11/07/2025
📜 শরিয়াহ দৃষ্টিকোণ থেকে বিবাহ সম্পর্কে ধারণা:
ইসলামে নিকাহ (বিয়ে) হলো একটি পবিত্র বন্ধন — যাকে কুরআনে বলা হয়েছে “মীথাকুন গালীযা” (সূরা নিসা ৪:২১)। এই সম্পর্কের ভিত গড়ে উঠেছে ভালোবাসা, সম্মান, দয়া ও বোঝাপড়ার ওপর। নিচে এই ডকুমেন্টটির বিষয়বস্তু শরিয়তের আলোকে ব্যাখ্যা করা হলো — কী কী ভালো, আর কোন কোন পয়েন্টে স্পষ্টতা বা ভারসাম্য দরকার।
—
✅ যেগুলো ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভালো:
১. “তুমি কখনো রাগ করে জোরে কথা বলবে না”
→ রাসূল (সা.) কখনো তার স্ত্রীদের উপর রাগ করে উচ্চ স্বরে কথা বলেননি। কুরআনেও বলা হয়েছে:
“তোমার কণ্ঠস্বর নিচু করো, সবচেয়ে খারাপ আওয়াজ গাধার আওয়াজ।” (সূরা লুকমান ৩১:১৯)
২. “স্ত্রীকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে / যোগাযোগ শিখতে হবে”
→ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। রাসূল (সা.) মনোযোগ দিয়ে স্ত্রীর কথা শুনতেন, তাদের অনুভূতি বুঝতেন।
৩. “স্ত্রীকে তার পছন্দমতো ভালোবাসতে হবে”
→ ভালোবাসা জোর করে হয় না, কিন্তু অনুভূতির যত্ন নেওয়া জরুরি। হাদীসে এসেছে:
“তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।” (তিরমিজি)
৪. “মানসিকভাবে তাকে সন্তুষ্ট রাখতে হবে”
→ ইসলাম একে অপরকে মানসিকভাবে সাপোর্ট করতে উৎসাহ দেয়। কুরআনে স্বামী-স্ত্রীকে একে অপরের “পোশাক” বলা হয়েছে (সূরা বাকারা ২:১৮৭) — মানে নিরাপত্তা, শান্তি ও আচ্ছাদন।
৫. “সম্মান করতে হবে এবং তাকে গুরুত্ব দিতে হবে”
→ কেবল ভালো না, বরং ইসলামে এটা আবশ্যক।
৬. “তাকে ছুটি বা বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে”
→ ফরজ নয়, তবে একসাথে সময় কাটানো দাম্পত্য সম্পর্ক শক্তিশালী করে।
—
❗️যেখানে ভারসাম্য দরকার:
১. “তোমার ফোন ব্যবহার করতে পারবে না যদি অনুমতি না পাও”
→ ইসলাম বিশ্বাস ও ভরসার সম্পর্ক চায়। একে অপরকে সন্দেহ করা বা গোয়েন্দাগিরি হারাম (সূরা হুজুরাত ৪৯:১২)। এই নিয়মটা যদি অনিরাপত্তা থেকে আসে, তাহলে সেটা আলাপের মাধ্যমে সমাধান করা উচিত, নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নয়।
২. “স্ত্রী যা চাইবে, সব করতে হবে”
→ একটু বাড়াবাড়ি। ইসলাম বলে, পরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে — একতরফা না।
(সূরা শূরা ৪২:৩৮ – “…তারা পরামর্শ করে তাদের ব্যাপার ঠিক করে…”)
৩. “স্ত্রী সন্তানকে শাসন করলে তুমি কিছু বলবে না”
→ সন্তান প্রতিপালন যৌথ দায়িত্ব। একে অপরকে ছোট করে দেখালে, সন্তানের ওপর খারাপ প্রভাব পড়ে।
৪. “তুমি যদি ভুল করো, তাহলে ১ জোড়া সোনার বালা দিতে হবে”
→ ইসলামে ক্ষমা চাওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, ক্ষতিপূরণ নয়। উপহার ভালো, কিন্তু শাস্তি হিসেবে নয়।
—
❌ যা একদমই সিরিয়াসলি নেওয়া উচিত:
• “না মানলে তোমাকে ছেড়ে দিবে এবং কোর্টে কেস করবে!”
→ মজা করা ঠিক আছে, কিন্তু বিয়ে বা তালাক নিয়ে ঠাট্টা করা ইসলামে হারাম। রাসূল (সা.) বলেছেন, তিনটি বিষয়ে ঠাট্টা করলেও তা বাস্তব হিসেবে গণ্য হয় — তার মধ্যে একটি তালাক।
—
🌸 উপসংহার:
এই “চুক্তি”টা বেশ মজারভাবে লেখা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ইসলামিক বিয়ে মানে হলো ইনসাফ, দয়া, মানসিক সাপোর্ট আর ধৈর্য — দুজনের পক্ষ থেকেই। স্বামীর যেমন অধিকার আছে, স্ত্রীরও তেমনই। সফল দাম্পত্য জীবন ভালোবাসা দিয়ে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অপরের জন্য ত্যাগ করেই হয়।
—
🕊️ দাম্পত্য জীবনের জন্য ইসলামিক পরামর্শ:
“তাঁর নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি হলো— তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই যুগল সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের মধ্যে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া স্থাপন করেছেন…”
— সূরা আর-রূম (৩০:২১)
আল্লাহ সব দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসা, বোঝাপড়া ও তাকওয়া দান করুন। আমিন।