08/03/2024
"COLLECTED"
#জেনে_নিন
#কোন_কোন_রোগ_থাকলে_রোজা_না_রেখে রোজার পরিবর্তে #ফিদিয়া দিবেন-
মহান আল্লাহ পবিত্র কোর'আনুল কারীমে ইরশাদ করেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
(তরজমা) হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার।-সূরা বাকারা (২) : ১৮৩
অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেন-
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
(তরজমা) সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এ মাস পাবে, সে যেন অবশ্যই রোযা রাখে।- সূরা বাকারা (২) : ১৮৫
উপরের দুইটা আয়াতের মাধ্যমে সুস্পষ্ট প্রমানিত হয় যে, রোজার মাসে রোজা রাখা প্রতিটি মুসলিম নরনারীর কর্তব্য-
এবার আমাদের ডাক্তারদের জন্য যে বিষয় জানা দরকার,
একজন অসুস্থ রোগী আসছেন, তিনি রোজা রাখতে চাচ্ছেন,
তাহলে আপনি কি তাকে রোজা রাখতে নিষেধ করবেন?
আসুন- এই সংক্রান্ত পবিত্র কোরানের বিধিবিধান আগে দেখে নিই-
মহান আল্লাহ বলেন-
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ ١٨٥ ﴾ [البقرة: ١٨٥]
‘‘কাজেই তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ (রমযান) মাস পাবে, সে যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে আর যে #অসুস্থ কিংবা সফরে/ভ্রমণে আছে, সে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করবে, আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান, যা কষ্টদায়ক তা চান না যেন তোমরা মেয়াদ পূর্ণ করতে পার। (বাকারা : ১৮৫)
সিয়াম পালনে রোগীর কষ্ট হচ্ছে, তবু সে সিয়াম ভঙ্গ করতে রাজী নয়- এর হুকুম কি?
এ রোগীর রোযা পালন সঠিক নয়, বরং মাকরূহ। কারণ সে আল্লাহর দেয়া সুবিধা গ্রহণ না করে বরং নিজেকে শাস্তি দিচ্ছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ اللهَ يُحِبُّ أَنْ تُؤْتَى رُخَصَهُ كَمَا يَكْرِهُ أَنْ تُؤْتَى مَعَاصِيْهِ
আল্লাহর অবাধ্য হওয়াকে মাবুদ যেমন অপছন্দ করেন, তার দেয়া সুবিধাদি গ্রহণ করাকেও তিনি তেমন পছন্দ করেন। (আহমাদ : ২/১০৮)
সিয়াম পালনে রোগ বৃদ্ধি পাবে এবং ক্ষতিও হবে। তবু পরহেজগারী মনে করে সিয়াম পালন করে যাওয়া কেমন?
অবস্থা এমন হলে সিয়াম চালিয়ে যাওয়া কোন পরহেজগারী কাজ নয়। বরং এ অবস্থায় সিয়াম পালন করা নিষেধ এবং সওম ভঙ্গ করা জরুরী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿ ... وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا ٢٩ ﴾ [النساء: ٢٩]
তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের প্রতি অতিশয় দয়ালু। (সূরা নিসা : ২৯)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ لِنَفْسِكَ عَلَيْكَ حَقًّا
‘‘তোমার উপর তোমার আত্মার হক রয়েছে।’’ (আবূ দাঊদ : ১৩৬৯ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।)
নিজের বা অন্যের কারোরই ক্ষতি করার কোন অধিকার মানুষের নেই।
কোন সুস্থ ব্যক্তি দিনের কোন অংশে অসুস্থ হয়ে পড়ল, বাকী অংশ সিয়াম পালনে কষ্ট হচ্ছে- কী করবে?
#সিয়াম ভঙ্গ করে ফেলবে এবং পরে কাযা করে নেবে।
ক্ষুধা ও পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ে এবং জীবন নাশের আশঙ্কা করে তবে কী করবে?
#রোযা ভঙ্গ করবে এবং পরে এটা কাযা করবে।
এবার জেনে নিন--
কোন কোন রোগে অবশ্যই রোজা রাখা নিষেধ -
১. Type-2 DM patient রোজার আগের ৩ মাসের মধ্যে যদি severe hypoglycemic ইভেন্ট (অর্থাৎ Blood sugar কমে গিয়ে পেশেন্ট অসুস্থ হয়ে যাবার ঘটনা) হয়ে থাকে, যার জন্য হাসপাতাল নেওয়া লাগছে, তাহলে এমন ব্যক্তি রোজা রাখবেনা- (Note- রোজা রাখলেও একজন ডায়াবেটিস ডাক্তার এর সাথে পরামর্শ ক্রমে রোজা রাখবে)
২. যাদের recurrent hypoglycemia এর হিস্ট্রি আছে, তারা রোজা রাখবেনা- (অর্থা এমন ডায়াবেটিস এর পেশেন্ট যার রোজার আগের কয়েক মাসে কয়েক বার ব্লাড সুগার কমে গিয়েছিলো.
৩.. poorly uncontrolled Type-1 Diabetes mellitus
৪.. CKD এর পেশেন্ট যার ডায়ালাইসিস চলমান, কিংবা যার
CKD stage 3 অথবা 4.. (অর্থাৎ কিডনি রোগী, যার সেরাম ক্রিয়েটিনিন 2 mg/dl এর বেশি বা কাছাকাছি) অবশ্যই আপনার eGFR calculate করে staging করে রোগীকে সঠিক পরামর্শ দিতে হবে. CKD stage 3 /4 এ রোজা রাখলে eGFR আরো কমে acute renal failure develop করতে পারে--
৫..গর্ভবতী মহিলা যার ডায়াবেটিস রয়েছে, তিনি রোজা রাখবেন না-
৬.. Acute illness, যেখানে দিনের বেলায় ঔষধ নিতে হবে, সেইক্ষেত্রেও রোজা রাখবেনা--
এবার জেনে নিই-
যারা রোজা পালমে অক্ষম, তারা হয়তো কোনো acute cause এর কারণে অক্ষম, যেমন acute illness, Typhoid, dengue, Gastroenteritis etc. অথবা ট্রাভেলিং ইত্যাদি-
এইসব মানুষ Acute cause চলে যাবার পরে সময় করে রোজা কাযা আদায় করে নিবে-
আর যারা Chronic disease এর কারণে রোজা রাখতে পারছেনা, তারা তো পরবর্তীতেও রোজা রাখতে পারবেনা,
তাদের বিধান হচ্ছে তারা প্রতিটি রোজার ফিদিয়া দিবে,
অর্থাৎ একটা রোজার বিনিময়ে একজন দরিদ্র লোককে
দুই বেলা খাবার খাওয়াবে, অথবা সমপরিমাণ টাকা দিয়ে তাকে খাবার কিনে দিবেন-খাবার খাওয়ানো অতি উত্তম.
আপনার অবস্থান বিবেচনা করে আপনি তাকে খাওয়াবেন,
পেশেন্ট সুস্থ থাকলে যদি তার প্রতি বেলায় ৪০০ টাকা মূল্যমানের খাবার খেতো, তাহলে ৪০০*২ =৮০০ টাকার বাজার খরচ করে দিবেন,
পেশেন্ট এর নিজের খাবারের মূল্য হিসাবে টাকা দিবেন-
আর যদি খাবার খাওয়ান, সেইক্ষেত্রেও খাবারের মানের দিকে লক্ষ রাখবেন-
এই সমপর্কে ইসলামের বিধান--
যে ব্যক্তি রমজান মাস পেলেন কিন্তু তিনি সিয়াম পালনে সক্ষম নয়- অতিশয় বৃদ্ধ হওয়ার কারণে অথবা এমন অসুস্থ হওয়ার কারণে যার আরোগ্য লাভের আশা করা যায় না,তার উপর সিয়াম পালন ফরজ নয়। তিনি রোযা ভঙ্গ করবেন এবং প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীনকে খাওয়াবেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :
( يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ * أَيَّاماً مَعْدُودَاتٍ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيضاً أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ فَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْراً فَهُوَ خَيْرٌ لَهُ وَأَنْ تَصُومُوا خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ )
[ 2 البقرة: 183-184]
“হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর। নির্দিষ্ট কয়েক দিন। তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে, কিংবা সফরে থাকবে, তাহলে অন্যান্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া তথা একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা। অতএব যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত সৎকাজ করবে, তা তার জন্য কল্যাণকর হবে। আর সিয়াম পালন তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে। [সূরা বাক্বারাহ, ২: ১৮৩-১৮৪]
ইমাম বুখারী (৪৫০৫) ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেন: “এ আয়াতটি মানসুখ (রহিত)নয়,বরং আয়াতটি অতি বৃদ্ধ নর ও নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য- যারা রোযা পালনে অক্ষম। তারা প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাওয়াবেন।”
ইবনে ক্বুদামাহ “আলমুগনী” গ্রন্থে (৪/৩৯৬)বলেছেন:
“অতিশয় বৃদ্ধ নর ও নারীর জন্য রোযা পালন যদি কঠিন ও কষ্টসাধ্য হয় তবে তাঁরা রোযা পালন না করে প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাওয়াবেন। তাঁরা যদি মিসকীন খাওয়াতেও অক্ষম হন তবে তাদের উপর কোন কিছু বর্তাবে না।
(لا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْساً إِلا وُسْعَهَا ) [ 2 البقرة: 286]
“আল্লাহ কারো উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপান না।”[সূরা বাক্বারাহ, ২ :২৮৬]
মহান আল্লাহ আমাদের কে বুঝার তাওফীক দান করুন-
আমীন
Dr Ismail Azhari
MBBS, MRCP (London, UK)P-1
Masters in Hadith and Fiqh islami (2010-11)
Darul uloom Muinul islam Hathazari madhrasha