্বামীদের যেরূপ অধিকার আছে, স্ত্রীদেরও আপন স্বামীদের ওপর তদ্রূপ ন্যায়সঙ্গত অধিকার রয়েছে।” [সুরা বাকারা: ২২৮]

আলেমগণ বলেন, উদ্ধৃত আয়াতে ‘মারুফ (ন্যায়সঙ্গত বা যথোচিত)’ কথার মানে প্রথায় প্রচলিত নীতি। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের পারস্পরিক মেলামেশার ক্ষেত্রে প্রথায় যা প্রচলিত রয়েছে, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে তা জারি থাকা বাঞ্ছনীয়। এরই আওতাভুক্ত হবে স্বামী-স্ত্রী মিলে পরামর্শ করা, অন্যের অভিমতকে শ্রদ্ধা করা, অনাবিল সুখ আর নির্মল প্রশান্তি আনয়ন করে এমন যাবতীয় বিষয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করা। তাই স্ত্রী নিজের সমস্ত বিষয়ে স্বামীর সাথে পরামর্শ করে, তাঁর অভিমত গ্রহণ করে, তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে সম্মান করে, তাঁর বাড়ি দেখাশোনা করে, সুখী জীবনযাপনের জন্য তাঁর সাথে পারস্পরিক সহযোগিতায় এসে তাঁর সাথে ন্যায়সঙ্গত সম্পর্ক বজায় রাখে। তদ্রুপ স্বামীও আপন স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে, তাঁর অভিমত সঠিক হলে তা গ্রহণ করে, তাঁর পরিবারের লোকদের সাথে সদাচার করে এবং প্রথা অনুসারে তার কাজকর্মে ভালো বিষয় তালাশ করে তার সাথে ন্যায়সঙ্গত সম্পর্ক বজায় রাখে।

·
[পরিশিষ্ট]

আমি একটি নসিহত করে আমার আলোচনা শেষ করতে চাই। সকল স্বামী-স্ত্রীর সবচেয়ে বড়ো কর্তব্য হচ্ছে—দ্বীনভিত্তিক গৃহ বিনির্মাণে পরস্পরকে সহযোগিতা করা, সততা ও ধার্মিকতার প্রতি স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া এবং দ্বীন পালনে পরস্পরকে সহয়তা করে যাওয়া। এতেই আসবে অন্তরের প্রশান্তি, হার্দিক সুখের আমেজ, আর গৃহে বিরাজ করবে এমন চরম সুখ, যার পরে আর কোনো সুখ থাকতে পারে না। ওই সত্তা

Address

House 06, Road 08, Block/A, Mirpur 11
Khagrachhari
1216

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Ghotok Mama posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Practice

Send a message to Ghotok Mama:

Share